Home জাতীয় মানিক সাহাসহ সাংবাদিক হত্যাকাণ্ডে জড়িতদের চিহ্নিত করতে গণতদন্ত কমিশন গঠনের দাবি

মানিক সাহাসহ সাংবাদিক হত্যাকাণ্ডে জড়িতদের চিহ্নিত করতে গণতদন্ত কমিশন গঠনের দাবি

17

২০তম হত্যাবার্ষিকীর আলোচনা সভায় সাংবাদিক ও রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ

স্টাফ রিপোটার: একুশে পদকপ্রাপ্ত নির্ভীক সাংবাদিক মানিক সাহাসহ দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের সকল সাংবাদিক হত্যাকাণ্ডে জড়িতদের চিহ্নিত করতে গণতদন্ত কমিশন গঠনের দাবি জানিয়েছেন সাংবাদিক ও রাজনৈতি নেতৃবৃন্দ। তারা বলেছেন, ওই সকল পৈশাচিক হত্যাকান্ডের বিচার না হওয়ায় এবং হত্যার পরিকল্পনাকারী, পৃষ্ঠপোষক, অর্থদাতাসহ খুনিরা ধরাছোঁয়ার বাইরে থাকায় স্বাধীন সাংবাদিকতা হুমকির মুখে পড়েছে।
সোমবার জাতীয় প্রেস ক্লাবে আয়োজিত স্মৃতিচারণ সভায় এ সব কথা বলেন তারা। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিকের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সভা সঞ্চালনা করেন সাংবাদিক নিখিল চন্দ্র ভদ্র। সভায় বক্তৃতা করেন বাংলদেশের কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিবি)’র সাবেক সভাপতি মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম, জাতীয় প্রেস ক্লাবের সাবেক সভাপতি সাইফুল আলম, বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের (বিএফইউজে) সভাপতি ওমর ফারুক, জাতীয় প্রেস ক্লাবের সাধারণ সম্পাদক শ্যামল দত্ত, বাংলাদেশ সাংবাদিক কল্যাণ ট্রাস্টের এমডি সুভাষ চন্দ্র বাদল, সিপিবি সাধারণ সম্পাদক রুহিন হোসেন প্রিন্স, নিউজ ২৪-এর নির্বাহী সম্পাদক রাহুল রাহা, বিএফইউজে’র সহ-সভাপতি মধুসূদন দত্ত, যুগ্ম মহাসচিব শেখ মামুনুর রশীদ ও নির্বাহী সদস্য উম্মুল ওয়ারা সুইটি, দৈনিক পত্রদূত সম্পাদক লায়লা পারভীন সেজুতি, সাংস্কৃতিক সংগঠক পুলক রাহা, ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের (ডিইউজে) সহ-সভাপতি মানিক লাল ঘোষ ও সাংস্কৃতিক সম্পাদক সাকিলা পারভীন, আওয়ামী লীগ নেতা আ হ ম তারেক উদ্দিন, উচীচীর কোষাধ্যক্ষ বিমল মজুমদার, সাংবাদিক ভানু রঞ্জন চক্রবর্তী, আশীষ কুমার দে ও রফিকুল ইসলাম সবুজ, ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির কল্যাণ সম্পাদক তানভীর আহমেদ, বাপার যুগ্ম সম্পাদক মো. নূর আলম শেখ, সাবেক ছাত্রনেতা রফিকুল ইসলাম সুজন প্রমূখ।
সভাপতির বক্তব্যে অধ্যাপক আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিকী বলেন, মানিক সাহা নিজেও জানতেন, তিনি যেভাবে সত্যের সৈনিক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন তার উপর আক্রমণ আসবে। তবে তিনি কখনোই মৃত্যুর ভয়ে ভীত ছিলেন না। যারা মানিক সাহার মতো সাংবাদিকদের হত্যা করে তারা সত্যের শত্রু। এসব হত্যাকাণ্ডের বিচারের নামে যে প্রহসন হয়, এটা মানিক সাহার ক্ষেত্রে প্রযোজ্য। সাংবাদিক হত্যায় প্রহসনের বিচার প্রতিরোধ করতে হবে। নতুন প্রজন্মের সাংবাদিকদের সামনে সাংবাদিকদের ত্যাগ ও নিষ্ঠার ইতিহাস তুলে ধরতে প্রতিনিয়ত মানিক সাহার মতো আত্মত্যাগীদের স্মরণ করতে হবে।
সিপিবি’র সাবেক সভাপতি মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম বলেন, আইন যদি অন্যায্য হলে সুষ্ঠু বিচার অসম্ভব। মানিক সাহাসহ অনান্য সাংবাদিক হত্যাকাণ্ডের বিচারের পেছনে আইনের সীবাবদ্ধতা ও সঠিক প্রয়োগের অভাবই দায়ী। মানিক সাহা হত্যাকাণ্ডের পরিকল্পকারীদের উন্মোচন করতে একটি টাস্কফোর্স গঠনের আহ্বান জানান তিনি।
জাতীয় প্রেস ক্লাবের সাবেক সভাপতি সাইফুল আলম বলেন, বিচারহীনতার সংস্কৃতির কারণে মানিক সাহা হত্যাকাণ্ডের ন্যায় বিচার হয়নি। অথচ তিনি গণমানুষের স্বার্থে সাংবাদিকতার দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছিলেন। জঙ্গীবাদের বিরুদ্ধে তিনি আপোষহীন সাংবাদিকতা করেছেন। যুগে যুগে সাংবাদিকদের জন্য তিনি আদর্শ হয়ে থাকবেন।
বিএফইউজে’র সভাপতি ওমর ফারুক বলেন, কোন সাংবাদিক হত্যা ও নির্যাতনের হচ্ছে না। সাংবাদিক হত্যার কোন বিচার হবে না, এমনই অলিখিত নিয়ম চালু হয়েছে। অপসাংবাদিকতা ও অপসংস্কৃতিতে দেশটা ভরে গেছে। যে কারণে সুস্থ্য সাংবাদিকতা বাধাগ্রস্থ হচ্ছে। সকল সাংবাদিক হত্যাকাণ্ডের বিচারের দাবিতে জোরদার আন্দোলন গড়ে তোলার উপর গুরুত্বারোপ করেন তিনি
দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের সাংবাদিক হত্যাকান্ডের বিচারে ‘গণতদন্ত কমিশন’ গঠনের আহবান জানিয়ে সাংবাদিক শ্যামল দত্ত বলেন, মানিক সাহা আমৃত্যু জনমুখী সাংবাদিকতা করেছেন, মুক্তিযুদ্ধ ও সমতার পক্ষে আপোষহীন ছিলেন। জনমুখী সাংবাদিকতার জন্যই মৌলবাদী শক্তি তাকে হত্যা করেছে। তার হত্যাকাণ্ডের বিচারের নামে যে গোজামিলের রায় দেওয়া হয়েছে তা সকলেই প্রত্যাখ্যান করেছি। আমরা এই হত্যাকাণ্ডের পুন:তদন্ত চাই।
উল্লেখ্য, ২০০৪ সালের ১৫ জানুয়ারি দুপুরে খুলনা প্রেস ক্লাবের সামনে দুর্বৃত্তদের বোমা হামলায় মানিক সাহা নিহত হন। সভার শুরুতে তার স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে এক মিনিট নিরাবতা পালন করা হয়। এরআগে মানিক সাহার প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধা নিবেদন করা হয়।