Home রাজনীতি ইসি পুনর্গঠন নিয়ে আলোচনা ভোট চুরির প্রক্রিয়ার অংশ–ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় আমির খসরু

ইসি পুনর্গঠন নিয়ে আলোচনা ভোট চুরির প্রক্রিয়ার অংশ–ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় আমির খসরু

37

ব্রাহ্মণবাড়িয়া প্রতিনিধি: বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেছেন, নতুন নির্বাচন কমিশন (ইসি) পুনর্গঠন নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে রাষ্ট্রপতি যে আলোচনা শুরু করছেন-সেটি আগামী নির্বাচনে ভোট চুরির একটি প্রক্রিয়ার অংশ। তিনি বলেন, ১৪৪ ধারা আর কোথাও দিয়ে লাভ হবে না। ধারার সময় শেষ হয়ে গেছে। অন্যান্য জায়গার মতো ব্রাহ্মণবাড়িয়াতেও ধারা কাজ হয়নি। জোয়ার শুরু হলে বাধা দিয়ে রাখা যায় না।
তিনি শনিবার বিকেলে ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর উপজেলার নাটাই উত্তর ইউনিয়নের বটতলি বাজরে আয়োজিত সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এ কথা বলেন। আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, এখন নাকি আলোচনা শুরু হয়েছে। রাষ্ট্রপতি আলোচনা শুরু করেছেন। কীসের আলোচনা ? যারা ২০০৯, ২০১৪ ও ২০১৮ তে ভোট চুরি করেছে- সেই চক্র আগামী নির্বাচন ভোট কী ভাবে চুরি করবে। সেই আলোচনা চলছে। এই আলোচনাটা মূলত আগামী নির্বাচনের ভোট চুরির প্রক্রিয়ার অংশ। দেশের মানুষ নিবিড় ভাবে ভোট চোরদের পর্যবেক্ষণ করছে। তিনি বলেন, চোরদের বলতে চাই-সেই পথ থেকে সরে আসুন। বাংলাদেশ জেগে উঠেছে। ভোট চোর ধরতে হবে। যেখানেই এই চোরদের দেখবেন-জনগণের সামনে তুলে ধরবেন। এদের বলবেন তুই চোর-ভোটচোর। এদেরকে সামাজিক ভেবে বয়কট করতে হবে।
বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার নিঃশর্ত মুক্তি ও তাকে উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশে যেতে দেওয়ার দাবিতে এ সমাবেশের আয়োজন করে ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা বিএনপি। বিশেষ অতিথির বক্তব্য কেন্দ্রীয় বিএনপির আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক ব্যারিস্টার রুমিন ফারহানা এম.পি বলেন, বেগম জিয়া কারাগারে হেঁটে গেছেন। এখন নিজের পায়ে দাঁড়াতে পারেন না। এর দায় সরকারকে নিতে হবে।

সমাবেশে প্রধান বক্তা ছিলেন বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আবুল খায়ের। জেলা বিএনপির আহবায়ক কমিটির সদস্য ও সাবেক জেলা বিএনপি’র সভাপতি হাফিজুর রহমানের সভাপতিত্বে সমাবেশে বক্তব্য রাখেন ব্যারিস্টার রুমিন ফারহানা এমপি, অর্থ বিষয়ক সম্পাদক ইঞ্জিনিয়ার খালেদ হোসেন মাহবুব শ্যামল ও সাবেক প্রবাসী কল্যাণ বিষয়ক সম্পাদক এ. কে. একরামুজ্জামান সুখন প্রমুখ।

