Home রাজনীতি গণভবনে ১৪ দলের শীর্ষ নেতৃবৃন্দের বৈঠক

গণভবনে ১৪ দলের শীর্ষ নেতৃবৃন্দের বৈঠক

21

সৈয়দ আমিরুজ্জামান, বিশেষ প্রতিনিধি : দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতায় আসন সমঝোতা নিয়ে ১৪ দলীয় জোটের শরিক দলগুলোর শীর্ষ নেতৃবৃন্দের সঙ্গে গণভবনে আলোচনায় বসেছেন আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

সোমবার (৪ ডিসেম্বর ২০২৩) সন্ধ্যায় তিনি এ বৈঠক করেন।

১৪ দলীয় জোটের মুখপাত্র ও সমন্বয়ক আমির হোসেন আমু, আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক, সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের, আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য জাহাঙ্গীর কবির নানক এবং যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম শরিক দলের নেতাদের নিয়ে আলাদা বৈঠক করবেন। তাদের জানিয়ে দেবেন কাকে কোন আসন ছাড় দেওয়া হচ্ছে।

বৈঠকের বিষয়বস্তু ও সিদ্ধান্ত জানিয়ে মঙ্গলবার (৫ ডিসেম্বর ২০২৩) বেলা ১২টায় সাংবাদিকদের ব্রিফ করবেন বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের।

সোমবার রাতে গণভবনে জোট প্রধান ও আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে বৈঠকে এমন সিদ্ধান্ত আসে।

জোটের প্রার্থী হিসেবে শরিক দলের নেতারা নৌকা নিয়ে ভোট করবেন। আবার এর পাশাপাশি তাদের দলের অধিকাংশ প্রার্থী নিজস্ব প্রতীকেও ভোট করবেন বলে জানা যায়।

সোমবার সন্ধ্যা ছয়টার পর বৈঠক শুরু হয়ে রাত প্রায় দশটা পর্যন্ত চলে।

আওয়ামী লীগ সভানেত্রী ও জোট প্রধান শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে বৈঠকে জোটের মুখপাত্র ও সমন্বয়ক আমির হোসেন আমু, আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক, সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের, বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেনন, জাতীয় পার্টি-জেপির চেয়ারম্যান আনোয়ার হোসেন মঞ্জু, জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল-জাসদ সভাপতি হাসানুল হক ইনু, জেপির মহাসচিব শেখ শহীদুল ইসলাম, আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য জাহাঙ্গীর কবির নানক, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম, দফতর সম্পাদক ব্যারিস্টার বিপ্লব বড়ুয়া, তরিকত ফেডারেশনের চেয়ারম্যান সৈয়দ নজিবুল বশর মাইজভান্ডারী, বাংলাদেশের সাম্যবাদী দলের সাধারণ সম্পাদক দিলীপ বড়ুয়া, জাসদ সাধারণ সম্পাদক শিরিন আকতার, কমিউনিস্ট কেন্দ্রের ওয়াজেদুল ইসলাম খান, গণতন্ত্রী পার্র্টির ভারপ্রাপ্ত সভাপতি ডা. শহীদুল্লাহ সিকদার, সাধারণ সম্পাদক ডা. শাহাদাৎ হোসেনসহ অনেকেই উপস্থিত ছিলেন।

বৈঠকের শুরুতেই এশিয়া ক্লাইমেট মবিলিটি চ্যাম্পিয়ন লিডার অ্যাওয়ার্ড আন্তর্জাতিক পুরস্কার পাওয়ায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ফুলেল শুভেচ্ছা জানান ১৪ দলের শীর্ষ নেতারা।

বৈঠকের শুরুতেই বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেনন বলেন, নির্বাচনে প্রার্থী বাছাইয়ের কাজ শেষ হয়েছে। এখনো জোটের আসন সুরাহা না হওয়াটা আমাদের বেকায়দায় ফেলবে।

তিনি বলেন, সময় শেষ হয়ে যাচ্ছে। সবকিছু গোছানোর একটা সময় দরকার। এখনই পরিষ্কার করা উচিত। একই সুরে কথা বলেন জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল জাসদ সভাপতি হাসানুল হক ইনু।

তিনি বলেন, আমরা জোটগতভাবে ভোট করছি। আসন সমাধান না হলে সমস্যা তৈরি হবে। কাজেই দ্রুতই সমাধান করা উচিত। তিনি বলেন, নির্বাচন ও সরকার গঠন করতে হলে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের শক্তির বিকল্প নেই। বিএনপি-জামায়াত কখনো যেন দেশের ক্ষমতায় না আসে সেজন্য সবাইকে ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে। আগামীতে সরকার গঠনের সময় মনে রাখা উচিত, বিএনপি জামায়াতের বিরুদ্ধে যারা জোরালো কথা বলতে পারেন তাদের রাখতে হবে।

সাম্যবাদী দলের সাধারণ সম্পাদক দিলীপ বড়ুয়া বলেন, আমার জীবনের বড় শখ জনপ্রতিনিধি হওয়া। আমি মন্ত্রী হয়েছিলাম, কিন্তু জনপ্রতিনিধি হতে পারিনি। কাজেই আমাকে যেন একটি আসন ছাড় দেওয়া হয় সেজন্য জোট প্রধানের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি।

