Home সারাদেশ ঘূর্ণিঝড় ‘সিত্রাং’র প্রভাবে ভোলায় ঝড়ো বাতাস ও বৃষ্টি, নৌযান চলাচল বন্ধ

ঘূর্ণিঝড় ‘সিত্রাং’র প্রভাবে ভোলায় ঝড়ো বাতাস ও বৃষ্টি, নৌযান চলাচল বন্ধ

47

কামরুজ্জামান শাহীন,ভোলা॥ ঘূর্ণিঝড় সিত্রাংয়ের প্রভাবে ভোলায় ঝড়ো বাতাস ও বৃষ্টি শুরু হয়েছে। ঝড়ো বাতাস ও বৈরী আবহাওয়ার কারণে সোমবার (২৪ অক্টোবর) সকাল থেকে ভোলা-লক্ষ্মীপুর ও ভোলা-বরিশাল নৌপথে চলাচলকারী ফেরি ও লঞ্চ চলাচল বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে।
বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআইডব্লিউটিএ) সূত্রে জানা যায়, সোমবার সকালে ভোলার ইলিশা ঘাট থেকে লক্ষ্মীপুরগামী কোনো ফেরি ও লঞ্চ ছেড়ে যায়নি। একইভাবে ভেদুরিয়া ঘাট থেকে বরিশালগামী ফেরি ও লঞ্চ চলাচল বন্ধ রয়েছে।
বিআইডব্লিউটিএর ভোলা নদীবন্দরের উপ-পরিচালক মো. শহীদুল ইসলাম জানান, ভোলার নদীবন্দরগুলোকে ৭ নম্বর সতর্ক সংকেত দেখাতে বলা হয়েছে। এ জন্য সকাল থেকে ভোলার সব রুটে নৌযান চলাচল বন্ধ রাখা রয়েছে।
ভোলা আবহাওয়া অধিদপ্তর সূত্রে জানাযায়, গতকাল রোববার দুপুর ১২টা থেকে আজ সোমবার বিকাল পর্যন্ত ভোলায় ৯৮ মিলিমিটার বৃষ্টি রেকর্ড করা হয়েছে। ভোলার ওপর দিয়ে ঘণ্টায় ২৫/৩০ নটিক্যাল মাইল বেগে দমকা হাওয়া বইছে। জেলার নৌবন্দরগুলোকে ৭ নম্বর সতর্ক সংকেত দেখাতে বলা হয়েছে।
ভোলার চরফ্যাশন উপজেলার দক্ষিণ আইচা থানার সাগর মোহনার ঢালচর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. আব্দুল সালাম হাওলাদার বলেন, গতকাল রোববার থেকে তিনি ঢালচরে অবস্থান করে মসজিদের মাইকে চরের সব পরিবারকে সতর্ক থাকতে বলেছেন। ঘূর্ণিঝড় প্রস্তুতি কর্মসূচির (সিপিপি) স্বেচ্ছাসেবক সদস্যরাও মাইকিং করে সবাইকে সতর্ক ও নিরাপদ আশ্রয়ে অবস্থান নেওয়ার জন্য প্রচারণা চালাচ্ছেন।
ভোলার বোরহানউদ্দিন উপজেলার গঙ্গাপুর ইউনিয়নের জয়া গ্রামের বাসিন্দা মো. আবুল কাশেম বলেন, গতকাল রাতভর বৃষ্টি হয়েছে। সোমবার সকাল থেকে দমকা হাওয়া ও বৃষ্টি অব্যাহত আছে, তেতাঁলিয়া নদীতে কোনো নৌকা নেই। সবাই সতর্ক অবস্থায় আছে। মাঠে গরু-ছাগল নামানো হয়নি।
দৌলতখান উপজেলার মদনপুর ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য মারুফ হোসেন বলেন, সোমবার সকাল থেকে ঝড়ো বাতাস ও বৃষ্টি হচ্ছে। জোয়ারের উচ্চতাও বাড়ছে। মাইকিং করে স্থানীয় লোকজনকে আশ্রয়কেন্দ্রে যেতে বলা হচ্ছে। তবে বেশির ভাগ মানুষ এখনই আশ্রয়কেন্দ্র যেতে রাজি হচ্ছে না।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ভোলার ২৩টি ইউনিয়নের ৭৫টি চরের লক্ষাধিক পরিবার ঝুঁকির মধ্যে আছে। এসব এলাকায় জোয়ারের উচ্চতা বাড়ছে। এদিকে গতকাল দুপুরের দিকে জেলা প্রশাসকের সম্মেলনকক্ষে প্রশাসনসহ সব দপ্তরের কর্মকর্তাদের নিয়ে ঘূর্ণিঝড় মোকাবেলায জরুরি বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছে।
চরফ্যাশনের উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আল নোমান বলেন, তাঁদের উপজেলার ঝুঁকিপূর্ণ ইউনিয়নের লোকজনকে নিরাপদে আশ্রয়ে আসার জন্য মাইকিং করা হচ্ছে। তাদের পরিবহনের জন্য ট্রলার প্রস্তুত রাখা হয়েছে।
ভোলা জেলা প্রশাসক মো. তৌফিক-ই-লাহী চৌধুরী বলেন, ঘূর্ণিঝড় সিত্রাং মোকাবিলায় জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে সব ধরনের প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। ইতিমধ্যে জেলার ৭৪৬টি আশ্রয়কেন্দ্র ও ১ হাজার ৩০৬টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান প্রস্তুত করতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। জেলার ৭ উপজেলায় খোলা হয়েছে ৮ টি কন্ট্রোল রুম। ১৩ হাজার ৬ শত জন স্বেচ্ছাসেবক প্রস্তুত রয়েছেন। জেলার ৭০টি ইউনিয়ন ও ৭টি উপজেলায় গঠন করা হয়েছে একটি করে মেডিকেল টিম। জেলার বিচ্ছিন্ন ঝুঁকিপূর্ণ চরাঞ্চলের বাসিন্দাদের নিরাপদ আশ্রয়ে আনার শুরু করা হয়েছে।
ভোলা পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) নির্বাহী প্রকৌশলী মো. হাসানুজ্জামান বলেন, ভোলার মেঘনা-তেঁতুলিয়া নদীর পানি স্বাভাবিক বৃদ্ধি পেয়েছে। ভোলায় পাউবোর ৩৫০ কিলোমিটার বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ আছে। এর মধ্যে ঝুঁকিপূর্ণ এলাকাগুলো ইতিমধ্যে মেরামত করা হয়েছে। তারপরও পাউবোর কর্মকর্তারা সরেজমিন বিভিন্ন পয়েন্টে যাচ্ছেন, যেন ঘূর্ণিঝড়ে কোনো বাঁধ ক্ষতিগ্রস্ত হলে সঙ্গে সঙ্গে তা মেরামত করা যায়।
এদিকে বিকাল ৫ টার দিকে এ রির্পোট লেখার সময় ভোলায় দমকা হাওয়া ও বৃষ্টি আব্যাহত রয়েছে।