Home রাজনীতি আগামীকাল জাসদের ৪৯তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী

আগামীকাল জাসদের ৪৯তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী

56

ডেস্ক রিপোর্ট: আগামীকাল ৩১ অক্টোবর জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল-জাসদের ৪৯তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী। ১৯৭২ সালের এই দিনে সাংবাদিক সম্মেলনের মাধ্যমে মুক্তিযুদ্ধে ৯নং সেক্টরের কমান্ডার মেজর এম এ জলিল অব: এবং ছাত্রলীগের এককালীন সাধারণ সম্পাদক, সরাসরি ভোটে নির্বাচিত ডাকসুর প্রথম ভিপি আ স ম আব্দুর রব যুগ্ম আহ্বায়ক করে ৭ (সাত) সদস্যের কমিটি ঘোষণার মধ্য দিয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে যাত্রা শুরু করে। একই বছর ২২ ডিসেম্বর প্রথম জাতীয় সম্মেলনের মাধ্যমে মেজর এম এ জলিল অব: সভাপতি এবং আ স ম আব্দুর রবকে সাধারণ সম্পাদক করে পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠিত হয়। ষাট দশকে তৎকালীন ছাত্রলীগের অভ্যন্তরে স্বাধীন বাংলাদেশ রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যকে সামনে রেখে যে নেতা-সংগঠক-কর্মীরা বাঙালি জাতীয়তাবাদী আন্দোলন, স্বাধীনতা সংগ্রাম, মুক্তিযুদ্ধে আপসহীন র‌্যাডিকাল ভূমিকা পালন করেছেন সেই বিপ্লবী ধারার যুব নেতৃত্বই মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় সামাজিক বিপ্লবের মাধ্যমে সমাজতান্ত্রিক সমাজ ও রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার প্রত্যয় ঘোষণা করে জাসদ গঠন করেন। ক্ষমতার অংশীদারিত্ব ত্যাগ করে প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকেই সমাজতন্ত্রের লক্ষ্যে জাসদ পরিচালিত গণআন্দোলন গণসমর্থন লাভ করে। দেশের ছাত্র-তরুণ-যুব সমাজ জাসদের প্রতি আকৃষ্ট হয়। ১৯৭৩ সালে জাসদ ১ম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশগ্রহণ করে। নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে গিয়ে জাসদ তৎকালীন ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ দ্বারা বাঁধার সম্মুখীন হয়। মেজর জলিল, ইঞ্জিনিয়ার আব্দুর রশীদসহ কয়েকজন প্রার্থীকে বিজয়ী ঘোষণার পরও পরবর্তীতে পরাজিত দেখানো হয়। উল্লেখ্য, ইঞ্জিনিয়ার আব্দুর রশীদের বিজয় কেড়ে নিয়ে খন্দকার মোশতাককে বিজয়ী ঘোষণা করা হয়। টাঙ্গাইল থেকে জাসদ প্রার্থী আব্দুস সাত্তার বিজয়ী হন। স্বতন্ত্র বিজয়ী প্রার্থী আব্দুল্লাহ সরকার জাসদে যোগদান করেন। জাতীয় নেতা এ এইচ এম কামরুজ্জামান রাজশাহীর ২টি আসনে বিজয়ী হয়ে একটি আসন ছেড়ে দিলে, রাজশাহীর সেই আসনের উপ-নির্বাচনে জাসদ প্রার্থী মাইনউদ্দিন আহমেদ মানিক বিজয়ী হন। তিনটি আসন নিয়ে জাতীয় সংসদে জাসদ সোচ্চার বিরোধী দলের ভূমিকা পালনের পাশাপাশি দেশব্যাপী গণআন্দোলন গড়ে তোলে। জাসদের উপর ক্ষমতাসীন সরকার ও রাষ্ট্রের পক্ষ থেকে ব্যাপক দমন-পীড়ন-নির্যাতন নেমে আসে। ১৯৭৪ সালের ১৭ মার্চ জাসদের স্মারকলিপি প্রদানের শান্তিপূর্ণ কর্মসূচিতে রক্ষীবাহিনীর নির্বিচার গুলিবর্ষণ-হত্যাযজ্ঞ এবং সভাপতি মেজর এম এ জলিল অব:, সাধারণ সম্পাদক আ স ম আব্দুর রবসহ একযোগে কেন্দ্রীয় কমিটির প্রায় সকল নেতা এবং জেলা ও থানা পর্যায়ের সভাপতি, সাধারণ সম্পাদক, প্রধান নেতৃবৃন্দসহ জাসদের হাজার হাজার নেতা-কর্মীদের গ্রেফতার করা হয়। সংসদীয় রাজনৈতিক দল হিসাবে জাসদের বিকাশের পথ রুদ্ধ করে দেয়া হয়।