তরিকত ফেডারেশনের চেয়ারম্যান সৈয়দ নজিবুল বশর মাইজভান্ডারী বলেন, আমরা ক্ষমতায় না আসলে স্বাধীনতাবিরোধী জামায়াত ক্ষমতায় আসবে। কাজেই আমাদের ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে। কোনোভাবেই স্বাধীনতাবিরোধীদের হাতে ক্ষমতা তুলে দেওয়া যাবে না। কাজেই ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে। কোনো ভুল বোঝাবুঝি যেন না হয় সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। এ সময় আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদকের সাম্প্রতিক একটি বক্তব্য নিয়ে তাদের মন খারাপ বলে জোট প্রধানকে জানান নজিবুল বশর মাইজভান্ডারী।

গণতন্ত্রী পার্টির ভারপ্রাপ্ত সভাপতি ডা. শহীদুল্লাহ সিকদার বলেন, মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের শক্তিকে ঐক্যবদ্ধভাবে নির্বাচনে ও আন্দোলনে লড়তে হবে। এ জন্য সবাইকে যথাযথভাবে মূল্যায়ন করতে হবে। শরিক জোটের আরও অনেক নেতাই বক্তৃতা করেন।

জোটের মুখপাত্র ও সমন্বয়ক আমির হোসেন আমু বলেন, ১৪ দলীয় জোট আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে ঐক্যবদ্ধ ছিল, আছে, আগামীতেও থাকবে।

সমাপনী বক্তব্যে আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা বলেন, আমরা আদর্শিক জোট। এ জোট আছে, থাকবে। আমরা নির্বাচন, সরকার গঠন একসঙ্গে করব। সবাইকে মনে রাখতে হবে দেশকে এগিয়ে নিতে হলে মুক্তিযুুদ্ধের আদর্শের পক্ষকে শক্তিশালী করতে হবে। তা না হলে স্বাধীনতাবিরোধীদের পদলেহনকারীরা ক্ষমতায় আসবে। দেশের ক্ষতি হবে।

শরিক নেতাদের উদ্দেশে আক্ষেপ করে আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা বলেন, আমরা দীর্ঘদিন ধরে জোটে আছি। টানা তিন মেয়াদে ক্ষমতায়। আপনারা অনেকেই এমপি-মন্ত্রী ছিলেন-আছেন। অথচ নিজ নিজ সংগঠনের ভিত্তি বাড়াতে পারলেন না? সংগঠনকে তো মজবুত করা দরকার।

আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা আরও বলেন, আমরা জোটগতভাবে নির্বাচন করব। কাউকে বসিয়ে দেওয়ার দরকার নেই। প্রতিযোগিতামূলক নির্বাচন হোক। নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা হতে হবে। আওয়ামী লীগের যারাই স্বতন্ত্র দাঁড়িয়েছে তাদের কাউকে বসিয়ে দিচ্ছি না। কাজেই কেউ বসবে না।

পরে তিনি শরিকদের জানান, জোটের সমন্বয়ক ও মুখপাত্র আমির হোসেন আমু, দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের, প্রেসিডিয়াম সদস্য জাহাঙ্গীর কবির নানক ও যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম জোট নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করে আসন সমাধান করবেন।

শরিকরা নৌকা পাবে কিনা জানতে চাইলে ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেনন বলেন, ‘শরিকরা নৌকাই পাবে। নৌকা না দিলে আমরা গণভবনে কেন গেছি।’

কতটি আসন ছাড় দেওয়া হচ্ছে এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, জোট প্রধান আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা আমাদের জানিয়েছেন, ১৪ দলের সমন্বয়ক ও মুখপাত্র আমির হোসেন আমু ও সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরসহ চারজন তার (শেখ হাসিনা) পক্ষ থেকে আমাদের জানিয়ে দেবেন।

জাসদ সভাপতি হাসানুল হক ইনু বলেন, জোট প্রধান আজ রাতে গণভবনে আমাদের দাওয়াত করেছিলেন। আমরা অংশ নিয়েছি। আমরা একসঙ্গে পাঁচ বছর জোটে ছিলাম। আমাদের মিলনমেলায় পরিণত হয়েছিল। আসন ভাগাভাগি করা নিয়ে তেমন কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি। আমরা আমাদের কথা বলেছি। জোট আছে, জোট থাকবে। একসঙ্গে ভোট করব।

গণতন্ত্রী পার্টির ভারপ্রাপ্ত সভাপতি ডা. শহীদুল্লাহ সিকদার বলেন, সবাইকে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে বলেছেন। ভোটাররা যেন উপস্থিত হয়, সেজন্য উদ্যোগ গ্রহণের তাগিদ দিয়েছেন। কাউকে প্রার্থিতা প্রত্যাহার না করার জন্য প্রধানমন্ত্রী নির্দেশনা দিয়েছেন। কারণ প্রতিযোগিতামূলক ভোট চান তিনি।