Home রাজনীতি আ স ম ফিরোজের বিরুদ্ধে বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে কটূক্তির অভিযোগ খারিজ, বাদী ...

আ স ম ফিরোজের বিরুদ্ধে বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে কটূক্তির অভিযোগ খারিজ, বাদী উচ্চ আদালতের স্মরণাপন্ন হবেন

46

আহমেদ জালাল : জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিবারে হত্যার ষড়যন্ত্র এবং ১৯৭৫ সালে বঙ্গবন্ধুর ছবি ভাঙচুর ও কটূক্তি করার অভিযোগ এনে পটুয়াখালী-২ (বাউফল) আসনের সাংসদ, সাবেক চিফ হুইপ ও বিএম কলেজ ছাত্র সংসদের সাবেক ভিপি আ.স.ম. ফিরোজের বিরুদ্ধে দায়েরকৃত অভিযোগ খারিজ করে দিয়েছেন আদালত। সোমবার (২০ ডিসেম্বর) বিকেলে পটুয়াখালী চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের বিচারক মো. জামাল হোসেন ২০১ ধারায় মামলার আবেদনটি খারিজ করে দিয়েছেন। এরআগে বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে কটূক্তির অভিযোগে গত ১৪ ডিসেম্বর সাংসদ আ স ম ফিরোজের বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করা হয়। রোববার (১৯ ডিসেম্বর) আদেশের দিন ধার্য্য ছিল। যদিও একদিন পর সোমবার এই আদেশ দেওয়া হয়। বাদী পক্ষের আইনজীবী মো. জাহাঙ্গীর হোসেন এর সত্যতা নিশ্চিত করেছেন। আবেদনটি খারিজ হওয়ায় বাদী সংক্ষুব্ধ ও ব্যথিত। বাদীপক্ষের আইনজীবী জাহাঙ্গীর হোসেন সাংবাদিকদের জানান, নিম্ন আদালতের আদেশে বাদী সংক্ষুব্ধ হয়ে উচ্চ আদালতের স্মরণাপন্ন হবেন।
প্রসঙ্গত, জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিবারে হত্যার ষড়যন্ত্র এবং ১৯৭৫ সালে বঙ্গবন্ধুর ছবি ভাঙচুর ও কটূক্তি করার অভিযোগ এনে পটুয়াখালী-২ (বাউফল) আসনের সাংসদ, সাবেক চিফ হুইপ ও বিএম কলেজের সাবেক ভিপি আ.স.ম. ফিরোজের বিরুদ্ধে বাউফল ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের শ্রম বিষয়ক সম্পাদক মো. জাহিদুল হক(৪৬) বাদী হয়ে মঙ্গলবার (১৪ ডিসেম্বর) পটুয়াখালী চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মো. জামাল হোসেনের দ্বিতীয় আমলী আদালতে মামলাটি দায়ের করেন। (মামলা নম্বর সি আর ৫২০/২১)। আদালতের বিচারক মোঃ জামাল হোসেন আগামী ১৯ ডিসেম্বর আদেশের জন্য দিন ধার্য্য করেছিলেন। অবশ্য ২০ ডিসেম্বর মামলার আবেদনটি খারিজ করে দেন আদালত।
মামলার অভিযোগে উল্লেখ করা হয়েছে, গত ৯ ডিসেম্বর বেলা পৌণে ১২টায় বাউফল উপজেলা আওয়ামী লীগের দলীয় অফিসে বসে স্থানীয় সংসদ সদস্য ও সাবেক চিফ হুইপ আ.স.ম. ফিরোজ নেতা কর্মীদের সাথে আলাপকালে বলেন, ‘জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান খুন হওয়ার পর বঙ্গবন্ধুর ছবিতে জুতা ঝাটা লাগিয়ে আনন্দ মিছিল করেছি। তাতেই কিছু হয়নি, আর বাউফল আওয়ামী লীগের ত্যাগী নেতাকর্মীরা যারা আমার বিরুদ্ধে কাজ করে তাদের ডজন খানেক খুন করলেও আমার (আ.স.ম. ফিরোজ) এর কোনো ক্ষতি হবে না। ওই দিন বাদী সেখানে উপস্থিত থেকে এই কথা শুনে শিউরে ওঠেন এবং পরবর্তীতে তিনি ৭৫ সালের সেই ঘটনা সম্পর্কিত তথ্য উপাত্ত সংগ্রহ করেন। এরপর রোববার ১২ ডিসেম্বর বাউফল থানায় মামলা করতে গেলেও পুলিশ মামলা নেয়নি। এরইপরিপ্রেক্ষিতে মঙ্গলবার(১৪ ডিসেম্বর) আদালতে মামলাটি দায়ের করেছিলেন।
এ মামলায় তৎকালীন বরিশাল জেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক ও বর্তমান আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য সাবেক প্রতিমন্ত্রী জাহাঙ্গীর কবির নানক, ১৯৭৫ সালের বরিশাল ছাত্রলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক খান আলতাফ হোসেন ভুলু, বাউফল উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক জসিম উদ্দিন ফরাজীসহ ১০ জনকে সাক্ষী করা হয়েছে।
