Home রাজনীতি সরকারের লুকোচুরি ও ব্যর্থতায় জন জীবনে চরম বিপর্যয়–ড. খন্দকার মোশাররফ

সরকারের লুকোচুরি ও ব্যর্থতায় জন জীবনে চরম বিপর্যয়–ড. খন্দকার মোশাররফ

46

সুব্রত সানা: বিএনপি স্থায়ী কমিটি সদস্য হোসেনের ড. খন্দকার মোশাররফ আজ ৫ জুলাই প্রেস ব্রিফিং একথা বলেছেন, বাংলাদেশে বর্তমানে করোনা পরিস্থিতি ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে। বিগত এক সপ্তাহ যাবত কোভিড-১৯ এ মৃত্যু সংখ্যা ১০০ এর উপরে এবং শনাক্তের হার প্রায় ২৮ শতাংশে পৌঁছেছে। সরকার ১ জুলাই থেকে কঠোর লকডাউনের ঘোষণা দিয়েছেন। কিন্তু এর পূর্বে সরকারের অব্যবস্থা, দায়িত্বহীনতা ও উদাসিনতার কারনে সরকারের লকডাউন তামাশায় পরিণত হয়েছিল। ভারতের ডেল্টা ভ্যারিয়েন্ট প্রাদুর্ভাব দেখা দেয়ার পর বিএনপিসহ বিভিন্ন মহলের দাবির প্রেক্ষিতে বাংলাদেশ সীমান্ত বন্ধ ঘোষণা করা হলেও তা কার্যকর করা হয়নি। ফলে বর্তমানে সীমান্ত জেলাসহ সমগ্র বাংলাদেশে করোনার ডেল্টা ভ্যারিয়েন্ট ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়েছে। গত বছর করোনা ভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের পর থেকে বিএনপিসহ বিভিন্ন মহল সতর্ক করার পরও সরকার কোভিড-১৯ চিকিৎসার জন্য হাসপাতাল, আইসিইউ, অক্সিজেন, ভেন্টিলেটরসহ চিকিৎসা সুবিধা সম্প্রসারণ করেনি। সরকারি ১০০ হাসপাতালের ৫২টিতে এবং ৩৫টি জেলার সদর হাসপাতালে কোনো আইসিইউ সুবিধা নেই। হাই ফ্লো নাজাল ক্যানুলার অভাবে বিভিন্ন হাসপাতালে রোগীর মৃত্যুর খবর প্রতিদিন প্রকাশিত হচ্ছে। এ সকল সুবিধা সৃষ্টির দাবি করে বিএনপির পক্ষ থেকে ঢাকায় স্বাস্থ্য অধিদপ্তরে ও জেলা সিভিল সার্জনের কাছে স্মারকলিপি প্রদান করা হয়েছিল। কিন্তু সরকার কোনো কর্ণপাত করেনি।
তিনি বলেন,বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থাসহ বিভিন্ন মহলের তাগিদ স্বত্তে¡ও সরকার করোনা পরীক্ষার পর্যাপ্ত ব্যবস্থাও করেনি। বরং সরকার করোনা পরীক্ষা নিয়ে নজিরহিবীন দূর্নীতি ও অনৈতিক কর্মকান্ডে জড়িয়ে পড়েছে। ফলে দেশে সামগ্রিকভাবে করোনা পরীক্ষা করা হয়েছে জনসংখ্যার মাত্র ৩ শতাংশ মানুষ।
বিএনপি এই নেতা বলেন, বিশ্বের যে সব দেশ ইতোমধ্যে করোনা সংক্রমণকে নিয়ন্ত্রণ করতে পেরেছে, সে সব দেশে প্রায় ৭০ থেকে ৮০ শতাংশ মানুষকে টিকা প্রদান করতে সমর্থ হয়েছে। তাই বিশ্ব ব্যাপী প্রমাণিত যে, করোনা থেকে স্থায়ীভাবে মুক্তি শুধুমাত্র টিকা প্রদানের মাধ্যমে সম্ভব হয়েছে। অথচ বাংলাদেশে সরকারের টিকা কুটনীতিতে চরম ব্যর্থতা, টিকা ক্রয়ে অনিয়ম, লোভ ও হঠকারিতার কারনে দেশে টিকাদান শুরুর পর থেকে ২৭ জুন পর্যন্ত দুই ডোজ টিকা পেয়েছেন মাত্র ৪২ লাখ ৮১ হাজার ৭৭৬ জন। এ হিসেবে গত ৬ মাসে মাত্র ২.৫ (আড়াই) শতাংশের বেশি মানুষকে টিকা দেয়া হয়েছে। এ পর্যন্ত জনসংখ্যার তুলনায় অতি সামান্য সংখ্যক মানুষকে টিকা দেয়া হয়েছে তাতেও বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থা কর্তৃক প্রদত্ত ‘অগ্রাধিকার’ তালিকা অনুসরণ করা হয়নি। সরকারের অস্বচ্ছতা, দূর্নীতি ও স্বেচ্ছাচারিতার ফলে টিকা সংগ্রহের বিষয় অনিশ্চয়তা জনমনে হতাশা, উৎকণ্ঠা ও উদ্বেগের সৃষ্টি করেছে।
তিনি আরওবলেন, কোভিড-১৯ অতিমারির শুরু থেকে সরকারের রাখঢাকা, সমন্বয়হীনতা, অতিকথন ও দূর্নীতি জনগণকে হতাশ করেছে, ক্ষুব্ধ করেছে এবং সরকার ও স্বাস্থ্য ব্যবস্থার উপর মানুষের আস্থাহীনতার সৃষ্টি হয়েছে। মানুষের জীবন ও জীবিকা চরম হুমকির সম্মুখিন হয়েছে। ভ্যাকসিন নিয়ে লুকোচুরি ও ভ্যাকসিন সংগ্রহে সরকারের ব্যর্থতার ফলে বর্তমানে করোনা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে গিয়েছে।
এমতাবস্থায়, বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল বর্তমান করোনা পরিস্থিতি, টিকাদান কর্মসূচি নিয়ে অনিশ্চয়তা ও স্বেচ্ছাচারিতা এবং কোভিড-১৯ মোকাবেলায় সরকারের ব্যর্থতায় গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করছে এবং সরকারের উদাশিনতার তীব্র নিন্দা জানাচ্ছে। করোনা মোকাবেলায় সরকারের পরিকল্পনা, টিকা সংগ্রহের রোডম্যাপ এবং টিকাদান কর্মসূচির ভবিষ্যত পদক্ষেপ সম্পর্কে সকল তথ্য জনগণের সামনে উপস্থাপনের দাবি জানাচ্ছে। বিএনপি বিশ্বাস করে, দেশের জনসংখ্যার ৭০ থেকে ৮০ ভাগ মানুষকে অতিশীঘ্র টিকা প্রদানের মাধ্যমেই একমাত্র করোনা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব। এই লক্ষ্যে অনতিবিলম্বে সরকারকে পর্যাপ্ত টিকা সংগ্রহের কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে এবং জনগণকে তা অবহিত করতে হবে।