Home বাণিজ্য ও অর্থনীতি যে কারণে আন্তর্জাতিক বাজার ধরতে পারছে না ভেনামি চিংড়ি

যে কারণে আন্তর্জাতিক বাজার ধরতে পারছে না ভেনামি চিংড়ি

39

ডেস্ক রিপোর্ট: বিশ্ববাজারের ৮০ শতাংশ দখলে রাখা ‘ভেনামি’ প্রজাতির চিংড়ির বাণিজ্যিক চাষের অনুমতি না থাকায় চিংড়ির বিশাল এই আন্তর্জাতিক বাজার ধরতে পারছে না বাংলাদেশ।

শুধু পাইলট প্রকল্প হিসেবে উৎপাদনের অনুমতির কারণে চাষি, উৎপাদনকারী ও রপ্তানিকারকরা ব্যাংকের ঋণসুবিধাও পাচ্ছেন না। ফলে তারা বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনকারী এ খাতে বিনিয়োগও করতে পারছেন না। এ অবস্থায় ‘পাইলট’ প্রকল্পের স্থলে ভেনামি চিংড়ির ‘বাণিজ্যিক’ উৎপাদনের অনুমতি চেয়েছেন চিংড়ি রপ্তানিকারকরা।

বাংলাদেশ ফ্রোজেন ফুড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন (বিএফএফইএ) সূত্র জানায়, বাংলাদেশে বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনের অন্যতম খাত চিংড়িশিল্পকে টিকিয়ে রাখার স্বার্থে ‘ভেনামি’ চিংড়ি চাষের কোনো বিকল্প নেই। একমাত্র ভেনামি চিংড়িই পারে দেশের চিংড়িশিল্পের সম্প্রসারণ করে বিশ্ববাজার ধরে রাখতে। এজন্য দ্রুত একটি সহজ নীতিমালা তৈরির মাধ্যমে বাণিজ্যিকভাবে ‘ভেনামি’ চিংড়ি চাষকে উন্মুক্ত করে রপ্তানির পদক্ষেপ গ্রহণ জরুরি।

সূত্রমতে, নানা কারণে দেশে বাগদা ও গলদা চিংড়ির উৎপাদন কমে যাচ্ছে। পাশাপাশি বাংলাদেশ আন্তর্জাতিক বাজারে হিমায়িত চিংড়ি রপ্তানির প্রতিযোগিতাতেও টিকতে পারছে না। এ কারণে ইতিমধ্যে সাদা সোনাখ্যাত চিংড়িশিল্পে অশনিসংকেত দেখা দিয়েছে। বিশেষ করে বিশ্ববাজারে ভেনামি চিংড়ির দাম কমের পাশাপাশি পর্যাপ্ত চাহিদা থাকায় দেশের রপ্তানিকারকরা চিংড়ির বাজার ধরে রাখতে পারছেন না। ফলে আন্তর্জাতিক বাজার ধরে রাখার পাশাপাশি চিংড়িশিল্পকে বাঁচিয়ে রাখতে বাংলাদেশ ফ্রোজেন ফুডস এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন ((বিএফএফইএ) বিগত প্রায় ২০ বছর ধরে ভেনামি চিংড়ি চাষের অনুমতির জন্য সরকারের কাছে আবেদন জানিয়ে আসছে। ২০১৯ সালের সেপ্টেম্বরে ভেনামি জাতের চিংড়ি চাষের অনুমতি দেয় সরকার। এরপর অনুমোদনপ্রাপ্ত যশোর বিসিক শিল্প নগরীর ‘এম ইউ সি ফুডস’ ও সাতক্ষীরার বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা ‘সুশীলন’ যৌথ উদ্যোগে মৎস্য অধিদপ্তর ও মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউটের অধীনে খুলনার পাইকগাছা লোনা পানি কেন্দ্রে পরীক্ষামূলকভাবে এই প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হয়। যার গড় উৎপাদন ছিল হেক্টর প্রতি ৯ টনের বেশি।

এদিকে বিএফএফইএ এক পরিসংখ্যানে উল্লেখ করেছে, বাংলাদেশে বাগদা চিংড়ির গড় উৎপাদন হেক্টর প্রতি ৩৪১ কেজি। সেখানে প্রতিবেশী দেশ ভারতে ‘ভেনামি’চিংড়ির উৎপাদন হেক্টর প্রতি গড় ৭ হাজার ১০২ কেজি। অর্থাৎ বাগদা চিংড়ির তুলনায় ‘ভেনামি’চিংড়ির উৎপাদন হেক্টর প্রতি ৬ হাজার ৭৬১ কেজি বেশি। যার প্রমাণ মিলেছে খুলনায় পরীক্ষামূলকভাবে চাষকৃত ‘ভেনামি’ চিংড়ির উৎপাদনেও।

বিএফএফইএ’র ভাইস প্রেসিডেন্ট এস হুমায়ুন কবীর বলেন, চিংড়ির অভাবে দেশের ১০৫টি হিমায়িত মৎস্য প্রক্রিয়াজাত ও রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠানের মধ্যে বর্তমানে চালু আছে মাত্র ২৮টি প্রতিষ্ঠান। বাকি ৭৭টিই বন্ধ হয়ে গেছে। বর্তমানে যে কয়টি প্রতিষ্ঠান চালু আছে, তাতে দেশে উৎপাদিত চিংড়িতে সক্ষমতা ও ধারণ ক্ষমতার মাত্র ১০-১৫ ভাগ চাহিদা মিটছে। ফলে প্রক্রিয়াজাতকরণ খরচও বেশি পড়ছে। এ অবস্থায় এ শিল্পকে মাথা উঁচু করে ঘুরে দাঁড়াতে হলে ভেনামির চাষ করে চিংড়ির উৎপাদন বৃদ্ধির কোনো বিকল্প নেই।

তিনি বলেন, এশিয়া মহাদেশের একমাত্র ‘বাংলাদেশ’বাদে বাকি ১৪টি দেশেই ভেনামি চিংড়ি বাণিজ্যিকভাবে উৎপাদন হচ্ছে। এই মুহূর্তে আমাদের দেশে এ প্রজাতির চিংড়ি বাণিজ্যিকভাবে উৎপাদন সময়ের দাবি। একই সঙ্গে ‘পাইলট’ প্রকল্পের স্থলে ভেনামি চিংড়ির ‘বাণিজ্যিক’ উৎপাদনের অনুমতি দেওয়ার দাবি জানান তিনি।

খুলনা জেলা মৎস্য কর্মকর্তা জয়দেব পাল বলেন, বিশ্ববাজারে চিংড়ির টিকে থাকার বিষয়টি চিন্তা করে বাংলাদেশেও বাণিজ্যিকভাবে ভেনামি চিংড়ি চাষের অনুমোদন দেওয়ার বিষয়টি সরকারের বিবেচনাধীন রয়েছে। আশা করা হচ্ছে, দেশে দ্রুত ভেনামি চিংড়ি চাষের অনুমতি দেওয়া হবে।-ইত্তেফাক