Home সারাদেশ কালীগঞ্জে বিলুপ্তির পথে ঐতিহ্যবাহী তাঁত শিল্প

কালীগঞ্জে বিলুপ্তির পথে ঐতিহ্যবাহী তাঁত শিল্প

23

তারিকুল ইসলাম তুষার, ( লালমনিরহাট) কালীগঞ্জ: লালমনিরহাটের কালীগঞ্জে বিলুপ্তির পথে ঐতিহ্যবাহী তাঁত শিল্প তাঁতের খট খট শব্দে এক সময় মুখরিত থাকতো তাঁতপল্লীগুলো। কিন্তু দফায় দফায় তাঁত কাপড়ের কাঁচামালের মূল্যবৃদ্ধি পাওয়ায় উৎপাদন খরচ তুলতে পারছে না প্রান্তিক তাঁতিরা। একের পর এক তাঁত বন্ধ হয়ে বিলুপ্তির পথে ঐতিহ্যবাহী তাঁত শিল্প।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, উপজেলার প্রায় ৫শত তাঁত মালিক ও শ্রমিকরা নানা প্রতিকূলতার মুখোমুখি হয়ে তাঁত বন্ধ করেছেন। এমনকি তাঁতীরা পেশা বদল করে আজ অন্য পেশায় চলে গেছে। অনেকে আবার বাপ-দাদার এই পেশাকে প্রতিবন্ধকতার মধ্যেও স্মৃতি হিসাবে আকড়ে ধরে আছে। এক সময় বিরামহীন ভাবে কাজ করে যেতেন তাঁতীরা। কিন্তু তাঁত শিল্পের এখন আর সেই সু-দিন নেই।

উপজেলার কাকিনা ইউনিয়নের রাজবাড়ি, মহিষামুড়ী ও বাণীনগর গ্রামগুলো এক সময় তাঁতসমৃদ্ধ এলাকা হিসেবে বেশ পরিচিত ছিল। এখানকার তাঁতীদের উৎপাদিত বিভিন্ন বাহারী ডিজাইনের গামছা, চাদর, শাড়ী ও বিছানার চাদর সহ দেশের বিভিন্ন বাজারে নিয়ে বিক্রি করা হত।

কিন্তু সময়ের পরিক্রমায় এসব এলাকা থেকে তাঁতশিল্প হারিয়ে যেতে বসেছে। তাঁত বস্ত্র উৎপাদনের জন্য প্রয়োজনীয় কাঁচামাল ও রাসায়নিক দ্রব্যের মূল্য বৃদ্ধি এবং সরকারী পৃষ্ঠপোষকতার অভাবে এই উপজেলার তাঁত শিল্পের অস্তিত্ব বর্তমানে হুমকির মুখে পড়েছে। লাভজনক এই শিল্পকে টিকিয়ে রাখতে হলে প্রয়োজন সরকারি ও বেসরকারি পৃষ্ঠপোষকতা।

জানা যায়, বর্তমানে কাকিনা ইউনিয়নে প্রায় ৫শত তাঁত পরিবার রয়েছে। তাঁতের সাথে সম্পৃক্ত পরিবারগুলো বর্তমানে মানবেতর জীবনযাপন করছে। কাঁচামালের দাম বাড়ার কারণে ইতোমধ্যে বন্ধ হয়ে গেছে প্রায় ১৫০টি তাঁত শিল্প। অবিরাম লোকসানে পড়ে পেশা বদলেছেন অনেকেই। তাঁতীদেরও অভিযোগ, সূতা, রং, কেমিক্যাল সহ তাঁত বস্ত্র উৎপাদনের সকল উপকরণের মূল্য অস্বাভাবিক ভাবে বৃদ্ধি উৎপাদন ব্যয় যেভাবে বৃদ্ধি পেলেও সে অনুযায়ী উৎপাদিত কাপড়ের মূল্য বৃদ্ধি পায়নি।

কাকিনা ইউনিয়ন এলাকার তাঁত মালিক সায়েদ জানান, সময়ের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে কাপড় তৈরির সুতা, শ্রমিকের পারিশ্রমিক এবং যানবাহনসহ অন্যান্য দ্রব্যাদির ব্যয় বৃদ্ধি পাচ্ছে দ্রুত গতিতে। তবে বাড়েনি কাপড়ের দাম ও চাহিদা। যে কারণে দিনের পর দিন বাপ-দাদার এ পেশা ছেড়ে ভিন্ন পেশায় চলে যাচ্ছে তাঁত মালিক ও শ্রমিকরা।

তাঁত মালিক আব্দুর রহিম মিয়া বলেন, আমরা খুবই অস্বচ্ছল মানুষ। প্রয়োজনীয় পুঁজি ও পৃষ্ঠপোষকতা পেলে হয়তো এই কুঠির শিল্প ঘুরে দাড়াতে পারত। এখন তো তাঁত শিল্পের মৌসুম অন্যের কাছে টাকা ধার নিয়ে অল্প কিছু সুতা নিয়ে এসে কাজ করছি।

ছামিরা খাতুন বলেন, আমি বউ হয়ে এই বাড়ীতে আসার পর থেকে তাঁতের কাজ করি। কিন্তু অভাবে এখন আর এই কাজ করা হয় না। সরকার সহযোগীতা করলে আবারো এই কাজ করে সংসার চালাইতে পারতাম।

উপজেলা সমাজ সেবা কর্মকর্তা আব্দুর রাজ্জাক বলেন, উপজেলাতে বেশকিছু তাঁতশিল্প আছে বলে আমি জানতে পেরেছি। উপজেলা প্রশাসন থেকে তাদের জন্য সার্বিক সহযোগীতা থাকবে। খুব শিঘ্রই আমরা তাঁত শিল্পের সাথে জড়িত মানুষদের সাথে সরাসরি কথা বলব।