Home সাহিত্য ও বিনোদন সাড়া ফেলেছে ক্রনেজের নতুন অ‍্যালবাম

সাড়া ফেলেছে ক্রনেজের নতুন অ‍্যালবাম

131

জাকির হোসেন আজাদী: ২০১৬ সালের আগষ্টে যুক্তরাষ্ট্রের ওয়াশিংটন ডিসি এলাকার পাঁচজন গানপ্রিয় বাংলাদেশী অভিবাসী মিলে একটা নতুন বাংলা রক ব্যান্ডের সূচনা করে। গত ৩ মার্চ ২০২৩ তাদের একটি অ‍্যালবাম বের হয়েছে। যা ইতোমধ্যে ব‍্যাপক সাড়া ফেলেছে।

ব্যান্ডের নামকরন হয় ‘ক্রনেজ’ (Kronedge)। এই নাম কিভাবে আসলো সেটায় পরে আসছি। প্রথমে জানা ভাল, এদের প্রত্যেকেই দেশে একটা সময় ব্যান্ড সঙ্গীতের সাথে জড়িত ছিলো। তার মধ্যে উল্লেখ্য, বেসিস্ট অমিত দেশের জনপ্রিয় অল্টারনেট রক ব্যান্ড আইকন্সে বাজাত, আর টনি পরিচিত ছিল নব্বই দশকের শেষ ভাগে কপ্রফিলিয়া নামের এক আন্ডারগ্রাউন্ড ব্যান্ডের গিটারিস্ট হিসাবে। বিদেশের মাটিতে নতুন জীবনে মানিয়ে নেয়া আর জীবিকার পিছনে দৌড়তে গিয়ে গান-বাজনা হয়ে যায় মাঝে-মধ্যে বাঙ্গালী সমাবেশে বিনোদনের বিষয়। কিন্তু সেটা বদলে যায় যখন এই পাচজন একে অপরের সাথে পরিচিত হয়। তারা নিজেদের ভেতর একসাথে নতুন কিছু একটা করার সম্ভাবনা দেখতে পায়। শুরুতে ব্যাপারটা শখের বশে ছুটির দিনে একসাথে বসে ‘জ্যাম’ করার ভিতরেই সীমাবদ্ধ ছিলো। সেই জ্যাম বা সংগত থেকেই তৈরি হওয়া শুরু হল একের পর এক নতুন সুর, গান। তারা ভাবলো এই নতুন গানগুলো কি বাসার বেসমেন্টেই চিরকাল আটকা থেকে যাবে, মানুষের কাছে কি পৌছবেনা? যেই ভাবা সেই কাজ। সম্পূর্ণ অপেশাদারী ভাবে, ঘরে বসে রেকর্ডিং, শুটিং করে মিউজিক ভিডিও সহ বের হলো তাদের প্রথম সিঙ্গেল, ‘স্বপ্নচারী’। এই গানের মধ্যে দিয়ে তারা সবাই প্রবাস জীবনের প্রথম দিককার চড়াই উৎরাই, আর তার মাঝে জীবন বদলানোর স্বপ্ন দেখার গল্প খুজে পেল, যাত্রা শুরু করলো ব্যান্ড – ক্রনেজ।

ব্যান্ডের গায়ক রাফি জানায়, প্রবাসীরা একইসাথে সময়ের দুই প্রান্তে বসবাস করে, যার কিনারার একপাশ থাকে বর্তমানে, আর অন্যপাশ হারানো অতীতে। এই ‘সময়’ (Kron) আর ‘কিনারা’র (Edge) প্রতিশব্দ জুড়ে দিয়েই ব্যান্ডের নামকরন হয় ‘ক্রনেজ’। গানের মধ্য দিয়ে ওরা ফেলে আসা সময়ের সাথে যেন একটা নতুন করে সম্পর্ক স্থাপন করে, যেই সময় পড়ে ছিলো প্রিয় বাংলাদেশে। বিদেশের মাটিতে নতুন বাংলা গানের জন্ম দিয়ে সেই মাতৃভূমিকে নতুন করে জীবনের সাথে তারা যোগ করে নেয়। গানের ভেতর দিয়ে ওরা দুই দেশের মাঝের হাজার মাইলের ব্যবধানকে কমিয়ে নিয়ে আসে, তখন সময় আর কিনারা মিলিয়ে যায় এক বিন্দুতে। ক্রনেজ, এবং তার গান তাদের জন্য তাই অর্থবহ হয়ে উঠে।

