ডেস্ক রিপোর্ট : প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আগামীকাল ১৪ ফেব্রুয়ারি ‘বাংলাদেশ কোস্ট গার্ডের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী’ উপলক্ষ্যে নিম্নোক্ত বাণী প্রদান করেছেন :
“বাংলাদেশ কোস্ট গার্ড-এর ২৮তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী ও ‘কোস্ট গার্ড দিবস, ২০২৩’ উদ্‌যাপন উপলক্ষ্যে আমি এ বাহিনীর সকল সদস্যকে আন্তরিক শুভেচ্ছা জানাই।
সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান-এর আহ্বানে সাড়া দিয়ে মুক্তিযুদ্ধের মাঝামাঝি সময়ে বাংলাদেশ নৌবাহিনী সুসংগঠিত হয়। মুক্তিযুদ্ধের সময় এ বাহিনীর সদস্যগণ নিজেরাই নৌকা ক্রয় করে শত্রুর মোকাবিলা করেছেন এবং সফলতার সঙ্গে ‘অপারেশন জ্যাকপট’ পরিচালনা করেছেন। জাতির পিতার পরামর্শে নারায়ণগঞ্জ ড্রাইডক অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং ১৯৭২ সালে প্রথম যুদ্ধ জাহাজ নির্মাণ করে। তিনি যুগোস্লাভিয়া ও ভারত থেকে ৫টি আধুনিক রণতরী সংগ্রহ করেন। তিনি ১৯৭৪ সালের ১৪ ফেব্রুয়ারি ‘The Territorial Waters and Maritime Zones Act, 1974’ প্রণয়ন করেন। ফলে, নৌবাহিনীর তত্ত্বাবধানে দেশের নদ-নদী ও সমুদ্রের জলরাশিতে প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা জোরদার হয়। এই আইনের উপর ভিত্তি করে পরবর্তীতে আমাদের সরকারের উদ্যোগে সমুদ্র বিজয় সম্ভব হয়।
আওয়ামী লীগ বিরোধী দলে থেকেও সুনীল অর্থনীতি এবং বাংলাদেশের সার্বভৌম জলসীমায় নিরাপত্তা জোরদার করার উপর গুরুত্ব দিয়ে একটি বিশেষায়িত বাহিনী গঠনের লক্ষ্যে ১৯৯৪ সালে জাতীয় সংসদে ‘বাংলাদেশ কোস্ট গার্ড বিল’ উত্থাপন করে। উক্ত প্রস্তাবটি আইনে পরিণত হওয়ার মধ্য দিয়ে দেশের সার্বভৌমত্ব রক্ষাকারী একটি বিকল্প বাহিনী হিসেবে ‘বাংলাদেশ কোস্ট গার্ড’ প্রতিষ্ঠিত হলেও আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে ১৯৯৬ সালে সরকার গঠনের পর এ সংস্থাটি পূর্ণদ্যোমে কার্যক্রম শুরু করে। ১৯৯৬ সালে আমরা কোস্টগার্ডকে ২টি টহল জাহাজ এবং ২টি রিলিফ বোট হস্তান্তর করি এবং ২০০১ সালে বিসিজিএস রূপসী বাংলা নামে একটি ইনসোর প্যাট্রোল ভেসেলকে কোস্টগার্ডে কমিশন করি। তাছাড়া, সংস্থাটির অবকাঠামো স্থাপনের জন্য পর্যাপ্ত বরাদ্দ প্রদান করি।
২০০৮ সালের নির্বাচনে বিপুল জনসমর্থন নিয়ে সরকার গঠনের পর আমরা এ বিশেষায়িত বাহিনীর সক্ষমতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে ‘বাংলাদেশ কোস্টগার্ডকে শক্তিশালীকরণ’, প্রশিক্ষণ ঘাঁটি নির্মাণ, সমুদ্রগামী জলজান সংগ্রহ/ নির্মাণ, অবকাঠামো নির্মাণ/ বর্ধিতকরণসহ এর সাংগঠনিক কাঠামোতে জনবল বৃদ্ধির দিকে মনোনিবেশ করি। গত ১৪ বছরে আমরা দেশের উপকূলীয় এবং প্রত্যন্ত অঞ্চলে কোস্ট গার্ড-এর স্টেশন ও আউটপোস্টসমূহে কোস্টাল ক্রাইসিস ম্যানেজমেন্ট সেন্টারসহ কর্মরত সদস্যগণের বাসস্থান, ব্যারাক ও প্রশাসনিক ভবন নির্মাণ করেছি। পটুয়াখালীতে নিজস্ব প্রশিক্ষণ বেইস প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে কোস্ট গার্ড-এর জনবলের প্রশিক্ষণ সক্ষমতা বৃদ্ধি করেছি, যা ‘বিসিজি বেইস অগ্রযাত্রা’ নামে কমিশন করা হয়েছে। মেরামত ও রক্ষণাবেক্ষণ সক্ষমতা বাড়ানোর জন্য গজারিয়ায় একটি ডকইয়ার্ড নির্মাণ করছি। অফসোর প্যাট্রোল ভেসেল, ইনসোর প্যাট্রোল ভেসেল, টাগ বোট, ফ্লোটিং ক্রেন, হাই স্পিড বোটসহ বিভিন্ন আকারের ৭৭টি জলযান নির্মাণ করে সংযোজন করেছি। একটি আধুনিক, শক্তিশালী ও স্মার্ট বাহিনীতে রূপান্তরের জন্য উন্নত প্রযুক্তির সমুদ্রগামী জাহাজ, হোভারক্র্যাফট, হেলিকপ্টার ও দ্রুত গতিসম্পন্ন বোট সংগ্রহের কার্যক্রম গ্রহণ করেছি। পুরাতন আইনকে হালনাগাদ করে ‘বাংলাদেশ কোস্টগার্ড আইন, ২০১৬’ প্রণয়ন করেছি।
সুনীল অর্থনীতি ও গভীর সমুদ্রে নিরাপত্তা প্রদানের জন্য এ বাহিনীর রূপকল্প ২০৩০ ও ২০৪১ অনুযায়ী যুগোপযোগী আইন প্রণয়ন, নিজস্ব জনবল নিয়োগের মাধ্যমে বাহিনী পুনর্গঠনের পরিকল্পনা গ্রহণ করেছি। আমি আশা করি, এ বাহিনীর উন্নয়নের অগ্রযাত্রা অব্যাহত রাখতে আওয়ামী লীগ সরকারের পৃষ্ঠপোষকতা চলমান থাকবে এবং উত্তরোত্তর বৃদ্ধি পাবে। বাংলাদেশ কোস্ট গার্ড আমাদের সরকারের ‘রূপকল্প ২০৪১’, ‘সুনীল অর্থনীতি’ ও ‘বাংলাদেশ বদ্বীপ পরিকল্পনা- ২১০০’ বাস্তবায়নে বিশেষ অবদান রাখবে।
আমি বাংলাদেশ কোস্ট গার্ড-এর প্রতিটি সদস্যকে দেশপ্রেম, সাহসিকতা ও আন্তরিকতার সঙ্গে তাদের উপর অর্পিত দায়িত্ব পালন করার জন্য আহ্বান জানাই। বাংলাদেশ কোস্ট গার্ড-এর ২৮তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী ও ‘কোস্ট গার্ড দিবস- ২০২৩’ উপলক্ষ্যে গৃহীত সকল কর্মসূচির সর্বাঙ্গীণসাফল্য কামনা করি ।
জয় বাংলা, জয় বঙ্গবন্ধু
বাংলাদেশ চিরজীবী হোক।”