Home মতামত আফগানিস্তানের ভবিষ্যৎ কী?

আফগানিস্তানের ভবিষ্যৎ কী?

53

দীর্ঘ বিশ বছর পর আফগানিস্তানের রাষ্ট্রক্ষমতা আবার তালেবানের হাতে। এর আগে ১৯৯৬ থেকে ২০০১ সাল পর্যন্ত তারা ক্ষমতায় ছিল। অবশ্য এরও আগে ১৯৯২ সালে নজিবুল্লাহ সরকারের পতনের পর থেকেই মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মদদপুষ্ট হয়ে তারা আফগানিস্তানে নানাবিধ তৎপরতা চালিয়ে আসছিল, যদিও ২০০১ সালে যুক্তরাষ্ট্রই আবার তাদের পদচ্যুত করে। সে যা হোক, ১৯৯৬ থেকে ২০০১ সাল পর্যন্ত সময়ের কর্মকাণ্ডের নিরিখে গড়ে ওঠা ভাবমূর্তিই বস্তুত এখন পর্যন্ত তাদের বিষয়ে বিশ্বব্যাপী সাধারণ জনমত।

তবে এটাও ঠিক যে, সে জনমত অনেকটাই মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও তার মিত্রদের বৈদেশিক নীতি-কৌশল এবং পশ্চিমা সংবাদমাধ্যমের প্রচারণা দ্বারা প্রভাবিত। এমনি প্রেক্ষাপটে তালেবান দ্বিতীয় পর্যায়ে ক্ষমতায় আসার পর স্বভাবতই তাদের পুরোনো ভাবমূর্তির সূত্র ধরে বিশ্বজুড়ে ব্যাপকসংখ্যক মানুষের মধ্যে এ আশঙ্কাই দেখা দিয়েছে যে, আফগানিস্তান কি তাহলে আবার সেই আগের জঙ্গিবাদী শাসনেই ফিরে যাচ্ছে?

এ প্রশ্নের উত্তর অতটা সরল নয়, যতটা সহজে বেশিরভাগ মানুষ পশ্চিমি সংবাদমাধ্যমের তথ্য ও মতামতকে অকাট্য ধরে নিয়ে এক লহমায় তাদের অভিব্যক্তি প্রকাশ করে বসছেন। প্রথম কথা হচ্ছে : এটি ঠিক যে, তালেবানের দীর্ঘকালীন পরিচিতি একটি ধর্মীয় মৌলবাদী রাজনৈতিক গোষ্ঠী হিসাবে, যারা ব্যক্তি ও সমাজের অধিকারকে বরাবরই ধর্মান্ধতার খোলসে আটকে রাখতে চেয়েছে। তবে বিষয়টি পরিষ্কার হওয়া দরকার যে, তাদের এরূপ পরিচয় ওই ভূখণ্ডে হঠাৎ করে আবির্ভূত কোনো চিন্তা, ধারণা বা মতবাদ থেকে তাড়িত ঘটনা নয়। বহুসংখ্যক গোত্র ও জাতিগোষ্ঠীতে বিভক্ত পাহাড়-পর্বত অধ্যুষিত রুক্ষ মাটির চরম ভাবাপন্ন আবহাওয়ার (শীতে-৯ আর গ্রীষ্মে ৪৯ ডিগ্রি সেলসিয়াস) ওই দেশটির জনগণ বরাবরই শিক্ষার আলো থেকে বঞ্চিত। দীর্ঘকাল ধরে বস্তুত কুরআন পাঠই ছিল সেখানকার মূল শিক্ষা, যার রেশ এখনো কেটে যায়নি। আর সে কারণে কুরআন মুখস্থকারী ‘মোল্লা’ই হচ্ছেন সেখানকার গ্রামীণ সমাজের (আফগানিস্তানের ৭৭ শতাংশ এলাকাই গ্রাম অধ্যুষিত) মূল নিয়ন্ত্রক ও অভিভাবক। আর এ মোল্লাদেরই সাংগঠনিক পরিচয় হচ্ছে ‘তালেবান’, যারা ১৯৯৬ সালে ক্ষমতা দখল করলেও এর বহু আগে থেকেই আফগান সমাজে তাদের অলিখিত সদর্প উপস্থিতি বিরাজমান রেখেছে এবং এখনো যা অব্যাহত আছে।

এ রকম একটি আর্থ-সামাজিক বাস্তবতায় তালেবানরা যে মার্কিন অভিভাবকত্ব এবং অস্ত্রশস্ত্র ও রসদপুষ্ট ক্ষমতাসীন সরকারকে অতি সহজেই হটিয়ে দিয়ে পুরো আফগানিস্তান দখল করে নিতে পারল, এতে মোটেও অবাক হওয়ার কিছু নেই। বরং বলা যেতে পারে, গত ২০ বছর ধরে তালেবান রাষ্ট্রক্ষমতায় না থাকলেও সমাজে এরা ভালোভাবেই টিকে ছিল। অন্যদিকে, ২০ বছরের এ সময়কালে মার্কিন সমর্থনপুষ্ট সরকারগুলো ক্ষমতায় থাকলেও সমাজে তাদের কোনো ভিত্তিই ছিল না বা সেরূপ ভিত্তি গড়ে তোলার কোনো চেষ্টাও তারা করেনি। কারণ ক্ষমতায় থাকার জন্য তারা একচ্ছত্রভাবে নির্ভর করেছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের শক্তির ওপর। অথচ এ ক্ষেত্রে জনগণের শক্তি ও সমর্থনই যে মূল বিষয়, সেটি তারা কখনোই ভেবে দেখেনি। তারা যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে নিবিড় সখ্য রক্ষায় যতটা মনোযোগী থেকেছে, ততটাই নির্লিপ্ত থেকেছে সাধারণ জনগণের স্বার্থরক্ষায়। আর যেটুকু করেছে, সেটিও করেছে মূলত শহরকেন্দ্রিক বিশেষ সুবিধাবাদী গোষ্ঠীর স্বার্থে। ফলে গত ২০ বছরের শাসনে তালেবানকে হয়তো ঠেকানো গেছে। কিন্তু সাধারণ মানুষের সঙ্গে ওই সময়কার সরকারের বিচ্ছিন্নতা আরও বেড়ে গিয়েছিল।

একইভাবে বিগত সরকারের কর্মচারী ও নিরাপত্তারক্ষী বাহিনীর সদস্যরাও ভেবেছে, মার্কিন সামরিক বাহিনীই তাদের রক্ষাকারী। ফলে জনগণের মধ্যে নিজেদের গ্রহণযোগ্যতা সৃষ্টির কোনো চেষ্টা তো তারা করেইনি, এমনকি নিজেদের পেশাদারিত্বের জায়গাটিও দক্ষতার সঙ্গে গড়ে তোলেনি। আর এসব কিছুর সম্মিলিত ফল দাঁড়িয়েছে এই যে, মার্কিন বাহিনীর বড় অংশ চলে যাওয়ার পর তালেবান তেমন বড় কোনো বাধাবিপত্তি ছাড়াই পুরো আফগানিস্তান অনায়াসে দখল করে নিতে পারল। গণমাধ্যমের খবর, বিগত আফগান সরকারের কর্মচারী ও নিরাপত্তারক্ষীদের একটি বড় অংশ ইতোমধ্যে তালেবানের সঙ্গে যোগ দিয়েছে বা তাদের সঙ্গে মিশে গেছে।

এদিকে বিবিসি, আল-জাজিরা ও অন্যান্য পশ্চিমা সংবাদমাধ্যমে তালেবানের ক্ষমতা দখলের পরিপ্রেক্ষিতে আফগান নারী ও নাগরিক সমাজের সদস্যদের উদ্ধৃতি দিয়ে সেখানে ব্যাপকভাবে মানবাধিকার লঙ্ঘিত হওয়া ও গৃহযুদ্ধ বেধে যাওয়ার যে আশঙ্কা ব্যক্ত করা হয়েছে, সেটির ব্যাখ্যা তাহলে কী? জবাব হচ্ছে, এ আশঙ্কা অমূলক নয়। তবে এরূপ আশঙ্কার নেপথ্যের কারণগুলো স্পষ্ট হওয়া প্রয়োজন। নানা শাহ-সম্রাটদের শাসনাধীন আফগান সমাজ দীর্ঘকাল থেকেই চরম বৈষম্যপীড়িত। তবে গত ২০ বছরে সে বৈষম্য আরও অধিক হারে বেড়েছে, বিশেষত গ্রামীণ সমাজের সঙ্গে শহুরে নাগরিক সমাজের। এ সময়ের মধ্যে রাষ্ট্রীয় সুযোগ-সুবিধার যে ধরনের বিলি-বণ্টন হয়েছে, তা মূলত ভোগ করেছে নাগরিক সমাজের সদস্যরা। সুবিধাবঞ্চিত গ্রামগুলো যেখানে ছিল, সেখানেই রয়ে গেছে। আর নাগরিক সমাজের সুবিধা বণ্টন কার্যক্রমের আওতায় শিক্ষার সুযোগ লাভের পাশাপাশি পশ্চিমি ধাঁচের মানবাধিকার ভোগকারী নাগরিক সমাজের ওই সদস্যরাই বস্তুত এ মুহূর্তে তালেবানের দ্বারা মানবাধিকার লঙ্ঘনের আশঙ্কায় আছেন, যা গ্রামীণ আফগান সমাজকে খুব কমই স্পর্শ করছে। আর গৃহবিবাদের আশঙ্কাটিও বস্তুত ওই গ্রামীণ ও শহুরে নাগরিকদের মধ্যকার সম্ভাব্য বিবাদেরই ইঙ্গিত বহনকারী। উল্লেখ্য, তালেবান বস্তুত ওই গ্রামভিত্তিক মোল্লাদেরই সংগঠন।