১৯৭৪ সালে দেশে জরুরী অবস্থা জারি হলে জাসদের উপর রাষ্ট্রীয় দমন-পীড়ন আরো বেড়ে যায়। হাজার হাজার নেতা-কর্মী জেল-জুলুম হত্যার শিকার হন। জেলের বাইরে থাকা জাসদ কর্মীদের অবস্থা ছিল বাঘের হিংস্র আক্রমণের মুখে হরিণের আত্মরক্ষা করার মত অবস্থা। এরকম পরিস্থিতিতে জেলের বাইরে থাকা জাসদের নেতা-কর্মীরা আত্মরক্ষা এবং বিপ্লবী সংগ্রাম এগিয়ে নিতে গণবাহিনী গঠন করে।

১৯৭৫ এর ২৫ জানুয়ারি বাকশাল গঠন করা হলে জাসদ নিষিদ্ধ হয়ে যায়। জাসদসহ বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলো নিষিদ্ধ হবার ফলে সৃষ্ট রাজনৈতিক শুন্যতার সুযোগ নিয়ে খোদ বাকশালের অভ্যন্তরেই প্রাসাদ ষড়যন্ত্র শুরু হয়। চরম দমন-নির্যাতনের মধ্যেও জাসদ ষড়যন্ত্র-চক্রান্তের পথে পা না বাড়িয়ে, ষড়যন্ত্র-চক্রান্তকারীদের সাথে হাত না মিলিয়ে ক্ষমতাসীন সরকারের বিরুদ্ধে প্রকাশ্য ঘোষণা দিয়ে প্রকাশ্য রাজনৈতিক অবস্থান অব্যাহত রাখে।

