Home জাতীয় ১৬ দফা দাবিতে রাজশাহী ডিসি অফিস ঘেরাও

১৬ দফা দাবিতে রাজশাহী ডিসি অফিস ঘেরাও

44

মো.পাভেল ইসলাম রাজশাহী: আদিবাসীদের আদিবাসী হিসেবে সাংবিধানিক স্বীকৃতি, পৃথক মন্ত্রণালয় ও ভূমি কমিশন গঠন, রাজশাহীর বরেন্দ্র অঞ্চলে সেচের পানির অভাবে আদিবাসী কৃষকের আত্মহত্যার বিচারসহ ১৬ দফা দাবিতে ডিসি অফিস ঘেরাও এবং প্রধানমন্ত্রী বরাবর স্মারকলিপি প্রদান কর্মসূচি পালন করা হয়েছে।

জাতীয় কৃষক সমিতি ও জাতীয় আদিবাসী পরিষদ রাজশাহী জেলা ও মহানগর শাখার উদ্যোগে বুধবার (১৮ মে ) বেলা ১১ টার দিকে রাজশাহী ডিসি অফিসের সামনে এই কর্মসূচি পালন করা হয়।

কর্মসূচির অংশ হিসেবে আদিবাসীরা খন্ড খন্ড মিছিল নিয়ে রাজশাহী ডিসি অফিসের সামনে জড়ো হয়ে মানববন্ধন ও বিক্ষোভ সমাবেশ করে।

জাতীয় আদিবাসী পরিষদ রাজশাহী শাখার সভাপতি বিমল চন্দ্র রাজোয়ারের সভাপতিত্বে মানববন্ধনে বক্তব্য রাখেন, জেলা কৃষক সমিতির আহ্বায়ক ও কেন্দ্রীয় কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক রফিকুল ইসলাম পিয়ারুল, জাতীয় আদিবাসী পরিষদের সাধারণ সম্পাদক গণেষ মাঝি,জেলা ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক আশরাফুল হক তোতা, মহানগর সাধারণ সম্পাদক দেবাশীষ প্রামানিক দেবু, জাতীয় আদিবাসী পরিষদ কেন্দ্রীয় কমিটির নির্বাহী সদস্য রাজ কুমার শাও,দপ্তর সম্পাদক সুভাষ চন্দ্র হেমব্রমসহ অন্যান্য নেতৃবৃন্দ।

আদিবাসী সংগঠনের নেতারা দাবি জানান, ১৬ দফা বাদি বাস্তবায়ন চাই। গোদাগাড়ীর দুইজন কৃষক জমিতে পানি না পেয়ে আত্মহত্যা করতে হয়। আদিবাসীদের জমিদখলসহ আদিবাসীরা নির্যাতিত হচ্ছে এসব বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী বরাবর স্মারকলিপি প্রদান করবো। এগুলো যদি না বাস্তবায়ন হয় তাহলে আমরা বৃহত্তম আন্দোলনে রাস্তায় নেমে দাবি আদায় করে বাড়ী ফিরবো বলে হুশিয়ারী প্রদান করেন।

মানববন্ধন ও বিক্ষোভ শেষে আদিবাসীরা মিছিল নিয়ে রাজশাহী ডিসি অফিস ঘেরাও করে এবং পরে প্রধানমন্ত্রী বরাবর আদিবাসীদের ১৬ দফা দাবিতে রাজশাহী ডিসির মাধ্যমে একটি স্মারকলিপি প্রদান করেন।

রাজশাহী জেলা প্রশাসক আব্দুল জলিল অফিসে উপস্থিত না থাকায় তার পক্ষে অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (শিক্ষা ও আইসিটি) জয়া মারীয়া পেরেরা স্মারকলিপিটি গ্রহণ করেন।