ব্যান্ডের সবাই তাদের ‘আগের জীবনে’ রক ধাচের গানের চর্চা করে এসেছিলো বলে স্বাভাবিক ভাবেই ব্যান্ডের নতুন গানগুলোও রকের বিভিন্ন শাখায় বিচরন করে। ক্রনেজ একে একে ছয়টি সিঙ্গেল প্রকাশ করে। সেগুলো শুনলে গানগুলোর মধ্যে অনেক বৈচিত্র্যতা দেখা যায়। এর একটা কারন হচ্ছে, রক গান করতে সবাই সম্মত হলেও পাচজনের অভিজ্ঞতা প্রায় তিনটি ভিন্ন দশকে ব্যাপ্ত। কেউ নব্বই দশকের শুরুর ভাগের গানে প্রভাবিত, কেউবা শেষের, কেউবা দুই হাজারের বা তার পরের দশকের গানে।

এই তিন দশকের বাংলা রক গানের খুবই সুস্পষ্ট প্রভাব তাদের গানে ধরা পড়ে, যখন ২০২৩ সালের ৩রা মার্চ এসে তাদের প্রথম অ্যালবাম প্রকাশিত হয়। আশি-নব্বইয়ে বেড়ে ওঠা শ্রোতারা অ্যালবামের কিছু গানে তাদের ভিতরের নস্টালজিয়ায় নাড়া দেবার মত উপাদান খুজে পান। আবার নতুন প্রজন্মের শ্রোতারাও পান তাদের খোরাক। প্রথমেই উত্তর আমেরিকার বিভিন্ন বাংগালী সামাজিক মাধ্যমে একে অনেকে ‘সাহসী’ পদক্ষেপ আখ্যা দেন, কারন তারা বোঝেন পরবাসে নিজ দেশের মৌলিক গানের পুরো একটি অ্যালবাম বের করা চাট্টিখানিক কথা নয়। ক্রনেজ শুধু মৌলিক গান করেই ক্ষান্ত হয়নি, তারা নিয়মিত এই গান গুলো বিভিন্ন দেশি অনুষ্ঠানে বাজানো শুরু করে। যারা বিদেশে থাকেন তারা স্বীকার করবেন, যখন তারা কোন বাংগালী অনুষ্ঠানে যান, তারা সেখানের ব্যান্ড দল তাদের দেশের বেড়ে ওঠা সময়ের গানগুলি বাজাবে, এটাই আশা করেন, এবং সেটাই স্বাভাবিক। পয়সা দিয়ে অপরিচিত মৌলিক গান শুনতে তেমন কেউ আগ্রহী নয়। বাংলাদেশে কিন্তু সেই চিত্র ভিন্ন। ক্রনেজের এই প্রচেষ্টাকে তাই অনেকটা স্রোতের বিপরীতে চলা বলা যায়। আর তাই খুবই দ্রুত ক্রনেজ উত্তর আমেরিকার ব্যন্ড সংগীত বোদ্ধাদের কাছে একটা সম্মানের জায়গায় চলে আসে।

পরবর্তী পরিকল্পনা কি জানতে চাইলে বেসিস্ট অমিত জানায়, উত্তর আমেরিকার গন্ডি ওদের মূল লক্ষ্য নয়। ব্যান্ডের মূল উদ্দেশ্য এবং স্বপ্ন হচ্ছে সমসাময়িক জনপ্রিয় ব্যান্ডগুলোর পাশাপাশি নিজ দেশের শ্রোতারা এই প্রবাসী ব্যান্ডের গানগুলিকেও সাদরে গ্রহন করে নিক। যখন সেই দিন আসবে, তখন দেশের শিল্পীরা যেমন বিভিন্ন দেশে গিয়ে গেয়ে-বাজিয়ে আসেন, তেমন বিদেশ থেকেও প্রবাসী ব্যান্ড বাংলাদেশে মানুষের কাছাকাছি যাবে, তাদেরকে সামনা সামনি গান শোনাবে। বাংলা ব্যান্ড সংগীতের এই নতুন অধ্যায় ক্রনেজকে দিয়েই শুরু হোক!!

ক্রনেজে বর্তমানে আছেন রাফি ভোকালে, টনি গিটারে, শরীফ গিটার ও সিন্থে, অমিত বেস এবং এনাম ড্রামসে।