Home রাজনীতি ময়লার ভাগারে বরিশাল নগরী কী হতাশার তিমিরে হাবুডুবু খাচ্ছে?

ময়লার ভাগারে বরিশাল নগরী কী হতাশার তিমিরে হাবুডুবু খাচ্ছে?

100

বরিশাল থেকে আহমেদ জালাল : ময়লার ভাগাড়ে পরিণত কেন হলো বরিশাল নগরী? তবে কী রাতের আধারে প্রতিমন্ত্রীর শোক দিবসের ব্যানার অপসারণকে কেন্দ্র করে ইউএনও’র বাসভবনে হামলা, সংর্ঘষ, নিরাপত্তাকর্মীদের গুলিবর্ষনের খেসারত দিচ্ছেন জনসাধারণ? এরকম প্রশ্ন জনমনে সর্বত্র ধুমায়িত হচ্ছে। মেলছে গুঞ্জনের ডালপালা।
নিরাপত্তাকর্মীদের গুলিবর্ষন ও সংর্ঘষের ঘটনার পর থেকে নগর থেকে বর্জ্য অপসারণের কাজটি বন্ধ রয়েছে। এতে চরম ভোগান্তিতে পড়েছেন নগরবাসী। নগরীর বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টসহ ও বাসা বাড়ির বর্জ্যের স্তুপের পরিমাণ বৃদ্ধি পাচ্ছে। পঁচা দুর্গন্ধে সেখানে সাধারণ মানুষকে নাক চেপে যাতায়াত করতে হচ্ছে। অবস্থা এমন যে, ময়লার ভাগারে পরিণত বরিশাল সিটি এলাকা। অবশ্য মেয়র সেরনিয়াবাত সাদিক আবদুল্লাহ শনিবার (২১ আগস্ট) রাতে তাঁর বাসভবনে সংবাদ সম্মেলনে পরিচ্ছন্নতাকর্মীদের কাজে যোগ দেওয়ার অনুরোধ জানিয়েছেন। সংবাদ সম্মেলন থেকে তিনি পরিচ্ছন্নতা কর্মীদের হয়রানি না করতে পুলিশের প্রতি অনুরোধ জানান। এরপর পরই বরিশাল শহরে পরিচ্ছন্নতা কার্যক্রম শুরু হয়। সর্বোপরি বহুল আলোচনা-সমালোচনায় ঘটনাটি শেষ পর্যন্ত কোন দিকে মোড় নিচ্ছে? রাজনৈতিক অঙ্গনে এরকম প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছে। বরিশাল আওয়ামী লীগের এহেন দৈন্যদশার হেতু কী? এ যেনো দলের চেইন অব কমান্ড অনেক আগেই ভেঙ্গে পড়েছে। যদিও রাজনীতিই নির্ধারণ করে কিভাবে ক্ষমতা অর্জন করা যায়, ক্ষমতা বৃদ্ধি করা যায় এবং ক্ষমতা ব্যবহার করা যায়। প্রাচীন গ্রিক থেকে আজ পর্যন্ত প্রত্যেক সমাজে রাজনীতির গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব লক্ষ করা যায়। গ্রিক দার্শনিকদের থেকে জানা যায়, রাজনীতি হলো একজন পূর্ণাঙ্গ মানুষ তৈরি করার প্রক্রিয়া।
ইউএনও’র বাসভবনে হামলার ঘটনায় দেশজুড়ে মানুষের মাঝে নানা আলোচনা-সমালোচনায় রূপ নিচ্ছে। ক্ষমতাসীন দলটির শীর্ষ পর্যায়ের নেতারা এ ঘটনায় রীতিমতো বিরক্ত, পড়েছেন চরম অস্বস্তিতে। হামলার বিষয়ে হার্ডলাইন অবস্থান করছেন প্রশাসন ক্যাডারের কর্মকর্তাদের সংগঠন বাংলাদেশ অ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশন। পরিস্থিতি এমন যে, সিভিল প্রশাসন এবং বরিশাল আওয়ামী লীগের একাংশ বিপরীতমুখী অবস্থানে রয়েছেন।
অনুসন্ধানী সূত্রগুলো বলছে, দীর্ঘদিন ধরে পানিসম্পদ প্রতিমন্ত্রী কর্নেল (অব:) জাহিদ ফারুক শামিম (এমপি)’র সঙ্গে সিটি মেয়র সেনিয়াবাত সাদিক আব্দুল্লাহ’র রাজনৈতিক-মনস্তাত্ত্বিক দ্বন্দ্ব চলছিল। গত ১১ জানুয়ারি সন্ধ্যায় নগরীর সাগরদী এলাকায় বরিশাল মহানগর ছাত্রলীগ সভাপতি জসিম উদ্দিনের বাড়ি বুলডেজার দিয়ে গুড়িয়ে দিয়েছিল সিটি কর্পোরেশন। এতে ক্ষোভ জন্মে আ’লীগের একাংশের মাঝে। জসিম প্রয়াত মেয়র এ্যাড. শওকত হোসেন হিরণপন্থী হিসেবে পরিচিত ছিলেন। প্রয়াত মেয়র হিরণের অকাল মৃত্যুর পর পানিসম্পদ প্রতিমন্ত্রী কর্নেল (অব:) জাহিদ ফারুক শামিম (এমপি)’র সঙ্গে সময় দিচ্ছিলেন জসিম। ছাত্রলীগ নেতা জসিম উদ্দিন তখন গণমাধ্যমে বলেছিলেন, প্রয়াত মেয়র জননেতা এ্যাড. শওকত হোসেন হিরণের অকাল মৃত্যুর পর পানিসম্পদ প্রতিমন্ত্রী কর্নেল (অব:) জাহিদ ফারুক শামিম (এমপি)’র সঙ্গে থেকে রাজনীতি করার কারণে প্রতিহিংসাপরায়ণ হয়ে সিটি মেয়র অবৈধভাবে আমার বাড়ি বুলডেজার দিয়ে ভেঙ্গে দিয়েছেন। পরে বুলডেজার দিয়ে গুড়িয়ে দেয়া বাড়ি পরিদর্শনও করে ক্ষোভ প্রকাশ করেন পানিসম্পদ প্রতিমন্ত্রী কর্নেল (অব:) জাহিদ ফারুক শামিম (এমপি)। ওই সময়ে মহানগর ছাত্রলীগ সভাপতি জসিম উদ্দিন সাংবাদিকদের জানান, তিনিসহ অপর দুই ভাই মনির হোসেন ও অসিম হাওলাদারের নামে মহাসড়কের পাশে সাগরদী এলাকায় ক্রয়কৃত ৮ শতাংশ জমিতে ৭ তলা ভবন নির্মাণের জন্য ২০১৭ সালে সিটি করপোরেশন থেকে প্ল্যান অনুমোদন নেন। নিয়ম মেনে ২০১৯ সালে নির্মাণ কাজ শুরু করেন। সিটি করপোরেশনের দেখিয়ে দেয়া সীমানার মধ্যেই তিনি বহুতল ভবনের একতলার ছাদ সম্পন্ন করেন। আজ কোন কারণ ছাড়াই সিটি করপোরেশন বুলডোজার দিয়ে তাদের একতলা ভবনের একাংশ গুড়িয়ে দেয়। এ ঘটনাকে রাজনৈতিক প্রতিহিংসা বলে দাবি করেন তিনি। জসিম উদ্দিন তাঁর ওপর রাজনৈতিক প্রতিহিংসার অভিযোগ করলেও অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদের দাবি করেছিল সিটি করপোরেশন। এরকম নানা ইস্যুতে প্রতিমন্ত্রী ও মেয়রের মধ্যকার মনস্তাতিক দ্বন্ধ বিরাজমান। সাম্প্রতিক সময়ে সিটি করপোরেশনের ৬ কাউন্সিলর প্রতিমন্ত্রীর দেওয়া অনুদানের চাল দরিদ্রদের মাঝে বিতরণ করেন। এতে ক্ষুব্ধ হন মেয়র। পরে ছয় কাউন্সিলরের কার্যালয় থেকে বিসিসির কর্মচারীদের তুলে আনা হয়। সূত্রের দাবী, ওই দ্বন্দ্বের জের ধরেই ব্যানার-পোস্টার ছিঁড়তে যান সিটি করপোরেশনের লোকজন ও আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা। ওই দ্বন্দ্বের জের ধরে বুধবার রাতে বিসিসি কর্মী এবং স্থানীয় আওয়ামী লীগের কিছু নেতাকর্মী প্রতিমন্ত্রীর ছবি সংবলিত ব্যানার-ফেস্টুন অপসারণ করতে গেলে হামলা ও সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে বলে সত্যতা নিশ্চিত করেন বিসিসির ২৩ ওয়ার্ড কাউন্সিলর এনামুল হক বাহার, ২৪ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর শরীফ মো: আনিচুর রহমান, ২২ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর আনিসুর রহমান দুলাল এবং ২০ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর জিয়াউর রহমান বিপ্লব। বরিশাল সদর উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) মুনিবুর রহমানের সরকারি বাসভবনে হামলার নেপথ্যে নিয়ে রাজনৈতিক অঙ্গনসহ নানা শ্রেনী পেশার মানুষের মাঝে ব্যাপকভাবে জল্পনা-কল্পনা চলছে। রাজনৈতিক মদদদাতাদের কোন যোগসূত্র রয়েছে কিনা এ নিয়ে জনমনে বিভিন্ন প্রশ্ন ধুমায়িত হচ্ছে। অভিজ্ঞমহল বলছেন, কোন সন্ত্রাসী নিজের পেশীশক্তির বলে কাজ করে না। তাদের পিছনে মদদদাতা ও আশির্বাদ থাকে। কেননা, এর সাথে অর্থের সংশ্লিষ্টতা রয়েছে, অর্থ প্রাপ্তির বিষয় রয়েছে। এ কারণে আধিপত্য বিস্তারে শক্তিমত্তা জাহির করতে নানান ধরণের অপরাধ প্রবণতা বাড়ছে।
প্রতক্ষ্যদর্শীসহ বিভিন্ন সূত্রের ভাষ্য, বরিশাল সদর উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও)’ বাসভবনে হামলাকে কেন্দ্র করে আত্নরক্ষার্থে নিরাপত্তাকর্মীদের গুলিবর্ষন ও সংর্ঘষের ঘটনার পর থেকে নগর থেকে বর্জ্য অপসারণের কাজ বন্ধ থাকায় চরম ভোগান্তিতে পড়েছেন নগরবাসী। নগরীর বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টসহ ও বাসা বাড়ির বর্জ্যের স্তুপের পরিমাণ বৃদ্ধি পাচ্ছে। পঁচা দুর্গন্ধে সেখানে সাধারণ মানুষকে নাক চেপে যাতায়াত করতে হচ্ছে। অবস্থা এমন যে, ময়লার ভাগারে পরিণত বরিশাল সিটি এলাকা। শুধু বাজার বা মহল্লা নির্দিষ্ট স্থান নয়, দোকানপাট ও মার্কেটের সামনেও বর্জ্যের পরিমাণ বাড়ছে। এরফলে ফলে সদররোড, চকবাজার, ফলপট্টি, পুলিশ লাইন রোড, পোর্টরোডের ফুটপাত দিয়ে দুর্গন্ধে চলাচলে দুর্ভোগে ক্ষুদ্ধ জনসাধারণ। তাঁরা বলছেন, সড়কের পাশে ময়লা-আবর্জনার বিশাল স্তূপ। সেখান থেকে দুর্গন্ধ ছড়াচ্ছে। কাপড়ে নাক ঢেকে চলছে পথচারীরা। পাশাপাশি সংঘর্ষ-হামলার ঘটনার পর ব‌রিশাল সি‌টি কর‌পো‌রেশ‌ন এলাকায় ২৪টি টিকা কেন্দ্র থে‌কে বৃহস্প‌তিবারই স‌রে যায় স্বেচ্ছা‌সেবকরা। এতে করে টিকা গ্রহিতা‌দের ভোগা‌ন্তি ও বিশৃঙ্খলার সৃ‌ষ্টি হচ্ছে কেন্দ্রগুলোতে।