আদিবাসীদের ১৬ দফা দবি গুলো হলো:১.আদিবাসীদের ‘আদিবাসী’ হিসেবে সাংবিধানিক স্বীকৃতি দেওয়া।২. সমতলের আদিবাসীদের জন্য পৃথক মন্ত্রণালয় ও ভূমি কমিশন গঠন করা। ৩. দখলি শর্তে খাস জমি, বসতভিটা, কবরস্থান, পুকুর আদিবাসীদের নামে প্রদান করা। ৪. প্রাকৃতিক বনে আদিবাসীদের প্রথাগত অধিকারকে নিশ্চিত করা, বনায়ন ও প্রকল্পের নামে প্রাকৃতিক বন ও বননির্ভর আদিবাসী জীবন বিপন্ন না করা, আদিবাসীদের নামে মিথ্যা বন মামলা ও হয়রানি বন্ধ এবং বনায়নের নামে আদিবাসীদের জমি কেড়ে না নেওয়া। ৫. রাজশাহীর গোদাগাড়ীতে সেচের পানি না পেয়ে বিষপানে আত্মহত্যা করা অভিনাথ মার্ডি ও রবি মার্ডির মৃত্যুর ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত ও ন্যায়বিচার নিশ্চিত কর, ক্ষতিগ্রস্থ পরিবারকে আর্থিক সহযোগিতা করা এবং বরেন্দ্র অঞ্চলের খাস পুকুরগুলো উদ্ধার করে কৃষকদের সেচের পানি নিশ্চিত করাসহ কৃষিকাজে রাষ্ট্রীয়ভাবে বিশেষ প্রণোদনা চালু করা। ৬. আদিবাসীদের জমি আদিবাসীদের কাছে হস্তান্তরের রক্ষাকবচকে আরো কঠোর করাসহ বিনা অনুমতিতে যেসব দলিল তৈরি হয়েছে সেগুলো বাতিল করা। ৭. সকল আদিবাসীদের নিজস্ব ভাষায় প্রাথমিক স্তরে শিক্ষা নিশ্চিত করা ও আদিবাসী অধ্যুষিত অঞ্চলের সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোতে কমপক্ষে একজন করে আদিবাসী শিক্ষক নিয়োগ, আদিবাসীদের জন্য উচ্চ শিক্ষা ও প্রথম-দ্বিতীয় শ্রেণীসহ সকল সরকারি চাকুরিতে আদিবাসীদের জন্য বিশেষ ৫% কোটা সংরক্ষণ ও বাস্তবায়ন করা। ৮. দিনাজপুর ও নওগাঁয় প্রতিষ্ঠিত আদিবাসী সাংস্কৃতিক একাডেমীতে দ্রুত জনবল নিয়োগ করা এবং রাজশাহী বিভাগীয় আদিবাসী সাংস্কৃতিক একাডেমীর উপ-পরিচালক পদে আদিবাসীদের মধ্য থেকে নিয়োগ দেওয়া। ৯. শুধুমাত্র থোক বরাদ্দ নয়, জাতীয় বাজেটের অংশ হিসেবে সমতল অঞ্চলের আদিবাসীদের উন্নয়নের জন্য পৃথক বাজেট প্রণয়ন করতে হবে। প্রয়োজনে ‘সমতল আদিবাসী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ গঠনসহ আদিবাসী কমিশন গঠন করা।

১০.আদিবাসীদের ক্ষমতায়নের লক্ষ্যে জাতীয় সংসদে রাজশাহী ও রংপুর বিভাগ থেকে আদিবাসী প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিতের জন্য আইন প্রণয়ন ও সংরক্ষিত আদিবাসী নারী আসনের ব্যবস্থা করা। পাশাপাশি স্থানীয় সরকার কাঠামোতে নির্দিষ্টভাবে সদস্য পদ আদিবাসী নারীদের জন্য সংরক্ষণ করা। ১১. আদিবাসীদের মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনায় জড়িতদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির পাশাপাশি এ ক্ষেত্রে স্থানীয় প্রশাসনকে সক্রিয় করা। ১২. বর্তমান সরকারের ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগের নির্বাচনী ইশতেহারে বর্ণিত আদিবাসীদের দেওয়া প্রতিশ্রুতিগুলো বাস্তবায়ন করা। ১৩. আদিবাসীদের ভাষা, সাহিত্য ও সংস্কৃতি রক্ষা এবং চর্চার অনুকূল পরিবেশ, গবেষণার ক্ষেত্র প্রস্তুতসহ আদিবাসী একাডেমী গঠন করা। ১৪. গাইবান্দা জেলার গোবিন্দগঞ্জ উপজেলার সাহেবগঞ্জ-বাগদাফার্মের ১৮৪২.৩০ একর সম্পত্তি প্রকৃত জমি মালিকদের ফিরিয়ে দেওয়া এবং সেই জমিতে সরকার কর্তৃক ইপিজেড (ঊচত) স্থাপনের ষড়যন্ত্র বন্ধ করা। এছাড়াও গত ৬ নভেম্বর ২০১৬ তারিখে পুলিশের গুলিতে নিহত তিন সাঁওতাল হত্যার বিচার এবং ক্ষতিপূরণ দেওয়া। ১৫. আদিবাসীদের মালিকানাধীন কোন জমি অধিগ্রহন চিরতরে বন্ধ করতে আইন প্রনয়ন কর এবং ১৬. সরকারি গেজেটে বাদপড়া আদিবাসীদের জাতিসত্ত্বাগুলোকে অন্তর্ভূক্ত করার দাবি ।