Home জাতীয় হাফ পাস আন্দোলন কি জটিল হয়ে উঠছে?

হাফ পাস আন্দোলন কি জটিল হয়ে উঠছে?

43

ডেস্ক রিপোর্ট: রাজধানী ঢাকায় আরও তীব্র হচ্ছে ‘হাফ পাস’ আন্দোলন। শনিবার (২৭ নভেম্বর) সকাল থেকে অন্তত নয়টি ভিন্ন ভিন্ন এলাকায় রাস্তার ওপর অবস্থান নেন শিক্ষার্থীরা। এদিন তারা নয় দফা দাবি তুলে ধরেছেন। বিকেলে পরিবহন মালিক ও বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআরটিএ)-এর কর্মকর্তাদের মধ্যে একটি বৈঠক হয়েছে। সেখানে ‘হাফ পাস’ কার্যকরের জন্য ভর্তুকি দাবি করেছেন মালিকরা। এছাড়া, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের নিজস্ব পরিবহন বাড়ানো ও শিক্ষার্থীদের আলাদা পরিবহন পাস দেওয়া নিয়েও কথা উঠেছে।
আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের আগের ৫ দফা দাবির সঙ্গে সংযোজন-বিয়োজন করে নিরাপদ সড়ক আন্দোলনের (নিসআ) পক্ষ থেকে ৯ দফা দাবি তোলা হয়েছে। এগুলো হলো, ১) শিক্ষার্থীসহ সড়কে সব হত্যার বিচার করতে হবে দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালে; ২) সারাদেশে সব গণপরিবহনে (সড়ক, নৌ, রেল ও মেট্রোরেল) শিক্ষার্থীদের হাফ পাস নিশ্চিত করে প্রজ্ঞাপন জারি করতে হবে; ৩) গণপরিবহনে নারীর নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে এবং জনগণের চলাফেরার জন্য যথাস্থানে ফুটপাত, ওভারব্রিজ বা বিকল্প নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিতে হবে; ৪) সড়ক দুর্ঘটনায় আহত সব যাত্রী ও পরিবহন শ্রমিকদের যথাযথ ক্ষতিপূরণ ও পুনর্বাসন নিশ্চিত করতে হবে। ৫) পরিকল্পিত বাস স্টপেজ ও পার্কিং স্পেস তৈরি করতে হবে; ৬) সড়ক দুর্ঘটনায় নিহতের দায়ভার সংশ্লিষ্ট মহলকে নিতে হবে; ৭) বৈধ ও অবৈধ যানবাহন চালকদের প্রশিক্ষণের মাধ্যমে বৈধতার আওতায় আনতে হবে; ৮) ঢাকাসহ সারাদেশে ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা স্বয়ংক্রিয় ও আধুনিক করতে হবে; ৯) জনসচেতনতা বৃদ্ধিতে ট্রাফিক আইনকে পাঠ্যসূচির অংশ করতে হবে এবং ১০) মিডিয়ার মাধ্যমে সচেতনতামূলক অনুষ্ঠান সম্প্রচার করতে হবে।
এদিকে, ফের আন্দোলনে নামার ঘোষণা দিয়েছেন নটরডেম কলেজের শিক্ষার্থীরা। এর আগে, তারা ১০ দফা দাবি তুলে ৪৮ ঘণ্টার সময়সীমা বেঁধে দিয়েছিলেন। ঘোষণা অনুযায়ী তারা রবিবার মতিঝিল-গুলিস্তান এলাকায় অবস্থান নেবেন, তাদের দাবিতেও আসতে পারে কিছু পরিবর্তন।
সড়ক পরিবহন শ্রমিক ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক ওসমান আলী বলেছেন, ‘বৈঠকে বাস মালিক, শ্রমিক প্রতিনিধি, পুলিশ ও বিআরটিএ-এর প্রতিনিধি ছিলেন। এখানে কিছু প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। শিক্ষার্থীদের সেশন ফি কমিয়ে একটা কেন্দ্রীয় তহবিল গঠনের প্রস্তাব দিয়েছে মালিক সমিতি। তারা বলেছেন, শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের বাজেটে খরচ না হওয়ায় প্রতিবছর কয়েক হাজার কোটি টাকা ফেরত যায়। সেই টাকা ভর্তুকি হিসেবে এখানে ব্যবহার করা যায়।’
ওসমান আলী আরও বলেন, ‘শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থেকে শিক্ষার্থীদের আলাদা পরিবহন পাস দেওয়ার কথাও বলেছে মালিক সমিতি। তাহলে আর আইডিকার্ড দেখানো লাগবে না। আর পাস নকলও হবে না। এগুলো নিয়ে সরকার আলোচনা করে শিগগিরই সিদ্ধান্ত নেবে। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোই পাস তৈরি করে শিক্ষার্থীদের দিতে পারে। এসব বিষয়ে প্রজ্ঞাপন জারি করে সরকারের সিদ্ধান্ত জানানো উচিত।’
শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের নিজস্ব পরিবহন বাড়ানোর ওপর জোর দিয়ে ওসমান আলী বলেন, ‘মন্ত্রণালয়ের যত টাকা খরচ না হয়ে ফেরত যায়, সেগুলো দিয়ে শিক্ষার্থীদের জন্য বাস কিনে দিলে তো হাফ ভাড়া বা কোয়ার্টার ভাড়া কোনোটাই লাগে না।’

