Home সাহিত্য ও বিনোদন স্বামী মেরে হাত ভেঙে দিয়েছিল, তাই নিয়ে শ্যুট করেছি: শবনম ফারিয়া

স্বামী মেরে হাত ভেঙে দিয়েছিল, তাই নিয়ে শ্যুট করেছি: শবনম ফারিয়া

35

বিয়ে ভাঙলে অধিকাংশ ক্ষেত্রে অভিযোগের আঙুল ওঠে নারীদের দিকেই। ফলে, সেই কলঙ্কের ভয়ে বহু নারী জোর করে বিয়ে টিকিয়ে রাখেন। নয়তো মুখ ফিরিয়ে নেন জীবন থেকে আত্মহত্মার মাধ্যমে। সম্প্রতি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রী ইলমার নির্যাতনের কারণে মৃত্যু প্রসঙ্গে অনেক আলোচনা শুরু হয়েছে। যার সমব্যথী লোপা সুলতানা, শবনম ফারিয়ার মতো গায়িকা, অভিনেত্রীরা।

ফেসবুকে প্রত্যেকেই ইলমার উদ্দেশ্যে সমবেদনা জানিয়েছেন। আর সেই প্রসঙ্গের জের ধরে দুই বছর আগের এক চাঞ্চল্যকর তথ্য সামনে আনলেন শবনম ফারিয়া। সেখানে স্পষ্ট স্বামীর নির্যাতনের কারণেই সংসার ত্যাগ করতে বাধ্য হয়েছিলেন এ অভিনেত্রী। গত বুধবার (১৫ ডিসেম্বর) রাতে নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে তিনি এ নির্যাতনের কথা লিখেছেন শবনম। তার দাবি, স্বামীর কাছে নির্যাতিত হয়ে বিচ্ছেদের পথে হেঁটেছেন তিনি। শুধু নির্যাতনই নয়, নির্যাতন করে হাত ভেঙে দিয়েছিলেন তার স্বামী। সমাজের নিয়ম ও কী বলবে সমাজ, স্বজন এই ভেবে সহজে বিচ্ছেদের পথে হাঁটতে চাইছিলেন না। শেষ পর্যন্ত বাধ্য হয়েছেন দেবীখ্যাত অভিনেত্রী।

শবনম ফারিয়া বাংলাদেশ টেলিভিশনের তালিকাভুক্ত কণ্ঠশিল্পী লোপা হোসাইনের ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে দেওয়া একটি পোস্ট শেয়ার করেন। শেয়ার করা ওই পোষ্টে লোপা হোসাইন লেখেন, সহ্য করতে না পেরে ডিভোর্স দিলে কতনা গালি খেত এলমা মেয়েটা। সহ্য করতে করতে মরে গেল বলেইনা এখন আমরা মায়াকান্না কাঁদছি…এদেশের বাবামায়েরা সমাজে মানইজ্জত বাঁচাতে মেয়েদের এমনভাবে ব্রেইনওয়াশ অথবা ব্ল্যাকমেইল করে যে ডিভোর্স দিয়ে লাইফের রিস্টার্ট বাটন চাপার চেয়ে পাওয়ার অফ বাটন চেপে দেয়াই বেশী সহজ মনে হয়। আর তার আগেই যদি স্বামী, শ্বশুরবাড়ির লোকেরা মেরে ফেলে, তাহলে তো কথাই নেই…
এইসব ঘটনা দেখলে নিজের অজান্তেই নিজের অতীতে ফিরে যাই…

এই পোস্ট শেয়ার করে নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজের এক পোস্টে শবনম ফারিয়া লেখেন, মৃত মেয়েটার ছবি দেখার পর বার বার আমি দেড়/দুই বছর পিছনে ফিরে যাচ্ছিলাম। মনে পড়ছে কিভাবে আমি দেবী সিনেমার পুরো প্রোমোশন ভাঙ্গা হাত নিয়ে করেছি, যখন কেউ জানতে চেয়েছি কি হয়েছে, বলেছিলাম সিঁড়ি থেকে পড়ে ব্যাথা পেয়েছি!
আমার সাহস ছিল না সবাইকে বলার যে কিভাবে ব্যাথা পেয়েছি!
কারণ আমি জানতাম এই মানুষটার সাথেই থাকতে হবে, নইলে মানুষ কি বলবে! আমার মা সমাজে মুখ দেখাবে কিভাবে! আমার দুই বোন যে স্বপ্ন নিয়ে এত আয়োজনের প্ল্যান করছে তাদের কি জবাব দেব!
কাবিনের ৩ মাস না যেতেই এত কিছু! নিশ্চই সমস্যা আমারই!
আমি এইটা ভেবে দিনের পর দিন জানালা দিয়ে আকাশের দিকে তাকিয়ে, রাতের পর রাত নির্ঘুম কাটিয়েছি!
বার বার ভেবেছি কিছু হলে সবাই আমাকেই খারাপ বলবে!
কিন্তু আমি খুব সৌভাগ্যবান যে আমার মা আমার সবচেয়ে বড় সাপোর্ট হয়ে দাঁড়িয়েছে! সাহস দিয়েছে! বুঝিয়েছে মানুষ কি বলে তার চেয়ে নিজের ভাল থাকা আরও অনেক জরুরি!
জোর করে বিয়ে টিকিয়ে রাখার চেয়ে বেঁচে থাকা আরও জরুরি!!!

এর পরেই গতকাল বৃহস্পতিবার (১৬ ডিসেম্বর) শবনম তার ফেসবুক পেজে আরও একটি পোস্ট দেন। সেখানে তিনি লেখেন, তিনি কারও সম্মান নষ্ট করতে আগের দিনের পোস্টটি করেননি। বরং সমাজের দৃষ্টি দিয়ে এক মেয়ের জীবনকে বর্ণনা করতে চেয়েছেন মাত্র। তিনি নিজে বিবাহের উপরে যথেষ্ট বিশ্বাসী। চট করে বিয়ে ভাঙাতেও বিশ্বাসী নন। বন্ধুদেরও পরামর্শ দেন, আলোচনার মাধ্যমে সমস্যা মিটিয়ে নেওয়ার। তিনি বেঁচে গিয়েছেন তার মা-বোনেরা তার পাশে ছিলেন বলে। সেই সঙ্গেই শবনমের আফসোস, ‘এই সমাজ পুরুষদের মহিমান্বিত করতে এবং নারীদের লজ্জা দিতে ভালোবাসে। তুমি মরে গেলে মানুষ দুঃখ পাবে। তুমি যদি নিজেকে বাঁচানোর চেষ্টা কর এবং তালাক প্রাপ্ত হও তাহলে, “তুমি খারাপ”!’

প্রসঙ্গত, ২০১৮ সালে হারুনুর রশীদ অপুর সঙ্গে আংটি বদল করেন শবনম ফারিয়া। ২০১৯ সালের ফেব্রুয়ারিতে বিয়ে হয় তাঁদের। বিয়ের ঠিক ১ বছর ৯ মাসের মাথায় আনুষ্ঠানিকভাবে বিচ্ছেদ হয় তাঁদের। তখন ফারিয়া বিচ্ছেদের বিষয়ে স্পষ্ট করে কাউকে কিছুই বলেননি। সাবেক স্বামীর সঙ্গে সম্পর্কে কোনো তিক্ততা নেই বলে জানিয়েছিলেন তিনি।-ইত্তেফাক