Home জাতীয় উত্তরের ৪ থানা ছাত্রলীগের পদের দৌড়ে বিতর্কিতরা

উত্তরের ৪ থানা ছাত্রলীগের পদের দৌড়ে বিতর্কিতরা

40

সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক পদ ঘিরে ব্যাপক উৎসাহ-উদ্দীপনা

স্টাফ রিপোর্টার: আগামী ৮ ও ৯ ডিসেম্বর আওয়ামী লীগের ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠন ছাত্রলীগের সম্মেলন। তার আগে ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণে সম্মেলন করবে সংগঠনটি। দিন ঠিক করা হয়েছে ২ ডিসেম্বর। সম্মেলন উপলক্ষে ইতোমধ্যে নির্বাচন কমিশন গঠন করা হয়েছে। এতে উজ্জীবিত হয়ে উঠেছেন মহানগর ছাত্রলীগের সর্বস্তরের নেতাকর্মী। ব্যাপক উৎসাহ-উদ্দীপনা দেখা যাচ্ছে সংগঠনের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক পদকে ঘিরে। কমিটিতে স্থান পেতে দৌড়ঝাঁপ শুরু করেছেন পদ প্রত্যাশীরা। এ সারিতে আছেন কিছু বিতর্কিত নেতাও।
ঢাকা মহানগর উত্তর ছাত্রলীগের অন্তর্ভুক্ত ধানমন্ডি, হাজারীবাগ ও কলাবাগান থানা। এসব এলাকায় ছাত্রলীগের যৌথ বার্ষিক সম্মেলন হয়ে গেছে ছয় মাস আগে। কিন্তু কোনো কমিটি এখন পর্যন্ত গঠিত হয়নি। দীর্ঘদিন পর ধানমন্ডি, হাজারীবাগ ও কলাবাগান থানায় ছাত্রলীগ কমিটি গঠনের উদ্যোগ নিয়েছে। যেখানে শীর্ষ পদ পেতে মরিয়া বেশ কয়েকজন বিতর্কিত নেতা। বিতর্কিতদের তালিকায় রয়েছেন খ. মাহবুবুর রহমান সুমন। তিনি একাধিক মামলার আসামি। তা ছাড়া বছর খানেক আগে হাজারীবাগ থানা পুলিশ কিশোর গ্যাংয়ের পাঁচ সদস্যের ছবি প্রকাশ করে গণমাধ্যমে। ওই ছবিতে সুমনকে দেখা গেছে। অর্থাৎ তিনি কিশোর গ্যাংয়ের একজন সদস্য। সেই তিনিই ঢাকা মহানগর উত্তর ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক সাইদুর রহমান হৃদয়ের কোরাম থেকে পদ প্রত্যাশী। হাজারীবাগ থানায় চার মামলার আসামি মো. সেলিমও ছাত্রলীগের শীর্ষ পদ প্রত্যাশী। তিনি নিজের এলাকায় বিভিন্ন অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে ওতপ্রোতভাবে জড়িত। বিএম মোস্তফা মারুফ নামে সংগঠনের এক বিতর্কিত নেতাও এবারের সম্মেলন থেকে ছাত্রলীগের শীর্ষ পদ চান। অথচ তিনি বিবাহিত। রাজশাহীতে বিয়ে করে ২০২০ সালে ঢাকায় আসেন তিনি। অর্থের কমতি নেই তাই যত পারছেন ঢালছেন ধানমণ্ডি থানা ছাত্রলীগের শীর্ষ পদ পেতে। জাতীয় পরিচয় পত্র জালিয়াতি করে বয়স গোপন করেছেন জহিরুল ইসলাম। তার জন্মের আসল তারিখ ১৯৯৩ সালে। কিন্তু জালিয়াতির সুযোগ নিয়ে ১৯৯৫ সালে জন্ম তারিখ দেখিয়েছেন তিনি। এ যুবক চান কলাবাগান থানা ছাত্রলীগের শীর্ষ পদ। কলাবাগান থানা ছাত্রলীগের আরেক শীর্ষ পদ প্রত্যাশী মোস্তাফিজুর রহমান। তিনি জাতীয় পরিচয় পত্র জালিয়াতি করে ওয়ার্ড