Home ধর্ম রংবেরঙের ফানুসে রঙিন হয়ে উঠেছিল উপকূলের আকাশ।।

রংবেরঙের ফানুসে রঙিন হয়ে উঠেছিল উপকূলের আকাশ।।

32

পালিত হয়েছে বৗদ্ধ ধর্মাবলম্বী রাখাইন সম্প্রদায়ের প্রবারনা উৎসব

কলাপাড়া(পটুয়াখালী)প্রতিনিধি: রঙিন হয়ে উঠেছিল উপকূলের আকাশ। এ যেন দূর আকাশে তারার মেলা। আবার মাঝে মধ্যে দুই একটি তারা খসে পড়ছে। এগুলো আকাশছোঁয়া রংবেরঙের ফানুস। এমন দৃশ্য দীর্ঘ সময় ধরে অনেকেই উপভোগ করেছেন। বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বী রাখাইন সম্প্রদায়ের সব চেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব প্রবারনা পূর্নিমা উপলক্ষে পটুয়াখালীর কলাপাড়া উপজেলার বিভিন্ন রাখাইন পাড়া থেকে এসব বর্নিল ফানুস উড়ানো হয়েছে। আকাশ প্রদীপের (ফানুস) আলোয় দূর হবে অন্ধকার ও সকল পাপ, এ বিশ্বাসে রাতের অন্ধকার আকাশকে নানা রঙে আলোয় আলোকিত করে তোলেন বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীরা। প্রতিবছরের মতো আশ্বিন মাসের প্রবারণা পূর্ণিমা তিথিতে শত শত ফানুস উড়ানো হয়।
জানা গেছে, কুয়াকাটার পাশাপাশি গোড়া আমখোলাপাড়া, কেরানীপাড়া,কালাচানপাড়া, বৌলতলীপাড়া, হাঁড়িপাড়া, বেতকাটাপাড়া, নাচনাপাড়াসহ উপজেলার ২৩ টি রাখাইন পাড়ায় ফানুস উড়িয়েছে রাখাইন সম্প্রদায়ের লোকজন। এছাড়া প্রতিটি বৌদ্ধবিহারে মোমবাতি প্রজ্জালন, ঘন্টা বাজানো, পঞ্চমশীল অনুষ্ঠান, পূজাঅর্চনা ও ধর্মীয় আলোচনা করা হয়। তবে উৎসবের প্রধান আকর্ষণ এ ফানুস ওড়ানো।
বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীদের মতে আষাঢ়ী পূর্ণিমাতে বৌদ্ধ ভিক্ষুদের বর্ষাব্রত শুরু হয়ে কার্তিকের এ পূর্ণিমাতে শেষ হয়। এ সময় বৌদ্ধ বিহারগুলোতে গৌতম বুদ্ধের স্মরণে বিভিন্ন ধর্মীয় আচার-অনুষ্ঠান পালন করা হয়। বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীদের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব এ প্রবারণা পূর্ণিমা। এই দিনে গৌতম বুদ্ধ ধর্ম প্রচার শুরু করেন। প্রতি বছর এই সময়ে আকাশে ফানুস উড়ায় এবং ধর্মীয় নানা আয়োজনের মাধ্যমে গৌতম বুদ্ধকে স্মরণ করা হয়।
চোথেন মাতুব্বর জানান, বিভিন্ন প্রকার ফানুসের মধ্যে রয়েছে, মালা ফানুস, প্যারাসুট ফানুস, তারা ফানুস, পঞ্চমুখী ফানুস ও লতা ফানুস। একেকটি ফানুস তৈরিতে অন্ততঃ এক থেকে দেড় হাজার টাকা খরচ হয়। রাখাইন সম্প্রদায়ের নর-নারীরা এ ফানুস গুলো তৈরী করেছে। এছাড়া প্রবারণা পূর্নিমা উৎসবকে কেন্দ্র করে তাদের প্রতিটি ঘরে ঘরে বিভিন্ন প্রকার পিঠা,পায়েস এবং ভাল খাবারের আয়োজন করা হয়।
মিস্ত্রিপাড়া সীমা বৌদ্ধ বিহারের অধ্যক্ষ উত্তম মহাথেরো বলেন, প্রবারণা পালি শব্দ, পবারণ’। থেরবাদী বৌদ্ধ বিশ্বে আশ্বিনী পূর্ণিমাকে প্রবারণা পূর্ণিমা বলা হয়। এ প্রবারণা পূর্ণিমা থেরবাদী বৌদ্ধদের কাছে একটি গুরুত্বপূর্ণ দিন। বিশ্বে অপরাপর থেরবাদী বৌদ্ধদের মতো বাংলাদেশের সকল বৌদ্ধরা এ প্রবারণা পূর্ণিমা উদযাপন করেন।
বৌদ্ধ-কৃষ্টি প্রচার সংঘের পটুয়াখালী ও বরগুনা জেলার সভাপতি ও বাংলাদেশে কৃষক লগি কেন্দ্রীয় কমিটির সহ- ধর্ম বিষয়ক সম্পাদক নিউ নিউ খেইন বলেন, রাখাইন সম্প্রদায়ের পাড়াভিত্তিক লোকজন ক্রমে কমে যাচ্ছে। এখন যাঁরাও আছেন, তাঁদের আর্থিক অসচ্ছলতাসহ নানা সংকট তো রয়েছেই। যার কারণে প্রবারণা উৎসবে ফানুস ওড়ানো, আগের চেয়ে অনেকটা কমে গেছে। তারপরও ব্যক্তিগত উদ্যোগ থেকে যে যতটুকু পারছেন, ততটুকু করে উৎসব পালন করার চেষ্টা করছেন বলে তিনি সাংবাদিকদের জানান।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শংকর চন্দ্র বৈদ্য বলেন, প্রতিটি রাখাইন পাড়ায় প্রবারণা উৎসব পালন করার জন্য পাঁচশ কেজি করে চাল দেওয়া হয়েছে।