রিকশা চালক সোহরাপ বলেন, থানা কাউন্সিলের সামনে ঢাকা-বরিশাল মহাসড়কের মাঝামাঝি ময়লা ফেলা রয়েছে। এছাড়া প্রতিটি বাজার ও মহল্লার নির্দিষ্ট স্থানে ময়লার স্তুপ দিনে দিনে বাড়ছে। সেইসঙ্গে পঁচা দুর্গন্ধ বৃদ্ধি পাওয়ায় ময়লার স্তুপের পাশ দিয়ে নাক চেপে খুব কষ্টে যাতায়াত করতে হচ্ছে।
বরিশাল সদর উপজেলা পরিষদে (থানা কাউন্সিল) ব্যানার অপসারণ করতে গিয়ে গত বুধবার (১৮ আগস্ট) রাতে বিসিসির কর্মচারী ও আনসার সদস্যদের মাঝে বাকবিতণ্ডা ঘটে। অভিযোগ উঠে, হট্রগোল সৃষ্টি করে পরিস্থিতি উত্তপ্ত করে তোলে মেয়র সেরনিয়াবাত সাদিক আব্দুল্লাহ অনুসারীরা। ইউএনও’র সঙ্গে উত্তপ্ত আচরণ করা হয়। আওয়ামী লীগ-ছাত্রলীগের একাংশের নেতা-কর্মীরা জড়িয়ে পড়েন সংঘর্ষে। ইউএনও’র বাসায় হামলাও চালানো হয়েছে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে আত্নরক্ষার্থে ইউএনও’র নিরাপত্তাকর্মীরা গুলি করতে বাধ্য হন। ওই রাতের ভয়ঙ্কর ঘটনার পর নগর থেকে বর্জ্য অপসারণের কাজটি বন্ধ রয়েছে। গত কয়েক দিন ধরে কোনো ধরণের বর্জ্য অপসারণ করছে না কেউ। আর এতে চরম ভোগান্তিতে পড়েছেন জনসাধারন।
পরিচ্ছন্নতা বিভাগে এক শ্রমিক জানান, ব্যানার অপসারণ অভিযানে বুধবার রাতে প্রশাসনিক কর্মকর্তার সঙ্গে সিটি করপোরেশনের পরিচ্ছন্নতা বিভাগের কর্মচারীরাই ছিলেন। থানা কাউন্সিলে ব্যানার খুলতে যখন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বাধা দেন এবং আনসাররা গুলি করে তখনই বিষয়টি ছড়িয়ে পরে। এরপর মেয়রকে লক্ষ্য করে গুলি করা হলে শ্রমিকরা যে যেখান থেকে খবর পেয়েছেন ঘটনাস্থলে যান। মেয়র ও শ্রমিকদের ওপর গুলির প্রতিবাদে তখন থানা কাউন্সিলের সামনের রাস্তার ওপর ময়লা ফেলে ও বর্জ্য পরিবহনের গাড়ি দিয়ে সড়ক অবরোধ করা হয়। তিনি জানান, এরপর পরের দিন বিকেলের দিকে কোতোয়ালি মডেল থানায় দুটি মামলায় সিটি করপোরেশনের কর্মকর্তা-কর্মচারী ছাত্রলীগ ও আওয়ামী লীগ নেতা-কর্মীসহ জ্ঞাত-অজ্ঞাত কয়েক শতাধিক আসামী করা হয়। কারণ সেখানে অনেকেই গিয়েছিল, আর অজ্ঞাত আসামীর ক্ষেত্রে কাকে গ্রেফতার করা হবে, কাকে করা হবেনা সেটাও বলা যাচ্ছে না। এরইমধ্যে মহানগর আ’লীগ নেতা কাউন্সিলর শেখ সাই‌য়েদ আহ‌ম্মেদ মান্না‌সহ বেশ কয়েকজনকে গ্রেফতারও করা হয়েছে।
অন্যদিকে, শনিবার (২১ আগস্ট) বেলা ১১টার দিকে বরিশাল সিটি মেয়র সেরনিয়াবাত সাদিক আবদুল্লাহ সহ সকল নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে মামলা প্রত্যাহারের দাবিতে পৃথক দুটি মানববন্ধন করেছেন সিটি কর্পোরেশনের কর্মকর্তা কর্মচারী ও পরিছন্নতা কর্মীরা। বরিশাল অশ্বিনী কুমার হলের প্রাঙ্গনে পৃথকভাবে মানববন্ধন করেন তাঁরা। মানববন্ধনে বক্তারা বলেন, সিটি মেয়র কাউন্সিলরসহ সকল নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে যে মামলা দায়ের করা হয়েছে তা অবিলম্বে প্রত্যাহার ও আটক নেতাকর্মীদের মুক্তির দাবি জানান তাঁরা। এসময় বিসিসির কর্মচারীরা বলেন, গ্রেফতার আতংকে কাজে যোগদান করতে পারছেন না তাঁরা।
শনিবার (২১ আগস্ট) এক সাংবাদিক সন্মেলনে বরিশাল সিটি কর্পোরেশনের (বিসিসি) পরিচ্ছন্নতাকর্মীদের কাজে যোগ দেওয়ার অনুরোধ জানিয়েছেন মেয়র সেরনিয়াবাত সাদিক আবদুল্লাহ। সংবাদ সম্মেলন থেকে তিনি পরিচ্ছন্নতা কর্মীদের হয়রানি না করতে পুলিশের প্রতি অনুরোধ জানান। এরপর পরই বরিশাল শহরে পরিচ্ছন্নতা কার্যক্রম শুরু হয়।