খন্দকার মোশতাকের নেতৃত্বে ষড়যন্ত্রকারীরা ১৯৭৫ সালের ১৫ আগষ্ট বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে হত্যা করে ক্ষমতা দখল করে। এ হতবিহ্বল ও সংঘাতময় পরিস্থিতিতে যখন স্বাধীনতার স্বপক্ষের সকল রাজনৈতিক দল কিংকর্তব্যবিমূঢ় হয়ে পড়ে, তখন জাসদ কোনো ধরনের দ্বিধাদ্বন্দ্বের মধ্যে না থেকে তাৎক্ষনিকভাবে খন্দকার মোশতাকের ক্ষমতা দখলের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করে রুখে দাঁড়ায়। খন্দকার মোশতাকের ৮৩ দিনের শাসনেও জাসদের নেতা-কর্মীদের উপর খুন-গুম-জেল-জুলুম অব্যাহত রাখে। জলিল-রবসহ কারাবন্দী জাসদের নেতা-কর্মীদের কারাগারেই বন্দী রাখা হয়।
খন্দকার মোশতাকের ক্ষমতা দখল এবং মোশতাক অনুসারী সেনা অফিসারদের উশৃংখলতা সেনাবাহিনীর মধ্যে চরম বিশৃংখল অবস্থা তৈরি করে, উচ্চাভিলাষী সামরিক অফিসাররা ক্ষমতার লোভে সেনাবাহিনীকে বিভক্ত করে ফেলে, উচ্চাভিলাষী অফিসাররা ক্ষমতার খেলায় গুলি-গোলার মুখে সিপাহীদের ঠেলে দেয়। এরকম পরিস্থিতিতে ১৯৭৫ সালের ৩ নভেম্বর উচ্চাভিলাষী অফিসার খালেদ মোশাররফ কর্তৃক সেনাপ্রধান জিয়ার অপসারণ ও বন্দী করে নিজেকে সেনাপ্রধান ঘোষণা করে। বঙ্গবন্ধুর খুনী কর্নেল রশিদ-কর্নেল ফারুক চক্র জেলখানায় চার জাতীয় নেতাকে হত্যা করে নিরাপদে দেশত্যাগ করার সুযোগ করে দেয়। অফিসারদের বিশৃংখলায় এরকম জাতীয় সংকটময় ও অনিশ্চিত পরিস্থিতিতে অবৈধ ক্ষমতা দখলদারের কবল থেকে দেশকে মুক্ত এবং সেনাবাহিনীতে শৃংখলা ফিরিয়ে আনতে সাধারণ সিপাহীরা ঐক্যবদ্ধ হয়ে বিদ্রোহের প্রস্তুতি নেয়। এ পরিস্থিতিতে সেনা ছাউনিতে রক্তারক্তির ঘটনা এড়ানো, সেনাবাহিনীতে শৃংখলা ফিরিয়ে আনা এবং অনিশ্চয়তা থেকে দেশকে রক্ষা করার লক্ষ্য নিয়ে জাসদ কর্নেল তাহেরের নেতৃত্বে বিদ্রোহী সিপাহীদের সুনির্দিষ্ট লক্ষ্যে পরিচালিত করতে উদ্যোগী ও সাহসী ভূমিকা নেয়। ৭ নভেম্বর ঐতিহাসিক সিপাহী জনতার অভ্যূত্থান সংগঠিত হয়।

বন্দীদশা থেকে মুক্ত হয়ে জিয়া সিপাহীদের ১২ দফা দাবির সাথে বেঈমানী করে। কর্নেল তাহেরসহ জাসদ নেতৃবৃন্দকে মিথ্যা সজানো মামলায় গ্রেফতার করে। সামরিক আদালতে প্রহসনমূলক বিচারে কর্নেল তাহেরকে ফাঁসিতে ঝুলিয়ে হত্যা, জলিল-রব-ইনুসহ জাসদ নেতৃবৃন্দকে যাবজ্জীবনসহ বিভিন্ন মেয়াদী কারাদন্ডে দন্ডিত করে। পূর্ববর্তী সরকারগুলোর মতই জিয়ার সামরিক সরকারও জাসদের উপর চরম দমন-পীড়ন-নির্যাতন চালায়।

১৯৭৯ সালে জলিল-রব-ইনুসহ জাসদের শীর্ষ নেতৃবৃন্দকে কারাবন্দি রেখেই জিয়া তার সামরিক শাসনকে বৈধতা দেয়ার জন্য জাতীয় সংসদ নির্বাচন দেয়। জাসদ সামরিক শাসনের অধীনে সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠানের নীতিগত বিরোধিতা করে। কিন্তু আওয়ামী লীগসহ প্রায় সকল দল নির্বাচনে অংশগ্রহণের পক্ষে অবস্থান নিলে জাসদও ১৯৭৯ সালের নির্বাচনে অংশ নেয়। এ নির্বাচনে জাসদের ৯ জন প্রার্থী বিজয়ী হয়। যদিও প্রাথমিক ফলাফল ঘোষণায় জাসদের আরও বেশ কয়েকজন প্রার্থী বিজয়ী হলেও পরবর্তীতে ফলাফল পরিবর্তন করে বিজয় ছিনিয়ে নেয়া হয়।
জিয়ার সামরিক সরকারের বিরুদ্ধে জাসদ সংসদ ও রাজপথে ব্যাপক আন্দোলন গড়ে তোলে। এ সময়ই জাসদ বাংলাদেশের রাজনীতিতে ‘মুক্তিযুদ্ধের পক্ষ ও বিপক্ষ শক্তির দ্বন্দ্ব’কে একটি মৌলিক দ্বন্দ্ব হিসাবে বিবেচনায় নিয়ে রাজনৈতিক অবস্থান গ্রহণ করে এবং জিয়ার বিরুদ্ধে মুক্তিযুদ্ধের স্বপক্ষ শক্তির বৃহত্তর ঐক্যের নীতি-কৌশলের অংশ হিসাবে আওয়ামী লীগসহ অপরাপর মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের শক্তির সাথে ১০ দলীয় ঐক্য জোট গড়ে তোলে।

