Home জাতীয় অবশেষে কবর থেকে শ্মশানে পৌঁছালেন শান্ত

অবশেষে কবর থেকে শ্মশানে পৌঁছালেন শান্ত

90

জামালপুর প্রতিনিধি: রহস্যজনক মৃত্যুর পাঁচদিন পর শান্ত চক্রবর্তী (৪৫) নামে এক যুবকের লাশ কবর থেকে শ্মশানে পৌঁছালো। শান্ত শেরপুর শহরের গৃর্দানারায়ণপুর এলাকার মৃত সমর চক্রবর্তীর ছেলে ও এক সন্তানের বাবা।

গেল ৬ সেপ্টেম্বর সন্ধ্যায় বাড়ি থেকে বের হয়ে তিনি নিখোঁজ হন। পরে ৮ সেপ্টেম্বর সকালে নিহতের স্ত্রী রুপা চক্রবর্তী ও ছেলে কলেজ শিক্ষার্থী সোম চক্রবর্তী সদর থানায় উপস্থিত হয়ে জিডি দায়ের করে।

পরবর্তীতে পার্শ্ববর্তী জেলা জামালপুর রেল স্টেশনের পাশ থেকে শান্তর লাশ উদ্ধার এবং অজ্ঞাতনামা হিসাবে স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা আঞ্জুমান মফিদুল ইসলামের মাধ্যমে দাফনের পর ছবি ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের সুবাদে তাকে শনাক্ত করে স্বজনরা।

পরে দীর্ঘ আইনী প্রক্রিয়া শেষে ১১ সেপ্টেম্বর সন্ধ্যায় তার লাশ কবর থেকে তুলে দাহ করা হয়।

এ বিষয়টি নিশ্চিত করেছে নিহতের ছোট ভাই রাজু চক্রবর্তী।

ঘটনাটি শেরপুর ও জামালপুরে ব্যাপক আলোড়ন সৃষ্টি করে।

নিহতের স্বজনরা জানায়, শান্ত দীর্ঘদিন যাবত জামালপুর শহরের রেলগেইট এলাকায় লিলি মটরস এ ম্যানেজার পদে চাকরি করতেন। প্রায় ছয় মাস আগে ওই ব্যবসা প্রতিষ্ঠানটি বন্ধ হয়ে যায়। এরপর থেকে সে নিজ বাড়িতে বসবাস করে আসছিল। ওই অবস্থায় ৬ সেপ্টেম্বর সন্ধ্যায় বাড়ি থেকে বের হলেও রাতে আর ফেরেনি। পরে অন্যান্য আত্মীয়ের মাধ্যমে খোঁজ খবর নিয়ে তার হদিস না পাওয়ায় ৮ সেপ্টেম্বর সকালে শান্তর নিখোঁজের বিষয়ে স্ত্রী রূপা চক্রবর্তী ও একমাত্র ছেলে সোম চক্রবর্তী সদর থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি করে।

এরপর বিকেলে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের সুবাদে তার পরিবার খবর পায় জামালপুর রেল স্টেশন থেকে গেঞ্জী ও প্যান্ট পরা এক ব্যক্তির লাশ উদ্ধার হয়েছে। পরে রেল পুলিশের সাথে যোগাযোগ করে উদ্ধার হওয়া লাশের ছবি দেখে তা শান্ত চক্রবর্তীর বলে শনাক্ত করা হয়। কিন্তু ততক্ষণে জামালপুর জেনারেল হাসপাতাল মর্গে ময়নাতদন্ত শেষে বেওয়ারিশ হিসেবে তার লাশটি স্থানীয় আঞ্জুমানে মফিদুল ইসলামের কাছে হস্তান্তর এবং তাদের মাধ্যমে কেন্দ্রীয় পৌর কবরস্থানে দাফনের কাজটি সম্পন্ন হয়।

