Home সারাদেশ শেরপুরের গারো পাহাড়ে থেমে নেই বন্য হাতি ও মানুষের দ্বন্দ্ব।

শেরপুরের গারো পাহাড়ে থেমে নেই বন্য হাতি ও মানুষের দ্বন্দ্ব।

23

আনিছ আহমেদ, শেরপুর প্রতিনিধি: দিনে দুপুরে ভারত সিমান্তবর্তী গারো পাহাড় থেকে ফসলি জমিতে নেমে আসে বন্যহাতি।ফসল রক্ষায় রুখে দাঁড়ায় মানুষও। শুরু হয় হাতির সঙ্গে মানুষের যুদ্ধ। ফসল রক্ষার জন্য তারা প্রাণপণ চেষ্টা করে, কিন্তু শেষ পর্যন্ত। প্রাণ যায় মানুষের, প্রাণ যায় হাতিও।

দুই যুগেরও বেশি সময় ধরে শেরপুরের নালিতাবাড়ী, ঝিনাইগাতী, শ্রীবরদী উপজেলার গারো পাহাড় এলাকায় দুর্বিষহ হয়ে উঠেছে মানুষ ও হাতির জীবন যাপন।

ময়মনসিংহ বন বিভাগ এবং শেরপুর বন্যপ্রাণী ও জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণ কার্যালয়ের হিসাব অনুযায়ী, ১৯৯৫ সাল থেকে ২০২২ ইং সালের জুন মাস পর্যন্ত শেরপুরের গারো পাহাড়ে হাতির আক্রমণে মৃত্যু হয়েছে ৬০ জন মানুষের। আহত হয়েছেন শতাধিক ব‍্যাক্তি।

অপরদিকে- হাতি মারা গেছে ৩৩টি। হাতিগুলো বেশির ভাগ মারা গেছে গুলিবিদ্ধ, ধারালো অস্ত্রের আঘাতে কিংবা বৈদ্যুতিক ফাঁদে। আর কিছু সংখ্যক মারা গেছে খাদ্যে বিষক্রিয়া এবং বার্ধক্যজনিত কারণে।

আইইউসিএনের (ইন্টারন্যাশনাল ইউনিয়ন ফর কনজারভেশন অব নেচার) সাম্প্রতিক জরিপের তথ্য অনুযায়ী, শেরপুরের গারো পাহাড়ে ৮ হাজার ৩৭৬ একরজুড়ে রয়েছে বনভূমি। এই বনভূমিসহ ময়মনসিংহের হালুয়াঘাট উপজেলা ও জামালপুরের বকশীগঞ্জ উপজেলার বনভূমিতে বিচরণ করে ১২৫টি হাতি।

ক্ষুধার যন্ত্রণায় হাতিগুলো খাদ্যের সন্ধানে পাহাড় থেকে নেমে এসে হানা দিচ্ছে ফসলি জমিতে কিংবা লোকালয়ের বসত বাড়িতে। আর মানুষ তাদের জীবন, ফসল ও ঘরবাড়ি রক্ষায় হাতিকে প্রতিহত করতে মশাল জ্বালিয়ে, বাদ্যযন্ত্র বাজিয়ে, পটকা ফুটিয়ে হাতির পালকে তাড়া করছে। এতে মানুষ ও হাতি উভয়ের জীবন দুর্বিষহ হয়ে পড়েছে।

স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, আমরা সব সময় হাতি আতঙ্কে থাকি। আগে হাতি শুধু ফসলের মৌসুমে আসতো। রাতের আঁধারে এসে ফসল সাবাড় করে চলে যেত। এখন দিনে দুপুরেই হাতি হামলে পড়ছে ফসলের ক্ষেতে। কখনো কখনো বাড়ী ঘরে। হাতির তাণ্ডবে আমাদের জীবন এখন দুর্বিষহ। আমরা সরকারী ভাবে প্রয়োজনীয় ব‍্যবস্থা গ্রহণের দাবী জানাচ্ছি।

বন বিভাগ জানিয়েছে, শেরপুরের গারো পাহাড়ে বিচরণকারী বন্য হাতি সুরক্ষায় আন্ত:সীমান্ত অভয়ারণ্য তৈরি করতে ভারতের সঙ্গে একটি প্রটোকলে সই করেছে বাংলাদেশ। এটা বাস্তবায়ন হলে মানুষ ও হাতির মধ্যে যে নীরব কান্না চলছে, তা অনেকটাই কেটে যাবে।

জেলা বন্যপ্রাণী ও জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণ কর্মকর্তা সুমন সরকার জানান, তারা হাতিসহ বন রক্ষায় কাজ করছেন। পাহাড়ে হাতির খাবার উপযোগী বাগান তৈরির চেষ্টা চলছে। সংরক্ষণ করা হবে হাতির চলাচলের পথ।হাতি দ্বারা কোনো ক্ষতি করা হলে, সরকারী ভাবে তার ক্ষতিপূরণের ব্যবস্থা করা হয়। তাই কোনোভাবেই হাতিকে উত‍্যক্ত করা যাবে না।