Home সারাদেশ সড়ক যোগাযোগে আরেক ধাপ এগিয়ে গেল বাংলাদেশ

সড়ক যোগাযোগে আরেক ধাপ এগিয়ে গেল বাংলাদেশ

29

ডেস্ক রিপোর্ট: পিরোজপুরের কঁচা নদীতে বঙ্গমাতা বেগম ফজিলাতুন নেছা মুজিব ৮ম বাংলাদেশ-চীন মৈত্রী সেতুর আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন হচ্ছে আজ। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গণভবন থেকে ভার্চুয়াল পদ্ধতিতে সংযুক্ত হয়ে দক্ষিণাঞ্চলের এ গুরুত্বপূর্ণ সেতুটির উদ্বোধন করবেন। এর আগে সেতুটির নাম ছিল বেকুটিয়া ব্রিজ। পরবর্তীতে সেতুটির নামকরণ করা হয় বঙ্গমাতা বেগম ফজিলাতুন নেছা মুজিব ৮ম বাংলাদেশ-চীন মৈত্রী সেতু। সেতুটিকে ঘিরে দুই প্রান্তের জনসাধারণের মধ্যে উৎসবের আমেজ তৈরি হয়েছে। এ সেতুটির মাধ্যমে রাজধানী থেকে বেনাপোল পর্যন্ত নিরবচ্ছিন্ন সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থা চালু হবে।

বরিশাল বিভাগীয় সদরের সঙ্গে খুলনা বিভাগীয় শহরের নিরবচ্ছিন্ন যোগাযোগ স্থাপনসহ কুয়াকাটা সাগরসৈকত, পায়রা সমুদ্রবন্দর, মোংলা সমুদ্রবন্দর, বেনাপোল ও বাংলাবান্দা স্থল বন্দরকে সেতুটি সরাসরি সড়ক সংযুক্ত করবে। সেতুটির অবস্থান রাজাপুর-নৈকাঠী-বেকুটিয়া-পিরোজপুর জেলা সড়কে। পাশাপাশি পদ্মা সেতুর সুবাদে দক্ষিণাঞ্চলের বাসিন্দাদের জন্য এ সেতুটি বিশেষ সুবিধা সৃষ্টি করবে। সড়ক পথে বরিশাল-খুলনা আঞ্চলিক এ মহাসড়কটি প্রায় ১০০ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের হলেও যান চলাচলে সময় লাগত চার ঘণ্টা। কঁচা নদীর বেকুটিয়া পয়েন্টে সেতুটি চালুর পর এ সময় এক ঘণ্টা কমে আসবে, থাকছে না ফেরির বিড়ম্বনা।

পেছনের কথা : ২০১৭ সালের ১ অক্টোবরে সেতুটির নির্মাণকাজ সূচিত হয়। চীন সরকারের অর্থায়নে ৮৯৪ কোটি ৮ লাখ টাকা ব্যয়ের ৯৯৮ মিটার দৈর্ঘ্যের সেতুটি ‘বঙ্গমাতা বেগম ফজিলাতুন নেছা মুজিব—৮ম বাংলাদেশ-চীন মৈত্রী সেতু’ নামকরণ করা হয়েছে। ২০০০ সালের ১০ জুন পিরোজপুরের বলেশ্বর সেতু উদ্বোধনকালে এক বিশাল জনসভায় তত্কালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কঁচা নদীতে একটি সেতু নির্মাণের ঘোষণা দেন। ২০১৩ সালের ১৯ মার্চ পিরোজপুরের আরেকটি জনসভায় একই ঘোষণা পুনর্ব্যক্ত করেন। পাশাপাশি এই দিনই তিনি গাবখান নদীতে বরিশাল-পিরোজপুর-খুলনা আঞ্চলিক মহাসড়ক এবং বরিশাল- ঝালকাঠি- ভাণ্ডারিয়া- চরখালী-মঠবাড়িয়া-পাথরঘাটা সড়কে পঞ্চম বাংলাদেশ-চীন মৈত্রী সেতু নির্মাণের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন। যা পরবর্তীকালে ২০০২ সালে নির্মাণ শেষে চালু করা হয়। এরপরে কঁচা নদীর বেকুটিয়া পয়েন্টে সেতু নির্মাণের সমীক্ষা হাতে নেওয়া হয়। ২০০৯ সালে শেখ হাসিনার নেতৃত্বে গঠিত সরকারের আমলে প্রকল্পটি গতি পায় এবং চীন সরকারের আর্থিক অনুদানে ২০১৭ সালের অক্টোবরে এই সেতু নির্মাণের কাজ শুরু হয়। ২০১৮ সালের ৩০ নভেম্বর প্রধানমন্ত্রী সেতুটির ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন। ১৯৯৬ সালে শেখ হাসিনার নেতৃত্বে সরকার গঠনের পর দক্ষিণাঞ্চলের সড়ক নির্মাণে এক যুগান্তকারী অধ্যায়ের সূচনা ঘটে। ১৯৯৬ সালের ৩০ নভেম্বর পিরোজপুরের বলেশ্বর সেতুর নির্মাণকাজের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করা হয়। ২০০০ সালের ১০ জুন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এ সেতুর উদ্বোধন করেন। ১৯৯৯ সালের ১৪ এপ্রিল বাগেরহাটের দড়াটানা নদীতে বরিশাল-পিরোজপুর-খুলনা আঞ্চলিক মহাসড়কে অনুরূপ আরেকটি সেতুর ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করা হয়। এর ধারাবাহিকতায় ২০০১ সালের ৩০ মে প্রধাণমন্ত্রী শেখ হাসিনা দক্ষিণ-পশ্চিম অঞ্চলের মানুষের দীর্ঘ প্রতীক্ষিত খুলনার ‘রূপসা সেতুর’ ভিত্তি প্রস্তর স্থাপন করেন, যা ২০০৫ সালের ৫ মে যান চলাচলের জন্য খুলে দেওয়া হয়। ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে ঐকমত্যের সরকারের সময় আরো যেসব সেতু দক্ষিণাঞ্চলে নির্মিত হয় তাহলো বরিশালের শিকারপুর সেতু, দোয়ারিকা সেতু, দপদপিয়া সেতু, বাগেরহাটের মোল্লাহাট সেতু, পিরোজপুরের নাজিরপুর সেতু, সাতক্ষীরা কালীগঞ্জ সেতু ইত্যাদি।

