Home রাজনীতি সভা-সমাবেশ-মিছিলে বাধাদান করে ফ্যাসিবাদী সরকার নাগরিক অধিকার হরণ করছে: বাম জোট

সভা-সমাবেশ-মিছিলে বাধাদান করে ফ্যাসিবাদী সরকার নাগরিক অধিকার হরণ করছে: বাম জোট

34

বাম জোটের সংবাদ সম্মেলন

স্টাফ রিপোটার: আজ ৯ ডিসেম্বর বেলা ১২টায় বাম গণতান্ত্রিক জোটের সংবাদ সম্মেলনে সরকার ও পুলিশ কর্তৃক বিরোধী মত দমনের হীনপথ পরিহার করে শান্তিপূর্ণভাবে রাজনৈতিক দলের সভা-সমাবেশ করতে দেয়া, বিএনপি অফিসে হামলা, টিয়ার সেল নিক্ষেপ ও হত্যাকা-ের সাথে জড়িত দায়ী পুলিশের বিচার এবং মির্জা ফখরুলসহ গ্রেপ্তারকৃত নেতৃবৃন্দের মুক্তি, নিহতের পরিবারকে উপযুক্ত ক্ষতিপূরণ, আহতদের সুচিকিৎসা প্রদান এবং গণগ্রেপ্তার ও গায়েবী মামলা বন্ধের জোর দাবি জানানো হয়েছে।
সভায় গণতান্ত্রিক অধিকার হরণ, সভা-সমাবেশে বাধাদান, হামলা-গায়েবী মামলার প্রতিবাদে এবং ভোট ও ভাতের অধিকার প্রতিষ্ঠায় আগামী ১৩ ডিসেম্বর দেশব্যাপী প্রতিবাদ ও বিক্ষোভ দিবস পালনের কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়েছে।
রাজধানীর পুরানা পল্টনস্থ ২ কমরেড মণি সিংহ রোডস্থ মুক্তিভবনের মৈত্রী মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন বাম জোটের সমন্বয়ক, বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিবি)’র সাধারণ সম্পাদক রুহিন হোসেন প্রিন্স। এ সময় বাম জোটের কেন্দ্রীয় নেতা বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দল (বাসদ)’র সাধারণ সম্পাদক বজলুর রশীদ ফিরোজ, বিপ্লবী কমিউনিস্ট লীগের সম্পাদকম-লীর সদস্য আব্দুস সাত্তার, বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দল-বাসদ (মার্কসবাদী)’র সমন্বয়ক মাসুদ রানা, গণতান্ত্রিক বিপ্লবী পার্টির সাধারণ সম্পাদক মোশরেফা মিশু, সমাজতান্ত্রিক আন্দোলনের নির্বাহী সভাপতি আব্দুল আলী, সিপিবি’র সহকারী সাধারণ সম্পাদক মিহির ঘোষ প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে রুহিন হোসেন প্রিন্স বলেন, সভা-সমাবেশ-মিছিলে বাঁধাদান করে আওয়ামী ফ্যাসিবাদী সরকার নাগরিকদের সাংবিধানিক অধিকারকে ক্রমাগত হরণ করে চলেছে। সরকারের দুঃশাসন ও লুটপাটের কারণে জাতীয় ও জনজীবনে সংকট সর্বগ্রাসী রূপ নিয়েছে। দেশের অর্থনীতির ভঙ্গুর চিত্র প্রতিদিনের সংবাদপত্রের খবরে প্রকাশ পাচ্ছে। সরকারের পৃষ্ঠপোষকতায় ব্যাংক ডাকাতেরা ঋণ নিয়ে ফেরৎ না দিয়ে বিদেশে পাচার করে ব্যাংকগুলো ফোকলা করে ফেলেছে। সিন্ডিকেট ব্যবসায়ীরা চাল-ডাল-তেল-চিনিসহ নিত্য পণ্যের দাম দফায় দফায় অস্বাভাবিক বৃদ্ধি করে বাজারে অস্থিতিশীল পরিস্থিতি সৃষ্টি করে জনদুর্ভোগ ক্রমাগত বাড়িয়ে তুলেছে। আর গণতন্ত্রহীনতা ও অস্থিতিশীল রাজনৈতিক পরিবেশে বিদেশি শক্তি ও দেশের অভ্যন্তরের অন্ধকারের শক্তিও মাথাচাড়া দিয়ে উঠছে।
সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, মুক্তিযুদ্ধের বাংলাদেশ আজ অসৎ রাজনীতিবিদ, সামরিক বেসামরিক আমলা, অসৎ ব্যবসায়ী এবং টাকা পাচারকারী, ঋণখেলাপি, ব্যাংক ডাকাত ও বাজার সিন্ডিকেটের দখলে। এ অবস্থা থেকে পরিত্রাণ পেতে মানুষ যখন উদগ্রীব হয়ে রাস্তায় নামছে তখন পুলিশ দিয়ে মানুষ খুন করে, গায়েবী মামলা দিয়ে গ্রেপ্তার, নির্যাতন নিপীড়ন করে দমন পীড়নের পথে ক্ষমতা আঁকড়ে থাকতে চাইছে, একই সাথে দলীয় সন্ত্রাসীদের দিয়ে ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করছে। রাজনৈতিক দলের সভা-সমাবেশ, মিছিল করার অধিকার দেশের সংবিধান দ্বারা সংরক্ষিত। কিন্তু শাসক সরকার জনগণের সকল সাংবিধানিক অধিকার হরণ করে দেশকে পুলিশী রাষ্ট্রে পরিণত করেছে।
সংবাদ সম্মেলনে আরও বলা হয়, বিএনপির ঢাকা সমাবেশকে কেন্দ্র করে জনসভার স্থান নিয়ে সরকার বাকযুদ্ধে লিপ্ত হয়ে মূল সমস্যা থেকে জনগণের দৃষ্টি আড়াল করে দেশের সম্পদ লুণ্ঠন, ব্যাংক ডাকাতি, অর্থপাচার, দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধিসহ জনজীবনের সংকট নিরসনে সরকার তার ব্যর্থতা ঢাকার অপচেষ্টা করছে।
সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, পাল্টাপাল্টি বাকযুদ্ধের পরে ৮ ডিসেম্বর রাতে জনসভার স্থান নিয়ে সমঝোতায় আসার খবর শুনে মানুষ যখন স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলছিল তার পরেই গভীর রাতে মির্জা ফখরুলসহ নেতৃবৃন্দকে গ্রেপ্তারের ঘটনায় পুনরায় জনমনে উৎকণ্ঠা বেড়ে গিয়েছে।
সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, দেশে শান্তি শৃঙ্খলা রক্ষা ও জনগণের জান-মালের নিরাপত্তা বিধানের দায়িত্ব সরকারের। অথচ গতকাল দলীয় নেতাকর্মীদের এক সভায় দেয়া প্রধানমন্ত্রীর ‘যে হাত দিয়ে মারতে আসবে সে হাত ভেঙে দিতে হবে’, ‘যে হাত দিয়ে আগুন দিতে আসবে সে হাত আগুনে পুড়িয়ে দিতে হবে’ এ ধরনের বক্তব্য সংঘাত সংঘর্ষকে উস্কে দেয়ার সামিল।
সংবাদ সম্মেলনে ২০১৪, ২০১৮ সালের নির্বাচনে নজিরবিহীন জালিয়াতি ও ভোট ডাকাতির দৃষ্টান্ত সৃষ্টিকারী শেখ হাসিনার সরকারকে অবিলম্বে পদত্যাগ, সংসদ ভেঙে দিয়ে সংখ্যানুপাতিক নির্বাচন পদ্ধতিসহ নির্বাচন ব্যবস্থার আমূল সংস্কার করে নির্দলীয় তদারকি সরকারের অধীনে সুষ্ঠু নির্বাচনের দাবি জানানো হয়। একই সাথে আওয়ামী ফ্যাসিবাদী সরকারকে উৎখাত করে জনগণের ভোট ও ভাতের অধিকার প্রতিষ্ঠায় সকল বাম-গণতান্ত্রিক শক্তি ও ব্যক্তিকে ঐক্যবদ্ধ আন্দোলন গড়ে তোলার আহ্বান জানানো হয়।