পরিবর্তন করেছেন। আগে তিনি ১৭ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা ছিলেন। বিপুল অর্থের বিনিময়ে নেতা হওয়ার প্রত্যাশায় জাতীয় পরিচয় পত্রে নিজেকে ১৬ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা দেখিয়েছেন তিনি। সরাসরি জালিয়াতির সঙ্গে জড়িত না হলেও বয়সের তোয়াক্কা না করে কলাবাগান থানার প্রার্থী ‘হচ্ছেন’ মো. বিপ্লব খান। জাতীয় পরিচেয় পত্র অনুযায়ী ১৯৯২ সালে জন্ম তার। সে হিসেবে এখন তার বয়স ৩২। বিপ্লব কলাবাগান থানা ছাত্রলীগের শীর্ষ পদ পেতে এগিয়ে আছেন বলে জানিয়েছেন উত্তরের অনেক নেতাই।
উল্লেখ্য, গঠনতন্ত্র অনুযায়ী ২৯ বছরের মধ্যে যাদের বয়স তারাই ছাত্রলীগের রাজনীতিতে অংশ নিতে পারবেন। আবার বিবাহিত কোনো ব্যক্তি আওয়ামী লীগের ভ্রাতৃপ্রতিম এ সংগঠনে যুক্ত হতে পারবেন না। বিপুল অর্থের বিনিময়ে অছাত্র, বিবাহিত ও নানা মামলার আসামিদের পদ প্রত্যাশার বিষয়টি জানেন না বলে দাবি করেছেন মহানগর উত্তর ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক সাইদুর রহমান হৃদয়। তিনি এও দাবি করেছেন, উত্তরের নেতারা বিতর্কিত বলে যাদের নাম উল্লেখ করছেন, তাদের কাউকে তিনি চেনেন না, নামও শোনেননি।
পদ বাণিজ্যের অভিযোগ: ঢাকা মহানগর উত্তর ছাত্রলীগের নেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, সংগঠনের সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগের বর্তমান সাংগঠনিক সম্পাদক আজিজুল হক রানার মাধ্যমে পদ বাণিজ্য চলছে। উত্তর ছাত্রলীগের বর্তমান সাধারণ সম্পাদক সাইদুর রহমান হৃদয় আবার তার অনুসারী। নেতাদের অনেকেই জানিয়েছেন, হৃদয় মহানগরীর রাজনীতিতেও রানাকে অনুসরণ করেন। যদিও বিষয়টি নিয়ে রানাকে একাধিকবার ফোনে চেষ্টা করেও তার কোনো বক্তব্য পাওয়া যায়নি। আগামী ২ ডিসেম্বর সম্মেলনের মাধ্যমে উত্তর ছাত্রলীগের নেতা হিসেবে কারা আসবেন, তার উত্তর সময়ের কাছে। আওয়ামী লীগ থেকে যারা ছাত্রলীগকে তদারকি করেন, তারা বলছেন, পদ প্রত্যাশীদের মধ্যে যাদের সাংগঠনিক সক্ষমতা ভালো, রয়েছে ক্লিন ইমেজ, পরিবারের সঙ্গে জামায়াত-বিএনপির কোনো সংশ্লিষ্টতা নেই; অসাম্প্রদায়িক চেতনার অধিকারী তারাই আগামীর নেতৃত্বে আসবে। এছাড়াও যারা শিক্ষার্থীদের কাছে জনপ্রিয় এবং মানবিক কাজ করে আলোচনায় আসতে পেরেছেন, এমন ছাত্রনেতারাও এগিয়ে থাকবেন।
