Home সাহিত্য ও বিনোদন মায়ের অপূর্ণ সাধ পূরণ করেছেন মেয়ে নৃত্য শিল্পী লাবণ্য ঘোষ

মায়ের অপূর্ণ সাধ পূরণ করেছেন মেয়ে নৃত্য শিল্পী লাবণ্য ঘোষ

34

ডেস্ক রিপোর্ট: মা ছোটবেলায় নাচ করতেন। কিন্তু পেশাগতভাবে কোনদিনও নাচ নিয়ে এগুনো হয়নি। মা বলতেন, মায়ের স্বপ্ন ছিল, মেয়ে হলে তাকে নাচ শেখাবেন। মায়ের অপূর্ণ সাধ পূরণ করেছেন মেয়ে। এটাই নৃত্য শিল্পী লাবণ্য ঘোষের প্রথম ও বড় পাওনা। দুই বছর বয়সী লাবণ্যকে গড়িয়াতে তাদের বাড়ির পাশে একটি নাচের স্কুলে নাচ শিখতে নিয়ে যান মা। কিন্তু বাবার কর্মস্থল বদলি হয়ে যাওয়ায় তাদের চলে যেতে হয় ভুবনেশ্বর। সেখান থেকেই তার ওড়িশি নাচ শেখার শুরু হয় গুরুমা শ্রীমতী রাজশ্রী প্রহরাজের কাছে। বাবার বদলির চাকরি হওয়ায় নানা সময়ে নানা জায়গায় থেকেছেন। কিন্তু নাচ কখনো বন্ধ হয়নি। কলকাতা আসার পর নৃত্য শিল্পী শ্রীমতি নন্দিনী ঘোষালের কাছে দীর্ঘ সাত বছর ওড়িশি শিখেন। কলকাতা ও বিভিন্ন রাজ্যের একাধিক প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করতে শুরু করেন, পুরস্কারও পান।
নৃত্য শিল্পী লাবণ্য ঘোষ খুব কম বয়সে দূরদর্শন এবং ইজেডসিসিতে এ গ্রেড আর্টিস্ট হিসেবে নির্বাচিত হন। নাচের বিভিন্ন প্রতিযোগিতায় প্রথম স্থান অধিকার করেন। বিভিন্ন অনুষ্ঠানে নিয়মিত অংশগ্রহণ করে চলেছেন। দেশে ও দেশের বাইরের প্রচুর মানুষের ভালোবাসায় পেয়েছেন।
লাবণ্য ঘোষ ১৯৯৯ সালের ২৫ মে কলকতায় জন্মগ্রহণ করেন। তার বাবা কুণাল কান্তি ঘোষ ও মা নন্দিনী ঘোষ।
লাবণ্য ঘোষ বলেন, ‘কাজের মাধ্যমে মানুষের মনে জায়গা করে নিতে চাই। অনেক বার অনেকভাবে কখনো উচ্চতা নিয়ে সমস্যা হয়েছে, কখনো আমি একক নৃত্য পরিবেশন করায় কথা শুনতে হয়েছে। আমি জেনেছি, বুঝেছি, খুব কম মানুষ তার উলটো দিকের মানুষটির মন থেকে উন্নতি চান। এমনকি অনেক তথাকথিত কাছের মানুষদের কাছ থেকেও আমাকে নানা কটু কথা শুনতে হয়েছে ছোটবেলা থেকে। এক সময় আমি সিদ্ধান্তও নিই যে, আমি নাচ করব না। কিন্তু আমার বাবা মা পাশে ছিলেন বলেই আমি আবার নিজের মনকে নাচের প্রতি স্থির করতে পেরেছি।’
লাবণ্য রবীন্দ্রভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের নৃত্য বিভাগ থেকে স্নাতক সম্পূর্ণ করেছেন এবং গুরু শ্রীমতী পৌষালি মুখার্জির তত্ত্বাবধানে শিক্ষা গ্রহণ করছেন। তিনি যুগলশ্রীমল এক্সেলেনস অ্যাওয়ার্ড পেয়েছেন পর পর দুই বার। সংযুক্তা পাণিগ্রাহী মেমোরিয়াল অ্যাওয়ার্ড, রাজ্যসঙ্গীত আকাদেমিতে পর পর দুই বার দ্বিতীয় স্থান পেয়েছেন। ওয়েস্ট বেঙ্গল স্টেট একাডেমির ডান্স ড্রামা মিউজিক ও ফাইন আর্টস আয়োজিত ট্যালেন্ট সার্চ প্রোগ্রামে প্রথম স্থান, ২০১৪ ত্রিধারা উৎসবে দ্বিতীয় স্থান, পঞ্চম বার্ষিকী কটক উৎসবে শ্রেষ্ঠ ওড়িশি নৃত্য শিল্পী মনোনিত হন। মুরারী স্মৃতি সংগীত সম্মিলনীতে প্রথম স্থান, সমগ্র ভারত নৃত্য প্রতিযোগিতা ২০১৪তে ওড়িশি নৃত্যের প্রথম স্থান, ডোভার লেন মিউজিক কনফারেন্স এর ২০১৬-১৭ দ্বিতীয় স্থান, ভারত সংস্কৃতি উৎসব ২০১৪ প্রথম স্থান, পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য সংগীত একাডেমি আয়োজিত ওড়িশি নৃত্য প্রতিযোগিতায় দ্বিতীয় স্থান পান। এক একটি প্রতিযোগিতা ও পুরস্কার তাকে এগিয়ে দিয়েছে, অনুপ্রাণিত করেছে, আত্মবিশ্বাসী করে তুলেছে।
লাবণ্য ঘোষ বলেন, ‘ভারত ছাড়াও বাংলাদেশ এবং আরো অনেক দেশের মানুষের ভালোবাসা পেয়েছি। এখন আমি নাচ শেখানো ও নৃত্য প্রদর্শনী শুরু করেছি। সকলেই সানন্দে অংশগ্রহণ করছেন। এটাই ভীষণ আনন্দের। সকলের এ ভালবাসার মান যেন রাখতে পারি, এটাই আমার প্রার্থনা। আর আমি জীবনে এমন কিছু করে যেতে চাই, যাতে আমি না থাকলেও আমার কাজটা থেকে যায়।