Home জাতীয় ২১% পথশিশু মাদকের বাহক

২১% পথশিশু মাদকের বাহক

31

ডেস্ক িপোর্ট: দেশের ২১ শতাংশ পথশিশুকে মাদকের বাহক হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে। আর পথশিশুদের ৫৮ শতাংশ কোনো না কোনো মাদক নেয়। মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের (ডিএনসি) এক গবেষণায় এ চিত্র উঠে এসেছে।

অধিদপ্তরের ২০২১ সালের বার্ষিক প্রতিবেদন বলছে, নারী ও শিশুদের মাদকের বাহক হিসেবে ব্যবহার করছেন মাদক কারবারিরা।

এ পটভূমিতে আজ রোববার দেশে পালিত হবে আন্তর্জাতিক মাদকবিরোধী দিবস। দিবসটির এবারের প্রতিপাদ্য, ‘মাদক সেবন রোধ করি, সুস্থ সুন্দর জীবন গড়ি’।

গবেষণার অংশ হিসেবে দেশব্যাপী ১ হাজার ৬০০ পথশিশুর সাক্ষাৎকার নেওয়া হয়। এর মধ্যে ৯২৮টি শিশু বলেছে, তারা মাদক সেবন করে। অর্থাৎ ৫৮ শতাংশ পথশিশু মাদকসেবী। এই ৯২৮ জনের মধ্যে ৩৩৬টি শিশু বলেছে, তারা মাদক সেবনের পাশাপাশি মাদকের বাহক হিসেবেও কাজ করে। শতাংশের হিসাবে যা ২১।

গবেষণার তথ্য বলছে, পথশিশুরা খুব সহজে মাদক সংগ্রহ করতে পারে। ৫৩ শতাংশ শিশু সরাসরি কারবারিদের কাছ থেকে মাদক কেনে। পথশিশুদের মধ্যে ১৪ শতাংশ বলেছে, তারা ১০ বছর হওয়ার আগে থেকেই মাদক নিচ্ছে।

অপ্রাপ্তবয়স্ক মাদকসেবীদের নিয়ে করা অধিদপ্তরের গবেষণাটির ফলাফল গত বছর প্রকাশ করা হয়। এর উদ্দেশ্য ছিল, মাদকের কারণে অল্প বয়সীদের স্বাস্থ্যঝুঁকি ও মানসিক স্বাস্থ্যের অবস্থা চিহ্নিত করার মধ্য দিয়ে তাদের মাদক থেকে ফেরানোর উপায় খোঁজা।

জানতে চাইলে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক আজিজুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, গবেষণায় যেসব সুপারিশ করা হয়েছে, সেগুলো পর্যালোচনা করে বাস্তবায়নের উদ্যোগ নেওয়া হবে।

আবেগ নিয়ন্ত্রণের সক্ষমতা, নিজেকে পরিচালনা করার সক্ষমতা, সক্রিয়তা ও মনোযোগ, বন্ধুত্বের সম্পর্ক এবং সামাজিক আচরণ—এই পাঁচ বিষয়ের ভিত্তিতে অল্প বয়সী মাদকসেবীদের মানসিক স্বাস্থ্যের অবস্থা নির্ণয় করা হয়েছে গবেষণায়। এতে দেখা গেছে, ৫৫ শতাংশই মানসিক স্বাস্থ্যের দিক থেকে স্বাভাবিক নেই। ৬৪ শতাংশ নিজেকে পরিচালনা করার মতো সক্ষম নেই। মানসিক স্বাস্থ্যের বিবেচনায় বাগেরহাট, কুমিল্লা, জামালপুর, ঠাকুরগাঁও, সাতক্ষীরা, ফরিদপুর, হবিগঞ্জ, টাঙ্গাইল ও নওগাঁয় মাদকসেবীরা সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিতে রয়েছে বলেও গবেষণায় উঠে এসেছে।

সহজলভ্যতা ও তুলনামূলক দাম কম হওয়ায় পথশিশুদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি আসক্ত গাঁজায়। পথশিশুদের ৩১ দশমিক ৭ শতাংশ গাঁজা সেবন করে। ড্যান্ডিতে আসক্ত ১৫ দশমিক ২ শতাংশ। এটিও সহজলভ্য ও সস্তা। ড্যান্ডি সেবনে ক্ষুধামান্দ্য তৈরি হয়। সামাজিক বাস্তবতা ভুলে থাকা যায়, যেখানে-সেখানে ঘুমিয়ে পড়া যায় বলে গবেষণায় বলা হয়েছে।

মাওলানা ভাসানী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্রিমিনোলজি অ্যান্ড পুলিশ সায়েন্স বিভাগের অধ্যাপক মুহাম্মদ উমর ফারুক প্রথম আলোকে বলেন, সুবিধাবঞ্চিত হওয়ায় পথশিশুদের মধ্যে হতাশা কাজ করে। এ কারণে খুব সহজে তাদের প্রভাবিত করা যায়। দারিদ্র্যের কারণে তাদের সহজে মাদকের বাহক হিসেবে ব্যবহার করা যায়।

যারা পথশিশুদের বাহক হিসেবে ব্যবহার করছে, তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া প্রয়োজন উল্লেখ করে তিনি বলেন, পথশিশুদের সমাজের মূল স্রোতে ফিরিয়ে এনে তাদের মৌলিক অধিকার রক্ষায় রাষ্ট্রীয়ভাবে উদ্যোগ না নিলে এ সমস্যা দূর হবে না। বিভিন্ন সামাজিক সংগঠনও এ বিষয়ে উদ্যোগ নিতে পারে।
-প্রথম আলো