||মুক্তার হোসেন নাহিদ ||

‘ইন্টারনেটকে মৌলিক অধিকারের স্বীকৃতি চাই।’-অবাক হচ্ছেন!আমিও হয়েছিলাম। কিন্তু বাংলাদেশ ইন্টারনেট গভর্ন্যান্স ফোরামের (বিআইজিএফ) ১৭তম বার্ষিক সভায় ১৫টি সেশনে সার্বক্ষণিক অংশগ্রহণের মধ্যদিয়ে মনে হয়েছে সময়ের প্রয়োজনে এটি একটি গ্রহণযোগ্য ও অপরিহার্য দাবি। নগর থেকে প্রত্যন্ত গ্রাম-সর্বত্র ইন্টারনেটের বিচরণ। শিক্ষা, স্বাস্থ্য, কৃষি, ব্যবসা-বাণিজ্য, পরিবহণ, আইন-আদালত, সামাজিক যোগাযোগ, সরকারি-বেসরকারি সেবা সহ এমন কোনো খাত নেই যেখানে ইন্টারনেট প্রয়োজন হয় না। এমনকি ৬টি মৌলিক অধিকার ভোগেও ইন্টানেট প্রয়োজন। ইন্টারনেটের কল্যাণে দুর্গম চরের কলিম চাচা যেমন ক্ষেতের ফসল বিক্রি করছে, তেমনি রহিমা খালাও বিক্রি করছে হাতে তৈরি নানা পণ্য। ভিডিও কলে প্রাণখুলে সন্তানের সাথে কথা বলেন বাবা-মা। প্রবাসী স্বামীর সাথে নববধু মনের ভালোবাসার আদান-প্রদান করে তরঙ্গের ঢেউয়ে। ফ্রি ল্যান্সিংয়ের মাধ্যমে বেকারত্বের অভিশাপ থেকে মুক্তি পেয়েছেন লক্ষ লক্ষ তরুণ-তরুণী। চাকরির পরীক্ষা বা যোগাদানের আশায় পোস্ট অফিসে চিঠির জন্য বসে থেকে ওভার ডেটের কারণে আর চোখের পানি ফেলতে হয় না কাউকে। চিকিৎসা সেবাও মিলছে ঘরে বসে। ৯৯৯-এ কল করলেই হাজির হচ্ছে নিরাপত্তা বাহিনী। কিন্তু কথায় আছে ‘বাতির নিচে অন্ধকার’। ইন্টারনেট আমাদের জীবনযাত্রাকে সহজ করে দিলেও তার সুবিধা পৌঁছে নাই সব ঘরে। রয়েছে প্রাপ্তির অসমতা। নেই উচ্চ গতি। অন্যদিকে সাইবার ক্রাইমের শিকার হচ্ছেন বহু মানুষ। ডিভাইস সেবার বৈষম্যও প্রকট। এমন পরিস্থিকে সামনে নিয়েই ডিজিটাল বাংলাদেশ থেকে ‘স্মার্ট বাংলাদেশ’-এর পথে। তাল মেলাতে হবে ৫ম দুনিয়ার ৫ম শিল্পবিপ্লবের সাথে। যেখানে ইন্টারনেট ছাড়া চলাই মুসকিল। তাই বর্তমান সময়ের নিত্যদিনের সঙ্গী ইন্টারনেটের সেবার নিশ্চয়তা ও ব্যক্তিগত প্রাইভেসির জন্য ‘ইন্টারনেট’কে মৌলিক অধিকারের স্বীকৃতির দেওয়ার কোনো বিকল্প নেই।

ধন্যবাদ জানাই জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সুযোগ্য কন্যা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা’কে; যিনি ডিজিটাল বাংলাদেশের স্বপ্নের বাস্তব রূপায়ণে দেশবাসীর জীবনযাত্রাকে সহজ করে দিয়েছেন। ধন্যবাদ এই স্বপ্নের নেপথ্যের কারিগর বঙ্গবন্ধুর দৌহিত্র সজীব ওয়াজেদ জয়কে। বিআইজিএফ’কেও ধন্যবাদ ইন্টারনেটের গুরুত্ব ও অজানা তথ্য জানানোর জন্য।

