Home জাতীয় কবর খুঁড়েই শান্তি মেলে সোবহান গাজীর

কবর খুঁড়েই শান্তি মেলে সোবহান গাজীর

31

ডেস্ক রিপোর্ট: সোবহান গাজী (৫৫)। সাতক্ষীরার তালা উপজেলার খেশরা ইউনিয়নের উত্তর শাহাজাতপুর গ্রামের মৃত আক্কাজ গাজীর ছেলে। পেশায় কাঠুরিয়া হলেও এলাকায় তিনি একজন গোরখোদক নামে পরিচিত। এলাকায় মৃত মানুষের কবর খুঁড়ে থাকেন। একজন মানুষের বিদায়কালীন শেষ সম্বল হলো তার সাড়ে ৩ হাত জায়গা। যে অন্ধকার মাটির ঘরে অন্ততকাল অবস্থান করতে হবে মৃত মানুষটির। আর এই মৃত ব্যক্তির শেষ আশ্রয় নির্মাণ করেই শান্তি পান তিনি।

খেশরার সাবেক চেয়ারম্যান বীর মুক্তিযোদ্ধা ফজলুল হক, এসএম লিয়াকত হোসেন, মো. মোনতাজ মালী, ইব্রাহিম সরদার, তোফাজ্জেল হোসেনসহ কয়েকজন জানান, সোবহান গাজী নব্বইয়ের দশকে শুরু করেন এই কবর খোঁড়ার কাজ। দেখতে দেখতে এ কাজেই পার করে দিয়েছেন প্রায় ৩০ বছর। পিতা-মাতা, শ্বশুর-শ্বাশুড়িসহ প্রতিবেশীদের কবর খুঁড়েছেন নিজ হাতেই। এ পর্যন্ত তার নিজ হাতে কবর খোঁড়ার সংখ্যা শতাধিকের বেশি।

একটি সময় ছিল যখন একজন মানুষ মারা গেলে তার দাফন-কাফনের জন্য নির্দিষ্ট মানুষ পাওয়া যেত না। বিভিন্ন মানুষকে অনুরোধ করে আনতে হতো দাফন, কাফন করানোর জন্য। তাই এসব কাজে তেমন কেউ আগ্রহী না থাকায় তিনি এ উদ্যোগ নেন এবং আজ অব্যবধি নানা সমস্যার মধ্যে দিয়েও চালিয়ে যাচ্ছেন এই মহৎ কাজটি। এই কাজের জন্য এলাকায় একনামে সোবহান গাজী একজন গোরখোদক নামে বেশ সুপরিচিত।

দুই সন্তানের জনক সোবহান গাজী বলেন, ‘যার জীবন আছে মৃত্যু তার সুনিশ্চিত। মৃত্যু হবে না এমন ধারণা পোষণ করা বোকামির কাজ। আমি এখান থেকে আরও ত্রিশ বছর আগে এই কবর খোঁড়ার কাজ শুরু করি। একটা কবর খুঁড়তে যেসব যন্ত্রপাতি প্রয়োজন, সেগুলোর সব আমার রয়েছে। আমি কাঠ কেটেই মূলত সংসার চালাই। তাই কোনো অঞ্চলে কাজ করতে যাওয়ার আগে মহাজনকে বলি রাখি, যদি আমার প্রতিবেশী কেউ মারা যান, খবর পাওয়া মাত্রই আমি কাজ ছেড়ে চলে আসি তার কবর খোঁড়ার জন্য।’

সোবহান বলেন, ‘দীর্ঘ দিন এ কাজ করতে গিয়ে অনেক বিপদ-আপদের সম্মুখীন হয়েছি। কত কবর খুঁড়তে গিয়ে হাড়, মাথার খুলিও পেয়েছি। এমনও হয়েছে বৃষ্টিকালে কবর খুঁড়তে গিয়ে পানিতে ভরে উঠেছে কবর। আর সেই পানি সরানোর জন্য একটা পাত্র দেবে এমন মানুষ অনেক সময় খুঁজে পাওয়া যায়নি। অনেক কবর খুঁড়তে গিয়ে পাশের কবর থেকে আসা ময়লা পানিতে আমার গোড়ালি ভিজে গিয়েছে। পরে আমি ২/৩ মাস ঠিকমতো খেতে ও ঘুমাতে পারিনি। তবুও আমি একদিন মারা যাবো। পৃথিবীর এই মায়া ত্যাগ করে আমাকে চলে যেতে হবে এই চিন্তা করে আমি এ কাজ ছাড়িনি।’

এসময় তিনি জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত মানুষের কবর খুঁড়ে যেতে চান বলে প্রত্যয় ব্যক্ত করেন।-ইত্তেফাক