Home জাতীয় গৃহকর্মীদের সুরক্ষা দিতে নতুন আইন প্রণয়ন করতে হবে ॥ সংলাপে আইন প্রণেতাগণ

গৃহকর্মীদের সুরক্ষা দিতে নতুন আইন প্রণয়ন করতে হবে ॥ সংলাপে আইন প্রণেতাগণ

19

স্টাফ রিপোটার: গৃহকাজে নিয়োজিত শিশুর সুরক্ষা ও অধিকার নিশ্চিত করতে নতুন আইন প্রণয়নের প্রতি গুরুত্বারোপ করেছেন উন্নয়ন সংস্থার প্রতিনিধিরা। তাদের সঙ্গে একমত প্রকাশ করে আইনপ্রণেতাগণ বলেছেন, সরকার শিশু অধিকার সুরক্ষায় আন্তরিক। ইতোমধ্যে আইন ও নীতিমালা প্রণয়নসহ বিভিন্ন পদক্ষেপ নিয়েছে। এরপরও বিপুল সংখ্যক শিশু গৃহকর্মীকে শারীরিক, মানসিক, অর্থনৈতিক ও যৌন নিপীড়ন-নির্যাতন থেকে সুরক্ষা দিতে প্রয়োজনে নতুন আইন প্রণয়ন করা হবে।
আজ মঙ্গলবার জাতীয় সংসদ ভবনের পার্লামেন্ট মেম্বারস ক্লাবে আয়োজিত ‘গৃহকাজে নিয়োজিত শিশুর অধিকার ও সুরক্ষায় সুনির্দিষ্ট আইনের প্রয়োজনীয়তা’ শীর্ষক সংলাপে এ সব কথা বলেন তারা। উন্নয়ন সংস্থা অ্যাকশন ফর সোশ্যাল ডেভেলপমেন্ট (এএসডি)’র নির্বাহী পরিচালক এম এ করিমের সভাপতিত্বে সংলাপে প্রধান অতিথি ছিলেন ডেপুটি স্পিকার মো. শামসুল হক টুকু। আলোচনায় অংশ নেন হবিগঞ্জ-১ আসনের সংসদ সদস্য আমাতুল কিবরিয়া কেয়া চৌধুরী, খুলনা-৬ আসনের সংসদ সদস্য মো. রশীদুজ্জামান, সংরক্ষিত নারী আসনের সংসদ সদস্য লায়লা পারভীন সেজুতি, রূমা চক্রবর্তী ও অনিমা মুক্তি গমেজ, শেরে বাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক মীর মোহাম্মদ আলী, শাপলা নীড়ের কান্ট্রি ডিরেক্টর তমকো উচিয়ামা, ইউনিসেফ প্রতিনিধি ফাতেমা খাইরুন্নাহার, ওয়াল্ড ভিশনের ন্যাশনাল অ্যাডভোকেসি অফিসার মো. জামাল উদ্দিন, স্ক্যান সাধারণ সম্পাদক মনিরুজ্জামান মুকুল, লেবার ফাউন্ডেশনের প্রোগ্রাম কো-অর্ডিনেটর মিতু খাতুন, আইন ও শালিস কেন্দ্রের তাহেফা সামিন, এএসডি’র ম. হামিদুর রহমান প্রমূখ।
প্রধান অতিথির বক্তৃতায় ডেপুটি স্পিকার শামসুল হক টুকু বলেন, প্রতিটি শিশুকে উন্নত বাংলাদেশের নাগরিক হিসেবে গড়ে তুলতে সবক্ষেত্রে তাঁদের সুরক্ষা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কাজ করে যাচ্ছেন। শিশু সুরক্ষায় আইনের প্রয়োজনীয়তা থাকলেও শুধু আইনের মাধ্যমে সুরক্ষা দেওয়া কঠিন। গৃহকর্মে নিয়োজিত শিশুর মৌলিক অধিকার বাস্তবায়নে তাঁদেরকে গৃহকর্তার সন্তানের মত বিবেচনা করতে হবে। স্মার্ট বাংলাদেশে গৃহকর্মী নিয়োগে বিধিমালা তৈরি করতে হবে। স্মার্ট বাংলাদেশে প্রতিটি শিশুকে প্রাথমিক শিক্ষার সাথে মাধ্যমিক শিক্ষাও বাধ্যতামূলক করতে হবে। এর মাধ্যমে শিশু শ্রমিক নিয়োগ অনেকাংশে কমে যাবে। এরপরও কোন জায়গায় সংশোধনের প্রয়োজন হলে আইন মন্ত্রণালয় ও বিশেষজ্ঞদের পরামর্শক্রমে পূর্ণ খসড়া তৈরি করে সরকারের সামনে উপস্থাপন করার আহ্বান জানান তিনি।