উত্তর ছাত্রলীগে যারা পদ প্রত্যাশী: ক্লীন ইমেজের পরীক্ষিত কর্মী হিসেবে এবার ঢাকা মহানগর উত্তর ছাত্রলীগের সভাপতি পদপ্রার্থী হয়েছেন কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি মো: সোহেল মিয়া। নিজের অবস্থান নিয়ে কথা হয় তার সঙ্গে। মো: সোহেল মিয়া বলেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের একজন সৎ-আদর্শবান কর্মী হিসেবে উত্তরের ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের সঙ্গে নিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সকল নির্দেশনা বাস্তবায়নে রাজপথে থাকবো। এছাড়াও ঢাকা মহানগর উত্তর ছাত্রলীগের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক সালমান খান প্রান্ত, ঢাকা মহানগর উত্তর ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি শাহাবুদ্দিন আহমেদ সুমন, ধানমন্ডি থানা ছাত্রলীগের ২ নম্বর যুগ্ম সম্পাদক রকি, মোহাম্মদপুর থানা ছাত্রলীগের সভাপতি রাসেলসহ দুই ডজন পদ প্রত্যাশী। ধানমন্ডি থানা ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও উত্তর ছাত্রলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক রাজিবুল ইসলাম বাপ্পি।
এদিকে, সম্মেলনহীন অবস্থায় রয়েছে সরকারি টিচার্স ট্রেনিং কলেজ ছাত্রলীগসহ আরও কিছু ইউনিট। আগামী ৮ ও ৯ ডিসেম্বর ছাত্রলীগের ৩০তম সম্মেলনের প্রস্তুতির জন্য ঘোষণা করা হয়েছে বিভিন্ন উপকমিটি ও নির্বাচন কমিশন। গত ২৩ নভেম্বর রাতে এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানান ছাত্রলীগ সভাপতি আল নাহিয়ান খান জয় ও সাধারণ সম্পাদক লেখক ভট্টাচার্য। ছাত্রলীগের সহসভাপতি রেজাউল করিম সুমনকে প্রধান করে নির্বাচন কমিশন গঠন করা হয়েছে। এতে নির্বাচন কমিশনার হিসেবে আরও থাকছেন আশরাফুল ইসলাম টিটন ও শামস-ঈ-নোমান।
ছাত্রলীগের সহসভাপতি অসীম কুমার বৈদ্যকে আহ্বায়ক করে গঠিত সম্মেলন প্রস্তুতি উপকমিটির অন্যরা হলেন: যুগ্ম আহ্বায়ক মুরাদ হায়দার টিপু, তিলোত্তমা শিকদার, ফরিদা পারভীন, প্রদীপ চৌধুরী এবং মুজাহিদুল ইসলাম সোহাগ। এছাড়া মাহমুদুল হাসানকে অভ্যর্থনা উপকমিটির আহ্বায়ক, শওকতুজ্জামান সৈকতকে শৃঙ্খলা উপকমিটির আহ্বায়ক, তৌহিদুল ইসলাম চৌধুরীকে আপ্যায়ন উপকমিটির আহ্বায়ক, জিয়াসমিন শান্তাকে সাজসজ্জা উপকমিটির আহ্বায়ক, তানজিদুল ইসলাম শিমুলকে প্রকাশনা উপকমিটির আহ্বায়ক, আলিমুল হককে গঠনতন্ত্র ও ঘোষণাপত্র উপকমিটির আহ্বায়ক, রাকিব হোসেনকে আন্তর্জাতিক উপকমিটির আহ্বায়ক, সাগর হোসেন সোহাগকে মঞ্চ উপকমিটির আহ্বায়ক করা হয়েছে। এছাড়া আরিফ হোসেন রিফাতকে প্রচার উপকমিটির আহ্বায়ক, মিজানুর রহমান পিকুলকে তথ্য ও প্রযুক্তি উপকমিটির আহ্বায়ক, সাইফ উদ্দিন বাবুকে সাংস্কৃতিক উপকমিটির আহ্বায়ক, উৎপল বিশ্বাসকে যোগাযোগ উপকমিটির আহ্বায়ক, ওমর ফারুককে স্বাস্থ্য উপকমিটির আহ্বায়ক এবং সরকার জহির রায়হানকে অর্থ উপকমিটির আহ্বায়ক করা হয়েছে। দুদিনব্যাপী সম্মেলনে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।