ডেস্ক রিপোর্ট: সুসজ্জিত ভূয়া অফিস বানিয়ে মোবাইল নেটওয়ার্ক টাওয়ার সহ আরো বিভিন্ন প্রলোভন দিয়ে কোটি কোটি টাকা আত্মসাৎকারী প্রতারক চক্রের মূল হোতা মোঃ আমিনুল ইসলাম @ আমিন @ আমিনুর ছদ্মনাম জাহাঙ্গীর আলম @ বাদল (৪২), পিতা-মৃত মেছের আলী বেপারী, মাতা-মৃত জামিনা বেগম, সাং-সোনাইডাঙ্গা, ৯নং জাদবপুর ইউনিয়ন, ওয়ার্ড নং-০৭, থানা-মহেশপুর, জেলা-ঝিনাইদহ, বর্তমান ঠিকানা-মিরপুর-১২, ঝিলপাড়, রোড নং-২৯, বাড়ি নং-৩২, থানা-পল্লবী, ঢাকা’কে গত ১০/১১/২০২২খ্রিঃ, ২৩:৩০ ঘটিকার সময় পল্লবী থানাধীন মিরপুর-১২, ঝিলপাড়, রোড নং-২৯, বাড়ি নং-৩২ এর লিফটের ৬ষ্ঠ তলার ডান পাশের ফ্ল্যাট হতে পিবিআই ঢাকা মেট্রো (উত্তর) এর একটি বিশেষ টিম অভিযান পরিচালনা করে আটক করে।
ঘটনায় প্রকাশ পায় যে, জনৈক মোঃ শাহজাহান (৬০), পিতা-মৃত সিরাজ আলী একজন অবসরপ্রাপ্ত সরকারী চাকুরিজীবী। তিনি আশুলিয়ায় একটি বাড়ি নির্মাণ করতেছেন। গত ২৬/১০/২০২২ খ্রিঃ দুপুর ১২:২৪ ঘটিকার সময় জনৈক ব্যক্তি তার নাম সায়মান পরিচয় দিয়ে মামলার ভিকটিম ও বাদী মোঃ শাহজাহান এর সাথে পরিচিত হন। তিনি ভিকটিমকে বলেন তিনি S/B International co. ltd. এ চাকরি করেন। তাদের প্রতিষ্ঠানের টাওয়ার নির্মানের জন্য ভিকটিমের নির্মানাধীন বিল্ডিং এর ছাদ ভাড়া নেওয়ার প্রস্তাব করেন এবং তার প্রতিষ্ঠানের এমডি মাসুদুর রহমানের ব্যবহৃত মোবাইল নাম্বার দিয়ে তার সাথে যোগাযোগ করতে বলেন। পরবর্তীতে এমডির অফিসের স্টাফ তার নাম জাহাঙ্গীর আলম পরিচয় দিয়ে ভিকটিমের সাথে ফোনে যোগাযোগ করেন। ভিকটিম জাহাঙ্গীর আলম এর সাথে যোগাযোগ করে গত ০২/১১/২০২২খ্রিঃ তারিখ ভিকটিম মোঃ শাহজাহান (৬০) ঢাকার পল্লবী থানাধীন ১২ নাম্বারে আসেন। পরবর্তীতে গ্রেফতারকৃত আসামী জাহাঙ্গীর আলম ভিকটিমকে তাদের ফ্ল্যাট বাসার ভিতর অফিস কক্ষে নিয়ে যায়। সেখানে তাদের প্রতিষ্ঠান S/B International co. ltd. এর এমডি পলাতক আসামী মাসুদুর রহমান @ কামাল সহ এজাহারনামীয় অন্যান্য আসামীরা অফিস রুমে বসে ভিকটিম এর বিল্ডিং এর ছাদ ভাড়া নেওয়ার বিষয়ে কথা বলেন এবং ভিকটিম এর বাড়ীর দলিল, জাতীয় পরিচয়পত্র এবং ২ কপি ছবি নিয়ে অফিসে আসতে বলেন। পরবর্তীতে ভিকটিম গত ০৫/১১/২০২২ খ্রিঃ পল্লবী থানাধীন ১২ নম্বরে আসলে গ্রেফতারকৃত আসামী মোঃ আমিনুল ইসলাম @ আমিন @ আমিনুর ছদ্মনাম জাহাঙ্গীর আলম @ বাদল ভিকটিমকে তাদের ঝিলপাড়, রোড নং-২৯, বাড়ি নং-৩২ এর লিফটের ৬ষ্ঠ তলার ফ্ল্যাট বাসার অফিস কক্ষে নিয়ে যায়। ভিকটিম সেখানে যাওয়ার পরে আসামীরা ভিকটিমের সাথে তার টাওয়ার নির্মানের চুক্তির বিষয়ে আলোচনা না করে পলাতক আসামী মাসুদুর রহমান ভিকটিমকে বলে তার বেয়াই আসামী মাহবুবুর রহমান জাপানি টয়োটা কোম্পানীতে উচ্চ পদে চাকরি করেন। উক্ত জাপানি কোম্পানি বাংলাদেশে গাড়ীর যন্ত্রাংশ তৈরি করতে সোনারগাঁও মুরগা পাড়া এলাকায় ইন্ড্রাস্টির জন্য ২.