পুলিশ সূত্র বলছে, ইউএনও’র বাসভবনে হামলার ঘটনায় দুটি পৃথক মামলা দায়ের করো হয়। একটি মামলার বাদী সদর উপজেলার ইউএনও মুনিবুর রহমান। অপরটি দায়ের করেন বরিশাল কোতোয়ালি মডেল থানা পুলিশ। মামলা দুটিতে এজাহার ভুক্ত আসামি পঁচাত্তর জন ও অজ্ঞাত পাঁচ শতাধিক। এদের ভেতর শনিবার পর্যন্ত আটক করা হয়েছে ২১ জনকে। পুলিশ জানান, অন্যান্য আসামিদের আটকের অভিযান অব্যাহত রয়েছে। সূত্রগুলো বলছে, বুধবার (১৮ আগস্ট) ঘটনার দিন এবং পরের দিন ১৩ জনকে বিভিন্ন স্থান থেকে গ্রেফতার করা হয়। পরবর্তীতে শনিবার দুপুর পর্যন্ত অভিযানে আরও ৮ জনকে গ্রেফতার করা হয়। এদের মধ্যে বরিশাল-পটুয়াখালী মিনিবাস মালিক সমিতির সভাপতি মমিন উদ্দিন কালুকে শুক্রবার রাতে রুপাতলী এলাকা থেকে গ্রেফতার করা হয়। এছাড়া ২১ জনের মধ্যে মহানগর আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক হাসান মাহামুদ বাবু এবং বরিশাল জেলা বাস-মিনিবাস কোচ ও মাইক্রোবাস শ্রমিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক আহমেদ শাহরিয়ার বাবু রয়েছেন।
অরেকদিকে বরিশাল মহানগর আওয়ামী ল‌ী‌গের সাংগঠ‌নিক সম্পাদক ও ২১ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর শেখ সাইদ আহমেদ মান্নাকে রাজধানীর মোহাম্মদপুর এলাকা থেকে গ্রেফতার করেছে র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র‌্যাব)। শনিবার (২১ আগস্ট) র‌্যাবের লিগ্যাল অ্যান্ড মিডিয়া উইংয়ের সিনিয়র সহকারী পরিচালক আ ন ম ইমরান খান সত্যতা নিশ্চিত করেছেন। সূত্রটি জানায়, গত বুধবার (১৮ আগস্ট) বরিশালে ‘ইউএনওর সরকারি বাসভবনে ও পুলিশের ওপর হামলার ঘটনায় দায়ের করা মামলার দুই নম্বর আসামি কাউন্সিলর সাইদ আহমেদ মান্নাকে গ্রেফতার করা হয়েছে। পুলিশ বলছে, ‘ইউএনওর সরকারি বাসভবন ও পুলিশের ওপর হামলার ঘটনায় দায়ের করা মামলার দুই নম্বর আসামি শেখ সাইয়েদ আহমেদ মান্না। বলাবাহুল্য, কাউ‌ন্সিলর মান্না ব‌রিশাল নগ‌রীর গোরস্থান রোডের বা‌সিন্দা ও প্রয়াত বীর মু‌ক্তি‌যোদ্ধা শেখ কুতুব উদ্দিনের ছে‌লে। তিনি কট্রর সাদিক অনুসারী হিসেবে বেশ পরিচিত। এরআগে গত মে মাসে ২১ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর সাইদ আহমেদ মান্নার নেতৃত্বে পুলিশের ওপর হামলা চালানোর অভিযোগ রয়েছে। ওইদিন দুপুরে বিরোধপূর্ণ জমি সংক্রান্ত একটি অভিযোগ তদন্তে বরিশাল কোতয়ালি মডেল থানা পুলিশের ওসি (অপারেশন) আনোয়ার হোসেন এবং এএসআই মিজান সঙ্গীয় ফোর্স নিয়ে মুসলিম গোরস্থান রোডে যান। তখন কাউন্সিলর মান্না বিরোধপূর্ণ জমি নিয়ে স্থানীয় বাসিন্দা মৃত: চাচা বিমল বিশ্বাসের ছেলে নিক্কন বিশ্বাস (৪৮) নামের ব্যক্তির পক্ষে অবস্থান নেনভ এবং লোকজন নিয়ে ওসি-এসআইকে অকথ্য ভাষায় গালাগাল করাসহ হামলা চালিয়ে পুলিশ কর্মকর্তাদ্বয়ের মোবাইল ফোন ছিনিয়ে নেন। সূত্রের ভাষ্য, ওই সময়ে কাউন্সিলর মান্না বেশকিছু লোক নিয়ে ঘটনাস্থলে আসেন। এবং পুলিশ কেন তার এলাকায় আসছে তা নিয়ে অকথ্য ভাষায় গালাগালি শুরু করেন। এতে পুলিশ সদস্যরা প্রতিবাদ জানান এবং তাদের সাথ্যে অসৌজন্যমূলক আচারণের বিষয়টি উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবহিত করতে মুঠোফোন হাতে নিলে কাউন্সিলরের সহযোগীরা ক্ষুব্ধ হয়ে ওঠে। এবং ওসি আনোয়ার ও এএসআই মিজানসহ অপর এক পুলিশ সদস্যের ওপর হামলা চালিয়ে তাদের তিনজনের মুঠোফোন নিয়ে যান। তাৎক্ষনিক খবর পেয়ে থানা থেকে বিপুলসংখ্যক পুলিশ গিয়ে পরিস্থিতি শান্ত করে ঘটনাস্থল থেকে ঘটনায় জড়িত ৫ জনকে গ্রেপ্তার করলেও কাউন্সিলর মান্না পালিয়ে গিয়ে সেই যাত্রায় নিরাপদে আশ্রয় নিয়ে নিজেকে রক্ষা করতে সক্ষম হন।
