Home জাতীয় সুস্থ ও আলাদা হয়ে বাড়ি ফিরল জোড়া লাগানো ওমর ও বকর

সুস্থ ও আলাদা হয়ে বাড়ি ফিরল জোড়া লাগানো ওমর ও বকর

26

স্টাফ রিপোটার: মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা’র অর্থায়নে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ে (বিএসএমএমইউ) চিকিৎসা শেষে সুস্থ ও আলাদা হয়ে পেটে ও বুকে জোড়া লাগানো গোপালগঞ্জে জন্ম নেয়া শিশু ওমর ফারুক ও আবু বকর বাড়ি ফিরল। বুধবার বেলা ১১টায় (৪ অক্টোবর ২০২৩) বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ ডা. মিল্টন হলে এ উপলেক্ষ ‘জোড়া শিশু আবু বকর ও ওমর ফারুকের সফল অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে পৃথকীকরণ শেষে সুস্থ হয়ে বাড়ি ফেরা উপলক্ষ্যে সংবাদ সম্মেলন ও বিশেষ অনুষ্ঠান ’ এর মাধ্যমে তাদের বাড়ি ফেরা উদযাপিত হয়।

এ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের মাননীয় উপাচার্য অধ্যাপক ডা. মোঃ শারফুদ্দিন আহমেদ ওমর ফারুক ও আবু বকরের মা বাবার হাতে ছাড়পত্র ও উপহার সামগ্রী তুলে দেন। একই সঙ্গে উপাচার্য অধ্যাপক ডা. মোঃ শারফুদ্দিন আহমেদ মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা’র দেয়া শিশুদ্বয়ের জন্য চিকিৎসা সহায়তার অর্থের চেকও তুলে দেন।

প্রধান অতিথির বক্তব্যে মাননীয় উপাচার্য অধ্যাপক ডা. মোঃ শারফুদ্দিন আহমেদ বলেন, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ে সব ধরণের জটিল কঠিন রোগের চিকিৎসা সেবা দেয়া হয়। সেবার মান বৃদ্ধি পাওয়ায় এখানে রোগীর সংখ্যা দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের শিশু সার্জারি বিভাগে শুধু ওমর ফারুক ও আবু বকরের জটিল অপারেশন হয় নি, এর আগেও বহু জটিল ও কঠিন অপারেশন করা হয়েছে। আমরা দেশে প্রথমবারের মত স্বল্প খরচে সফল লিভার প্রতিস্থাপন করেছি। আমাদের সুপার স্পেশালাইজড হাসপাতালে প্রতি সপ্তাহে দুটি করে কিডনি ট্রান্সপ্লান্ট করছি। এছাড়াও দেশে প্রথমবারের মতো সফল ক্যাডাভেরিক ট্রান্সপ্ল্যান্ট করতে সক্ষম হয়েছি।

উপাচার্য অধ্যাপক ডা. মোঃ শারফুদ্দিন আহমেদ আরও বলেন, আমাদের দেশের সার্জনরা এ ধরণের জটিল রোগের চিকিৎসা সেবা প্রদান করতে সক্ষম এবং এরকম জটিল রোগের চিকিৎসার জন্য বিদেশ গমনের কোন প্রয়োজনীয়তা নেই। স্বল্প খরচে দেশের প্রাপ্ত সুযোগ সুবিধাতেই বিশ্বমানের চিকিৎসা সেবা দেয়া সম্ভব। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের এ ধরণের জোড়া শিশুদের অপারেশনের জন্য রোগীরা আসছেন। আমাদের হাতে আরও একটি এ ধরণের কেস রয়েছে। খুব শীঘ্রই তাদের অপারেশ করা হবে।

অনুষ্ঠানে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য (শিক্ষা) অধ্যাপক ডা. একেএম মোশাররফ হোসেন, উপ-উপাচার্য (প্রশাসন) অধ্যাপক ডা. ছয়েফ উদ্দিন আহমদ, উপ-উপাচার্য (গবেষণা ও উন্নয়ন) অধ্যাপক ডা. মোঃ মনিরুজ্জামান খান, কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক ডা. মোহাম্মদ আতিকুর রহমান, সার্জারি অনুষদের ডিন অধ্যাপক ডা. মোহাম্মদ হোসেন, মেডিসিন অনুষদের ডিন অধ্যাপক ডা. মাসুদা বেগম, নার্সিং অনুষদের ডিন অধ্যাপক ডা. দেবব্রত বনিক, বেসিক সাইন্স ও প্যারাক্লিনিক অনুষদের ডিন অধ্যাপক ডা. শিরিন তরপদার, রেজিস্ট্রার অধ্যাপক ডা. মোহাম্মদ হাফিজুর রহমান প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।

অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের শিশু সার্জারি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ডা. সুশংকর কুমার মন্ডল। অনুষ্ঠানে এ জোড়া শিশুদেরকে ভর্তির পর থেকে শুরু করে ছাড়পত্রের দিন পর্যন্ত কি চিকিৎসা সেবা প্রদান করা হয়েছে তার একটি তথ্য চিত্র উপস্থাপন করেন শিশু সার্জারি বিভাগের মেডিক্যাল অফিসার ডা. উম্মে হাবিবা দিলশাদ মুনমুন।