যুক্তরাজ্যের কাছ থেকে আফগানিস্তান স্বাধীনতা লাভ করে ১৯১৯ সালে। এরই মধ্যে ১০০ বছর পেরিয়ে গেলেও দেশটিতে জনপ্রতিনিধিত্বভিত্তিক রাষ্ট্রব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার চেষ্টা প্রায় কখনোই দেখা যায়নি। প্রকৃতপক্ষে বিভিন্ন রাজরাজড়া ও পরোক্ষ বিদেশি শক্তিই অদ্যাবধি দেশটিকে নিয়ন্ত্রণ করেছে (যদিও শেষ পর্যন্ত কেউই টিকতে পারেনি, যেমন পারেনি যুক্তরাষ্ট্রও)। বিভিন্ন গোত্র ও জাতিগোষ্ঠীর পছন্দমাফিক প্রতিনিধিরা বিভিন্ন সময়ে সেখানে ক্রীড়নক হিসাবে ব্যবহৃত হয়েছেন মাত্র। আর গত ২০ বছরও তার ব্যতিক্রম কিছু নয়। কিন্তু দুর্ভাগ্যের বিষয়, এ মুহূর্তেও এ দেশের অধিকাংশ লেখাপড়া জানা মানুষ আফগানিস্তানের পরিস্থিতিকে ব্যাখ্যা করছেন অনেকটাই পশ্চিমের চোখে, তাদেরই উপস্থাপিত তথ্য ও মতামতকে সামনে রেখে। আফগান সমাজ ও সেখানকার জনগণের দৃষ্টিভঙ্গি ও চিন্তাভাবনা কী, সেটি প্রায় কখনোই এসব আলোচনার পরিধিতে স্থান পাচ্ছে না। নইলে এ মতামতই কেন বারবার ঘুরেফিরে আসবে যে, মার্কিন সৈন্য চলে গেলে (এখনো সব মার্কিন সৈন্য বিদায় নেয়নি) আফগানিস্তান আবারও গৃহযুদ্ধের মধ্যে পড়ে যাবে! ভাবটা এমন, যেন মার্কিন বাহিনী থেকে গেলেই আফগানিস্তান রক্ষা পেত। কিন্তু দেশটির ইতিহাস সম্পর্কে যারা জানেন, তারা বুকে হাত দিয়ে বলুন তো আফগানিস্তানে গোত্রে গোত্রে বিবাদ কবে ছিল না! সেটি ১৯৯৬ সালে তালেবানের ক্ষমতা দখলের আগেও ছিল, গত বিশ বছর ধরেও ছিল, এখনো আছে এবং তালেবানের ক্ষমতা দখলের পরও আরও বহুদিন থাকবে, যদি না বিশ্ব সম্প্রদায় দেশটিকে নিয়ে তাদের রাজনীতি ও স্বার্থের খেলা বন্ধ করে।