৬৫ একর জমি নিবার্চন করেন। জমিটি আসামী মাহাবুবুর রহমান এর নামে ব্যতিত অন্য কারো নামে বায়না নামা দলিল করলে অধিক টাকা কোম্পানী হতে আদায় করতে পারবেন বলে জানায়। তখন বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করে ভিকটিমকে বায়না নামা দলিল এর গ্রহিতা হতে প্রস্তাব করেন এবং অতিরিক্ত টাকা ভিকটিমসহ আসামীরা সমহারে বন্টন করে নিবে মর্মে ভিকটিম এর বিশ্বাস অর্জন করে এবং ভিকটিমকে অধিক বিশ্বাস অর্জন করানোর লক্ষে কোরআন শরীফ নিয়ে শপথ করতে চায়। তখন ভিকটিম কোরআন শরীফ নিয়ে শপথ করতে রাজি না হলে আসামী মাসুদুর রহমান এক গ্লাস পানি নিয়ে রুমে উপস্থিত সবাইকে ১ আঙ্গুল গ্লাসের ভিতর পানিতে রেখে শপথ করান। একপর্যায়ে আসামী মাসুদুর রহমান জমির মালিক সাজাইয়া আসামী মোস্তফাকে ডাকেন। তখন আসামী মোস্তফা এসে জানায় তার স্ত্রী দীর্ঘদিন যাবত ল্যাব এইড হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় আছে। তাকে চিকিৎসা করানোর জন্য দ্রæত সিংগাপুর মাউন্ট এ্যালিজাবেথ হাসপাতালে নিতে হবে। সেখানে চিকিৎসা করাতে অনেক টাকার প্রয়োজন তার নিকট নগদ টাকা না থাকায় তিনি কম দামে জমি বিক্রি করতেছেন। জমির মোট মূল্য ২৩,৩২,০০,০০০/-(তেইশ কোটি বত্রিশ লক্ষ) টাকা নির্ধারন করে বায়না বাবদ ২,০০,০০,০০০/-(দুই কোটি) টাকা উল্লেখ করে ভিকটিম এর সাথে চুক্তি করেন। বায়না নামায় ২,০০,০০,০০০/-(দুই কোটি) টাকা উল্লেখ করলেও জমির মালিক আসামী মোস্তফাকে ৫০,০০,০০০/-(পঞ্চাশ লক্ষ) টাকা পরিশোধের প্রস্তাব করা হয়। তখন আসামীদের নিকট তাৎক্ষনিক ৫০,০০,০০০/-(পঞ্চাশ লক্ষ) টাকা না থাকার কারনে আসামী মাসুদর রহমান এবং জাহাঙ্গীর আলম আলোচনা করে বায়নার ৫০,০০,০০০/-(পঞ্চাশ লক্ষ) টাকার মধ্যে ভিকটিমকে ১৫,০০,০০০/-(পনের লক্ষ) টাকা দিতে বলেন। ভিকটিম আসামীদের কথায় বিশ্বাস করে লোভের বশীভূত হয়ে ১৫,০০,০০০/-(পনের লক্ষ) টাকা দিতে রাজি হয়। তারই ধারাবাহিকতায় গত ০৬/১১/২০২২খ্রিঃ পল্লবী থানাধীন ইসলামী ব্যাংক,পল্লবী শাখা হতে ১৫,০০,০০০/-(পনের লক্ষ) টাকা উত্তোলন করে আসামী মোঃ আমিনুল ইসলাম @ আমিন @ আমিনুর ছদ্মনাম জাহাঙ্গীর আলম @ বাদল এর সাথে রিক্সায় করে ঘটনাস্থল ফ্ল্যাট বাসার অফিসে যায়। অফিসে যাওয়ার পর উক্ত আসামী এবং পলাতক আসামী ২। মাসুদুর রহমান @ কামাল (৫০), ৩। মোস্তফা (৪৮) ৪। মাহবুবুর রহমান (৪০) ৫। সায়মন (৩০) আসামীরা ভিকটিমের নিকট হতে সু-কৌশলে ১৫,০০,০০০/-(পনের লক্ষ) টাকা নিয়ে যায়। পরবর্তীতে আসামীরা পুনরায় ভিকটিমকে আরো ১০,০০,০০০/-(দশ লক্ষ) টাকা দিতে বলেন। আসামীদের এহেন কার্যকলাপ ভিকটিম এর নিকট সন্দেহের কারন হয়। একপর্যায়ে ভিকটিম বিভিন্ন মাধ্যমে খোঁজ-খবর নিয়ে জানতে পারেন উল্লেখিত সকল আসামীরা প্রত্যেকেই ভিকটিম এর নিকট ছদ্ম নাম ব্যবহার করেছেন।