ওইসময় রেলওয়ে পুলিশ শান্তর স্বজনদের জানায়, ৮ সেপ্টেম্বর ভোর ৪টার দিকে মাথায় রক্তাক্ত অচেতন অবস্থায় তাকে রেলস্টেশনের প্ল্যাটফর্মের ৩শ গজ পূর্বদিকের রেললাইনের পাশে পাওয়া যায়। পরে তাকে উদ্ধার করে স্থানীয় জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করা হলে সকাল ৭টার দিকে মারা যায়।

পরে ওইদিন রাতে রেলওয়ে পুলিশের এসআই কাউসারের কাছ থেকে ওই লাশ উদ্ধার ও ময়নাতদন্তসহ দাফনের কাগজপত্র সংগ্রহ করে স্বজনরা এলাকায় ফিরে আসে। এবং শেরপুর সদর থানা পুলিশের কাছে ওইসব কাগজপত্র হস্তান্তর করে। তারই ধারাবাহিকতায় ৯ সেপ্টেম্বর সকালে অনুসাঙ্গীক আরো কাগজপত্র নিয়ে জামালপুরে যায় স্বজনরা। পরে শান্তর ছেলের আবেদনের প্রেক্ষিতে সন্ধ্যায় জামালপুরের অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট সরকার আব্দুল্লাহ আল মামুন বাবু একজন ম্যাজিস্ট্রেটের উপস্থিতিতে তার লাশ উত্তোলন করে সৎকারের জন্য পরিবারের কাছে হস্তান্তরের আদেশ দেন।

শান্তদের প্রতিবেশী সুমন দাশ জানায়, পরদিন সকালে স্বজনরা আদেশের ওই পত্র নিয়ে গেলে লাশ উত্তোলনে বাধা হয়ে দাড়ায় রেলওয়ে পুলিশ। এ সময় রেলওয়ে পুলিশ জানায় ছেলের সাথে বাবার পরিচয় নিশ্চিত হওয়ার জন্য ডিএনএ পরীক্ষা করা হবে। এর পরই লাশ হস্তান্তর সম্ভব হবে।

পুলিশের এমন বক্তব্যে শান্তর স্বজনরা হতাশ হয়ে পড়ে। উপায়ন্তর না পেয়ে তারা বিষয়টি জামালপুর জেলা পূজা উদযাপন পরিষদকে জানায়। পরে ওই সংগঠনের কর্মকর্তারা পুলিশের সাথে অলোচনা করে বিষয়টি সুরাহা করে। তার ভিত্তিতে ১১ সেপ্টেম্বর সকালে শান্তর লাশ কবর থেকে উত্তোলন করে শেরপুরের শেরী মহাশ্মশানে দাহ করা হয়।

শান্তর ছোট ভাই রাজু ও রতন চক্রবর্তী অভিযোগ করে বলেন, রেললাইনের পাশে তার ভাইয়ের মৃত্যুটি রহস্যজনক। ট্রেনের সাথে ধাক্কায় তিনি মাথায় আঘাত পেয়ে থাকতে পারেন- জিআরপি পুলিশ এমন দাবি করলেও স্থানীয়রা তা কেউ বলতে পারছেন না।

এছাড়া লাশটি শনাক্তের জন্য পর্যাপ্ত সুযোগ ও সংরক্ষণের ব্যবস্থা তারা নেয়নি।

ঘটনার বিষয়ে জামালপুর রেলওয়ে পুলিশের এসআই সোহেল রানা বলেন, অচেতন ও রক্তাক্ত অবস্থায় ওই ব্যক্তিকে উদ্ধারের পর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। তার মৃত্যুর পর শনাক্তকারি পাওয়া না যাওয়ায় প্রয়োজনীয় কার্যাদি শেষ করে মুসলিম ভেবে দাফনের জন্য আঞ্জুমান মফিদুল ইসলামে হস্তান্তর করা হয়।

তার মতে, ঢাকাগামী কোন ট্রেনের ধাক্কায় তিনি আঘাত পেয়ে থাকতে পারেন। প্রাথমিকভাবে তারা এমনটিই ধারণা করছেন।