Home জাতীয় শব্দদূষনের প্রত্যক্ষ শিকার সাধারণ জনগণ: এর প্রতিকারে প্রয়োজন সমন্বিত উদ্যোগ

শব্দদূষনের প্রত্যক্ষ শিকার সাধারণ জনগণ: এর প্রতিকারে প্রয়োজন সমন্বিত উদ্যোগ

41

সৈয়দ আমিরুজ্জামান, বিশেষ প্রতিনিধি : পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রনালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটি সদস্য অ্যাড. খোদেজা নাসরিন আক্তার হোসেন এমপি বলেন, শব্দদূষনের প্রত্যক্ষ শিকার সাধারণ জনগণ। এজন্য আমাদেরকে সমন্বিতভাবে কাজ করতে হবে কারণ শব্দ দূষণ একটি নিরব ঘাতক। জলবায়ু অভিযোজনের জন্য আমারা যেভাবে কাজ করছি ঠিক একইভাবে শব্দ দূষণ নিয়ে কাজ করতে হবে। শব্দ দূষণ কারা করছে তা নির্ণয় করে আমরা ডিজিটাল প্রযুক্তি ব্যবহার করতে পারি।
মঙ্গলবার (০৭ ফেব্রুয়ারি ২০২৩) সকাল ১১টায় ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটি (ডিআরইউ)-সাগর রুনি’ মিলনায়তন কক্ষে পরিবেশ অধিদপ্তরের ‘শব্দ দূষণ নিয়ন্ত্রণে সমন্বিত ও অংশীদারিত্বমূলক প্রকল্প’-এর আওতায় গুরুত্বপূর্ণ অংশীদারদের নিয়ে একটি সচেতনতামূলক মতবিনিময় সভার আয়োজন করা হয়। এতে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন।
পরিবেশ অধিদপ্তরের বাস্তবায়নাধীন এই প্রকল্পে জরিপ ও মতবিনিময় সভার কার্যক্রমে সার্বিক সহযোগিতায় আছে ইকিউএমএস কনসালটিং লিমিটেড এবং বায়ুমণন্ডলীয় দূষণ অধ্যায়ণ কেন্দ্র (ক্যাপস)।
স্টামফোর্ড ইউনিভার্সিটি বাংলাদেশের সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক মোহাম্মদ আলী নকীর সভাপতিত্বে উক্ত সভায় প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন মাননীয় সংসদ সদস্য অ্যাড. খোদেজা নাসরিন আক্তার হোসেন। এ সময় বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন ঢাকা পরিবহন সমন্বয় কর্তৃপক্ষ (ডিটিসিএ) এর অতিরিক্ত নির্বাহী পরিচালক মোহাম্মদ রবিউল আলম; পরিবেশ বাঁচাও আন্দোলন (পবা) এর চেয়ারম্যান আবু নাসের খান এবং বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা) এর যুগ্ম সম্পাদক আলমগীর কবির।
সভায় স্বাগত বক্তব্য প্রদান করেন স্টামফোর্ড বায়ুমন্ডলীয় দূষণ অধ্যয়ন কেন্দ্র (ক্যাপস)-এর প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান এবং পরিবেশ বিজ্ঞানী অধ্যাপক ড. আহমদ কামরুজ্জামান মজুমদার।
প্রকল্প সংশ্লিষ্ট তথ্যচিত্র উপস্থাপন করেন প্রকল্পের মাঠ সমন্বয়ক ইঞ্জিঃ মোঃ নাছির আহম্মেদ পাটোয়ারী।
এছাড়াও সভায় উপস্থিত ছিলেন ঢাকার সুশীল সমাজের প্রতিনিধিসহ, স্টামফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ও শিক্ষার্থীগন, ডাক্তার, বিভিন্ন স্কুল ও কলেজের শিক্ষক-শিক্ষার্থী, প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়ার সংবাদকর্মী, গাড়ি চালক, সামাজিক ও পরিবেশবাদি বিভিন্ন সংস্থার সদস্যরা।
স্বাগত বক্তবে স্টামফোর্ড বায়ুমন্ডলীয় দূষণ অধ্যয়ন কেন্দ্র (ক্যাপস)-এর প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. আহমদ কামরুজ্জামান মজুমদার বলেন, শব্দ দূষণ সহ পরিবেশ দূষণ রোধে আমাদের দেশে পর্যাপ্ত আইন রয়েছে, তবে আইনের প্রয়োগ হোক সর্বশেষ পদক্ষেপ এবং সচেতনতাই হোক সর্বপ্রথম পদক্ষেপ।
প্রধান অতিথি বক্তব্যে পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রনালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটি সদস্য অ্যাড. খোদেজা নাসরিন আক্তার হোসেন এমপি বলেন, শব্দদূষণের প্রত্যক্ষ শিকার সাধারণ জনগণ। এজন্য আমাদেরকে সমন্বিতভাবে কাজ করতে হবে কারণ শব্দদূষণ একটি নিরব ঘাতক। সরকারের পাশাপাশি বেসরকারী প্রতিষ্ঠান এটি নিয়ে কাজ করছে বিষয়টি ইতিবাচক। জলবায়ু অভিযোজনের জন্য আমারা যেভাবে কাজ করছি ঠিক একইভাবে শব্দ দূষণ নিয়ে কাজ করতে হবে। উচ্চস্বরে অর্থহীন যে সঙ্গীত চর্চা হচ্চে তা অচিরেই বন্ধ করতে হবে।