সেতুর আদ্যোপান্ত : সেতুটির নির্মাণকাজ তদারকিতে দায়িত্বরত সড়ক অধিদপ্তরের বরিশাল বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী ও প্রকল্পের ম্যানেজার মাসুদ মাহমুদ সুমন ইত্তেফাককে জানান, বঙ্গমাতা বেগম ফজিলাতুন নেছা মুজিব ৮ম বাংলাদেশ-চীন মৈত্রী সেতুর বাস্তবায়নকারী সংস্থা হচ্ছে সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তর। গণপ্রজাতন্ত্রী চীন সরকার ও বাংলাদেশ সরকারের অর্থায়নে এ সেতুর নির্মাণ ব্যয় ৮৯৪ কোটি টাকা। যার মধ্যে চীনের প্রকল্প সাহায্য ৬৫৪ কোটি টাকা। ২০১৭ সালের অক্টোবর মাসে সূচিত সেতুর নির্মাণ কাজ ২০২২ সালের ডিসেম্বরে শেষ হওয়ার মেয়াদ থাকলেও নির্ধারিত সময়ের চার মাস আগেই কাজ শেষ হয়েছে। সেতুটি পিসি বক্স গার্ডার ধরনের। দৈর্ঘ্য ১ হাজার ৪৯৩ মিটার, প্রস্থ ১৩ দশমিক ৪০ মিটার। উভয় পাশে হার্ড শোল্ডার ও ফুটপাতসহ দুই লেন। মূল সেতুর দৈর্ঘ্য ৯৯৮ মিটার।

মূল সেতুর স্প্যান সংখ্যা ১৫টি, পিআর সংখ্যা ১৫টি। ফাউন্ডেশনের ধরন হচ্ছে কাস্ট-ইন-সিটু পাইল, পাইলের সর্বোচ্চ গভীরতা ১১৭ মিটার, পাইলের ডায়া দুই মিটার। ভায়াডাক্টের দৈর্ঘ্য ৪৯৫ মিটার, ভায়াডাক্টের স্পান সংখ্যা ১৫টি, পিআর সংখ্যা ১৫টি, অ্যাবাটমেন্ট সংখ্যা দুইটি। সংযোগ সড়কের দৈর্ঘ্য ১ দশমিক ৪৬৭ কিলোমিটার। নেভিগেশনে ভ্যার্টিক্যাল ক্লিয়ারেন্স ১৮ দশমিক ৩০ মিটার, হরিজন্টাল ক্লিয়ারেন্স ১২২ মিটার। ভূমি অধিগ্রহণ ১৩ দশমিক ৩২ হেক্টর। নদী তীর রক্ষার কাজ ২২০ মিটার। এছাড়া প্রকল্পের আওতায় অন্যান্য কাজ হচ্ছে ১২ মিটার আরসিসি সেতু একটি, সাড়ে চার মিটার বক্স কার্লভাট একটি। প্রকল্প বহির্ভূত জনস্বার্থে কৃত কাজ ২২০ মিটার দীর্ঘ ও ৫৫ মিটার প্রস্থ বিনোদন এলাকা উন্নয়ন। সেতুর দুই প্রান্তে বিটুমিনাস সড়ক রয়েছে।

বাংলাদেশ সরকারের অর্থায়নে ৯ কোটি ৪২ লাখ টাকা ব্যয়ে সেতুর টোল প্লাজা নির্মাণ ও একটি পরিদর্শন বাংলো নির্মাণের কাজও সম্পন্ন হয়েছে। যে নদীর ওপর সেতুটি নির্মিত হচ্ছে তা ভারত-বাংলাদেশ নৌ প্রোটকাল চুক্তি অনুযায়ী আন্তর্জাতিক নৌপথ। এ পথ দিয়ে পশ্চিম বাংলা থেকে বাংলাদেশ হয়ে আসাম ও ত্রিপুরার সঙ্গে ভারতের পণ্যবাহী নৌযান চলাচল করে। এ ছাড়া মোংলা বন্দর ও খুলনা থেকে দেশের অভ্যন্তরে পণ্যবাহী বড় বড় নৌযান ও জ্বালানিবাহী অয়েল ট্যাংকার চলাচলেরও নৌপথ এটি। যে কারণে সেতুটি নেভিগেশন ক্লিয়ারেন্স পানির স্বাভাবিক উচ্চতা থেকে ১৮ মিটার বলে জানিয়েছেন এ সেতু নির্মাণ প্রকল্পের ম্যানেজার ও সড়ক বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী। নির্মাণকারী চীনা প্রতিষ্ঠান হচ্ছে চায়না রেলওয়ে মেজর ব্রিজ রিকনাইজেন্স ডিজাইন ইনস্টিটিউট।
ইত্তেফাক