Home জাতীয় এরশাদকে নিয়ে একটি মন্তব্যে সংসদে ব্যাপক হট্টগোল, বিশৃঙ্খলা

এরশাদকে নিয়ে একটি মন্তব্যে সংসদে ব্যাপক হট্টগোল, বিশৃঙ্খলা

23

ডেস্ক রিপোর্ট: জাতীয় পার্টির প্রয়াত চেয়ারম্যান এইচ এম এরশাদকে নিয়ে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্য মোতাহার হোসেনের একটি মন্তব্যের জেরে জাতীয় সংসদে ব্যাপক হট্টগোল ও বিশৃঙ্খলা হয়েছে। তখন পরিস্থিতি সামলাতে হিমশিম খাচ্ছিলেন স্পিকারের আসনে থাকা ডেপুটি স্পিকার শামসুল হক। পরে তড়িঘড়ি করে অধিবেশন কক্ষে এসে সভাপতির দায়িত্ব নেন স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরী।

সোমবার জাতীয় সংসদে রাষ্ট্রপতির ভাষণের ওপর আনা ধন্যবাদ প্রস্তাবের আলোচনার সময় এ ঘটনা ঘটে। চলতি একাদশ জাতীয় সংসদে এ রকম বিশৃঙ্খলা আর দেখা যায়নি।
সোমবার মাগরিবের নামাজের বিরতির পর সংসদের বৈঠকে সভাপতিত্ব করতে ওঠেন ডেপুটি স্পিকার শামসুল হক। একপর্যায়ে আলোচনায় অংশ নেন সংসদ সদস্য মোতাহার হোসেন। বক্তব্যের একপর্যায়ে তিনি বলেন, ২০১৪ সালের নির্বাচনে তাঁর প্রতিদ্বন্দ্বী এইচ এম এরশাদের জামানত বাজেয়াপ্ত হয়েছিল। তাঁর এই বক্তব্যের কয়েক মিনিট পর বিরোধী দল জাতীয় পার্টির (জাপা) একাধিক সদস্য প্রতিবাদ করতে শুরু করেন। তখনো তিনি বক্তব্য দিচ্ছিলেন। একপর্যায়ে কাজী ফিরোজ রশীদ দাঁড়িয়ে মাইক ছাড়াই কথা বলতে শুরু করেন। ডেপুটি স্পিকার তাঁকে বসতে বলেন এবং পরে চাইলে পয়েন্ট অব অর্ডারে ফ্লোর দেবেন বলে জানান। তবে তিনি মাইক ছাড়াই কথা বলতে থাকেন। এ সময় সংসদ কক্ষে হইচই শুরু হয়।

এ সময় কাজী ফিরোজ রশীদের উদ্দেশে মোতাহার হোসেন বলেন, ‘আপনি সিনিয়র সংসদ সদস্য, আমার সময়ে আরেকজন বক্তৃতা দেবেন কীভাবে?’ এ সময় স্পিকার মোতাহার হোসেনের মাইক বন্ধ করে দেন। তাঁকে দাঁড় করিয়ে রেখে কাজী ফিরোজ রশীদকে এক মিনিটের জন্য ফ্লোর দেন। তবে কারও বক্তব্যের মাঝখানে থামিয়ে অন্য কাউকে বক্তব্য দেওয়ার জন্য মাইক চালু করার ঘটনা সংসদে দেখা যায় না।
কাজী ফিরোজ রশীদ বলেন, এরশাদ নির্বাচনই (২০১৪ সালে) করেননি। তাঁর (মোতাহার) বক্তব্য এক্সপাঞ্জ (বাদ দেওয়া) করতে হবে। ক্ষমা চাইতে হবে। বিরোধী দলের চিফ হুইপ মসিউর রহমানও এ সময় কথা বলতে থাকেন। ডেপুটি স্পিকার একপর্যায়ে তাঁর মাইকও চালু করেন। এ সময় আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্যরাও হইচই শুরু করেন।
তখন জাপার সংসদ সদস্য মসিউর রহমান বলতে থাকেন, ‘চলে যাব। চিৎকার আর দরকার নেই, আমরা চলে যাব।’

মসিউর রহমান তখন লালমনিরহাট–১ আসনে ২০১৪ সালে এরশাদের মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার ঘটনা তুলে ধরে বক্তব্য দিতে গেলে একপর্যায়ে তাঁর মাইকও বন্ধ করে দেওয়া হয়। ডেপুটি স্পিকার তাঁকে বসতে বলেন। তিনি জাপার সদস্যদের উদ্দেশে বলেন, ‘আপনারা পয়েন্ট অব অর্ডারে কথা বলবেন। সময় দেওয়া হবে। আপনি বসুন। তাঁর (মোতাহার) বক্তব্য শেষ হোক।’