২০০৯ সালেও যা অকল্পনীয় ছিল, সেই ‘ডিজিটাল বাংলাদেশে’র স্বপ্ন আজ বাস্তব। বাংলাদেশ টেলিকমিউনিকেশন রেগুলেটরি কমিশন (বিটিআরসি) জানিয়েছে দেশে ২৮ কোটি ৬০ লাখ মোবাইল ব্যবহার হয়। ইন্টারনেট গ্রাহক ১৩ কোটি ২৭ লাখ ১৩ হাজার। এর মধ্যে মোবাইলে ইন্টারনেট ব্যবহার করেন ১২ কোটি ৩০ লাখ ৯১ হাজার। আর ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট ব্যবহার করেন ৯৮ লাখ ২২ হাজার। বেসিস ও ইপিবি’র তথ্যমতে, বর্তমানে বাংলাদেশের তথ্যপ্রযুক্তি খাতের রপ্তানি আয় ১.৪ বিলিয়ন ডলার। তথ্যপ্রযুক্তির দেশীয় বাজার প্রায় ১.৬ বিলিয়ন ডলার। এছাড়া প্রায় সাড়ে ছয় লাখ ফ্রিল্যান্সার রয়েছেন, যাদের আয়ের পরিমাণ প্রায় ৫০০ মিলিয়ন ডলার। ফ্রিল্যান্সিংয়ে বাংলাদেশ বিশ্বে দ্বিতীয়। আন্তর্জাতিক সফটওয়্যার ও অ্যাপ মার্কেটেও ঈর্ষণীয় বাংলাদেশের সাফল্য। ব্যাংকিং ব্যবস্থার ধরন পাল্টে দিয়েছে অনলাইন ব্যাংকিং। মোবাইল ব্যাংকিং সেবা ব্যাংককে নিয়ে গেছে ঘরে ঘরে। ফেসবুকসহ সামাজিক যোগাযোগ সাইটে নিজেদের পেজ তৈরি করে ব্যবসা করছেন তরুণ প্রজন্মের লাখ লাখ উদ্যোক্তা। সাফল্য এসেছে ই-কমার্স খাতেও। সরকারি দাপ্তরিক কাজেও ডিজিটাল বাংলাদেশের অনেক সুবিধা ভোগ করছেন নাগরিকরা। পাসপোর্ট, ড্রাইভিং লাইসেন্স, জন্ম-মৃত্যু নিবন্ধন, জমির পর্চাসহ বহু সেবা মিলছে অনলাইনে। ডিজিটাল হয়েছে আইন ও বিচার বিভাগ। বৈপ্লবিক পরিবর্তন এসেছে উবার-পাঠাওয়ের মতো রাইড শেয়ারিং সহ পরিবহণ খাতে। ঘরে বসেই টিকিট। বেড়েছে কর্মসংস্থানের পথ।

ইন্টারনেট অর্থনীতির নতুন দ্বার উন্মোচন করেছে। অর্থনীতির মূল চালিকা শক্তি কৃষক-শ্রমিক ও রেমিটেন্স যোদ্ধাদের সাথে ইন্টারনেটও অভাবনীয় ভূমিকা রাখছে। রপ্তানি আয়ের প্রধান উৎস পোশাকশিল্পের ৩২ বিলিয়ন ডলার রপ্তানি আয়ে তথ্যপ্রযুক্তি খাতের অবদান অপরিসীম। অটোমেশন থেকে পোশাক ডিজাইন, মান নিয়ন্ত্রণ, কর্মী ব্যবস্থাপনাসহ বেতন প্রদান ও বিপণন-সকল কাজে তথ্যপ্রযুক্তির বহুল ব্যবহার হচ্ছে। অনলাইন ব্যাংকিং, ইন্টারনেট ব্যাংকিং, কার্ড সেবা, এসএমএস সার্ভিস, অটোমেটেড ক্লিয়ারিং, এজেন্ট ব্যাংকিং, ইলেকট্রনিক ফান্ড ট্রান্সফার, আরটিজিএস, মোবাইল অ্যাপে ইন্টানেট অপরিহার্য। এই দশকে দেশের সফটওয়্যার ডেভেলপার তৃতীয় বৃহত্তম চাকরির খাত হিসেবে বিবেচিত হবে। ইন্টারনেট ব্যবহারে বাংলাদেশ এশিয়ায় পঞ্চম, বিশ্বের ৭ম বৃহৎ ডাটা সেন্টার আমাদের দেশ, মোবাইল ফোন গ্রাহক সংখ্যায় বিশ্বে ৯ম, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ব্যবহারেও দেশ বিশ্বে ৯ম, স্মার্টফোন ব্যবহারে বিশ্বে ১২তম এবং স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণে বিশ্বের ৫৭ নাম্বার দেশ। এসব গৌরব অর্জন হয়েছে ডিজিটাল বাংলাদেশের কল্যাণে।