বাসভবনে হামলার প্রসঙ্গে ইউএনও মুনিবুর রহমান সাংবাদিকদের জানিয়েছেন, উপজেলা পরিষদ প্রাঙ্গণের ভেতরে বিভিন্ন স্থানে শোক দিবস উপলক্ষে পানিসম্পদ প্রতিমন্ত্রী কর্নেল (অব:) জাহিদ ফারুক শামিম (এমপি)’র ব্যানার-পোস্টার লাগানো ছিল। রাতে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা এসব ছিঁড়তে আসে। রাতে লোকজন ঘুমাচ্ছে জানিয়ে তিনি ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের বৃহস্পতিবার সকালে এগুলো ছিঁড়তে বলেন। এরপর তারা তাকে গালিগালাজ করতে থাকে। একপর্যায়ে তারা ইউএনওর বাসায় ইটপাটকেল নিক্ষেপ করতে থাকেন। রাতে দুই দফায় তারা হামলা চালায় বলে জানান ইউএনও মুনিবুর রহমান।
বরিশালের অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার এনামুল হক এর ভাষ্য, ইউএনও জানিয়েছেন তাঁর বাসভবন এলাকায় ব্যানার-পোস্টার খুলতে আসে কিছু লোকজন। সংরক্ষিত এলাকা হওয়ায় রাতে ব্যানার খুলতে নিষেধ করেন। এ নিয়ে তাদের সঙ্গে বাগবিতণ্ডা হয়। এমনকি নিষেধ অমান্য করে ইউএনওর বাসভবনে প্রবেশ করতে চাইলে আনসার বাহিনী গুলি চালায়। খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনার চেষ্টা করে। সে সময় ইউএনওর বাসভবনের দিকে কিছু লোক এগিয়ে গেলে তাদের ছত্রভঙ্গ করে দেওয়া হয়। সংঘর্ষে একাধিক পুলিশ আহত হয়। অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার এরামুল হক বলেন, ইউএনওর অফিস ও বাসভবন সংরক্ষিত এলাকা। এ এলাকায় বিনা অনুমতিতে প্রবেশ করা আইনত অপরাধ। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে যা করণীয় সেটাই করা হয়েছে। অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা যাতে আর না ঘটে সেদিকে সতর্ক নজর রাখা হচ্ছে।
অপরদিকে, বুধবার দিনগত রাত ৩টার দিকে নগরের কালিবাড়ি রোডস্থ সেরনিয়াবাত ভবনে থানা কাউন্সিলের ঘটনার বিবরণ শেষে সাংবাদিকদের বরিশাল সিটি করপোরেশনের মেয়র সেরনিয়াবাত সাদিক আব্দুল্লাহ বলেছেন, যে কাজ করতে গিয়ে আজকের এ ঘটনা, ওই কাজটি আমাদের রেগুলার কাজ। এরআগে সংবাদ সম্মেলনে আমি ব্যানার নিয়ে স্টেটমেন্ট দিয়েছি, পুরোনো ব্যানার বা ভূইফোর সংগঠনের ব্যানারগুলো সরিয়ে ফেলতে। এতে শহর পরিষ্কার হবে। আর আপনারা জানেন মনে হয়, আমার নিজের করা ব্যানারটিও আমি খুলে ফেলেছি। আর সেই ধারাবাহিকতায় পরিষ্কার করতে করতে তারা থানা কাউন্সিলে গিয়েছে। আপনার দেখেছেন থানা কাউন্সিলের ভেতরে বিভিন্ন লোকজন, বিভিন্ন ব্যানার দেয়। আর যেখানে সিটি করপোরেশনের লোকজন কাজ করছিলো সেটা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) এর বাসা না। ওখানে পুকুর আছে, যেখানে সাধারণ মানুষ গোসল করে, ওখানে মসজিদ আছে, ওখানে আরো অনেক অফিস আছে, ওখান থেকে পেছনে বসবাসকারী মানুষদের যাতায়াতের রাস্তাও রয়েছে। সিটি করপোরেশনের কর্মীরা আমাকে যেটা জানিয়েছেন, ওখানে কাজ প্রায় শেষের পথে ছিলো, পরিষ্কার করে চলে আসবে তখন ইউএনও সাহেব বের হয়ে সিটি করপোরেশনের কর্মীদের বলেছে কার কাছে জিজ্ঞাসা করে সেখানে তারা গিয়েছে। কর্মীরা বলেছে, তাদের গালাগালি করা হয়েছে। আর এই ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে ওনার বাসায় হামলার অভিযোগ আনা হয়েছে। কিন্তু ওনার বাসার গেটের ভেতরে কি তারা ঢুকেছে। ওখানে আমাদের ১ নম্বর যুগ্ম সম্পাদক ছিলো, তারপর প্রচার সম্পাদকের সঙ্গে সিনিয়রদের পাঠালাম সেখানে কি হয়েছে দেখার জন্য। তিনি বলেন, যখন তারা আমাকে বললো যে গুলি হচ্ছে, তখন আমার বাসায় আমি, আমাদের সিটি করপোরেশনের সিও, মহানগর আওয়ামী লীগের অনেক নেতারা উপস্থিত ছিলো। আমি তাৎক্ষণিক একাই ঘটনাস্থলে চলে গেলাম। সিও সাহেবও পেছনে পেছনে রওনা দিলেন। আমি যখন ঘটনাস্থলে গিয়ে হেলমেট