সরকার দলীয় সংসদ সদস্য মো. রশীদুজ্জামান বলেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান শিশুদের সুরক্ষায় বিশেষ উদ্যোগ নিয়েছিলেন। তার ধারাবাহিকতায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা শিশুবান্ধব আইন-নীতিমালা সংশোধন ও পরিমার্জন করেছেন। এ বিষয়ে কর্মপরিকল্পনা গ্রহণ ও প্রয়োজনীয় বাজেট বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। প্রধানমন্ত্রীর ঘোষণা অনুযায়ী দেশকে দ্রুত শিশুশ্রম মুক্ত করা সম্ভব হবে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন।
আইনের প্রয়োগ নিশ্চিত করার আহ্বান জানিয়ে সংসদ সদস্য আমাতুল কিবরিয়া কেয়া চৌধুরী বলেন, পৃথিবীর কোন শিশুই যেন গৃহকর্মে নিয়োজিত থাকুক, তা আমরা কেহই চাই না। তারপরও দেশে গৃহকর্মী হিসেবে শিশুরা কাজ করছে। এই শিশুশ্রম বন্ধ করা সরকারের একার পক্ষে সম্ভব নয়। শিশু অধিকার নিশ্চিত করতে সম্মিলিত প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখতে হবে।
সংসদ সদস্য লায়লা পারভীন সেজুতি বলেন, সরকারের কঠোর পদক্ষেপ সত্ত্বেও গৃহকর্মীদের ওপর প্রতিনিয়ত নির্যাতনের ঘটনা ঘটছে। এই নির্যাতন বন্ধে নিয়োগকর্তা, শিশু ও সরকারি-বেসরকারি সংস্থাকে এগিয়ে আসতে হবে। এ সংক্রান্ত আইন ও নীতিমালা বাস্তবায়নে মনিটারিং জোরদার করতে হবে।
সংলাপে মূল প্রবন্ধ উত্থাপন করেন শিশু বিশেষজ্ঞ শরফুদ্দিন খান। তিনি বলেন, সরকার আন্তর্জাতিক মানবাধিকার ও শিশু অধিকার সনদসমূহ স্বাক্ষরের মাধ্যমে দেশের সকল শিশুর অধিকার সুরক্ষার প্রতিশ্রুতি ব্যক্ত করেছে। ২০০১ সনের ১২ মার্চ ঝুঁকিপূর্ণ শিশুশ্রম সম্পর্কিত আইএলও কনভেনশন নং-১৮২ এবং ২০২২ সনের ২২ মার্চ শিশুদের কাজে প্রবেশের নূন্যতম বয়স বিষয়ক আইএলও কনভেনশন নং-১৩৮ এ অনুস্বাক্ষর করেছে সরকার। এছাড়া এসডিজি’র আলোকে ২০২৫ সনের মধ্যে শিশুশ্রম নিরসনে অঙ্গীকারাবদ্ধ। সরকারের ওই সকল প্রতিশ্রুতি ও ঘোষিত অঙ্গীকার বাস্তবায়নে শিশু গৃহকর্মীর অধিকার ও সুরক্ষা সুনিশ্চিত করতে একটি যুগোপযোগী আইন প্রণয়ন ও তার সফল বাস্তবায়ন প্রয়োজন।