তখন ভিকটিমউক্ত বিষয়ে গত ০৯/১১/২০২২ খ্রিঃ, বিশেষ পুলিশ সুপার, পিবিআই ঢাকা মেট্রো (উত্তর) অফিসে লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন। উক্ত বিষয়ে অ্যাডিশনাল আইজিপি, পিবিআই জনাব বনজ কুমার মজুমদার, বিপিএম (বার), পিপিএম এর সঠিক তত্ত্বাবধান ও দিক-নির্দেশনায় এবং পিবিআই ঢাকা মেট্রো (উত্তর) এর বিশেষ পুলিশ সুপার জনাব মোঃ জাহাঙ্গীর আলম, বিপিএম-সেবা এর নিবিড় তদারকিতে পিবিআই কর্তৃপক্ষ তদন্তকরে প্রাথমিকভাবে ঘটনার সত্যতা পায়। পিবিআই ঢাকা মেট্রো (উত্তর) ঢাকার সহযোগিতায় ভিকটিম শাহজাহান বাদী হয়ে উক্ত ঘটনার বিষয়ে পল্লবী থানার মামলা নং-৩০, তারিখ-১০/১১/২০২২খ্রিঃ, ধারা-৪২০/৪০৬ পেনাল কোড দায়ের করেন। মামলার ঘটনাটি পিবিআই এর সিডিউল ভূক্ত হওয়ায় উক্ত মামলাটি পিবিআই তদন্তের দায়িত্ব নিয়ে মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা হিসাবে এসআই (নিঃ) মোঃ রবিউল ইসলামকে নিয়োগ করা হয়। পিবিআই ঢাকা মেট্রো (উত্তর) এর বিশেষ টিম কর্তৃক উক্ত প্রতারক চক্রের সক্রিয় সদস্য মোঃ আমিনুল ইসলাম @ আমিন @ আমিনুর ছদ্মনাম জাহাঙ্গীর আলম @ বাদল (৪২) কে পল্লবী থানাধীন মিরপুর-১২, ঝিলপাড়, রোড নং-২৯, বাড়ি নং-৩২, পল্লবী ঢাকাকে উক্ত মামলায় গ্রেফতার করেন এবং প্রতারণার কাজে ব্যবহৃত বিভিন্ন আলামত জব্দ করেন। গ্রেফাতরকৃত আসামী মোঃ আমিনুল ইসলাম @ আমিন @ আমিনুর ছদ্মনাম জাহাঙ্গীর আলম @ বাদল (৪২)’কে বিজ্ঞ আদালতে সোপর্দ করা হলে বিজ্ঞ আদালত আসামীকে ০২ (দুই) দিনের পুলিশ রিমান্ড মঞ্জুর করেন। গ্রেফতারকৃত আসামী প্রতারণার মামলায় পিবিআই কর্তৃক গ্রেফতার হয়ে জামিনে মুক্ত হওয়ার পর ছদ্মনাম ব্যবহার করে ভিন্ন ভিন্ন দলভূক্ত হয়ে বিভিন্ন কৌশলে মানুষকে প্রতারিত করছেন। গ্রেফতারকৃত আসামী সহ তার সহযোগী আসামীদের বিরুদ্ধে ১। উত্তরা পশ্চিম থানার মামলা নং- ৪৯, তাং-১৯/০৮/২২খ্রিঃ, ধারা-৪০৬/৪২০/৩৪ পেনাল কোড, ২। নিউমার্কেট থানার মামলা নং- ০২ তাং- ০২/১০/১৭ইং, ধারা- ৪০৬/৪২০/১০৯ পেনাল কোড, ৩। খিলগাঁও থানার মামলা নং- ১৩, তাং- ০৪/১০/১৭ইং, ধারা- ৪০৬/৪২০/১০৯ পেনাল কোড, ৪। শেরেবাংলা নগর থানার মামলা নং- ০৭ তাং- ০৭/১০/২০১৭ইং ধারা- ৪২০/৪০৬ পেনাল কোড, ৫। খিলগাঁও থানার মামলা নং- ৭৭, তাং- ২৯/০৯/১৭ইং, ধারা- ৪০৬/৪২০/১০৯ পেনাল কোড, ৬। সবুজবাগ থানার মামলা নং- ০৪ তাং- ০৪/১০/১৭ইং, ধারা- ৪০৬/ ৪২০/১০৯ পেনাল কোড, ৭। সাভার থানার মামলা নং-৩৮ তাং- ২২/১০/১৩ইং, ধারা- ৩৭৯/৪১১ পেনাল কোড মামলা আছে মর্মে জানা যায়। মামলাটির তদন্ত কার্যক্রম চলমান রয়েছে।