ইন্টারনেটের মাধ্যমে একজন গৃহিনী রান্না করা খাবার বিক্রি করছেন ঘরে বসেই। অনলাইন ব্যবসাও এখন জমজমাট। বড় পুঁজির ব্যবসা তো আছেই, প্রতিযোগিতার বাজারে যাদের টিকে থাকার অর্থ নেই এমন ক্ষুদ্র উদ্যাক্তারাও স্বল্প পুঁজিতে ব্যবসা করে সাবলম্বী হচ্ছেন। পিছিয়ে নেই গ্রামের কৃষক, মৎজীবী, পোল্ট্রি ও গরুর খামারিরা। গ্রামে বসেই তারাও নিজেদের উৎপাদিত পণ্য বিক্রি করছেন। এছাড়া অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং ব্যবসা, গুগল অ্যাডওয়ার্ডস এবং অ্যাডসেন্স মার্কেটিং, ব্লগ এবং প্রবন্ধ জমা প্রভৃতি মাধ্যমে লক্ষ লক্ষ তরুণ-তরুণী ঘরে বসে ডলার কামাচ্ছেন। অসুখ হলেই বিভিন্ন অ্যাপসের মাধ্যমে চিকিৎসা কিংবা ডাক্তারের সিরিয়াল নিচ্ছেন। সূদুর গ্রাম থেকেও দ্রুত চাকুরির দরখাস্ত করতে পারছেন চাকুরি প্রত্যাশিরা। কর্মের সন্ধানও পাচ্ছেন সহজেই। ঘরে বসেই চলছে কেনাকাটা। শিক্ষায় এনেছে বড় পরিবর্তন। বিভিন্ন কোর্স, পড়াশোনার নানা তথ্য পাচ্ছেন খুব সহজে। এমনকি বিদেশি কোর্সও করছেন অনলাইন। ঘুরে বেড়াতেও ইন্টারনেট বন্ধুর মতো কাজ করছে। ভ্রমণের স্থান চয়েস, হোটেল বুকিং, টিকিকেট বুকিং, খাবার প্যাকেজ সহ সবকিছু হচ্ছে অলনাইনে। নেই বিড়াম্বনা। ইন্টারনেট এখন বয়স্কদেরও বন্ধু। ঘর থেকে তারা যোগাযোগ করছেন। নলেজ ব্যাংকের মতো বিভিন্ন বিষয়ে প্রচুর তথ্য পাচ্ছেন। গ্যাস-বিদ্যুৎ-পানির বিল, সঞ্চয়-সবই চলছে ঘর থেকেই। মোট কথা ইন্টারনেট মানুষের দৈনন্দিন জীবনযাত্রাই পাল্টে দিয়েছে।

তথ্য প্রযুক্তির এই অবারিত সুযোগের মধ্যে বাংলাদেশ হাঁটছে ‘স্মার্ট বাংলাদেশ-২০৪১’-এর পথে। এর নবাত্রায় প্রত্যাশা করি মাননীয় প্রধানমন্ত্রী এক্ষেত্রও সাফল্য অর্জন করবেন। ডিজিটাল বাংলাদেশে ডিজিটাল শিক্ষা, ডিজিটাল স্বাস্থ্যসেবা, ডিজিটাল কৃষি, ডিজিটাল ব্যবসা, ডিজিটাল ব্যাংকিং ও ডিজিটাল দাপ্তরিক সেবার সফল বাস্তবায়ন হয়েছে। ‘স্মার্ট বাংলাদেশ-২০৪১’-এর স্বপ্ন হচ্ছে স্মার্ট শিক্ষা, স্মার্ট স্বাস্থ্যসেবা, স্মার্ট কৃষি, স্মার্ট বাণিজ্য, স্মার্ট দাপ্তরিক সেবা, স্মার্ট ব্যাংকিং ও স্মার্ট পদক্ষেপ। ভবিষ্যৎ ‘স্মার্ট বাংলাদেশ’ হবে সাশ্রয়ী, টেকসই, জ্ঞানভিত্তিক, বুদ্ধিদীপ্ত এবং উদ্ভাবনী। হবে স্মার্ট নগর-শহর, স্মার্ট গ্রাম, স্মার্ট ট্রান্সপোর্টেশন, স্মার্ট ইউটিলিটিজ, স্মার্ট প্রশাসন, স্মার্ট জননিরাপত্তা-সবকিছুই হবে স্মার্ট। ৫ম শিল্প বিপ্লবে পাল্টে যাবে দুনিয়া, পাল্টে যাবে বাংলাদেশ।

