Home সাহিত্য ও বিনোদন অনুগল্প : পুনরাবৃত্তি

অনুগল্প : পুনরাবৃত্তি

29

পলাশ কলি হোসেন শোভা: ঘর থেকে বের হতেই পায়ে উস্টা খেলো রিনি। ইশ্,ব্যথায় মাটিতেই বসে পড়ে। কি অ লক্ষি লাগলো? মনে মনে ভাবে সে। আজ কত তারিখ? বাইশ তারিখে আসবে সে, এখনো পাচঁদিন বাকি। শাশুড়ী দূর থেকে দেখে কাছে এসে বললো,

মা বেশী ব্যথা লাগছে? দেখি তো
না মা ও কিছু না। বলেই উঠে দাড়ায় রিনি। শাফি চিটাগং গেছে। আর শাশুড়ী শশুর আর দুটো ননদ কে নিয়ে রিনি সংসার।

প্রতি রাতে লং ডিস্টেন্সে কথা হয় দুজনের। গত রাতেও অনেক্ক্ষণ গল্প করেছে।এত আদর সোহাগে ভরিয়ে রাখে রিনির কখনো মনে হয় না শাফি পাশে নেই।

আজ দুবছর বিয়ে হয়েছে, মায়ের বাড়ি যাওয়ার কোন অবস্থাই নেই। কলেজে ভর্তি হওয়ার পরই পরিচয় শাফির সাথে। একদিন দুজনেই সিদ্ধান্ত নেয় বিয়ে করবে। যে কথা সেই কাজ।একেবারে শাফি মায়ের হাতে তুলে দেয় রিনি কে।
মা তোমার জন্য বউ নিয়ে এলাম।
হতভম্ব মা হা হয়ে রিনির দিকে তাকায়, এই মেয়ে আমার বাড়ির বউ? এত সুন্দর! এ তো সাক্ষাৎ পরী। ননদ দুটো খুব খুশি ভাবী পাওয়া গেছে। বাবা এসেই ছেলেকে গালিগালাজ,
হারামজাদা কার বাড়ির মেয়ে ভাগিয়ে আনছিস, যা রেখে আয়,

আরে আমি কি রেখে আসার জন্য বিয়ে করে আনছি? আব্বা তুমি ওরে জায়গা না দিলে আমিও গেলাম বলেই রিনির হাত ধরে চলে যাবার ভান করে,
না না বাড়ি ছাড়নের কাম নাই। হারামজাদা ঘরে যা। রিনি শশুর শাশুড়ী কে সালাম করে।

তুমিও মেয়ে, এই গাধাটারে কেমনে পছন্দ করলা? শশুরের কথায় মাথা নিচু করে থাকে রিনি। যাও ঘরে যাও,বলে মা রান্না ঘরেরদিকে গেলো। ঘরটার কোন শ্রী নেই, ছেলেদের রুম যেমন হয়। ননদ দুটো এসে বিছানায় বসে। ভাবী আপনে খুব সুন্দর।
যা ভাগ তোরা ওরে রেস্ট করতে দে। পরে আসিস।
পরে আসিস বলে ভেংচি কেটে দুই বোনই বের হয়ে যায়।
কি রিনি বলিনি আব্বা হম্বিতম্বি করলেও কিছু বলবে না, আমাকে ছাড়া তাদের পৃথিবী অন্ধকার।
হু তাই তো দেখলাম, তুমি এক ছেলে দেখে সব মেনে নেয়। আমি তো ভয়ে অস্হির।
এভাবেই রিনির সংসার শুরু।

দিন মাস যায় টিমটিমে ব্যবসাটা বেশ ভালো চলছে। আরে ব্যবসার পরিধি বেড়েছে শাফি বিজনেস নিয়ে ব্যস্ত থাকে। রিনি ফোন দিয়ে স্বামীর খবর রাখে রাতে বাসায় আসে। আয় রোজগার বেড়েছে দেখে শাশুড়ী খুব খুশী তার বিশ্বাস রিনি একটি পয়মন্ত মেয়ে। মাটি ছুলেও সোনা হয়ে যায়।
ইদানীং শাফি কে কল দিলেই এনগেজ পাওয়া যায়। প্রতিদিন ই একই অবস্হা।

রাতে বাড়ি এলে রিনি অভিমানের সুরে বলে,
আচ্ছা তোমার ফোন এত বিজি থাকে কেন? কার সাথে এত কথা বলো?
ইকটু চমকে উঠে শাফি,

কই নাতে? আমি বিজনেস এর কাজে কথা বলি।
তাহলে ঘন্টা ধরে বিজি থাকবে নাকি?
ওওওওআরে আর বলো না মুনীর কোথায় একটা জুটায়ছে আমার কাছে এসে ফোনটার দখল নেয়।
বলো কি? ওনার ফোন কি হইছে?
রিনি তুমি কি আমাকে সন্দেহ করো? ওর ফোন টা ভেঙে গেছে কিনবে বললো। তখন যদি বিজি পাও দশ মিনিটের বেশি তখন আমায় যা শাস্তি দিবে মাথা পেতে নিবো।

কিসের শাস্তি কি বলছো এসব? খেতে আসো
শাফি মনে মনে ঠিক করে ফেলে আগামীকাল সকালে বের হয়েই একটা নতুন সীম কিনবে। পাখি আর ধরা খাবে না।
শশুর রিনি কে ভীষণ আদর করে, ছেলের এত মন দিয়ে ব্যবসা করছে তা তো কেবল রিনির কারনেই সম্ভব।

মা গো পড়াশোনা টা বন্ধ কইরো না পড়ো। আমি তোমারে পড়াতে চাই
জ্বী আব্বা শুরু করবো।
মা বাবারে দেখতে মন চায় না? আমি যাবো? মিলমিশ করায় দেই। আমি গেলে ওনারা না করতে পারবো না।
আব্বা আমার তো যাওনের মুখ নাই। বাড়ি থেকে পালায়ে আসছি, ওনাদের অসম্মান করছি, কেমনে যাই?

