Home সাহিত্য ও বিনোদন কবি ফারহা মৌরিন মৌ -এর তিনটি কবিতা

কবি ফারহা মৌরিন মৌ -এর তিনটি কবিতা

68

১. অমীমাংসিত প্রেম-উপাখ্যান

‘চন্দ্রপাড়ে যেতে চেয়েছিনু একবার!
দেখিতে তো পাই-
কেনো পাইনা তারে কাছে?’ –
এ প্রশ্ন মনেতেই রয়ে গেছে
চন্দ্রকথার।
তবুও চন্দ্রকথার হইলো সাধ
প্রেমের আগুনে মরিবার-
আলোকচ্ছটার চাকচিক্যে ভাসিবার!

চন্দ্রকথা জানিলো যে হায়
আলো সেতো চাঁদের নিজস্ব নয়!
তবুও সে মনে মনে পুড়ে যেতে চায়
চাঁদের আলোয় ,
চাঁদের মায়ায়।

সীমাহীন অগ্নি প্রজ্জ্বলিত
তেজদীপ্ত ভালোবাসা নিয়ে চলমান
শক্তিশালী দিবাকর এ’বেলার প্রেমগাঁথায়
ফিকে পড়ে রয়-
চন্দ্রকথার চাঁদপ্রেম ছায়ায়।

অথচ, অন্যচিত্রে –
উত্তপ্ত মরুভূমি চেয়ে রয় আকাশপানে
ওই চাঁদ তারে দেখা দিলো বহুকাল পরে!
খুব কাছে নেমে আসে
একবুক ভালোবাসা নিয়ে
মরুভূমির বুকে।
মরুভূমি তখন প্রতীক্ষায় –
দিবাকরের শোকে!

মরুভূমিও চন্দ্রকথার মত প্রেমে পড়ে,
কিন্তু সে শুধুই
দিবাকরের চাহুনির তরে!
চির তৃষ্ণার্ত মরুভূমি আরো বেশি
তৃষ্ণার্ত হতে, শুকনো হতে
অপেক্ষায় প্রহর একা গুনে!
উত্তপ্ত হতে চায় শুধুই সে জ্বালাময়ী
দিবাকরের
অগ্নিগান শুনে ।।

অতঃপর!
চাঁদ ফিরে যায়, চন্দ্রকথা মুখ লুকায়
বেনিয়মে, অসমতায় প্রেম ধুলিস্মাৎ হয়!
মরুভূমি প্রেমের অনলে পুড়ে পুড়ে
ছাই হয় ,
ধুলো পড়ে রয় ।
দিবাকর সে প্রেম বুঝিবার
পায়না সময়!
প্রতিদিন, প্রতি ভোরেই
গনগনে আগুন বুকে
নিয়মের ফেরে
সর্বময় প্রতীয়মান হয় ।।

চরিত্র –
কোনো এক চন্দ্রকথা, চাঁদ(চন্দ্র), দিবাকর(সূর্য)
এবং মরুভূমি।

২. মানুষ বদলে যায়

আমি তোমাদেরকে কিছুই বলবো না।

আমি দেখেছি,
মানুষ বদলে যায়।
ঘন ঘন বদলে যায়।
কারণে, অকারণে
আবেগে, জেদে, হিংসায়, ঘৃণায়,
না পাওয়ায়,
না চাইতেই অধিক পেয়ে যাওয়ায়,
অদেখায়-
বদলে যায়।

স্বার্থের এই পৃথিবীতে
এই বদলে যাওয়া স্বাভাবিক
না বদলে যাওয়াই অস্বাভাবিক।

তবে মনে রাখবে,
তুমি বদলে গেলে
আমিও বদলে যাই।
তোমার সাথে তাল মিলিয়ে
বদলে যাবার এই অসহ্য মানবীয় গুণাবলীকে
চরিতার্থ করি!

