Home সাহিত্য ও বিনোদন কবি অধরা জাহানের তিনটি কবিতা

কবি অধরা জাহানের তিনটি কবিতা

51

১. কষ্ট গিলে খেতে এখন আমার কষ্ট হয় খুব

কোনো প্রস্থানেই এখন আর তেমন কষ্ট হয় না,
যেমন কোনো আনন্দ হয় না প্রত্যাবর্তনে।
যে চিঠি কোনোদিন ডাকবাক্সের গহ্বর দেখেনি
সে কী করে বুঝবে প্রাপকের হাতে পৌঁছানোয়
আনন্দ কতোখানি?
না-পাঠানো চিঠির মতো পড়ে থেকে থেকে
এখন আর কোনো প্রস্থান কিংবা প্রত্যাবর্তনে
আমার এসে যায় না কিছু।

তবুও চলে যাবে বলে এই যে এতো আয়োজন,
এতো-এতো ভালোবাসা-বাসি,
এতো-এতো রাত জাগা, যাবতীয় উপাখ্যান
কী এমন তুমুল প্রয়োজন ছিলো এসবের?
কী এমন প্রয়োজন ছিলো
লুকোনো বিষের পেয়ালায় সঞ্জীবনী সূধা ঢেলে
ঠোঁটে ঠোঁট উষ্ণতায় ডুবে যাওয়া
কালিন্দীর ঠান্ডায়;
অথবা কোনো শ্রাবণের ভরা পূর্ণিমায়
পুড়ে-পুড়ে ঘোলা চোখ হারানো অন্তর্বাস,
লাল সন্ধ্যায় মুগ্ধ নিথর দিঘীতে ডুবসাঁতার?
প্রয়োজন ছিলো না কোনো এতো আয়োজন।

আমিতো চাইনি এসবের কিছু কোনোদিন।
চেয়েছি শুধু পোড়া ঘরখানি যেন
পোড়ে না আবারও,
যেন কোনো প্রাপকের হাত সামান্য মমতায়
ভাঁজ খুলে খুলে পড়ে নেয় অনাদরে পড়ে থাকা
ধূলোজমা জীবনের চিঠি।
কষ্টের দলা গিলে খেয়ে আমি তার পায়ে শুধু
সঁপে দেবো কান্নার নুনে ভরা সমুদয় কলস।
অথচ, আবারও সেই প্রত্যাবর্তন,
অথচ আবারও সেই কলিজায় টান
আয়োজন প্রস্থানের।

এখন আর তেমন কষ্ট হয় না এসবে।
যদিও, কষ্ট গিলে খেতে এখন-
আমার কষ্ট হয় খুব…

২. বিধিবদ্ধের বাইরে

সংবিধিবদ্ধ সতর্কীকরণের মতো তুমি।
নিজের গায়ে ভয়ঙ্কর কিছু এঁকে
দিব্যি ব্যস্ত বিষপানে।
এদিকে আমার কী হয় বলো?
আমিতো ঐ তুমিকেই সাজাই-গুছাই
এলোমেলো করে আবার রোদে দেই
বৃষ্টির ছাঁটে ভিজে গেলে
ঐ তুমিটাকেই বুকের ওমে
উষ্ণতা দিয়ে রাখি।
আর তুমি কি না বিধিবদ্ধ সতর্কীকরণে
আমাকে রেখে দাও খিড়কীর বাইরে
নিদারুণ শীতে একা।
তবু মনে ভাবি, আছোতো ওপাশেই
নিঃশ্বাসের দূরত্বে।
হাত বাড়ালেইতো সেই কালিন্দীর জল
আমারই কলসে নির্নিমেষ
হাতের নাগালে বিধিবদ্ধের বাইরে
অন্যকিছু হয়ে।

৩. যোগ্য হও কবি উর্বশী

গান্ধর্ব-ইন্দ্র কিংবা কামদেব কেউইতো
যোগ্য হতে পারলো না এযাবৎ
সমুদ্রমন্থন শেষে জল থেকে উঠে আসা
আর যারা আছে উর্বশী অপ্সরা
তাদের মধ্যে আর কেউ নেই
কস্তুরীগন্ধা এমন।
পায়ের পাতায় তাই পড়ে থাকো
ধূলিকণা হয়ে বিনম্র পুরুষ,
যদি যোগ্য হয়ে ওঠো কোনো একদিন
জানি আমি
নাভীমূলে রাখা
গোপন কস্তুরী ঘ্রাণে ভরে যাবে
পৃথিবীর অলি-গলি-মানচিত্র।

উর্বশী কলায় পথ ভুলে গেলে
কেউ কেউ আছে কবি হয়ে যায়,
কেউ এসে পাশে বসে পাশা খেলে
তারপর বাড়ি ফিরে যায়
যেখানে তার নিজস্ব মানবীর
তেলে-ঝোলে-অম্বলে বসবাস।
সবাইতো দূর থেকে শুধু উর্বশী দেখে
একমাত্র কবি ছাড়া
আগুন দেখে না কেউ।
কবি তুমি লেপ্টে থাকো পদ্মপায়ে
ধূলিকণা থেকে পরিবর্তিত পায়েল
তারপর না হয় একদিন হয়ে যেয়ো
একসাথে স্বর্গের ফল খাওয়া ভুল,
এখন শুধু
আগুন কামড়ে পড়ে থাকো কবি
উর্বশী শরীরের ভাঁজে ভাঁজে।
আরও যোগ্য হও
না গান্ধর্ব, না মানুষ
তারও চেয়ে বেশি যোগ্য কোনোকিছু।
উর্বশী যদি চায়, সবকিছু চায়।