Home রাজনীতি রাষ্ট্রীয় ক্ষমতার বিরুদ্ধে লড়াই করতে হলে জনগণের শক্তি বাড়াতে হবে

রাষ্ট্রীয় ক্ষমতার বিরুদ্ধে লড়াই করতে হলে জনগণের শক্তি বাড়াতে হবে

17

স্টাফ রিপােটার: রাষ্ট্রীয় শক্তি খুব সংঘবদ্ধ, তারা সংগঠিত এর বিরুদ্ধে লড়াই করতে হলে জনগণের শক্তি বাড়াতে হবে বলে মন্তব্য করেছেন বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ ও জাহাঙ্গীনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে সাবেক অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ।

“নিত্যপণ্যের দ্রব্যমূল্যের উর্ধ্বগতি, দফায় দফায় বিদ্যুৎ ও গ্যাসের দাম বৃদ্ধির রুখতে” আজ শুক্রবার (২৯ মার্চ ২০২৪) বিকাল ৩টায় শাহবাগে জাতীয় জাদুঘরের সামনে নাগরিক সমাবেশে তিনি এ মন্তব্য করেন।

সমাবেশে বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ ও জাহাঙ্গীনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে সাবেক অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ সভাপতিত্ব ও গণতান্ত্রিক ছাত্র জোটের সমন্বয়ক ও পাহাড়ি ছাত্র পরিষদের সভাপতি অঙ্কন চাকমার সঞ্চালনায় বক্তব্য রাখেন সাংবাদিক আবু সাঈদ খান, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক মাহা মীর্জা, বিশিষ্ট চিকিৎসক ডাঃ হারুন অব রশীদ, গণমুক্তি ইউনিয়নের সভাপতি নাসির উদ্দীন আহমেদ নাসু, বাংলাদেশ নারী মুক্তি কেন্দ্রের সভাপতি সীমাদত্ত, বঙ্গন্ধু হলে ছাত্র সংসদের সাবেক সাধারণ সম্পাদক আব্দুল্লাহ আল কাফী, নারী অধিকার কর্মী মার্জিয়া প্রভা, সিনিয়র নাগরিক সুজিত চৌধুরী প্রমূখ।

সমাবেশে আনু মুহাম্মদ বলেন, এদেশটি শাসকগোষ্ঠী, লুটেরা গোষ্ঠী দ্বারা পরিচালিত হচ্ছে এবং তাদের অনুগ্রহের আমরা ঠিকে আছি, বেঁচে আছি এই বোধ থেকে দেশের জনগণ মুক্ত না হলে এবং দেশের ওপরে জনগণের মালিকানা বোধ তৈরি না হলে ক্ষমতা তৈরি করার রাজনীতি বিকাশ হবে না।

তিনি আরো বলেন, একটা দেশের স্বচ্ছতা, জবাবদিহিতা, জনসমর্থন, জনসম্মতি ছাড়া কর্তৃত্ব এবং ফ্যাসিবাদী বৈশিষ্ট্য নিয়ে একটা সরকার দীর্ঘদিন ধরে ক্ষমতাই থাকলে এর পরিণতি কি হয় এটি দেশের জিনিসপত্রের দাম বৃদ্ধি ও মানুষের জীবন যাত্রার দেখে তা স্পষ্ট হয়। সুতরাং এটা লড়াইয়ের সাথে কোনো না কোনোভাবে সম্পর্কিত। এর বিরুদ্ধে সর্বশক্তি নিয়োগ করতে হবে, এর ছাড়া আমাদের কোন পথ নাই। এ লড়াইয়ে দেশের জনসাধরণ সর্বশক্তি নিয়োগ দেবে বলে তিনি প্রত্যাশা করেন।

সাংবাদিক আবু সাঈদ খান বলেন, একটি দেশের বাজার ব্যবস্থা এটি খুবই গুরুত্বপূণর্, এটা কঠিন কিছু নয়। বাজার ব্যবস্থার জন্য বাজারের সুশাসনের পাশাপাশি যে জিনিসটা দরকার বিকল্প বাজারের ব্যবস্থা। কিন্তু সরকার তা করেনি।