সন্দেহ নেই, তালেবান ধর্মান্ধ ও মৌলবাদী এবং তাদের এ নীতি ও আদর্শকে সমর্থন করার কোনোই কারণ নেই। কিন্তু এ মুহূর্তের বাস্তবতা হচ্ছে, তারাই এখন আফগানিস্তানের রাষ্ট্রক্ষমতায়। ফলে বিশ্ব সম্প্রদায়ের মানবিক দায়িত্ব হবে, ক্ষমতায় আসা তালেবানরা এখন যাতে দেশের সব শ্রেণির মানুষের প্রতি মানবিক আচরণ করে, সে ব্যাপারে তাদের চাপে রাখা এবং একই সঙ্গে এ ব্যাপারে তাদের উদ্বুদ্ধ ও সহায়তা করা। উদ্বুদ্ধ করার প্রসঙ্গটি আসছে এ কারণে যে, তালেবানের আদর্শিক চিন্তাভাবনা যা হোক না কেন, বাস্তবে তারা কিন্তু জনসমর্থনবিহীন নয়। ফলে তাদের যদি মানবিক ও গণতান্ত্রিক চেতনা ও মূল্যবোধ দিয়ে রাষ্ট্র পরিচালনায় উৎসাহী করা যায়, তাহলে এদের মাধ্যমেই হয়তো অদূর ভবিষ্যতে সেখানে একটি আধুনিক সমাজ গড়ে তোলা সম্ভব হবে। এবং সেটি হবে সেই সমাজ, যেখানে আফগানিস্তানের প্রতিটি গোত্রের মোল্লা ও অপরাপর সদস্যরা নারী-পুরুষ নির্বিশেষে তাদের সব সন্তানকে আধুনিক শিক্ষায় শিক্ষিত করে তুলতে আগ্রহী হবেন, ব্যক্তির অধিকার ও স্বাধীনতাকে সম্মান করবেন এবং সর্বোপরি একটি আধুনিক গণতান্ত্রিক সমাজ বিনির্মাণে বিশ্বজনীন চিন্তা ও মূল্যবোধকে ধারণ করে সামনে এগিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করবেন। যতটুকু জানা যায়, তালেবান ইতোমধ্যে বহু ক্ষেত্রে তাদের পূর্ববর্তী রক্ষণশীল ও চরমপন্থি অবস্থান থেকে সরে এসে বৈশ্বিক ধারার সঙ্গে যুক্ত হওয়ার চেষ্টা করছে, যা একটি খুবই ইতিবাচক অগ্রগতি। যুক্তরাষ্ট্র এ মুহূর্তে আফগানিস্তানের প্রত্যক্ষ দৃশ্যপট থেকে সাময়িকভাবে কিছুটা সরে যাওয়ার পরিপ্রেক্ষিতে এ দৃশ্যে যারা নতুন করে আবির্ভূত হচ্ছে, তারা যদি অতিমাত্রায় কূটকৌশলের আশ্রয় না নিয়ে তালেবানকে অগ্রগামী সংস্কারের পথে এগিয়ে যেতে সহায়তা করেন, তাহলে অদূর ভবিষ্যতে আফগানিস্তানের পক্ষেও একটি আধুনিক গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র হয়ে ওঠা খুবই সম্ভব।

তালেবান ধীরে ধীরে সংস্কারের পথে এগোলেও হঠাৎই তারা পুরোপুরি গণতান্ত্রিক হয়ে উঠবে, এমনটি মনে করার কোনোই কারণ নেই। তবে এটি বেশ দৃঢ়তার সঙ্গেই বলা যায়, তাদের চিন্তাভাবনা দেশটির বৃহত্তর গ্রামীণ সমাজের সংখ্যাগরিষ্ঠ সাধারণ মানুষের ঐতিহ্যিক চিন্তাচেতনার সঙ্গে খুব একটা বৈসাদৃশ্যপূর্ণ নয়, তা সেটি যত পশ্চাৎপদ চিন্তাভাবনাই হোক না কেন। আর সে অবৈসাদৃশ্যতার কারণেই তালেবান এত সহজে কাবুলের প্রেসিডেন্ট প্রাসাদ দখল করে নিতে পেরেছে এবং জনপ্রত্যাশা থেকে যোজন যোজন দূরে অবস্থান করার কারণেই সদ্য বিতাড়িত প্রেসিডেন্ট আশরাফ ঘানির বাহিনী তালেবানের বিরুদ্ধে বিন্দুমাত্র কোনো প্রতিরোধ গড়ে তুলতে পারেনি। তালেবানরা যে ধর্মান্ধ, জঙ্গি ও মৌলবাদী, সে দোষ তো তাদের নয়। বিশ্ব সম্প্রদায়ের নানা অংশ নানা সময়ে তাদের নিজেদের প্রয়োজনেই এদের ধর্মান্ধ করে রেখেছে। যুগ যুগ ধরে শিক্ষার আলোবঞ্চিত আফগানিস্তানের দুঃখী সাধারণ মানুষকে সবাই শুধু ব্যবহার করেছে, কেউ তাদের পাশে দাঁড়ায়নি। সবাই অস্ত্র কেনার জন্য তাদের অঢেল অর্থ দিয়েছে, কিন্তু শিক্ষা ও স্বাস্থ্যের জন্য ন্যূনতম সহায়তা নিয়েও কেউ পাশে দাঁড়ায়নি। ফলে ৩৮ শতাংশ শিক্ষার হার আর ৩.৩ শতাংশ জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার নিয়ে তারা যে ধর্মান্ধ মৌলবাদী হবে সেটাই তো স্বাভাবিক।