এদিকে, ১৪৪ ধারা জারির পর কার্যত এক প্রকার অচল হয়ে পড়ে ব্রাহ্মণবাড়িয়া। নিষেধাজ্ঞা উপেক্ষা করেই ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় বিএনপি’র সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়েছে। জেলার বিভিন্ন স্থান থেকে খন্ড খন্ড মিছিল নিয়ে সমাবেশে যোগ দেয় নেতাকর্মীরা। তবে কোন প্রকার অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেনি। অবসান হয়েছে শ্বাসরুদ্ধকর অবস্থার। বিএনপি’র মহাসমাবেশ ঘিরে শুক্রবার থেকেই উত্তেজনাকর পরিবেশ সৃষ্টি হয় ব্রাহ্মণবাড়িয়ায়। শহরের ফুলবাড়িয়া কনভেনশন সেন্টার এলাকায় বিএনপি’র চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার উন্নত চিকিৎসা ও মুক্তির দাবীতে মহা সমাবেশ আহবান করে। এজন্য মৌখিক অনুমতিও পায় প্রশাসনের। এর মধ্যে জেলা ছাত্রলীগ প্রতিষ্ঠা বার্ষিকী উপলক্ষে ছাত্র সমাবেশ আহবান করে ওই এলাকায়। শনিবার দুপুরে দুটি সংগঠনের সমাবেশ আহবান করায় উত্তেজনাকর অবস্থার সৃষ্টি হয়। শুক্রবার রাতে জেলা প্রশাসক ও জেলা ম্যাজিষ্ট্রেট হায়াত উদ দৌলা খান স্বাক্ষরিত এক পত্রে পৌর এলাকায় ১৪৪ ধারা জারি করে সভা সমাবেশ নিষিদ্ধ করা হয়। এর আগেই জেলা বিএনপি’র শীর্ষ ৩ নেতাকে পুলিশ হেফাজতে নেয়া হয়। এর হলেন জেলা বিএনপির আহ্বায়ক জিল্লুর রহমান এবং সদস্য ও জেলা বিএনপি’র সাবেক সাধারন সম্পাদক জহিরুল হক খোকন, সদস্য ও জেলা বিএনপি’র সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক সিরাজুল ইসলাম। অপ্রীতিকর ঘটনা রোধে ৬শতাধিক পুলিশ সদস্য মোতায়েন করা হয় শহরের ৫২টি পয়েন্টে। জেলার আভ্যন্তরীন গণ পরিবহন বন্ধ থাকে। সকাল থেকেই পৈরতলা বাস স্ট্যান্ডসহ বিভিন্ন বাস কাউন্টারগুলো বন্ধ রয়েছে। শহরের ভাদুঘর পৌর বাস টার্মিনাল থেকেও দূরপাল্লার কোনো বাস ছেড়ে যায়নি। নাম প্রকাশ না করার শর্তে কয়েকটি বাস কাউন্টারের কর্মকর্তারা জানান, ভোরে কাউন্টারগুলো খোলা হয়েছিল। কিন্তু কিছুক্ষণ পর এসে পুলিশের পক্ষ থেকে কাউন্টার বন্ধ রাখতে বলা হয়। এতে হাজার হাজার মানুষ দুর্ভোগে পড়ে। কনভেনশন সেন্টার এলাকায় বিপুল সংখ্যক পুলিশ মোতায়েন করা হয়।

ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আশুগঞ্জে সংরক্ষিত নারী আসনের সংসদ সদস্য ব্যারিস্টার রুমিন ফারহানার গাড়ি সমাবেশ স্থলে আসার আগে আশুগঞ্জ এলাকায় আটকে দেয় পুলিশ। টোল প্লাজা এলাকায় বিপুল সংখ্যক পুলিশ মোতায়েন করা হয়। পরে রুমিন ফারহানা এমপি স্থানীয় উজানভাটি হোটেলে অবস্থান নেন। সেখান থেকে প্রায় দুই ঘন্টা পর তারা সমাবেশ স্থলে রওয়ানা হন।

এর মধ্যে জেলা বিএনপি’র পক্ষ থেকে সমাবেশের প্রস্তুতি চলতে থাকে। শহরতলীর ঘাটুরা, মীরহাটি ও বটতলী এলাকায় পৃথক দুটি স্থান নির্বাচন করে কর্মীরা সেখানে জড়ো হতে থাকে। পরে কেন্দ্রীয় নেতারা বটতলী এলাকায় সমাবেশ করার সিদ্ধান্ত নিলে দুপুর ২টা থেকে জেলার বিভিন্ন স্থান থেকে আসা মানুষ যোগ দেয়। জেলার নাসিরনগর, আখাউড়া, কসবা, সরাইল, বিজয়নগর, নবীনগর, বাঞ্ছারামপুর দলীয় কর্মীরা সমাবেশে যোগ দেয়। সমাবেশে যোগ দিতে আসা পথে পথে নানা ধরনের বাধা বিপত্তি মধ্যে পড়ে ।