তিনি আরো বলেন, দেশের চাল, ডাল, তেল, আটা, পেঁয়াজের ব্যবসা মুষ্টিমেয় লোকের হাতে চলে গেছে। এখানে যদি মধ্যবিত্ত ও ছোটখাটো ব্যবসা যারা আগে ছিল তারা যদি থাকতো তাহলে বাজারে এ ধরণে সিন্ডিকেট তৈরি হতো না। সে কারণে দেশের বাজার ব্যবস্থাকে সংস্কার করা দরকার। রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতায় মধ্যবিত্ত ও ছোটখাটো ব্যবসায়ীদেরকে সুযোগ সুবিধা দেওয়া দরকার। বাজারের জিনিসের দাম বেড়ে গেছে সরকারের তো কোনো ক্ষতি নেই, তাদের লোকজনের এত দুঃখ নেই। একমাত্র একটা ব্যাপার ছিল ভোটের সময় জবাবদিহিতা করতে হতো কিন্তু এখনতো আর ভোট হয় না, সে কারণে তারা জবাবদিহীতাও করতে হয় না।

অর্থনীতির সংকট রাজনৈতিক সংকট থেকে আলাদা নয় উল্লেখ করে তিনি আরো বলেন, অর্থনীতির সংকট রাজনৈতিক সংকট থেকে আলাদা না। অর্থনৈতিক সংকট এবং রাজনৈতিক সংকট এক রেখায় মিলেছে, একাকার হয়ে আছে। অতএব আমরা যদি মনে করি যে কেবল মাত্র উন্নয়ন হবে এবং গণতন্ত্র দরকার নাই, উন্নয়ন হবে তা সম্ভব নয়। অর্থাৎ ভোট, কাজ, ভাতের গণতন্ত্র একরেখায় মিলিত হতে হবে। এর জন্য আন্দোলনের শক্তি দরকার। এ আন্দোলনকে বেগবান করতে জনগণকে এগিয়ে আসতে হবে।

মাহা মীর্জা বলেন, বাজারে প্রত্যেকটি জিনিসপত্রের দাম বেড়েছে। এর ফলে মানুষের জীবনযাপনের মান হুমকিতে পড়েছে। আমরা সকলে দুঃখের আছি, কষ্টের আছি। সব থেকে দুঃখজনক হল এদেশের নিম্ন আয়ের শ্রমিক, রিক্সা চালক, খেটে খাওয়া মানুষরা আছেন প্রচন্ড দুর্ধর্ষ অবস্থায় আছেন। দুর্ভাগ্যজনক হচ্ছে স্বাধীনতা পঞ্চাশ বছর পরেও আমাদের দেশের কৃষকের যারা খাদ্য উৎপাদনের সাথে জড়িত তাদের শ্রম ও ঘাম দিয়ে যারা খাদ্য উৎপাদন করছেন সে কৃষকেরা তাদের ফসলের উৎপাদনের ন্যায্য মূল্যের দাম পান না। তিনি সরকারে অপশাসনের বিরুদ্ধে সকলকে প্রতিরোধ জায়গা গড়ে তোলার আহ্বান জানান।

সমাবেশে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অধ্যাপক ড. তানজিম উদ্দিন খান, বাংলাদেশের সম্যবাদী আন্দোলন কেন্দ্রী ফোরামেরর সমন্বয়ক শুভ্রাংশু চক্রবর্তী, বাসদ (মার্কসবাদী) সমন্বয়ক মাসুদ রানা, নয়াগণতান্ত্রিক গণমোর্চার সভাপতি জাফর হোসেন, ইউনাইটেড পিপলস ডেমোক্রেটিক ফ্রন্ট (ইউপিডিএফ)-এর সংগঠক থুইক্যচিং মারমা, বিপ্লবী কমিউনিস্ট লীগের ইকবাল কবির, বাংলাদেশ ছাত্র ফেডারেশনের সভাপতি মিতু সরকার, বিপ্লবী ছাত্র-যুব আন্দোলনের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি তাওফিকা প্রিয়া, গণতান্ত্রিক ছাত্র কাউন্সিলের সভাপতি ছায়েদুল হক নিশান, বিপ্লবী ছাত্র মৈত্রীর সাধারণ সম্পাদক দীলিপ রায়, সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্টেরে সাধারণ সম্পাদক রাফিকুজ্জামান ফরিদ, বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়নের সাংগঠনিক সম্পাদক তানজিম হায়দার চঞ্চল, বাংলাদেশ ছাত্র ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক সৈকত আরিফসহ লেখক, বুদ্ধিজীবি, বিভিন্ন রাজনৈতিক দল, সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও ছাত্র সংগঠনের নেতৃবৃন্দ এবং বিভিন্ন পেশাজীবি মানুষ সংহতি জানিয়েছেন।