Home সারাদেশ অনলাইন প্রেসক্লাব’র অর্থ আত্মসাতের অভিযোগ : দুই মুহিতের বিরুদ্ধে প্রতারণা মামলা

অনলাইন প্রেসক্লাব’র অর্থ আত্মসাতের অভিযোগ : দুই মুহিতের বিরুদ্ধে প্রতারণা মামলা

34

সিলেট প্রতিনিধি: সিলেট অনলাইন প্রেসক্লাবের কার্যকরি পরিষদের দুই মুহিতের বিরুদ্ধে প্রেসক্লাবের অর্থ আত্মসাৎ ও প্রতারণার অভিযোগে মামলা হয়েছে। মামলায় অভিযুক্তরা হলেন- সিলেট অনলাইন প্রেসক্লাব’র সভাপতি মুহিত চৌধুরী, কোষাধ্যক্ষ আব্দুল মুহিত দিদার। অভিযুক্ত মুহিত চৌধুরী অনলাইন নিউজপোর্টাল ‌’দৈনিক সিলেট’ ডটকম-এর সম্পাদক এবং আব্দুল মুহিত দিদার অনলাইন নিউজপোর্টাল ‘সিলেট এক্সপ্রেস ডটকম/ডটনেট’-এর সহ সম্পাদক।

বৃহস্পতিবার সিলেটের অতিরিক্ত চীফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে সিলেট অনলাইন প্রেসক্লাব’র সাবেক নির্বাহী সদস্য ও অনলাইন নিউজপোর্টাল ‍‌’সিলেটের সময় ডটকম’ এর নির্বাহী সম্পাদক ফারহানা বেগম হেনা বাদী হয়ে হয়ে এই মামলাটি দায়ের করেছেন। সি.আর (কোতোয়ালী) মামলা নং- ২৭৩/২০২৩। মামলায় সিলেট অনলাইন প্রেসক্লাব’র ১৫ জন সাংবাদিককে সাক্ষী করা হয়েছে। আদালতের বিচারক আবদুল মোমেন শুনানী শেষে মামলাটি আমলে নিয়ে এসএমপির কোতোয়ালী থানার ওসিকে তদন্তের জন্য নির্দেশ দেন।

বাদী পক্ষের আইনজীবী এডভোকেট মোহাম্মদ মনির উদ্দিন মামলার বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, আদালত মামলাটি আমলে নিয়ে কোতোয়ালী থানার ওসিকে তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন।

মামলার অভিযোগে উল্লেখ করা হয়- দীর্ঘ দিন ধরে আয়-ব্যায়ের কোন হিসাব না দিয়ে সিলেট অনলাইন প্রেসক্লাব’র তহবিল তছরুফ ও তহবিলের টাকা আত্মসাত করে চলেছেন সিলেট অনলাইন প্রেসক্লাবের সভাপতি আব্দুল মুহিত চৌধুরী ওরফে মুহিত চৌধুরী ও কোষাধক্ষ্য আব্দুল মুহিত দিদার।

মামলার আরজিতে ফারহানা বেগম হেনা উল্লেখ করেন, সিলেট অনলাইন প্রেসক্লাব’র সভাপতি মুহিত চৌধুরী এবং কোষাধক্ষ্য আব্দুল মুহিত দিদার পরস্পর যোগসাজসে প্রেসক্লাবের আর্থিক তহবিল তছরুপ ও আত্মসাৎ করে চলেছেন। তারা দীর্ঘ দিন থেকে ক্লাবের কোন আর্থিক হিসাব এজিএম-এ বা আনুষ্ঠানিক ভাবে দেয়া তো দুরের কথা অনানুষ্ঠানিক ভাবেও সদস্যদের কাছে প্রকাশ করছেন না। ফলে ক্লাবের অধিকাংশ সদস্য তাদের এমন কর্মকাণ্ডে সংক্ষুব্দ ও অসন্তুষ্ঠ। ক্লাবের হিসাব চাইলে সদস্যদেরকে তুচ্ছ-তাচ্ছিল্ল্য করা হয় এবং নানা হুমকি ধামকি দেয়া হয়। সিলেট অনলাইন প্রেসক্লাব সদস্যদের বার্ষিক চাঁদা, সরকারী ও বেসরকারী বিভিন্ন উৎস থেকে প্রাপ্ত অনুদানে ক্লাবের মোটা অংকের আর্থিক তহবিল গড়ে উঠেছে। সভাপতি টানা কয়েক মেয়াদে একই দায়িত্বে এবং ও কোষাধ্যক্ষ বিভিন্ন দায়িত্বে থাকায় আজ্ঞাত আরো ১/২ জনের যোগসাজসে ক্লাবের অর্থ আত্মসাৎ করে নিজেদের মধ্যে ভাগাভাগি করে নিচ্ছেন। ধারনা করা হচ্ছে সিলেট অনলাইন প্রেসক্লাবের ৩০ থেকে ৪০ লক্ষ টাকার মত তহবিল গড়ে ওঠেছে। তদন্তে এর অংক আরো বেশি হতে পারে। সভাপতি ও কোষাধ্যক্ষ প্রতারণার আশ্রয়ে এ তহবিল তছরুপ ও আত্মসাত করে চলেছেন।