সংবাদ সম্মেলেন বলা হয়, গত ২০ সেপ্টেম্বর মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রত্যক্ষ নির্দেশনা এবং অর্থায়নে টুঙ্গিপাড়ার পেটে ও বুকে জোড়া লাগানো চিকিৎসাধীন ৭৮ দিন বয়সী আবু বকর ও ওমর ফারুক নামের দুজন শিশুর দেহে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের শিশু সার্জারী বিভাগের চিকিৎসকগণ কেবিন ব্লকের অপারেশন থিয়েটারে সফলভাবে অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে শিশু দুজনকে আলাদা করেন। অনুষ্ঠানে আরও জানানো হয়, গোপালগঞ্জ জেলার টুঙ্গিপাড়া পৌরসভার ৩ নং ওয়ার্ডের বাসিন্দা, ভ্যানচালক, পিতা শহর আলী খানের মেয়ে চায়না বেগম এবং তার স্বামী আল আমিন শেখের ঘরে চলতি বছর ৪ জুলাই বুকে পেটে জোড়া লাগানো দুজন নবজাতক জন্মগ্রহণ করে। জন্মগ্রহণের পর তাদের শরীরের জটিলতা নিরসনের জন্য বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের মাননীয় উপাচার্য অধ্যাপক ডা. মোঃ শারফুদ্দিন আহমেদের প্রত্যক্ষ তত্ত্বাবধানে ৫ জুলাই তাদেরকে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের শিশু সার্জারী বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডা. এ.কে.এম জাহিদ হোসেনের অধীনে ২০১ নং কেবিনে ভর্তি করা হয়। বুকে পেটে জোড়া লাগানো যমজ এ দু’নবজাতকের চিকিৎসার সমস্ত দায়িত্বভার মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা গ্রহণ করেন এবং প্রয়োজনীয় দিক নির্দেশনা প্রদান করেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন বিভাগের আন্তরিক সহযোগিতায় শিশু সার্জারি বিভাগ জোড়া শিশুদের অস্ত্রোপচারের প্রস্তুতি গ্রহণ করে। শিশু সার্জারি বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডা. এ. কে. এম জাহিদ হোসেনের নেতৃত্বে শিশু সার্জারী বিভাগের অধ্যাপক ডা. মো. রুহুল আমিন, সহযোগী অধ্যাপক ডা: কেএম দিদারুল ইসলাম, সহযোগী অধ্যাপক ডা: সুশংকর কুমার মন্ডল, সহকারী অধ্যাপক ডা. কে. এম. সাইফুল ইসলাম, সহকারী অধ্যাপক ডা. নুর মোহাম্মদ, মেডিক্যাল অফিসার ডা. উম্মে হাবিবা দিলশাদ মুনমুন ছাড়াও বিভাগের অন্যান্য শিক্ষক ও ডা. মাহফুজ আলম খান রাতুল, ডা. আব্দুল্লাহ আল মাহমুদ, ডা. গোলাম মোস্তফা, ডা. তানজিরুল ইসলাম এবং ডা. নয়ন চন্দ্র সরকারসহ অন্যান্য রেসিডেন্টগণ এবং নার্সিং অনুষদের ডিন ও এ্যানাসথেসিওলজী বিভাগের অধ্যাপক ডা. দেবব্রত বনিক, এ্যানাসথেসিওলজী বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডা. দেবাশীষ বণিক এবং ওটি ইনচার্জসহ অপারেশন থিয়েটারের সকল নার্সিং স্টাফ ও অন্যান্য স্টাফগণ এ জটিল অস্ত্রোপচারে অংশগ্রহণ করেন।

সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, আবু বকর ও ওমর ফারুকের লিভার এবং বুকের হাড় সংযুক্ত ছিল তা অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে সফলভাবে আলাদা করা হয়। সকল প্রকার ঝুঁকি মুক্ত হয়ে দুজনই এখন সম্পূর্ণ সুস্থ আছে। শিশু দুজনের মাতা-পিতা এই বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক দলের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেছেন এবং শিশুদের ভবিষ্যৎ জীবনের সম্পূর্ণ সুস্থতার জন্য দেশবাসীর কাছে দোয়া চেয়েছেন প্রসঙ্গত উল্লেখ্য যে, গত ৩০ আগস্ট ২০২৩ বিশ্ববিদ্যালয়ের কেবিন ব্লকে ভর্তিকৃত অন্য একটি জোড়া শিশু নুহা ও নাবার পৃথকীকরণের দ্বিতীয় ধাপের অস্ত্রোপচার শিশু সার্জারি বিভাগের অধীনে সফলভাবে সম্পন্ন হয়। বর্তমানে নোহা ও নাবা কোন রকম জটিলতা ছাড়া সুস্থ আছে এবং পরবর্তী ধাপের অস্ত্রোপচারের জন্য প্রস্তুত হচ্ছে। শিশু সার্জারি বিভাগ প্রতিষ্ঠার পর থেকে প্রচারবিমুখ এই বিভাগ এরকম জোড়া শিশু আলাদা করা ছাড়াও অনেক জটিল ও জন্মগত ত্রুটি সম্পন্ন শিশুদের সফলভাবেঅস্ত্রোপচারের মাধ্যমে সেবা প্রদান করে আসছে ।