খুলে কর্মীদের বললাম তোমরা গেটের বাইরেই দাঁড়াও কেউ ভেতরে যেও না। এরপর একা থানা কাউন্সিলের গেট দিয়ে যখন ভেতরে যাওয়ার চেষ্টা করলাম এবং বললাম আমি বরিশাল সিটি করপোরেশনের মেয়র। তারা সে কথা শুনে অনবরত গুলি করা শুরু করলো। এরমধ্যে পেছনে যে নেতা-কর্মীরা ছিলো তারা সকলে এসে মানবপ্রাচীর বানিয়ে আমাকে বাহিরে নিয়ে আসলো। তারপর ওখানে থেকে আমার খুবই খারাপ লাগছে, খুবই লজ্জা লাগছে। তাই আমি ওখান থেকে চলে আসছি। চলে আসার পরে শুনলাম আবারো গুলি হয়েছে। আমাদের প্যানেল মেয়র গাজী নঈমুল হোসেন লিটুকে রেখে আসছিলাম যাতে ওখানে অপ্রতিকর কিছু না ঘটে। তিনি বলেন, আমি গুলিবিদ্ধ হয়নি, তবে আমাকে গুলি করা হয়েছে, আর সেগুলো আমার জ্যাকেটের কারণে শরীরের ভেতরে লাগেনি কিন্তু গায়ে প্রচণ্ড ব্যথা পেয়েছি। আর গুলির সময় নেতা-কর্মীরা সামনে চলে আসায় তাদের গায়েই গুলিগুলো লেগেছে। কতজনের গায়ে লেগেছে তা আমি হিসেব করে বলতে পারবো না। কতজন নেতাকর্মী আহত হয়েছেন সে বিষয়েও এখন কিছু বলতে পারবো না। ব্যানারকে কেন্দ্র করে এমন ঘটনা ঘটতে পারে কিনা এমন প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, কি বলবো বলেন, গুলি করা হয়েছে ওখানে। মেয়রের গায়েও পর্যন্ত গুলি করা হয়েছে। মেয়র বলেন, আমি ওখানে যাওয়ার পরে পুলিশ কমিশনার সাহেব, র‌্যাবের সিও, আনসাররা গুলি করায় আনসারদের প্রধানকেও ফোন করেছি। কিন্তু আমি চলে আসার পরে পুলিশ বের হয়ে আসার পরও আবারো নাকি গুলি হয়েছে। মহানগর আওয়ামী লীগের এক নম্বর যুগ্ম সম্পাদককে যেহেতু আটকে রাখা হয়েছে, তাই হয়তো প্যানেল মেয়র গাজী নঈমুল হোসেন লিটু আলোচনার জন্য ভেতরে যাওয়ার চেষ্টা করেছেন। তাকে গুলি করা হয়েছে, ৩৫-৩৭টি শটগানের গুলির পিলেট তার গায়েও লেগেছে। আমাদের সিটি করপোরেশনের প্রশাসনিক কর্মকর্তা স্বপন কুমার দাস ব্যানার উচ্ছেদের সময় থেকেই ওখানে ছিলো। তার গায়েও গুলি লাগছে। তিনি বলেন, ঘটনার অবশ্যই জোড়ালো তদন্ত চাইব এবং অবশ্যই আমরা আইনের আশ্রয় নেবো। মেয়র হিসেবে এভাবে দায়িত্ব পালন করা সম্ভব না। আমি মেয়র হিসেবে তাহলে ব্যর্থ। প্রধানমন্ত্রী আমাকে শপথ পরিয়েছেন, আমার বাবা আছেন তারা সিদ্ধান্ত নেবেন। যদি আমার অপরাধ হয়ে থাকে, আমি আমার রেজিগনেশন লেটার দিয়ে দেবো। মেয়র বলেন, আপনার সঙ্গে কথা কাটাকাটি হয়ে থাকলে আমাকে বলতে পারতেন। বরিশালে এতো বছরে এমন কোনো ঘটনা ঘটেনি, যে এইভাবে আমাদের গুলি করা লাগবে। আবার শুনলাম যারা আহত হয়েছে তাদের গ্রেফতার করার জন্য মেডিক্যালে গেছে। তাহলে ঠিক আছে, অপরাধ হয়ে থাকলে তাদের হয়নি, আমি মেয়র মাথা পেতে নিলাম আমি রেজিগনেশন লেটার প্রধানমন্ত্রীর কাছে দিয়ে দেবো।
ওদিকে, হামলার ঘটনার পর বৃহস্পতিবার (১৯ আগস্ট) রাতে বাংলাদেশ অ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশন আয়োজিত এক বৈঠক শেষে গণমাধ্যমে পাঠানো সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে তাঁরা বলেছেন, ‘আইনের মাধ্যমেই দুর্বৃত্তদের মোকাবিলা করা হবে এবং আইন তার নিজস্ব গতিতে চলবে।’ সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করা হয়েছে, বরিশাল বিভাগ মেয়রের অত্যাচারে অতিষ্ঠ বলে অভিযোগ করে তাঁর গ্রেপ্তার দাবিও জানানো হয়েছে। বিজ্ঞপ্তিতে বলঅ হয়, ‘বরিশাল সিটি করপোরেশনের মেয়র সেরনিয়াবাত সাদিক আবদুল্লাহ ও তাঁর দুর্বৃত্ত বাহিনী সিটি করপোরেশনের কর্মচারীদের দিয়ে নানা প্রকার প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করছে ও বরিশাল ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করছে।’
