Home রাজনীতি শেরপুরে বঙ্গবন্ধুর বিষোদগারকারী ও যুদ্ধাপরাধী কামারুজ্জামানের সহযোগী মাদ্রাসা শিক্ষককে আওয়ামী লীগে বরণ!

শেরপুরে বঙ্গবন্ধুর বিষোদগারকারী ও যুদ্ধাপরাধী কামারুজ্জামানের সহযোগী মাদ্রাসা শিক্ষককে আওয়ামী লীগে বরণ!

13

ময়মনসিংহ অফিস: শেরপুরে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের চরম বিষোদগারকারী এবং যুদ্ধাপরাধের দায়ে ফাসি হওয়া কামারুজ্জামানের সহযোগী, মাদ্রাসা শিক্ষক ও দৈনিক ইনকিলাবের সাংবাদিক মো. মেরাজ উদ্দিন (৫২) কে এবার আওয়ামী লীগের বরণ করে নেওয়া হয়েছে। শুক্রবার রাতে শহরের নিউমার্কেট এলাকায় আয়োজিত এক যোগদান অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি স্বতন্ত্র সংসদ সদস্য ও জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আলহাজ্ব মো. ছানুয়ার হোসেন ছানু তাকে ফুলেল শুভেচ্ছায় বরণ করে নেন। মেরাজ উদ্দিন ছাত্রজীবনে বিএনপির সহযোগী সংগঠন ছাত্রদল ও পরবর্তীতে যুবদলের রাজনীতির সাথে সরাসরি যুক্ত থাকলেও দীর্ঘদিন যাবত জামায়াত ঘরানার সাংবাদিক হিসেবেই কাজ করছেন। পেশায় তিনি জামায়াতের কল্যাণে প্রতিষ্ঠিত এক দাখিল মাদ্রাসার সহকারী শিক্ষক এবং মুক্তিযুদ্ধের চেতনাবিরোধী মাদ্রাসা শিক্ষকদের সংগঠন জেলা জমিয়াতুল মোদার্রেছীনের সাধারণ সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। অন্যদিকে জামায়াত সমর্থক সাংবাদিক মেরাজের যোগদান সম্পর্কে কিছুই জানেন না বলে জানিয়েছেন জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি, সাবেক হুইপ-এমপি বীর মুক্তিযোদ্ধা মো. আতিউর রহমান আতিক। তার যোগদানকে কেন্দ্র করে আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদের মাঝে তীব্র ক্ষোভের সঞ্চার হয়েছে। বিষয়টি শনিবার ‘টক অব দি টাউন’ হিসেবে আলোচিত হচ্ছে।
জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সহ-সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল খালেকের সভাপতিত্বে যোগদান অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সদর উপজেলা চেয়ারম্যান রফিকুল ইসলাম। জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক প্রচার সম্পাদক দেবাশীষ ভট্টাচার্যের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য রাখেন সদ্য আওয়ামী লীগে যোগদানকারী মো. মেরাজ উদ্দিন। ওইসময় জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সহ-সভাপতি এ্যাডভোকেট একেএম মোছাদ্দেক ফেরদৌসী, সাবেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক এ্যাডভোকেট সুব্রত কুমার দে ভানু, জেলা কৃষক লীগের সভাপতি আব্দুল কাদির, সদর উপজেলা ভাইস-চেয়ারম্যান সাবিহা জামান শাপলা, সাবেক ভাইস-চেয়ারম্যান ও সাবেক ভিপি মোহাম্মদ বায়েযীদ হাছান প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন। অনুষ্ঠানে সাংবাদিক মেরাজ উদ্দিনের নেতৃত্বে ভিন্ন দলের অর্ধশতাধিক নেতা-কর্মীর আওয়ামী লীগে যোগদানের কথা বলা হলেও এদিন যোগদান করেন শহর জাসদের সাধারণ সম্পাদক টুকন সাহা, বিএনপি সমর্থক পিটার চৌধুরী ও সাংবাদিক আলমগীর হোসেন এবং জামায়াত সমর্থক মো. মানিক মিয়াসহ ৬ জন।
এ ব্যাপারে জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি, সাবেক হুইপ-এমপি বীর মুক্তিযোদ্ধা মো. আতিউর রহমান আতিক বলেন, ওই যোগদান সম্পর্কে তিনি ও জেলা আওয়ামী লীগ কিছু জানে না। এটি মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশনার সুস্পষ্ট উপেক্ষা উল্লেখ করে তিনি বলেন, স্বতন্ত্র এমপি তার সমর্থকদের পাল্লা ভারি করতে জামায়াত-বিএনপির লোকজনকে বরণ করছেন।
জানা যায়, সদর উপজেলার চরশেরপুর ইউনিয়নের হেরুয়া বালুরঘাট এলাকার অধিবাসী মেরাজ উদ্দিন কলেজ জীবনে ছাত্রদলের রাজনীতির সাথে জড়িত থাকার সুবাদে শেরপুর সরকারি কলেজ শাখা ছাত্রদলের আহবায়ক ও জেলা ছাত্রদলের সদস্য ছিলেন। পরবর্তীতে তিনি জেলা শ্রমিকদলের সাংঠনিক সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। ৯০-এর দিকে ছাত্রদল নেতা খোকন স্মরণে প্রকাশিত ‘রক্তিম সূর্য’ নামে স্মরণিকায় বঙ্গবন্ধুর চরম বিষোদগার করে তার ‘গণতন্ত্রের ২১ বছর’ শীর্ষক একটি লেখা ছাপা হয়। সেখানে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুকে স্বৈরাচার এবং ৭৫ এর পট-পরিবর্তনকে গণতন্ত্রের বিজয় হিসেবে উল্লেখ করা হয়। সেইসাথে ৭৫-৯৬ সময়কালকেই গণতন্ত্রের ২১ বছর উল্লেখ করে বঙ্গবন্ধু ও আওয়ামী লীগের ব্যাপক বিষোদগার করা হয়। তিনি দৈনিক সংগ্রাম, দৈনিক দিনকাল ও বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের সময়কালে বিটিভি প্রতিনিধি ছিলেন। বর্তমানে রয়েছেন ইনডিপেনডেন্ট টেলিভিশনের পাশাপাশি দৈনিক ইনকিলাবের জেলা প্রতিনিধি হিসেবে।
ক্ষমতার হাতবদলে সবসময়ই ক্ষমতাসীনদের আনুকূল্যে থাকার সুবাদে তিনি দুদফায় শেরপুর প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদকের পদ হাসিল করেন। তৃতীয় মেয়াদে ওই পদে সংগঠনের গঠনতন্ত্র মোতাবেক থাকতে না পারায় এবার তিনি ভিড়েন শেরপুর সদর আসনের স্বতন্ত্র সংসদ সদস্যের কোলে। এরপর থেকেই শুরু করেন প্রেসক্লাব কেন্দ্রিক ষড়যন্ত্র এবং ক্ষমতার দখল-বেদখলের ধারাবাহিকতায় প্রেসক্লাব দখল ও তার নেতা হতেই সরাসরি আওয়ামী লীগে যোগ দিলেন বলে গুঞ্জন চলছে।