সাংবাদিক ফারহানা বেগম হেনা তার আরজিতে আরো উল্লেখ করেছেন, ২০১৯-২০২০ অর্থবছরে সিলেট জেলা পরিষদ থেকে সিলেট অনলাইন প্রেসক্লাবের জন্য তিনটি কম্পিউটার ক্রয় করার নিমিত্তে ২ লাখ টাকা অনুদান দেওয়া হয়। যা গত ১০.০৬.২০২০ তারিখে সিলেট অনলাইন প্রেসক্লাব’র অনুকুলে সিলেট জেলা পরিষদ থেকে ৭৩৪৬৪১৮ নং ব্যাংক চেকের মাধ্যমে এ অর্থ ছাড় দেয়া হয় এবং যার ভাউচার নম্বার ২৪১। এই অনুদানের টাকা ক্যাশ হওয়ার পর অনলাইন প্রেসক্লাবের সভাপতি মুহিত চৌধুরী প্রতারণামূলক ভাবে এই ২ লাখ টাকার এক তৃতীয়াংশ তার মালিকানাধীন নিউজপোর্টাল দৈনিক সিলেট ডটকম-এর নামে নিয়ে যান। তার মালিকানাধীন নিউজ পোর্টাল ‘দৈনিক সিলেট ডটকম’র নামে দেয়া হয়েছে বলে প্রতারণা করে এ টাকা হাতিয়ে নেন তিনি।

মামলার বাদী ফারহানা বেগম হেনা সহ ক্লাবের অন্যান্য সদস্যরা বার বার ক্লাবের আর্থিক হিসাব চাইলে বর্ণিত সভাপতি ও কোষাধক্ষ্য বার বার কৌশলে তা এড়িয়ে যান। সর্বশেষ চলতি ২০২৩ সালের ১৬ জানুয়ারী সিলেট অনলাইন প্রেসক্লাবের বার্ষিক সাধারণ সভায় সদস্যরা ক্লাবের আয়-ব্যায় হিসাব জানতে চাইলে সভাপতি মুহিত চৌধুরী ও কোষাধক্ষ্য আব্দুল মুহিত দিদার তাদেরকে তুচ্ছ তাচ্ছিল্য করেন এবং এক পর্যায়ে তাদেরকে নানা হুমকি ধমকি দেয়া হয়। তাদের এহেন আচরণে সাংবাদিকরা ক্লাবের আর্থিক তহবিল আত্মসাৎ ও তছরুপের বিষয়টি নিশ্চিত হন।

মামলা বাদী ফারহানা বেগম হেনা জানান, সিলেট অনলাইন প্রেসক্লাব একটি সার্বজনীন প্রতিষ্ঠান। এই প্রতিষ্ঠানের অর্থ বা সম্পত্তি কারো ব্যাক্তি মালিকাধীন নয়, এটি ক্লাবের সদস্য ও সাংবাদিকদের সম্পদ। ক্লাবের সভাপতি মুহিত চৌধুরী দীর্ঘ দিন থেকে গঠনতন্ত্রের অগণতান্ত্রিক ধারাকে পুঁজি করে সভাপতির পদ ও ক্ষমতা কুক্ষিগত করে রেখেছেন। প্রতিবারই নির্বাচন হলে নানা বাধাবাধ্যকতা দেখিয়ে কাউকে সভাপতি পদে প্রার্থী হতে দেন না। তার স্বৈরাচারী ও অগণতান্ত্রিক আচরণের বিরুদ্ধে যারাই কথা বলেন তাদেরকে নানা পকৌশল করে ক্লাব থেকে বের করে দেন তিনি। অনলাইন প্রেসক্লাবের প্রতিষ্ঠাতাদের অনেক এবং প্রথম পর্যায়ের অনেক সদস্যই এখন আর সিলেট অনলাইন প্রেসক্লাবে নেই। সাংবাদিকদের একটি সংগঠনে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহীতা না থাকলে জাতির জন্য এটা লজ্জাজনক।