এ সময় জাপার সংসদ সদস্যরা হইচই করতে থাকেন। ডেপুটি স্পিকার শামসুল হক বলেন, বক্তব্যে আপত্তিকর কিছু থাকলে তা এক্সপাঞ্জ করা হবে।

মোতাহার হোসেনের উদ্দেশে ডেপুটি স্পিকার বলেন, ‘আপনি অ্যাজেন্ডার ওপরে কথা বলবেন। এমন কথা বলবেন না, যাতে সংসদ পরিচালনায় বিঘ্ন ঘটে।’

ঠিক এই সময়ে স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরীকে তড়িঘড়ি করে সংসদ কক্ষে ঢুকতে দেখা যায়। ঢুকেই তিনি সভাপতির আসনে বসেন। ডেপুটি স্পিকার শামসুল হক সভাপতির আসন ছেড়ে যান।

পরে স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরী জাপার সদস্য কাজী ফিরোজ রশীদ, মসিউর রহমানসহ সবাইকে বসার আহ্বান জানিয়ে বলেন, ‘হাউসের একটি ডেকোরাম আছে। এখানে রাষ্ট্রপতির ভাষণের ওপর আলোচনা হচ্ছে। এখানে একজন বক্তা তাঁর বক্তব্য রাখছেন। সেই বক্তব্যে আপত্তিকর কিছু থাকলে সেটা আপনারা উত্থাপন করতে পারেন। কিন্তু এ জন্য আপনাদের অপেক্ষা করতে হবে। উনি (মোতাহার) ওনার বক্তব্য শেষ করবেন। আপনারা হাত তুলবেন। আমরা যখন মনে করব আপনাদের সুযোগ দেওয়ার বিষয়ে আছে, আমরা সেই সুযোগ দেব। আপনাদের কথাও শোনা হবে। যদি এমন কোনো বিষয় থাকে, যেটা এক্সপাঞ্জ করার প্রয়োজনীয়তা আছে, সেটা বিবেচনায় নিয়ে ব্যবস্থা নেওয়ারও সুযোগ আছে।’

স্পিকারের বক্তব্যে পরিস্থিতি শান্ত হয়। পরে আবার বক্তব্য শুরু করেন সংসদ সদস্য মোতাহার হোসেন। তিনি আবারও বলেন, তাঁর সঙ্গে এইচ এম এরশাদ জামানত হারিয়েছেন। তাঁর বক্তব্য শেষ হওয়ার পর স্পিকার আবার মসিউর রহমানকে বক্তব্যের সুযোগ দেন। তিনি বলেন, ‘এরশাদ সাহেব বললেন আমি ওখান (লালমনিরহাট-১ আসন) থেকে আর নির্বাচন করব না। করলে রংপুরে করব। যেকোনোভাবেই হোক উনি ২০১৪ সালে নির্বাচন করতে চাননি। আমরা তাঁকে নির্বাচন করার অনুরোধ করি। আমি সিএমএইচে গিয়ে বলি আপনি যদি না চান নির্বাচন করার (হয়ে যাওয়ার) সাত দিনের মধ্যে আমাদের বলবেন, আমরা সবাই রিজাইন করব। তার পরিণতি যদি এভাবে হয়!’

পরে কাজী ফিরোজ রশীদ বলেন, ‘এরশাদ সাহেবের জামানত বাজেয়াপ্ত হলো, যে নির্বাচনে এরশাদ সাহেব দাঁড়ায়নি।’

জাপার দুই সংসদ সদস্যই মোতাহার হোসেনের বক্তব্য এক্সপাঞ্জ করার দাবি জানান। অবশ্য ২০১৪ সালের নির্বাচনে লালমনিরহাট–১ আসনে এরশাদের প্রার্থিতা ছিল। তিনি মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করেননি। শেষ পর্যন্ত এরশাদ ভোট পেয়েছিলেন ৫ হাজার ৩৮১টি। আর মোতাহার পান ১ লাখ ৭৯ হাজার ৮১৪ ভোট।

পরে স্পিকার শিরীন শারমিন রুলিং দেন মোতাহার হোসেনের বক্তব্যে কোনো তথ্যগত ত্রুটি থেকে থাকলে সেটা বিবেচনা করে, পরীক্ষা করে এক্সপাঞ্জ করার ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
প্রথমআলো