বৈশ্বিক মানদণ্ডে পরিচালিত বিভিন্ন সামাজিক ও নৃতাত্ত্বিক গবেষণার ফলাফল সাক্ষ্য দেয়, বহুসংখ্যক গোত্র-গোষ্ঠীতে বিভক্ত আফগান সমাজে গোত্রে গোত্রে দ্বন্দ্ব-সংঘাত হয়তো যথেষ্টই আছে। কিন্তু তাদের গড়পড়তা সততা, নিষ্ঠা ও বিশ্বাসযোগ্যতা অধিকাংশ এশীয় জাতিগোষ্ঠীর চেয়ে অগ্রগামী। তবে এরপরও যে তারা জঙ্গি বা মৌলবাদী হয়ে উঠেছে, সেটি তাদের জিনগত চারিত্রিক বৈশিষ্ট্যের কারণে নয়-একটি ক্রমাগত শিক্ষা ও জ্ঞানবিহীন জীবনচর্চাই তাদের এমনটি করে তুলেছে। আসুন, শিক্ষাহীনতার অভিশাপ থেকে মুক্ত করার মাধ্যমে তাদের ধর্মান্ধতা ও জঙ্গিপনা থেকে মুক্ত করে তাদের আত্মনিয়ন্ত্রণের অধিকার তাদের হাতেই তুলে দিই। হলফ করে বলতে পারি, এটি করা গেলে আগামী এক থেকে দেড় দশকের ব্যবধানে আফগানিস্তানে আর একজন নাগরিককেও জঙ্গি পরিচয়ে খুঁজে পাওয়া যাবে না। বরং দক্ষিণ এশিয়া থেকে মধ্য এশিয়ায় প্রবেশদ্বার হিসাবে আফগানিস্তানই হয়ে উঠবে এ অঞ্চলের অন্যতম শক্তিশালী গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র। সার্কের সদস্য হিসাবে এ ব্যাপারে বাংলাদেশ যেমন তাদের সহায়তা করতে পারে, মধ্য এশিয়ায় বাণিজ্য সম্প্র্রসারণের লক্ষ্যে আফগানিস্তানকে ব্যবহার করে বাংলাদেশ এ থেকে উপকৃতও হতে পারে। সব মিলিয়ে ২০৪০ সাল নাগাদ আমরা একটি জঙ্গিবাদমুক্ত আধুনিক আফগানিস্তান দেখার অপেক্ষায় রইলাম, যেখানে ব্যাপকভিত্তিক সাংগঠনিক ও আদর্শিক রূপান্তরের মাধ্যমে তালেবান বস্তুতই তার অতীতের জঙ্গি চরিত্রকে বিসর্জন দিয়ে সংখ্যাগরিষ্ঠ আফগান জনগণের মৌলিক স্বার্থের প্রতিনিধি হয়ে উঠবে। আর স্পষ্টতার জন্য বলি, তালেবানের উত্থান দেখে বাংলাদেশে যারা উল্লসিত হচ্ছেন তাদের মনে রাখতে হবে, ধর্মান্ধতা, মৌলবাদ ও জঙ্গিত্বপনাকে বাংলাদেশের মানুষ ১৯৭১-এই চিরস্থায়ীভাবে বিদায় করে দিয়েছে।

আবু তাহের খান : পরিচালক, ক্যারিয়ার ডেভেলপমেন্ট সেন্টার, স্টেট ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশ; সাবেক পরিচালক, বিসিক-(সূত্র:যুগান্তর)