মা রে বড়ই ভুল করছো,হারামজাদা বদ আমার পোলাডা, আমারে কইলেই তো আমি ব্যবস্হা নিতাম। না, উনি সিনেমা করছে।
আব্বা এখন থাক্। আম্মা আব্বাই একদিন আইসা পরবো।

রিনি সারাদিন সংসারটাকে গুছিয়ে রাখে। এর ওর থেকে শোনে শাফির সাথে পশ্চিম পাড়ার দিলার সাথে প্রেম চলছে। রিনি বিশ্বাস ই করেনি। যে ছেলে দুবছর পিছে ঘুরে ঘর থেকে তাকে বের করে আনছে ভালবাসার টানে, সে কখনোই আর কাউকে ভালবাসতে পারে না।
ননদ দুটো লিলি মনি ক্লাস নাইনে পড়ে। ভাবীর কাছে এসে বলে,
একটা জরুরী খবর দিবো আমাদের কোক খাওয়াও।
কি জরুরি খবর? আগে কোক আনাও
আগে বল্
ভাইয়া আর দিলা আপুরে একলগে সিনেমা হলের দিকে যাইতে দেখছি।
চুপ, মাইর খাবি ফালতু কথা বলবি না। কোক না ঝাড়ুর বাড়ি খাবি?

আইচ্ছা , পূর্বাভাস দিলাম বুঝলানা। পরেকাঁইন্দা সমুদ্র বানাইয়ো না। গেলাম।
রিনি স্তম্ভিত হয়ে পড়ে, এ সে কি শুনলো?
রাতে বিছানায় রিনি কে টাচ করতেই রিনি সরে যায়, মুখে কিছু বলে না
কি হলো বউ এমন করলে কেন?
তুমি দিলা কে নিয়ে সিনেমা হলের দিকে কেন গেছো?

এই রে কাম সারছে, চটপট বুদ্ধি বের করে বলে,
ওও মেয়েতে মুনীরের লগে প্রেম করে। সমস্যা ছিলো তাই আমি নিয়া হলে ঢুকায়া বের হয়ে আসছি, তুমি ফোন দিলা না? ঐ যে তখনই তো।
রিনি সব ভুলে যায় শাফির বানানো আষাঢ়ে গল্পে।
দিন যায় মাস যায়। শাফি বিজনেস এর কাজে চিটাগং গেছে। রাতেও কথা হয়েছে। উস্টা খেয়ে পরার পর একটা অজানা শঙ্কা কাজ করছে, মা বাবা ভালো আছে তো? শাফি কেমন আছে। নয় ছয় ভাবতে ভাবতে রুমে গিয়ে শুয়ে পড়ে। ঠিক তখনই শাফি রুমে ঢুকে রিনি কে জড়িয়ে ধরে। ওদিকে চিল্লা চিল্লি কানে আসছে। রিনি মনেমনে ভাবে আহা এমন স্বামী কয়জনের ভাগ্যে জোটে। পাচঁদিন দেখেনি এসেই আদর করা শুরু করছে।
ছাড়ো শাফি ছাড়ো আমাকে।

বউ তোমার জন্য একটা সারপ্রাইজ আছে
কি?
চলো ও ঘরে আছে। রিনির হাত ধরে নিয়ে আসে ড্রইং রুমে।
কোথায় সারপ্রাইজ বলতে গিয়েই রিনির চোখ আটকে যায় সোফাতে বসা নতুন বউয়ের দিকে।
রিনি হা হয়ে যায় যেন কিংকর্তব্যবিমুঢ়!!
বউ আমি বিয়ে করছি। ওর নাম দিলা তুমি ওরে মাইনা নাও।

বাবা মা বোন দুটা সবাই যেন ভয়াবহ কোনো সার্কাস দেখছে কোন কথা নেই।
এবার সবার চোখ গুলো রিনির উপর।
না রিনির কিছুই হয়নি জ্ঞান হারায়নি কোন কথাও বলেনি। শুধু বললো,
পুনরাবৃত্তি!!

রুম থেকে বের হয়ে বাড়ির গেটের দিকে এগোচ্ছে দৌড়ে এসে শফি জাপটে ধরে বলে বউ তুমি যাইও না তোমারে ছাড়া আমি বাঁচুম না
কোন কথা না বলে এক ঝাটকায় শাফি কে ধাক্কা দিয়ে রাস্তায় নামে। ভাবতে থাকে রিনি একদিন এক কাপড়ে বাবার বাড়ি ছেড়ে চলে আসছিলো,আজ একই ভাবে এক কাপড়ে বাপের বাড়ির পথ ধরলো।

-লেখক : অধ‍্যাপক (অব) মীরপুর গার্লস আইডিয়াল বিশ্ববিদ্যালয় কলেজ, ঢাকা।