Home জাতীয় মহাসড়কে বেপরোয়া গতি, অদক্ষ চালক বাড়াচ্ছে দুর্ঘটনা

মহাসড়কে বেপরোয়া গতি, অদক্ষ চালক বাড়াচ্ছে দুর্ঘটনা

21

ডেস্ক রিপোর্ট: বেপরোয়া গতিতে গাড়ি চালানো ক্রমেই বাড়ছে। অদক্ষ ও লাইসেন্সবিহীন চালক নিয়োগ ও নিয়ম ভঙ্গ করে ওভারলোডিং ও ওভারটেকিং করার প্রবণতা বৃদ্ধির ফলে সড়ক দুর্ঘটনা বাড়ছে। গতকাল রবিবার মাদারীপুরের শিবচর উপজেলার কুতুবপুরে এক্সপ্রেসওয়েতে বেপরোয়া গতির কারণে দুর্ঘটনায় ২০ নিহত হয়েছেন, আহত হয়েছেন ২৫ জন। এক্সপ্রেসওয়েতে দুর্ঘটনাসহ গত এক মাস ১৯ দিনে ৪৫০টি সড়ক দুর্ঘটনায় সারা দেশে ৪৯৭ জন নিহত ও আহত হয়েছেন ১ হাজারের অধিক।
বাংলাদেশ রোড ট্রান্সপোর্ট অথরিটি (বিআরটিএ) দুর্ঘটনার কথা কম বলেছে। তারা বলেছে, ফেব্রুয়ারি মাসে সারা দেশে ৩০৮টি সড়ক দুর্ঘটনায় প্রাণ হারিয়েছেন ৩০৩ জন এবং আহত হয়েছেন ৪১৬ জন যাত্রী ও পথচারী। তবে আইন করেও দূর করা যাচ্ছে না জাতীয় মহাসড়কে নসিমন, করিমন, ভটভটি, রিকশা, ব্যাটারিচালিত রিকশা, ভ্যানসহ বিভিন্ন অযান্ত্রিক যানবাহন। আর এ কারণেই বাড়ছে সড়ক দুর্ঘটনা। এক্সপ্রেসওয়েতেও দুর্ঘটনা ঘটছে। সড়ক দুর্ঘটনা অপ্রত্যাশিত হলেও তা এখন নিত্যদিনের সঙ্গী হয়ে দাঁড়িয়েছে।

যাত্রীকল্যাণ সমিতির মহাসচিব মোজাম্মেল হক বলেন, সরকারি আদেশ অমান্য করে জাতীয় ও আঞ্চলিক মহাসড়কে অবাধে চলাচল করছে ইজিবাইক, সিএনজিসহ অন্য থ্রি হুইলার। অতীতের চেয়ে এই চলাচল বেড়ে যাওয়ার কারণে অহরহ দুর্ঘটনায় মৃত্যু ও আহতের সংখ্যা লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে। এটা বন্ধ করা না গেলে সড়কে অরাজকতা কমবে না।

বুয়েটের এক্সিডেন্ট রিসার্চ ইনস্টিটিউটের সহকারী অধ্যাপক কাজী মো. সাইফুন নেওয়াজ বলেন, “সড়ক নির্মাণের পর ‘সেফটি অডিট’ করা জরুরি। আমাদের দেশে এটা করা হয় না। জাতীয় সড়ক নিরাপত্তা কাউন্সিলের ১১১টি সুপারিশ এখনো বাস্তবায়ন হয়নি। এই সুপারিশেই সড়ক মহাসড়কের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার সব ধরনের গাইডলাইন দেওয়া আছে। এই সুপারিশগুলো বাস্তবায়ন হলে সড়ক দুর্ঘটনা কমে যাবে এবং সবার নিরাপত্তা নিশ্চিত হবে। মহাসড়কে ডিজিটাল প্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমেও সড়কে সব ধরনের দুর্ঘটনা নিয়ন্ত্রণে আনা সম্ভব।”
বাংলাদেশ যাত্রীকল্যাণ সমিতির দুর্ঘটনা মনিটরিং সেলে বলা হয়েছে, গত এক মাস ১৯ দিনে সারা দেশে মোট ৪৫০টি সড়ক দুর্ঘটনা ঘটেছে। প্রাণঘাতি এসব দুর্ঘটনায় ৪৯৬ জন নিহত ও হাজারেও অধিক আহত হয়েছেন।

এছাড়াও সড়ক দুর্ঘটনার জন্য দায়ী কয়েকটি কারণ খুঁজতে গেলে যেগুলো পাওয়া যাবে তাহলো, সোজা রাস্তা ও ডিভাইডার না থাকা, পুরোনো ও ক্রুটিপূর্ণ যানবাহন, ভালো সড়কের অভাব, ড্রাইভিং পেশার উত্কর্ষহীনতা, পুরোনো ট্রাফিক সিগন্যাল ব্যবস্থা, বিকল্প যানবাহনের সুবিধা পর্যাপ্ত না থাকা, চালকের অদক্ষতা ও বেপরোয়া মনোভাব, মাদক সেবন করে যানবাহন চালানো, রাস্তায় ফুটপাত না থাকা বা ফুটপাত বেদখলে থাকা, ট্রাফিক আইনের দুর্বল প্রয়োগ ও ট্রাফিক আইন অমান্য করা, ছোট যানবাহনের ব্যাপক বৃদ্ধি, রাস্তার পাশে হাট-বাজার, ত্রুটিপূর্ণ যানবাহন রাস্তায় নামানো, চালকের নিয়োগ ও কর্মঘণ্টা সুনির্দিষ্ট না থাকা। যুগোপযোগী আইন প্রণয়ন ও প্রয়োগের অভাবতো রয়েছেই।

এ বিষয়ে সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেছেন, সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয় থেকে ঝুঁকিপূর্ণ ১৪৪টি স্পট নির্ধারণ করা হয়েছে। এসব স্পট সংস্কারের জন্য একটি প্রকল্পের অধীনে ১৬৫ কোটি টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়েছে বলে মন্ত্রী জানান।

বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় (বুয়েট) ১২৬টি দুর্ঘটনাপ্রবণ বাঁক চিহ্নিত করে এবং নতুন করে ১৮টি বাঁক প্রকল্পে যুক্ত করা হয়। একই প্রকল্পের আওতায় পথচারীদের ক্রসিংয়ের উন্নয়ন, মহাসড়কগুলোকে নিরাপদ করতে ইন্টারসেকশন উন্নয়ন, বাঁক সরলীকরণ, ঝুঁকিপূর্ণ স্থান সংস্কার, সিগন্যালিং, রোড মার্কিং স্থাপন, সাইন সিগন্যাল, দৃষ্টি প্রতিবন্ধকতা অপসারণ করা হবে।

বিআরটিএ এর তথ্য মতে, রাজধানীতে মোটরসাইকেল বাদে যানবাহন রয়েছে ৫ লাখের বেশি। বিশাল সংখ্যাক এই পরিবহনের ফিটনেস পরীক্ষার জন্য মাত্র ১ জন উপপরিচালক ১১ জন কর্মকর্তা নিয়ে কাজ করছেন। ফলে প্রকৃতপক্ষে ফিটনেস যাচাই করা সম্ভব হয় না। তাছাড়া অর্থের বিনিময়ে ফিটনেস সার্টিফিকেট দেওয়ার অভিযোগ দীর্ঘদিনের।
ইত্তেফাক