ইতোমধ্যে সরকার ডিজিটাল বাংলাদেশ টাস্কফোর্সের নাম পরিবর্তন করে ‘স্মার্ট বাংলাদেশ টাস্কফোর্স’ গঠন করেছে। উন্নত বিশ্বের সঙ্গে তাল মেলাতে জ্ঞানভিত্তিক উন্নত স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণে এগিয়ে যাচ্ছে। স্মার্ট সিটি ও স্মার্ট ভিলেজ বাস্তবায়নের আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স, রোবটিক্স, মাইক্রোচিপ ডিজাইনিং অ্যান্ড ম্যানুফ্যাকচারিং ও সাইবার সিকিউরিটি-এই চারটি প্রযুক্তিতে মনোযোগের কথা বলেছেন প্রতিমন্ত্রী পলক। তাছাড়া ডাটা নিরাপত্তা, ডিজিটাল সার্ভিস, শেখ হাসিনা ইনস্টিটিউট অব ফন্ট্রিয়ার টেকনোলজি (শিফট), ইনোভেশন ডিজাইন অ্যান্ড এন্টারপ্রেনিওরশিপ অ্যাকাডেমি, এজেন্সি ফর নলেজ অন অ্যারোনটিক্যাল অ্যান্ড স্পেস হরাইজন (আকাশ), ডিজিটাল লিডারশিপ অ্যাকাডেমি ও জাতীয় স্ট্যার্টআপ নামে কয়েকটি  আইন ও পলিসি প্রণয়নের কথাও জানিয়েছেন।

সুস্পষ্ট করা হয়েছে ‘স্মার্ট বাংলাদেশ টাস্কফোর্স’-এর কার্যপরিধি। সেগুলোর মধ্যে অন্যতম হলো বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-২ উৎক্ষেপণ, আকাশ প্রতিষ্ঠা, এডুকেশন মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়ন, ফাইভজি সেবা চালু, ‘মেড ইন বাংলাদেশ’ পলিসি প্রণয়ন এবং আর্থিক খাতের ডিজিটালাইজেশন।

প্রশ্ন হলো ডিজিটাল বাংলাদেশ থেকে ‘স্মার্ট বাংলাদেশ’ অবশ্যই হবে। কিন্তু আমরা কি সেই স্মার্ট বাংলাদেশের জন্য প্রস্তুত?  ‘স্মার্ট বাংলাদেশ’ বাস্তবায়নে প্রয়োজন স্মার্ট সিটিজেন, স্মার্ট ইকোনমি, স্মার্ট সোসাইটি এবং স্মার্ট গভর্মেন্ট। এই চার মূলস্তম্ভের কোনোটিই কি আমরা প্রস্তুত করতে পেরেছি? এখনো ৫৫ শতাংশ গ্রামীণ পরিবারে ইন্টারনেট ব্যবহারের সুবিধা নেই। গ্রামীণ পরিবারগুলোর ৫৯ শতাংশের স্মার্টফোন নেই এবং ৪৯ শতাংশের কম্পিউটার ব্যবহারের সুযোগ নেই। অর্ধেকের বেশি মানুষ ইন্টারনেট ও স্মার্ট ফোনের ব্যবহার জানে না। সেই দক্ষতাও নেই। যার ফলে সমাজ ব্যবস্থাও এ বিষয়ে যতেষ্ঠ অজ্ঞ। ডিজিটাল বাংলাদেশ করলেও আমরা ডিজিটাল বৈষম্য দূর করতে পারি নাই। মহামারী করোনা তা চোখে আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়েছে।