৪৬ বছর আগে বরিশালের ছাত্রলীগ নেতা থাকাবস্থায় ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট ফিরোজ বঙ্গবন্ধুর প্রতি চরম অবমাননার পাশাপাশি তাঁর ছবি পা দিয়ে মাড়িয়ে ভাঙচুর করেন বলে অভিযোগ আনা হয়েছে মামলায়। বঙ্গবন্ধুর ছবি ভাঙচুরের পাশাপাশি বিভিন্ন সময়ে রাজনৈতিক নানা অপকর্মের সঙ্গে জড়িত থাকারও অভিযোগও আনা হয়েছে ফিরোজের বিরুদ্ধে। বিভিন্ন সময়ে আওয়ামী লীগের রাজনীতি প্রশ্নে দলের অভ্যন্তরে বিভেদ সৃষ্টি, স্বাধীনতা বিরোধীদের পক্ষে কাজ করা, রাজাকার আলবদরদের পুনর্বাসন, ক্ষমতার অপব্যবহার, চরম অনিয়ম দুর্নীতি এবং নিজের ক্ষমতা টিকিয়ে রাখতে সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডে লিপ্ত থাকেন।
মামলার আরজিতে উল্লেখ করা হয়, বরিশাল ব্রজমোহন কলেজ ছাত্র সংসদের সাবেক ভিপি আ স ম ফিরোজ ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট রাতে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সপরিবার নিহত হওয়ার খবর বরিশালে পৌঁছালে বঙ্গবন্ধুর ছবি মাটিতে ফেলে পদদলিত করেন পটুয়াখালী-২ (বাউফল) আসনের সাংসদ আ স ম ফিরোজ। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিবারে হত্যা করার পর বরিশাল শহরে তৎকালীন বরিশাল জেলা ছাত্রলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক খান আলতাফ হোসেন ভুলুর নেতৃত্বে প্রতিবাদ মিছিল বের করা হয়। মিছিলটি সকাল আটটার দিকে পেশকার বাড়ির সামনে পৌঁছালে আ স ম ফিরোজের নেতৃত্বে মিছিলে হামলা করা হয়। পরে হামলাকারীরা বরিশাল অশ্বিনী কুমার হলের উত্তর পাশে আওয়ামী লীগ কার্যালয়ে ঢুকে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ছবি নামিয়ে ভাঙচুর করে আর উল্লাস করে। এবং আ.স.ম. ফিরোজের নেতৃত্বে বঙ্গবন্ধুর ছবিতে জুতার মালা পড়িয়ে শহরে আনন্দ মিছিল বের করা হয়।
এদিকে, সাবেক চিফ হুইপ পটুয়াখালী-২ আসনের সাংসদ আ স ম ফিরোজের বিরুদ্ধে গত ১৪ ডিসেম্বর আদালতে অভিযোগ দায়ের করার পর থেকে বাদী আওয়ামী লীগ নেতা মো. জাহিদুল হককে অব্যাহত প্রাণনাশের হুমকি দেওয়া হয়।
মামলার বাদী আওয়ামী লীগ নেতা মো. জাহিদুল হক সাংবাদিকদের বলেছিলেন, আদালতে অভিযোগ দায়েরের পর থেকে সাংসদ পক্ষের লোকজন তাঁকে প্রাণনাশের হুমকি দিচ্ছেন। তাঁর ভাষ্য, গত মঙ্গলবার (১৪ ডিসেম্বর) রাতে তাঁর ভাইয়ের ঘরে ইটপাটকেল নিক্ষেপ করা হয়েছে। তিনি জীবনের চরম নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন। রাতে বাড়িতে ঘুমাতে পারছেন না।’
সাংসদ আ স ম ফিরোজ সাংবিদকদের বলেন, একটি দল আমাকে নয় বার নমিনেশন দিয়েছেন। আমার সম্পর্কে নেত্রী এবং কেন্দ্রিয় নেতারা সব জানেন। এজন্য আমাকে বার বার দলীয় মনোনয়ন দিয়েছেন ও চিফ হুইপ করেছেন। তাঁর ভাষ্য, ৭০’র দশকে যারা বিএম কলেজে ছাত্ররাজনীতিতে আমার সঙ্গে পেরে ওঠেনি, তারাই এসব মিথ্যাচার ছড়াচ্ছেন। এগুলো যাঁরা করেন, তাঁরা বাউফলবাসীকে অসম্মান করছেন।
বলাবাহুল্য : আ স ম ফিরোজ ১৯৬৯-৭০ সালে ছাত্র সংসদের (বাকসু) ভিপি ছিলেন। পরে পটুয়াখালী-২ আসননে ১৯৭৯ সালে আওয়ামী লীগের একাংশের (মিজান) মনোনয়নে প্রথম এমপি হন। এরপর ১৯৮৬, ১৯৯১, ১৯৯৬, ২০০৮, ২০১৪ এবং ২০১৮ সালে সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের টিকিটে বিজয়ী হন।