Home বাণিজ্য ও অর্থনীতি ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় ৭০০ কোটি টাকার কোরবানির পশু বিক্রির আশা

ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় ৭০০ কোটি টাকার কোরবানির পশু বিক্রির আশা

35

ব্রাহ্মণবাড়িয়া প্রতিনিধি : ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় এবার ৭০০ কোটি টাকার কোরবানির পশু বিক্রির আশা। গেল দুই বছরের করোনার করাঘাতে যে সংকটে পড়েছিলেন তা এখনও কাটিয়ে উঠতে পারেনি ব্রাহ্মণবাড়িয়ার খামারিরা। এর মধ্যে গোখাদ্যের মূল্যবৃদ্ধি তাদের জন্য ‘মড়ার ওপর খাঁড়ার ঘা’ হয়ে দাঁড়িয়েছে। এতে অনেক খামারি গবাদি পশু পালন থেকে মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছেন।

প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের তথ্য মতে, জেলার খামারগুলোতে কোরবানি যোগ্য যে পরিমাণ গরু, মহিষ ও ছাগল প্রস্তুত আছে, তা চাহিদার তুলনায় প্রায় ৫৯ হাজার কম। আসন্ন ঈদুল আজহা উপলক্ষে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার কোরবানির পশুর হাটগুলোতে অন্তত ৭০০ কোটি টাকার পশু বেচাকেনা হবে বলে আশা করছেন সংশ্লিষ্টরা।

সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলায় খামারি আছেন ১২ হাজার ৪০০ জন। খামারগুলোতে দেশি, শাহিওয়াল ও ফ্রিজিয়ানসহ বিভিন্ন জাতের গরু লালন-পালন করা হচ্ছে। মূলত যার গোয়ালে অন্তত ৫টি গরু-মহিষ আছে, তাকেই খামারি হিসেবে বিবেচনা করা হয়।

গত দুই বছর করোনা মহামারির কারণে প্রত্যেক খামারি কয়েক লাখ টাকা করে লোকসান গুনেছেন। এবার করোনা পরিস্থিতি স্বাভাবিক হওয়ায় সেই লোকসান কিছুটা পুষিয়ে নেওয়ার চিন্তা করেছিলেন তারা। তবে গোখাদ্যের দাম বেড়ে যাওয়ায় বিপাকে পড়েছেন তারা। এতে করে গবাদিপশু পালনে খরচ বেড়েছে। তবে গোখাদ্যের দাম বাড়লেও দুধের দাম না বাড়ায় হতাশ খামারিরা।

কয়েকজন খামারির সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, মাস তিনেক আগেও প্রতি বস্তা (৪০ কেজি) ভূসির মূল্য ছিল ১৩০০-১৪০০ টাকা। এখন সেই ভূসি কিনতে হচ্ছে ১৭৫০-১৮০০ টাকা দিয়ে। আর খৈল প্রতি বস্তার (৪০ কেজি) বাজারদর আগে ছিল ১৪০০-১৫০০ টাকা। এখন খৈলের বস্তার দাম ২০০০ টাকা। এছাড়া ধানের গুড়ার দাম দ্বিগুণ হয়েছে।

তবে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার খামারগুলো থেকে প্রতি লিটার গরুর দুধ এখনও ৫৫-৬০ টাকা দামেই বিক্রি হচ্ছে। এসব দুধের বেশিরভাগই যায় জেলার মিষ্টান্নের দোকানগুলোতে। সব মিলিয়ে খরচ বাড়লেও গবাদিপশু পালন করে খুব একটা লাভবান হতে পারছেন না খামারিরা। আর তাই পশু উৎপাদনও খুব একটা বাড়েনি। এতে করে এবার পশুর হাটগুলোতে চাহিদার তুলনায় কিছুটা সংকট দেখা দিতে পারে। আর এ সংকটের কারণে হাটে ছোট গরুর দাম স্বাভাবিকের চেয়ে ৫-১০ হাজার, মাঝারি গরু ১০-১২ হাজার এবং বড় গরুর দাম ১০-১৫ হাজার টাকা বাড়তে পারে বলে জানিয়েছেন খামারিরা।

জেলা প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের দেওয়া তথ্য মতে, এ বছর জেলায় কোরবানির পশুর চাহিদা আছে ১ লাখ ৭০ হাজার ৫২০টি। এর মধ্যে জেলার খামারগুলোতে প্রস্তুত আছে ১ লাখ ১১ হাজার ৬১৭টি গরু, মহিষ ও ছাগল। এর ফলে এবার ৫৮ হাজার ৯০৩টি কোরবানিযোগ্য পশুর ঘাটতি রয়েছে। গত বছরের চাহিদা বিবেচনায় এ বছরের চাহিদা নির্ধারণ করেছে প্রাণিসম্পদ বিভাগ।

ব্রাহ্মণবাড়িয়ার স্বপ্ন ডেইরি অ্যান্ড অ্যাগ্রো ফার্মের পরিচালক ওয়ালিউল্লাহ সরকার জানান, তাদের খামারে এবার কোরবানি উপযুক্ত ৩০টি গরু আছে। এর সবগুলো দেশি ও শাহিওয়াল জাতের। এবার হাটে গত বছরের তুলনায় গরুর দাম কিছুটা বাড়বে। কারণ গোখাদ্যের দাম বেড়েছে। এছাড়া করোনার কারণে প্রত্যেক খামারি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন।

আরেক খামারি আব্দুল হাই জানান, গোখাদ্যের দাম হু হু করে বাড়ছে। এতে করে গরু পালনে খরচও বাড়ছে। এভাবে চলতে থাকলে গরুর ফার্মগুলো টিকে থাকা দায় হয়ে পড়বে। এ খাতকে বাঁচিয়ে রাখতে সরকারি সহায়তা প্রয়োজন। অন্যথায় অনেক খামার বন্ধ হয়ে যাবে। তখন সংকট আরও তীব্র হবে।

ব্রাহ্মণবাড়িয়া ডেইরি ফারমার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি সাইফুদ্দিন খান শুভ্র বলেন, ‘সব কিছুর দাম বাড়লেও দুধের দাম বাড়েনি। মিষ্টান্ন ব্যবসায়ীদের সঙ্গে আলোচনা করেও কোনো সুরাহা হয়নি। এর মধ্যে গোখাদ্যের মূল্যবৃদ্ধি আমাদের জন্য ‘মড়ার ওপর খাঁড়ার ঘা’ হয়ে দাঁড়িয়েছে। এবার যদি ভারতীয় গরু আমদানি হয়, তাহলে আমরা নির্ঘাত মারা পড়ব।
জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. এ. বি. এম. সাইফুজ্জামান বলেন, ‘গোখাদ্যের দাম বাড়ায় গবাদিপশুকে খড় খাওয়ানোর ওপর নির্ভর হওয়ার জন্য আমরা খামারিদের উৎসাহিত করছি। এতে করে তাদের খরচও কমে আসবে। তবে আমাদের হিসেবে এখন পর্যন্ত পশুর যে ঘাটতি আছে, সেটি হয়তো ঈদ আসার আগেই পূরণ হয়ে যাবে। কারণ পশুর হাটগুলোতে দেশের অন্য জেলা থেকেও পশু আসবে। এবার অন্তত ৭০০ কোটি টাকার পশু বেচাকেনা হবে বলে আমরা আশা করছি। তবে টাকার পরিমাণ আরও বাড়তে পারে।