অ্যাডমিনিস্ট্রেশন সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশনের এই বক্তব্য নিয়ে আওয়ামী লীগের একাংশের নেতাদের (সাদিক আব্দুল্লাহ অনুসারী) মধ্যে নানান আলোচনা চলছে। দলটির নেতাদের প্রশ্ন, সিভিল প্রশাসন একজন নির্বাচিত মেয়রকে এভাবে বলতে পারেন কি না? বরিশাল জেলা ও মহানগর আওয়ামী লীগের দাবি, ব্যানার অপসারণ করতে গিয়ে সিটি করপোরেশনের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা ইউএনও’র বাধার মুখে পড়েন। ইউএনও সবার সঙ্গে দুর্ব্যবহার করতে থাকেন। পরিস্থিতি শান্ত করতে সেখানে যান মেয়র। তাকে লক্ষ্য করে গুলি ছোড়েন ইউএনও। বৃহস্পতিবার বরিশালে সেরনিয়াবাত ভবনে এক সংবাদ সম্মেলনে বরিশাল সিটি করপোরেশনের প্যানেল মেয়র গাজী নঈমুল হোসেন লিটু এ অভিযোগ করে প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কামনা করেন।
বরিশাল জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক তালুকদার মো. ইউনুস বলেন, নিয়মিত রুটিন ওয়ার্কের কাজ হিসেবে সেদিন উপজেলা পরিষদ চত্বরে গিয়েছিল বিসিসির কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। আমরা এ ঘটনার বিচার বিভাগীয় তদন্ত দাবি করছি।
বরিশাল মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি অ্যাডভোকেট এ কে এম জাহাঙ্গীর বলেন, ওই রাতে ইউএনওর বাসভবনে কেউ হামলা করেনি। রাতে বিভাগীয় প্রশাসন ঘটনাস্থল পরিদর্শনের সময় আমিও ছিলাম। হামলা হলে ইউএনওর বাসভবনের একটি জানালার গ্লাসও ভাঙতো না? আবার যে গেট ভাঙার কথা হচ্ছে সেটি কোথায়? সব গেটই তো ঠিকই দেখেছি। ইউএনও নিজেই এর সঙ্গে জড়িয়েছেন। নিরাপত্তাকর্মীদের অস্ত্র ব্যবহার করে নির্বিচারে গুলি চালিয়েছেন।
বরিশাল নগর আওয়ামী লীগের সহ সভাপতি এ্যাড. আফজালুল করিম বলেন, “সরকারি কর্মকর্তাদের যারা স্টেটমেন্ট দিয়েছেন বরিশালের বাস্তবতার আলোকে তাদের এই স্টেটমেন্ট দেয়া ঠিক হয়নি। টিএনও’র বাসায় হামলা হয়নি। উপরন্তু পোস্টার অপসারণকে কেন্দ্র করে যেভাবে প্রশাসন দলীয় নেতাকর্মীদের মারধর করেছে এমনকি মেয়রকে লক্ষ্য করে গুলিও করেছে। এটি আড়ালের জন্য হামলার বিষয়টি সামনে এনেছে।” সরকার যে তদন্ত করছে পুলিশ ও প্রশাসনের মাধ্যমে তার উপরে আপনাদের আস্থা নেই?-এ প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন “আমাদের আস্থা নেই। কারণ তারা একটি পক্ষ হয়েছে। এবং বিপরীতে ইউএনওর বাসায় হামলার নাটক সাজিয়েছে। “আমরা মনে করি পুলিশ পক্ষ নিয়েছে। প্রশাসনও আমাদের বিপক্ষে অবস্থা নিয়েছে। আমরা মনে করি নিরপেক্ষ তদন্ত হোক। সেজন্য বিচার বিভাগীয় তদন্ত চেয়েছি”। দুই মামলায় অভিযুক্ত হওয়ার পর মেয়র এখন কি করবেন – এমন প্রশ্নের জবাবে আফজালুল করিম বলেন, “এটা আমরা আইনানুগভাবে দেখবো”।
এদিকে, বরিশাল সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার (ইউএনও) সরকারি বাসভবনে হামলা ও সংঘর্ষের ঘটনায় দায়ের হওয়া দুই মামলায় সিটি করপোরেশনের মেয়র সেরনিয়াবাত সাদিক আবদুল্লাহকে প্রধান আসামি করা হয়েছে। মামলা দুটির অভিযোগপত্র আদালত গ্রহণ করলে আইন অনুযায়ী সাময়িক বরখাস্ত হতে পারেন মেয়র। এ বিষয়ে স্থানীয় সরকার মন্ত্রী তাজুল ইসলাম বলেছেন, এ ঘটনা নিয়ে অবশ্যই তদন্ত হবে। মামলায় মেয়রকে অভিযুক্ত করে বলা হয়েছে, তাঁর নেতৃত্বেই এ কাজগুলো সেখানে করা হয়েছে। তিনি বলেন, যদি কারো (জনপ্রতিনিধি) বিরুদ্ধে মামলা এবং চার্জশিট হয়, তাহলে আমাদের সাসপেন্ড (সাময়িক বরখাস্ত) করার বিধান আছে। এ ঘটনায় অবশ্যই তদন্ত হবে, তদন্ত সাপেক্ষেই ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