১৯৮২ সালে এরশাদের অবৈধ ক্ষমতা দখল ও সামরিক শাসনের বিরুদ্ধে জাসদ আন্দোলন গড়ে তোলে এবং বৃহত্তর ঐক্যের নীতি-কৌশল প্রয়োগ করে ১৯৮৩ সালে আওয়ামী লীগসহ অপরাপর মুক্তিযুদ্ধের স্বপক্ষ শক্তির সাথে ১৫ দলীয় জোট গড়ে তোলে। এরশাদ সামরিক শাসন বিরোধী আন্দোলন কৌশল নিয়ে আন্দোলনকারী শক্তিসমূহের ভাঙ্গন দেখা দিলেও জাসদের উদ্যোগেই ৫ দল, ৭ দল, ৮ দলের লিয়াজো কমিটি গড়ে ওঠে এবং ১৯৯০ সালে ঐতিহাসিক গণঅভ্যূত্থানের মধ্য দিয়ে সামরিক শাসনের অবসান ঘটে। এরশাদের সামরিক শাসন বিরোধী আন্দোলনে ডা. মিলন, শাজাহান সিরাজ, জয়নালসহ অনেক নেতা-কর্মী শহীদ হন।

জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল-জাসদ জন্মলগ্ন থেকে ক্ষমতাসীন শাসকগোষ্ঠী ও রাষ্ট্রযন্ত্রের বিরুদ্ধে ধারাবাহিক ও বিরতিহীনভাবে সংগ্রামমুখর ঝঞ্ঝাবিক্ষুদ্ধ সময় পার করে। রাষ্ট্রের পক্ষ থেকে জাসদের উপর সীমাহীন দমন-পীড়ন-নির্যাতন নেমে আসে। শাসকগোষ্ঠী ও প্রতিক্রিয়াশীলদের বিরুদ্ধে সংগ্রামে জাসদের শতশত নেতা-কর্মীকে হত্যা করা হয়, হাজার হাজার নেতা-কর্মী জেল-জুলুম-নির্যাতনের শিকার হন। ফলে জাসদ সুস্থিরভাবে নির্বাচনী কৌশল গ্রহণ করে নির্বাচনী এলাকা ও নির্বাচনী শক্তি গড়ে তুলতে পারেনি। ১৯৯১ সালের এককভাবে জাসদ নির্বাচনে অংশগ্রহণ করে কিন্তু সাফল্য পায়নি। ১৯৯১-৯৬ সালে বেগম জিয়ার দুঃশাসনের বিরুদ্ধে জাসদ বামগণতান্ত্রিক ফ্রন্ট গঠন করে গণআন্দোলন সংগঠিত করে। পাশাপাশি জাসদ নেতা কাজী আরেফের উদ্যোগে শহীদ জননী জাহানারা ইমামের নেতৃত্বে যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের দাবিতে ঐতিহাসিক গণআদালত গঠিত হয় এবং গণআন্দোলন গড়ে ওঠে। ১৯৯৬ সালের নির্বাচনের পর তৎকালীন জাসদ (রব) সংসদীয় সমর্থন দিয়ে আওয়ামী লীগ সরকার গঠনে ভূমিকা রাখার পর ১৯৯৭ সালে জাসদ ও বাসদের বিভিন্ন অংশ একত্রিত হয়ে সরকারে অবস্থানের পাশাপাশি সাম্প্রদায়িকতার বিরুদ্ধে রাজপথে বলিষ্ঠ অবস্থান গ্রহণ করে।