তিনি আরও বলেন, শব্দদূষনের ক্ষতিকর দিক সম্পর্কে ব্যাপক জনসচেতনতা তৈরি করতে হবে এবং পরিবেশ রক্ষায় স্থানীয়, জেলা এবং বিভাগীয় পর্যায়ে কাজ করতে হবে। শব্দ দূষণ কারা করছে তা নির্ণয় করে আমরা ডিজিটাল প্রযুক্তি ব্যবহার করতে পারি।
তিনি আরও বলেন শব্দদূষণ করাল গ্রাস থেকে যেন জাতি মুক্ত হতে পারে সেজন্য তিনি জাতীয় সংসদে তা উত্থাপন করবে এবং প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের উদ্যোগ গ্রহন করার আশা ব্যক্ত করেন।
সভাপতির বক্তব্যে স্থপতি মোহাম্মদ আলী নকী বলেন, শব্দ একটি আঘাত সৃষ্ট বাস্তব ঢেউ, এই ঢেঊ অসহনীয় পর্যায়ে গেলে তা শব্দ দূষণে পরিনত হয়। এই ঢেউয়ের ভেতর একজন মানুষ কত সময় বা কতদিন ধরে অবস্থান করছেন তা গুরুত্বপূর্ণ এটির উপর নির্ভর করে মানুষের স্বাস্থ্য ঝুকি কতটা বেশী। শব্দ দূষণ রোধে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে আমাদের উদ্যোগ নিতে হবে।
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে ঢাকা পরিবহন সমন্বয় কর্তৃপক্ষ (ডিটিসিএ)-এর অতিরিক্ত নির্বাহী পরিচালক মোহাম্মদ রবিউল আলম বলেন, ডিটিসিএ বিভিন্ন কর্তৃপক্ষের সাথে সমন্বয় করে কাজ করে, শব্দ দূষণ এর মত গুরুত্বপূর্ণ বিষয়েও সমন্বয় করতে DTCA সহযোগিতা করবেন। সরকারের এনফোর্সমেন্ট কর্তৃপক্ষকে শব্দমাত্রা পরিমাপক যন্ত্র প্রদান করতে হবে যেন তারা শব্দের তীব্রতা পরিমাপ করে পদক্ষেপ নিতে পারেন। এছাড়াও তিনি শব্দ দূষণ রোধে রাস্তার পাশে সাউন্ড বেরিয়ার এর জন্য গাছ লাগানোর পরামর্শ দেন।
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে পরিবেশ বাঁচাও আন্দোলন (পবা)-র চেয়ারম্যান আবু নাসের খান বলেন, যানবাহনের সৃষ্ট শব্দদূষনের প্রত্যক্ষ শিকার সাধারণ জনগণ তাই নিজ স্বাস্থ্য সুরক্ষায় আমাদের নিজেদেরই হর্ণ বাজানো বন্ধ করতে হবে। শব্দ দূষনের উৎস চিহ্নিত হরে প্রাধান্য ভিত্তিতে সমাধান করতে হবে এবং পরিবেশ অধিদপ্তর, বিআরটিএ, বিআরটিসি, পুলিশ, রাজউক, সিটি কর্পোরেশনকে পৃথকভাবে দ্বায়িত্ব ভাগ করে সমন্বয় করে কাজ করতে হবে।
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা)-র যুগ্ম সম্পাদক আলমগীর কবির বলেন, শব্দের মানমাত্রা বজায় রাখতে আবাসিক এলাকা থেকে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও শিল্প কারখানা সরিয়ে ফেলতে হবে, অর্থাৎ ভূমির ব্যাবহার যেন ঠিক থাকে তা নিশ্চিত করতে হবে। এছাড়াও গাড়ি বিআরটিএ থেকে গাড়ি রেজিস্টেশন করার সময় মালিক ও ড্রাইভারদেরকে নিয়ে হর্নের ভয়াবহতা নিয়ে সেমিনার করার মাধ্যমে সচেতন করতে হবে। অতিরিক্ত শব্দ দূষণের ফলে আমরা ধীরে ধীরে বধির জাতিতে পরিনত হচ্ছি। নেপাল যদি হর্ন মুক্ত সিটি ঘোষণা করতে পারে তবে আমরা কেন পারি না? এছাড়াও তিনি প্রতিটি গাড়িতে শব্দ দূষণ মনিটরিং এর জন্য একটি করে ট্রাকিং ডিভাইস স্থাপন করে তার এক্সেস ট্রাফিক বিভাগকে প্রদান করার পরামর্শ দেন।
উক্ত মতবিনিময় সভায় আরও বক্ত্যব্য প্রদান করেন, বাপার- যুগ্ম সম্পাদক হুয়ায়ুন কবির সুমন, মিহির বিশ্বাস ও ইবনুল সাইদ রানা।
বিটিভি-র রিপোর্টার নারগিস জুই; জাগো নিউজ এর রিপোর্টার মুরাদ হোসাইন; দৈনিক ভোরের কাগজের রিপোর্টার আইনুদ্দিন; বাংলাদেশ সাইকেল লেন বাস্তবায়ন পরিষদের আমিনুল ইসলাম টুব্বুস; সুজন এর ঢাকা মহানগরের সহ সভাপতি ক্যামেলিয়া। এছাড়াও উক্ত মতবিনিময় সভায় সুশীল সমাজের প্রতিনিধি, ইয়ুথ নেট, জিটিসিএল এবং আর্থ সোসাইটি সহ বিভিন্ন সামাজিক সংগঠনের ব্যক্তিবর্গ শব্দ দূষণ নিয়ে তাদের অভিজ্ঞতা, সংকট ও সমাধানের উপায় নিয়ে বিস্তর মতপ্রকাশ করেন।