Home সারাদেশ সদরপুরে শতবর্ষী পুকুর ভরাট করা হচ্ছে:স্থানীয়দের ক্ষোভ

সদরপুরে শতবর্ষী পুকুর ভরাট করা হচ্ছে:স্থানীয়দের ক্ষোভ

44

ফরিদপুর অফিস: পুকুর ও জলাশয় ভরাটের আইন লঙ্ঘন করে ড্রেজার মেশিন বসিয়ে ফরিদপুরের সদরপুরে শতবর্ষী পুকুর ভরাট করা হচ্ছে। ঘটনাটি ঘটেছে উপজেলার আকোটের চর ইউনিয়নের ২৬ নং কৃষ্ণ মঙ্গলের ডাঙ্গী (বটতলা) নামক গ্রামে। সদরপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আহসান মাহমুদ রাসেল এর তত্তাবধানে শত বছরের পুরনো পুকুরটি ভরাট করার অভিযোগ স্থানীয়দের। সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, প্রশাসনের নির্দেশে শতবর্ষী পুকুর পাড়ের প্রাচীন ঐতিহ্য দুইটি বড়বড় বট গাছ কেটে প্রথমে ট্রাক দিয়ে ও পরে ড্রেজার মেশিন বসিয়ে বালু দিয়ে পুকুরটি ভরাট করে চলেছে স্থানীয় মো. কামরুল। এছাড়াও পুকুর পাড়স্থ জনগণ চলাচলের রাস্তায় প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি হচ্ছে। আর এসব করা হচ্ছে আশ্রয়ণ প্রকল্প নির্মানের জন্য। শুধু তাই নয় ইউএনও পুকুরের ৭০ শতক জায়গা ছারাও আদালতে মামলা চলমান পুকুর সংলগ্ন আশেপাশের ব্যাক্তি মালিকানা জমি জবর দখল করেও আশ্রয়ণ প্রকল্প তৈরির কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন বলে অভিযোগ তুলে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন স্থানীয় বাসিন্দারা। জানাগেছে, এস.এ ১৮৩৪ নং দাগের পুকুরটি পূর্বে জলাশয় ছিলো। এর সাথে এস.এ ২৫৯৮ ও এস,এ ১৮০৫ নং দাগ নদী মিলিত হয়ে বি,এস ৩৩৬২ নং দাগ স্থানটি পরবর্তীতে পুকুরে পরিনত হয়। স্থানীয়রা জানান, পুকুর পাড়ে জনসাধারনের রৌদ্র নিবারনের জন্য বড়বড় দুইটি বট গাছ ছিলো। গাছ দুইটি সম্প্রতি ঐ স্থানে আশ্রয়ণ প্রকল্প নির্মানের জন্য কেটে ফেলা হয়েছে। স্থানীয় বাসিন্দা ‘মালেক, সোরহাব শেখ, শেখ আঃ কুদ্দুস সহ অনেকে বলেন, বটতলার বাপের শতবর্ষী পুকুরটি এক সময় এলাকার সর্বসাধারণের হাত-মুখ ধোয়া বা গোসলের পানির উৎসস্থল ছিল। কিন্তু প্রশাসন জনগনের ভালো-মন্দ, সুবিধা অসুবিধা বিবেচনা না করে শতবর্ষী পুকুরটি ভরাট করে এখানে গুচ্ছ গ্রাম নির্মানের পায়তারা করে চলেছে। এখানে গুচ্ছ গ্রাম হলে চোঁর,বাটপারে এলাকা ভরে যাবে। এতে এ এলাকায় বসবাসের জন্য বর্তমানের সুন্দর পরিবেশটি আর থাকবেনা। তারা আরও বলেন আমাদের চোঁখের সামনে এমন একটি জীবন্ত পুকুরের মৃত্যু আমরা কোন ভাবেই মেনে নিতে পারছিনা। প্রাকৃতিক জলাধার সংরক্ষণ আইন-২০০০ অনুযায়ী, কোনো পুকুর, জলাশয়, নদী, খাল ইত্যাদি ভরাট করা বেআইনি। আইনের ৫ ধারা অনুযায়ী, প্রাকৃতিক জলাধার হিসেবে চিহ্নিত জায়গার শ্রেণি পরিবর্তন বা অন্য কোনোভাবে ব্যবহার, ভাড়া, ইজারা বা হস্তান্তর বেআইনি। কোনো ব্যক্তি এ বিধান লঙ্ঘন করলে আইনের ৮ ও ১২ ধারা অনুযায়ী পাঁচ বছরের কারাদন্ড বা অনধিক ৫০ হাজার টাকা অর্থ অথবা উভয় দন্ডে দন্ডিত হবেন। একই সঙ্গে পরিবেশ সংরক্ষণ আইন (২০১০ সালে সংশোধিত) অনুযায়ী, যেকোনো ধরনের জলাশয় ভরাট করা নিষিদ্ধ। আকোটেরচর ইউনিয়নের ইউপি’ চেয়ারম্যান মো. আসলাম হোসেন জানান, ওই স্থানে গুচ্ছ গ্রাম নির্মানের বিষয়ে আমি আগে থেকে কিছুই জানিনা। পুকুরে মাটি ভরাটের সময় একদিন আমাকে ইউএনও স্যার ডেকে বললো ওখানে আশ্রয়ণ প্রকল্প নির্মান করা হবে। এসময় ইউএনও স্যার আমাকে সাথে নিয়ে স্থানটি পরিদর্শনে যায়। তখনই আমি ওই জায়গায় গুচ্ছ গ্রাম নির্মানের বিষয়টি জানতে পারি। সদরপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আহসান মাহমুদ রাসেল জানান, আমাদের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী আশ্রয়ন প্রকল্পের মাধ্যমে ভূমিহীন-গৃহহীন-ছিন্নমূল মানুষকে অন্তভূক্তিমূলক উন্নয়নের আওতায় এনেছেন। প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা বাস্তবায়নে এখানে ভূমিহীন-গৃহহীনদের জন্য সরকারি খাস জমিতে আশ্রয়ণ প্রকল্পের নির্মাণের কাজ চলছে। তিনি আরো বলেন, পুকুরটিতে পূর্বে পানি থাকলেও বর্তমানে পুকুরটি অনেকাংশেই ভরাট হয়ে গেছে। এছারা খাস জমিও অপ্রতুল। ফলে ওই স্থানটিতেই আশ্রয়ণ প্রকল্প তৈরির উপযুক্ত জায়গা হিসেবে নির্ধারন করা হয়েছে।