Home জাতীয় এমপি হওয়ার ইচ্ছাই কাল হলো টিপুর

এমপি হওয়ার ইচ্ছাই কাল হলো টিপুর

60

ডেস্ক রিপোর্ট: স্বেচ্ছাসেবক লীগ কানাডা শাখার সাধারণ সম্পাদক সোহেল শাহরিয়ার ওরফে সুন্দরী সোহেল মতিঝিল এলাকায় নির্বাচনে অংশ নিতে চেয়েছিলেন। সুন্দরী সোহেলের সঙ্গে আরো দুই জন আওয়ামী লীগ নেতা নির্বাচনে মনোনয়নপ্রত্যাশী। এই দুই জনের মধ্যে এক জন হলেন মতিঝিলের জাহিদুল ইসলাম টিপু। এর আগে মতিঝিলে ক্যাসিনোর চাঁদাবাজি নিয়ন্ত্রক গ্রুপের তোপের মুখে সুন্দরী সোহেল ২০১৬ সালে কানাডায় পাড়ি জমান। সেখানে তিনি স্বেচ্ছাসেবক লীগ কানাডা শাখার সাধারণ সম্পাদক পদ পান। ২০১৯ সালে ক্যাসিনোতে অভিযান চালানোর পর সুন্দরী সোহেল দেশে ফেরেন। মতিঝিল এলাকার রাজনৈতিক ও আন্ডারওয়ার্ল্ডে একক আধিপত্য বিস্তারের চেষ্টা করেন। মতিঝিল থানা আওয়ামী লীগের সভাপতির পদ তিনি প্রত্যাশা করেন। এ নিয়ে টিপুর সঙ্গে সোহেলের দ্বন্দ্ব দেখা দেয়। অপর দুই মনোনয়নপ্রত্যাশীর মধ্যেও এ নিয়ে বিরোধ দেখা দেয়। শনিবার রাতে শাহজাহানপুর থেকে সোহেল শাহরিয়ার ও মারুফ রেজা সাগরকে গ্রেফতার করার পর ডিবির প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে এসব তথ্য জানিয়েছেন তারা। তাদের আরো জিজ্ঞাসাবাদের জন্য গতকাল সোমবার আদালতে পাঠিয়ে দুই দিনের রিমান্ডে নেওয়া হয়েছে।

জিজ্ঞাসাবাদে সোহেল শাহারিয়ার ওরফে সুন্দরী সোহেল জানান, তিনি ছিলেন মতিঝিল থানা আওয়ামী লীগের সাংগাঠনিক সম্পাদক রিয়াজুল হক খান মিলকী গ্রুপের। ২০১৩ সালে মিলকী হত্যার পর সুন্দরী সোহেল টিপু গ্রুপের কাছে কোণঠাসা হয়ে পড়েন। তার ওপর শাহজাহানপুরে ওয়ার্ড ছাত্রলীগের সভাপতি কাউছার আলী হত্যা মামলার চার্জশিটভুক্ত ১ নম্বর আসামি ছিলেন সুন্দরী সোহেল। ২০০৮ সালের ৪ মার্চ শাহজাহানপুরে দিনে-দুপুরে কুপিয়ে ও গুলি করে হত্যা করা হয় ৩৪ নম্বর ওয়ার্ড ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি কাউছার আলীকে। তোপের মুখে ২০১৬ সালে সুন্দরী সোহেল পাড়ি জমান কানাডায়। সেখানে তিনি স্বেচ্ছাসেবক লীগ কানাডা শাখার সাধারণ সম্পাদক পদ পান। ২০১৯ সালে ক্যাসিনোতে অভিযান চালানোর পর সোহেল দেশে ফেরেন। মতিঝিল থানা আওয়ামী লীগের সভাপতির পদ প্রত্যাশা করেন তিনি। এ নিয়ে টিপুর সঙ্গে সোহেলের দ্বন্দ্ব দেখা দেয়।

