Home জাতীয় উখিয়ার“সোহেল অপহরণ” মামলার রহস্য উদঘাটন

উখিয়ার“সোহেল অপহরণ” মামলার রহস্য উদঘাটন

76

চট্টগ্রাম অফিস: কক্সবাজার পিবিআই পুলিশ উখিয়ার “সোহেল অপহরণ” মামলার রহস্য উদঘাটন করেছেন।
বাদী রোহিঙ্গা শরণার্থী কুতুপালং রুজিয়া (২৬) কক্সবাজার জেলার উখিয়া থানায় লিখিত এজাহারে জানায় যে, বাদীর স্বামীর সহিত পূর্ব শত্রুতার জের ধরে গত ২০২০ সালের ৭ অক্টোবর রাত আনুমানিক সাড়ে ১১টায় আসামী মোঃ করিম (৪০), শাহেদ (৩০), মুহিব্বুল্লাহ (৩০), হামিদ (৪০) শফি উল্লাহ (৩০), ফরিদ (২৭) প্রমুখ তার বসতগৃহে অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে শিশু সন্তান মোঃ সােহেল (৬) কে জোরপূর্বক অপহরণ করে অজ্ঞাত স্থানে নিয়ে যায়। উখিয়া থানার অফিসার ইনচার্জ মামলা নং- ২৯, তারিখ- ১১/১০/২০২০ ইং ধারা- ৩৬৫/৫০৬/৩৪ পেনাল কোড রুজু করে তদন্তের ব্যবস্থা করেন।

উখিয়া থানার এসআই(নিঃ) মোঃ মনিরুল ইসলাম মামলাটি দীর্ঘ ০৮ মাস তদন্ত করেন। মামলাটি তদন্তাধীন অবস্থায় পুলিশ হেডকোয়ার্টার্স এর নির্দেশে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন কক্সবাজার জেলা মামলাটির তদন্তভার গ্রহন করে।

উপ-পুলিশ পরিদর্শক (নিঃ)/মোহাম্মদ ইকবাল হোসেন মামলাটি প্রকাশ্যে ও গোপনীয়ভাবে ব্যাপক তদন্ত করেন। ঘটনাস্থলের আশ পাশের লোকজনদের জিজ্ঞাসাবাদে জানতে পারেন যে, বাদী রুজিয়ার কোন সন্তানাদি ছিল না। তিনি বিগত ২০১৭ ইং সনে মায়ানমার হতে বাংলাদেশে আসেন। বাদীর এফ.সি.এন নং- ১৩৪৬৮৮ এ তার ছেলে মোঃ সোহেল এর ছবি পাওয়া যায়। বাদীকে জিজ্ঞাসাবাদে বাদীর স্বামীর ঠিকানা জানতে চাইলে তার স্বামীর সাথে এক বছর ধরে যোগাযোগ নাই এবং তার ঠিকানাও জানা নাই বলে জানায়। খোঁজাখুজির একপর্যায়ে বাদীর স্বামী মোঃ সেলিম (২৯) কে খুঁজে পাওয়া যায়। বাদীর স্বামী মোঃ সেলিমকে জিজ্ঞাসাবাদে তিনি জানায় যে, বাদী রুজিয়া তার ২য় স্ত্রী। তাকে তিনি ২০১৮ ইং সনে বিবাহ করেন। বিবাহের পর তার বর্তমান ঠিকানায় কুতুপালং এ রুজিয়া কিছুদিন বসবাস করার পর এক বছর পূর্বে অন্যত্র চলে যায়। বাদীর স্বামী মোঃ সেলিমের ঔরষে বাদীর গর্ভে তার কোন সন্তানাদি হয়নি। তার প্রথম স্ত্রী জমিলার গর্ভে দুটি সন্তান আছে। প্রথম ছেলে সন্তানের নাম আজিজুর রহমান (৭) এবং ২য় মেয়ে সন্তানের নাম আয়েশা সিদ্দিকা। তিনি আরো জানায় যে, তার সন্তানকে কেউ অপহরণ করেনি। বাদীর এফ.সি.এন. কার্ডে প্রদত্ত ছবিটি বাদীর স্বামী মোঃ সেলিম ও তার প্রথম স্ত্রী জমিলা তাদের সন্তান আজিজুর রহমানের ছবি বলে সনাক্ত করেন। আজিজুর রহমানকে জিজ্ঞাসাবাদে সে জানায় যে, অনেকদিন আগে তার সৎ মা রুজিয়া তাকে কাপড় কিনে দিবে বলে নিয়ে গিয়ে ছবি তুলে নেয়। পরবর্তীতে বাদী আজিজুর রহমানকে নিজের সন্তান মোঃ সোহেল দেখিয়ে এফ.সি.এন নং- ১৩৪৬৮৮ তৈরী করেন। গত ০৩/০৬/২০২১ ইং তারিখে অত্র মামলার ভিকটিম আজিজুর রহমান (৭), বাদীর স্বামী সাক্ষী মোঃ সেলিম (২৯), বাদীর স্বামীর প্রথম স্ত্রী সাক্ষী জমিলা বেগম (২৭), প্রতিবেশী সাক্ষী সাবেকুন্নাহার (৩০)’গণ ফৌজদারী কার্যবিধি ১৬৪ ধারা মতে সাক্ষী হিসাবে বিজ্ঞ আদালতে জবানবন্দী প্রদান করেন। বাদী রেশন সামগ্রীসহ অধিক সুযোগ সুবিধার জন্য নিজের সন্তান না থাকা সত্ত্বেও বাদীর স্বামীর প্রথম স্ত্রীর সন্তানকে নিজের সন্তান দেখিয়ে এফ.সি.এন নং- ১৩৪৬৮৮ তৈরী করেন।

এ বিষয়ে পিবিআই কক্সবাজার জেলা ইউনিট ইনচার্জ পুলিশ সুপার জনাব মোহাম্মদ সারোয়ার আলম জানান, দায়িত্ব পাওয়ার পর আমরা গভীরভাবে মামলাটি তদন্ত করি। মামলার বাদীর কথিত ঘটনাস্থলটি ভুল উল্লেখ করে মামলা দায়ের করেন। মামলার বাদী মামলা করার পর নিজেকে গোপন রাখার জন্য বারবার নিজের ঠিকানা পরিবর্তন করেন। ফৌজদারী কার্যবিধি ১৬৪ ধারা মতে ভিকটিম ও সাক্ষীদের জবানবন্দীতে মামলার মূল রহস্য উদঘাটিত হয়।