২০০১ সালে বিএনপি-জামাত জোট ক্ষমতায় আসলে জাসদ বিএনপি-জামাত জোট সরকাররে বিরুদ্ধে বলিষ্ঠ অবস্থান গ্রহণ করে এবং বিএনপি-জামাত জোট সরকারের সাম্প্রদায়িক-মৌলবাদী-জঙ্গীবাদী শক্তিকে পৃষ্ঠপোষকতা-দুর্নীতি-দুঃশাসনের বিরুদ্ধে দলীয় উদ্যোগে আন্দোলন গড়ে তোলার পাশাপাশি মুক্তিযুদ্ধের স্বপক্ষ শক্তির বৃহত্তর ঐক্য গড়ে তোলার উদ্যোগ নেয়। ২০০১ সালের পর নির্যাতন-দমনে বিপর্যস্থ আওয়ামী লীগের পাশে জাসদ দাঁড়ায়। জাসদের উদ্যোগী ভূমিকায় ২০০৪ সালে ১৪ দলীয় জোট গড়ে উঠে। ২০০৭ সালে মইনউদ্দিন-ফখরুদ্দিন সরকার ক্ষমতা দখল করলে জাসদ অবিলম্বে ভোটার তালিকা প্রণয়ন করে নির্বাচন করে নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিদের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তরের পক্ষে দৃঢ় অবস্থান গ্রহণ করে। ২০০৮ সালের নির্বাচনে জাসদ ১৪ দলীয় জোটগতভাবে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করে ৩ টি আসনে বিজয়ী হয়। মহাজোট সরকারে জাসদের অংশগ্রহণ না থাকলেও সরকারের বাইরে থেকেই জাসদ শেখ হাসিনার নেতৃত্বে মহাজোট সরকারকে নীতিগত সমর্থন দেয়ার পাশাপাশি সংসদ-রাজপথে যুদ্ধাপরাধীদের বিচার ও জঙ্গিবাদ-মৌলবাদের বিরুদ্ধে বলিষ্ঠ অবস্থান নেয়। শ্রমিক-কৃষক-নারীর অধিকারের পক্ষে সোচ্চার ভূমিকা রাখে। ২০১২ সালে জাসদ সভাপতি হাসানুল হক ইনুকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মন্ত্রীসভায় অংশগ্রহণ করার আমন্ত্রণ জানান। জাসদ দলীয়ভাবে সম্মতি প্রদান করলে শেখ হাসিনা জাসদ সভাপতি হাসানুল হক ইনুকে তথ্য মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব প্রদান করেন। দলীয় সভাপতি হাসানুল হক ইনু মন্ত্রীসভার সদস্য হলেও জাসদ সরকার-সংসদ-রাজপথে আদর্শগত অবস্থান থেকে যুদ্ধাপরাধীদের বিচার, জঙ্গিবাদ নির্মূল, শ্রমিক-কৃষক-নারীর অধিকারের প্রশ্নে দলের সোচ্চার ভূমিকা অব্যাহত রাখে।

২০১৪ সালে বিএনপি-জামাতের নির্বাচন বানচালের চরম অন্তর্ঘাত ও নাশকতার মধ্যেও সাংবিধানিক গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া ও ধারাবাহিকতা সমুন্নত রাখতে জাসদ ১৪ দল গতভাবে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করে। এ নির্বাচনে জাসদ ৫ টি আসনে বিজয়ী হয় এবং নতুন সরকারের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জাসদ সভাপতি হাসানুল হক ইনুকে পুনরায় তথ্য মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব প্রদান করেন। জাসদ পূর্বের ধারাবাহিকতায় সরকার-সংসদ-রাজপথে জঙ্গিবাদ-সন্ত্রাস-দুর্নীতির বিরুদ্ধে সংগ্রাম অব্যাহত রাখে। ২০১৮ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জাসদ ১৪ দলীয় জোটগতভাবে অংশ গ্রহণ করে এবং ২টি আসনে বিজয়ী হয়। জাসদ সরকার বা সংসদে থাকুক বা না থাকুক জাসদ বরাবরই অন্যায়-অত্যাচার-দুর্নীতি-লুটপাটের বিরুদ্ধে সোচ্চার ছিল, আছে।

জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল-জাসদের দীর্ঘ ৪৯ বছরের সংগ্রামী পথ চলায় বিভিন্ন সময় ব্যক্তিগত স্বার্থে জাসদের শীর্ষ পর্যায়ের নেতাদের অনেকে দল ত্যাগ করে ভিন্ন দলে যোগদান বা পৃথক দল গঠন করলেও জাসদের নেতা-কর্মীরা তাদের আদর্শ-পতাকা-ঠিকানা বুকে আগলে রেখে জাসদকে মাথা উঁচু করে দাঁড় করিয়ে রেখেছে। প্রমাণ হয়েছে জাসদ নেতাদের নয়-কর্মীদের দল।
জাসদ ২০১৮ সালে নির্বাচন পরবর্তী সময়কে রাজনীতির নতুন পর্ব হিসাবে চিহ্নিত করে সাম্প্রদায়িকতা-জঙ্গিবাদ বিরোধী রাজনৈতিক ভূমিকা অব্যাহত রাখার পাশাপাশি সুশাসন প্রতিষ্ঠাকে জাতীয় রাজনীতির প্রধান কর্তব্য হিসাবে নির্ধারন করেছে। সুশাসন প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে এবং সকল ধরনের বৈষম্যের অবসান করে দেশেকে সমাজতন্ত্রের পথে এগিয়ে নিয়ে যাবার জন্য রাজনৈতিক প্রচেষ্টা চালাচ্ছে। একইসাথে দলের নিজস্ব রাজনৈতিক লক্ষ্য ও কর্মসূচির ভিত্তিতে সমাজতন্ত্রের লক্ষ্যে সমাজে সকল ধরনের বৈষম্যের অবসান এবং জাতীয় সংসদে উচ্চ কক্ষ গঠন করে দ্বিকক্ষ বিশিষ্ট সংসদীয় ব্যবস্থা চালু, সংখ্যানুপাতিক নির্বাচন পদ্ধতি চালু, সিটি কর্পোরেশন-জেলা পরিষদ-উপজেলা পরিষদ-ইউনিয়ন পরিষদ-পৌরসভাসহ সকল স্থানীয় সরকারকে স্বশাসিত কার্যকর সংস্থা হিসাবে গড়ে তোলাসহ শাসনি-প্রশাসন ব্যবস্থাকে আরও গণতান্ত্রিক ও অংশিদারিত্বমূলক করা এবং জনগণের ক্ষমতায়ণের লক্ষ্যে অবিচলভাবে সংগ্রামের রাজপথে আগুয়ান আছে।

৪৯তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে জাসদ সভাপতি হাসানুল হক ইনু এমপি ও সাধারণ সম্পাদক শিরীন আখতার এমপি আজ এক বিবৃতিতে দেশবাসী ও জাসদের সর্বস্তরের নেতা-কর্মী-সমর্থক-শুভানুধ্যায়ীদের শুভেচ্ছা জানিয়েছেন।

৪৯তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে জাসদ কেন্দ্রীয় কমিটির উদ্যোগে আগামীকাল ৩১ অক্টোবর রবিবার ভোর ৬ টায় জাতীয় ও দলীয় পতাকা উত্তোলন, সকাল সাড়ে ৬টায় শহীদ প্রতিকৃতিতে মাল্যদান, বিকাল সাড়ে ৩ টায় ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে আলোচনা সভা ও পুনর্মিলনী এবং বিকাল সাড়ে ৫ টায় মশাল মিছিল অনুষ্ঠিত হবে। আলোচনা সভায় সভাপতিত্ব করবেন জাসদ সভাপতি হাসানুল হক ইনু এমপি।

জাসদ সভাপতি হাসানুল হক ইনু এমপি ও সাধারণ সম্পাদক শিরীন আখতার এমপি যথাযথ মর্যাদায় দলের সকল জেলা-উপজেলা কমিটিকে ৪৯তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উদযাপনের নির্দেশ দিয়েছেন।