ঢাকার গণপরিবহনে হেলপার-কন্ডাক্টররা ইদানিং মারমুখী আচরণ করছে কেন, এমন প্রশ্নের জবাবে এই শ্রমিকনেতা বলেন, ‘ওরা তো অমানবিক আচরণ করে না। ওদের প্রতি সবাই অমানবিক আচরণ করে। মানুষ ওদের সঙ্গে বেশিরভাগ সময় তাচ্ছিল্যপূর্ণ আচরণ করে। শ্রমিকরা প্রতিনিয়ত নির্যাতিত হচ্ছে। শ্রমিকদের নিয়োগপত্র না দিলে তাদের মর্যাদা প্রতিষ্ঠিত হবে না। সরকার গাড়ির কাগজ আছে কি না দেখে, কিন্তু শ্রমিকের নিয়োগপত্র আছে কি না, দেখে না।’

নিরাপদ সড়ক আন্দোলনের (নিসআ) কেন্দ্রীয় যুগ্ম আহ্বায়ক ইনজামুল হক বলেন, ‘ঢাকায় গণপরিবহনে এমনিতেই ভাড়া অনেক বেশি। এই ভাড়া নির্ধারণ করা হয় বাসের সিটি ২০ বা ৩০ শতাংশ ফাঁকা থাকবে এই হিসাব করে। কিন্তু ঢাকায় কোনো বাসেই সিট ফাঁকা থাকে না। উপরন্তু বাসে ৮/১০টা বাড়তি সিট জোর করে বসানো হয়। সব মিলিয়ে মনে হয়, ভর্তুকি না দিলেও বাস মালিকদের লস হবে না। আর পরিবহন পাসের ব্যাপারে বলতে চাই, আলাদা করে কোনো ডিজিটাল কার্ড বা ওই ধরনের কিছু দিলে তা শিক্ষার্থীদের জন্যই ভালোই।’
বিপ্লবী ছাত্র মৈত্রীর সভাপতি ইকবাল কবির বলেন, ‘ছাত্র ও পরিবহন শ্রমিকদের মুখোমুখি দাঁড় করানোর পাঁয়তারা করছে মালিকপক্ষ। আইডি কার্ড থাকলে আলাদা করে কেন পরিবহন পাস লাগবে? এটা কোনো যুক্তিসঙ্গত প্রস্তাব না। এ পথে গেলে অনর্থক একটা আমলাতান্ত্রিক জটিলতা তৈরি হবে। আইডি কার্ডই শিক্ষার্থীর পরিচয়।’

নটরডেম কলেজের দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী মোহাম্মদ মামুন বলেন, রবিবার শিক্ষার্থীরা আন্দোলনে নামবে। আগের দাবিগুলোর সঙ্গে নতুন দাবি যুক্ত হবে। শিক্ষার্থীরা সকালে বেরিয়ে মতিঝিল হয়ে জিরো পয়েন্টে অবস্থান নেবে।’-ইত্তেফাক