শুনেছি ইতোমধ্যে সরকার স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণে ২০২৫ সালের মধ্যে প্রায় দুই লাখ বিদ্যালয়, ভূমি অফিস, হেলথ কমপ্লেক্সকে ফাইবার অপটিকের আওতায় আনবে। আগামীর তরুণ প্রজন্মের মেধা, বুদ্ধি ও জ্ঞানের বিকাশ কেন্দ্র হিসেবে গড়ে উঠবে আইটি বিজনেস ইনকিউবেটর। এছাড়া বাংলাদেশ কম্পিউটার কাউন্সিলের আওতায় অল্টারনেটিভ স্কুল ফর স্ট্যার্টআপ এডুকেটরস অব টুমোরো (অ্যাসেট) প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ গ্রহণ করা হবে। বাংলাদেশ হাই-টেক পার্ক কর্তৃপক্ষের আওতায় বাংলাদেশ নলেজ ডেভেলপমেন্ট পার্ক তৈরি করা হবে। বাংলাদেশ কম্পিউটার কাউন্সিলের আওতায় সেন্টার ফর লার্নিং ইনোভেশন অ্যান্ড ক্রিয়েশন অব নলেজ (ক্লিক) স্থাপনের উদ্যোগ গ্রহণ করবে। বাংলাদেশ হাই-টেক পার্ক কর্তৃপক্ষের আওতায় সেলফ-এমপ্লয়মেন্ট ও এন্ট্রারপ্রেনিওরশিপ ডেভেলপমেন্ট (সিড) প্ল্যাটফর্ম স্থাপন করা হবে। তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি অধিদপ্তরের আওতায় কন্টেন্ট ইঞ্জিনিয়ারিং ও লিংকেজ ল্যাব (সেল) স্থাপন করা হবে এবং সার্ভিস এগ্রিগেটর ট্রেনিং (স্যাট) মডেলে সরকারি সেবা ও অবকাঠামো-নির্ভর উদ্যোক্তা তৈরির উদ্যোগ গ্রহণ করা হবে। এছাড়া সব ডিজিটাল সেবা কেন্দ্রীয়ভাবে সমন্বিত ক্লাউডের আওতায় নিয়ে আসা হবে।

কিন্তু এগুলোর সাথে ডিজিটাল বৈষম্য দূর করতে ইন্টারনেটকে সাশ্রয়ী ও সহজলভ্যও করতে হবে। হাতের নাগালে আনতে হবে স্মার্ট ফোন ও অন্যান্য ডিভাইস। দেশের সকল নাগরিককে স্মার্ট ফোন ও ইন্টারনেট ব্যবহারে দক্ষ করতে হবে। গ্রামের কলিম চাচা ও গৃহবধু সখিনা এবং রহিমা খালারা যেন সহজে স্মার্ট ফোন ব্যবহার করতে পারে তার ব্যবস্থা করতে হবে। উচ্চগতি সম্পন্ন ইন্টারনেট ছড়িয়ে দিতে হবে সারাদেশে এবং তার মূল্য হবে অত্যন্ত কম।

তাছাড়া বিআইজিএফ প্রশিক্ষণ থেকে জেনেছি আমরা শিক্ষিতরাই প্রতিদিন বিভিন্ন সেবা পেতে অনলাইনে নিজেদের ব্যক্তিগত ডেটা দিয়ে দিছি। এসব তথ্য প্রদান কতটুকু নিরাপদ তা জানতেও পারছি না। সাইবার ক্রাইম তো দিন দিন বাড়ছে, বাড়ছে সাইবার বুলিং। গ্রামের অশিক্ষত ও টেকনোলজি ব্যবহারে অদক্ষ মানুষ আরো বেশি প্রতারণার শিকার হচ্ছে। চারদিকে জাল পেতে আছে হ্যাকাররা।

সবকিছুর হাত থেকে রক্ষার জন্য সবার আগে ইন্টারনেটকে সাংবিধানিকভাবে মৌলিক অধিকারের স্বীকৃতি দিতে হবে। অবকাঠামোগত এবং প্রযুক্তি সুবিধা বাড়াতে খাদ্য, বস্ত্র, বাসস্থান, শিক্ষা, চিকিৎসা ও নিরাপত্তার মতো ইন্টারনেটও এখন মানুষের জীবনের সাথে জড়িত। তাই স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণের পথের নবযাত্রায় ইন্টারনেটকে মৌলিক অধিকারের স্বীকৃতি দিন।

লেখকঃ কেন্দ্রীয় সমন্বয় কমিটির সদস্য, জনলোক।