সুন্দরী সোহেলের ‘বড় ভাই’ ১০ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওমর ফারুক। ২০১৬ সালে মতিঝিল এজিবি কলোনিতে রিজভী হাসান ওরফে বোঁচা বাবু হত্যা মামলার চার্জশিটভুক্ত আসামি হলেন র্যাবের হাতে গ্রেফতার ওমর ফারুক, আবু সালেহ শিকদার ও নাসির উদ্দিন। ওমর ফারুকও মতিঝিল থানা আওয়ামী লীগের সভাপতির পদপ্রত্যাশী। এদিকে কারাগারে বন্দী ক্যাসিনোবাজ ল্যাংড়া খালেদও টিপুর ওপর ক্ষিপ্ত। সব মিলিয়ে সবারই ‘পথের কাঁটা’ হলেন টিপু। টিপুকে সরিয়ে দিতে পারলে মতিঝিলের আন্ডারওয়ার্ল্ডের বিশাল সাম্রাজ্য নিজেদের নিয়ন্ত্রণে আসবে বলে মনে করেন তারা।

টিপুকে সরিয়ে দেওয়ার সেই পরিকল্পনা বাস্তবায়নের সমন্বয়ক হিসেবে কাজ করেন কিলার মুসা। মুসা শীর্ষ সন্ত্রাসী জিসানের সহযোগী বলে পরিচিত। আন্ডারওয়ার্ল্ডের কাছে মুসা একটি ভয়ংকর নাম। টেন্ডারবাজির কোটি কোটি টাকার কমিশন যে কোনো গ্রুপকে নিয়ে দিতে মুসা কাজ করেন। এ জন্য প্রতিপক্ষকে খুনের পরিকল্পনা নেন মুসা। হত্যার বদলা হত্যা। প্রতিশোধ নিতে ‘গ্যাং মার্ডার’। ‘কাট আউট’ পদ্ধতিতে পরিকল্পনা। টার্গেট নির্ধারণ করে দেয়। সুবিধাজনক পরিস্থিতিতে খুন করতে হবে। এ জন্য মতিঝিলের আন্ডারওয়ার্ল্ড নিয়ন্ত্রণকারী শীর্ষ সন্ত্রাসী জিসানের সঙ্গে যোগাযোগ হয়। শুটার গ্রুপ ঠিক করা হয়। কোটি টাকায় খুনের চুক্তি হলেও প্রথম দফায় শুটার গ্রুপের কাছে ১৫ লাখ টাকা পৌঁছে যায়। এক গ্রুপ গুলি ও আগ্নেয়াস্ত্র সংগ্রহ করে নির্দিষ্ট স্থানে রেখে আসে। অতঃপর কাটআউট পদ্ধতিতে শুটার গ্রুপ রেকি করে। এরপর নির্দিষ্ট সময়ে একাধিক শুটার গ্রুপ খুনের ছক বাস্তবায়ন করে। বাস্তবায়নের ১২ দিন আগেই গত ১২ মার্চ মুসা দুবাই পালিয়ে যান। সেখানে শীর্ষ সন্ত্রাসী জিসানের সঙ্গে বসে পরিকল্পনা নেন খুনের। এর পাশাপাশি ক্যাসিনোকাণ্ডে গ্রেফতার ল্যাংড়া খালেদের সঙ্গেও শীর্ষ সন্ত্রাসী জিসানের যোগাযোগ হয়েছিল।

ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) এক কর্মকর্তা জানান, গত ২৪ মার্চ রাত ১০টার দিকে শাহজাহানপুরের আমতলা এলাকায় অস্ত্রধারীর গুলিতে নিহত হন গাড়িতে থাকা মতিঝিল থানা আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক টিপু। এলোপাতাড়ি গুলিতে নিহত হন প্রীতি নামের এক শিক্ষার্থী। এ ঘটনার পর শুটার মাসুম মোহাম্মদ ওরফে আকাশকে গ্রেফতার করে ডিবি। তার দেওয়া তথ্য থেকে ডিবি আবৃত্তিকার আহকাম উল্লাহর ছোট ভাই যুবলীগের নেতা এরফান উল্লাহ দামালকে গ্রেফতার করে।
ইত্তেফাক