    এই বদলে যাওয়া প্রয়োজন
    না বদলে যাওয়াই পিছুটান।।

৩. চাইলেই হারিয়ে যাওয়া যায় না

হারিয়ে যেতে চাইলেই হারিয়ে যাওয়া যায় না।
হারিয়ে যেতে চাইলে
প্রথমে বন্ধনের বাঁধনকে
আলগা করতে হয়।
দৃঢ় বাঁধনকে ছিন্ন করা সহজ নয়।

হারিয়ে যেতে চাইলেই , হারিয়ে যাওয়া যায় না।
পায়ের নিচের মাটি শক্ত করতে হয়,
নচেৎ ফিরে আসতে হবেই।

হারিয়ে যাবার সময় তীব্র কষ্টকে চেপে রাখতে চাইলে
সুদূরের আলো’কে দেখতে চাইবার ইচ্ছে রাখতে হবে।
অন্ধকার থেকে বেরুতে হবে।

হারিয়ে যেতে চাইলে কাঁটাযুক্ত পথে
হাঁটবার অভ্যেস করতে হবে। কারণ,
এ সিদ্ধান্ত নিজেরই, চাপিয়ে দেয়া নয়
যদি ফিরে আসতে হয়!

হারিয়ে যাবার মুহূর্তে মনকে তরল করতে হবে।
বহুরূপী পাত্রের আকার ধারণ করবার মত তরল।
নয়তো পুরোনো আরামের জায়গাটি আহ্বান করবে বারবার।

হারিয়ে যেতে চাইলে যা আছে, সমস্তটাই রেখে আসতে হবে।
দাবীও ছেড়ে দিতে হবে,
দাবী ধরে রাখলে, হারিয়ে যাওয়া কঠিন হয়ে যায়।

প্রিয় ঘর থেকে হারিয়ে যেতে চাইলে, ঘরটিতে মিশে থাকা স্মৃতিগুলোকে এক পশলা বৃষ্টির মত শেষ অনুভব করতে হবে। সহজ নয়, কিন্তু সহজ করতে হবে।

প্রিয় মানুষ থেকে হারিয়ে যেতে চাইলে, মানুষটিকে এক জীবনের ভালোবাসার অদৃশ্য হিসেবের খাতাটি ছিঁড়ে ফেলতে হবে। ভালোবাসায় যে হিসেব থাকে না।

প্রিয় শহর থেকে হারিয়ে যেতে চাইলে, কাটানো প্রতিটি মুহূর্তকে জীবনের এক বহুমূল্য অভিজ্ঞতারূপে স্বীকার করতে হবে, নয়তো নতুন শহর মুখ ফিরিয়ে নিতে পারে।

প্রিয় মানুষগুলোকে অভিমানে নয়, সম্মানে বিদায় জানাতে হবে। তারা জীবনের একটি অংশের অন্যতম অংশ।
তাদের এতদিনের অস্তিত্বকে সহজভাবে স্বীকার করতে হবে।

হারিয়ে যেতে চাইলেই হারিয়ে যাওয়া যায় না।
একটি অদৃশ্য সুতো টেনে ধরে।
খুব মজবুত সেই সুতো।
তাকে সজোরে নয়, ভালোবাসায়, সযত্নে-
শিথিল করে দিতে হয়।

হারিয়ে যেতে চাইলেই হারিয়ে যাওয়া যায় না।
যারা হারিয়ে যাওয়াকে মেনে নিতে চায়না, তাদেরকে
বোঝাতে হবে, এই হারানো কেনো গুরুত্বপূর্ণ।
কেনো হারিয়ে যাওয়া খোদ তাদেরকেই বড় স্বস্তি এনে দিতে পারে।

হারিয়ে যেতে চাইলেই হারিয়ে যাওয়া যায় না।
হারাতে হলে, নিজেকে কখনো কখনো
হেরে যেতে হয়।
নিজে হেরে গিয়েও, অন্যকে জেতানোর যেই তুষ্টি আছে, তাকে ধারণ করে, পিছুটান না রেখে
সামনে এগিয়ে যেতে হয়।

তারপরই-
চিরতরে হারিয়ে যাওয়া যায়।