‘স্থানীয় সরকার (সিটি করপোরেশন) আইন, ২০০৯’ এর ১২ নম্বর ধারায় মেয়র ও কাউন্সিলরদের সাময়িক বরখাস্ত করা প্রসঙ্গে বলা আছে, ‘যেক্ষেত্রে কোনো সিটি করপোরেশনের মেয়র অথবা কাউন্সিলরের অপসারণের ধারা ১৩ এর অধীন কার্যক্রম আরম্ভ করা হয়েছে অথবা তার বিরুদ্ধে ফৌজদারী মামলায় অভিযোগপত্র আদালতে গৃহীত হয়েছে, সেক্ষেত্রে সরকার লিখিত আদেশের মাধ্যমে, ক্ষেত্রমত, মেয়র বা কোনো কাউন্সিলরকে সাময়িকভাবে বরখাস্ত করতে পারবে।’ এ আইনের ১৩ নম্বর ধারায় বলা হয়েছে নৈতিক স্খলনজনিত অপরাধে আদালত থেকে দণ্ডিত হলে, অসদাচরণ বা ক্ষমতার অপব্যবহারের দায়ে দোষী সাব্যস্ত হলে মেয়র অথবা কাউন্সিলর তার নিজ পদ থেকে অপসারণযোগ্য হবেন।
প্রসঙ্গত, বুধবার (১৮ আগস্ট) রাত সাড়ে ১০টার দিকে বরিশাল সিটি করপোরেশনের ২০ থেকে ২৫ জন কর্মচারী নগরীর সিঅ্যান্ডবি রোডে উপজেলা পরিষদ এলাকায় গিয়ে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতার শুভেচ্ছা সংবলিত ব্যানার অপসারণের কাজ শুরু করেন। ওইসময়ে ইউএনওর কার্যালয় ও সরকারি বাসভবনের নিরাপত্তায় নিয়োজিত আনসার সদস্যরা তাঁদের পরিচয় জানতে চান। পরে তাঁরা সকালে এসে কাজ করার জন্য বলেন। এ সময় সিটি করপোরেশনের কর্মচারীদের সঙ্গে দায়িত্বরত আনসার সদস্যদের বাগ্‌বিতণ্ডা হয়। এনিয়ে ইউএনও’র সাথে আ’লীগ-ছাত্রলীগ নেতাকর্মীদের বাকবিতন্ডা হয়। একপর্যায়ে উত্তেজিত ছাত্র-যুব ও আ’লীগ নেতাকর্মীরা ইউএনও’র বাসভবনে প্রবেশ করে তাকে গালিগালাজসহ দেখে নেওয়ার হুমকি দেয়। আওয়ামী লীগের নেতা হাসান আহেমদের নেতৃত্বে ছাত্রলীগের জেলা কমিটির সহসভাপতি আতিকুল্লাহ খান, সাংগঠনিক সম্পাদক রাজীব খান, সাজ্জাদ সেরনিয়াবাতসহ শতাধিক নেতা-কর্মী সেখানে যান। পরে সেখানে আনসার সদস্যদের সঙ্গে তাঁদের কথা-কাটাকাটি হয়। এ সময় নেতা-কর্মীরা ইউএনওর বাসায় ইটপাটকেল নিক্ষেপ করেন। ইউএনওর বাসভবনে আওয়ামী লীগ ও এর অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মীদের হামলা চালায়। আনসার সদস্যরা ধাওয়া করে বরিশাল মহানগর আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক হাসান মাহামুদ বাবুকে আটক করেন। এরপর সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। আনসার সদস্যদের স‌ঙ্গে আওয়ামী লী‌গ-ছাত্রলীগ সদস্য‌দের সংঘর্ষে সদর উপজেলা প্রাঙ্গণ রণক্ষেত্রে পরিণত হয়েছে। পরিস্থিতি সামাল দিতে আনসার সদস্যরা আত্মরক্ষার্থে গুলি ছুড়ে। এতে গুলিবিদ্ধসহ অর্ধশতাধিক আওয়ামী লীগ-ছাত্রলীগের নেতা-কর্মী আহত হয়েছেন। ইউএনও’র বাসভবনে হামলার ঘটনায় ইতোমধ্যে বেশ কয়েকজনকে গ্রেপ্তার করা হয়।
খবর পেয়ে সিটি মেয়র সেখানে ছুটে গেলে ছাত্র-যুব ও আ’লীগ নেতাকর্মীরা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কার্যালয়ের মূলফটক ভেঙে ভেতরে প্রবেশের চেষ্টা করলে আনসার সদস্যরা আত্মরক্ষার্থে গুলি ছোড়ে।
সবমিলিয়ে পানিসম্পদ প্রতিমন্ত্রী জাহিদ ফারুক (এমপি)’র সঙ্গে মেয়র সেরনিয়াবাত সাদিক আবদুল্লাহর দ্বন্দ্বের জেরেই কী এহেন ঘটনার জন্ম ? ইউএনও’র বাসায় সাদিক আব্দুল্লাহ’র অনুসারীরা কেন-ই-বা হামলা করবে? নাকি এর মধ্যে অন্য কোন রহস্য লুকায়িত আছে? যদিও এক সংবাদ সম্মেলনে বরিশাল জেলা ও নগর আওয়ামী লীগের নেতৃবৃন্দ বলেছেন, ইউএনও’র বাসায় কেউ হামলা করেনি। এটি একটি পরিকল্পিত ঘটনা। সাদিক অনুসারীদের ব্যাপক প্রচারিত শ্লোগান ‘আমরাই গড়বো আগামীর বরিশাল’। সাদিক অনুসারীরা এও বলেছিলেন, বরিশাল সিটির নগর পিতা সেরনিয়াবাত সাদিক আব্দুল্লাহ্ আমরাই গড়বো আগামীর বরিশাল ক্লিন সিটি, গড়ার পথে অনেকটাই এগিয়ে গেছেন। সচেতন মহলের প্রশ্ন, ইউএনও-মেয়র কেন্দ্রিক ঘটনাকে কেন্দ্র করে এসব শ্লোগান কী খেই হারিয়ে হতাশার তিমিরে হাবুডুবু খাচ্ছে? আর বরিশাল নগরী কেন-ই-বা ময়লার ভাগারে পরিণত হওয়ার মতো পরিস্থিতির সৃষ্টি হলো!