Home স্বাস্থ্য বিশ্ব মানসিক স্বাস্থ্য দিবস উদযাপন করল ঢাকা সিএমএইচ

বিশ্ব মানসিক স্বাস্থ্য দিবস উদযাপন করল ঢাকা সিএমএইচ

69

স্টাফ রিপোটার: আজ ১৮ অক্টোবর সোমবার সকালে ঢাকা ক্যান্টনমেন্টর এএফএমআই অডিটোরিয়ামে বিশ্ব মানসিক স্বাস্থ্য দিবস ২০২১ উপলক্ষে এক আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়। সামরিক চিকিৎসা সার্ভিস মহাপরিদপ্তরের মহাপরিচালক মেজর জেনারেল ডা. মো. মাহবুবুর রহমানের সভাপতিত্বে আলোচনা সভায় প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর চিফ অব জেনারেল স্টাফ লেফটেন্যান্ট জেনারেল আতাউল হাকিম সারওয়ার হাসান। বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন মেজর জেনারেল মো. জহিরুল ইসলাম, মেজর জেনারেল ডা. মো. আজিজুল ইসলাম প্রমুখ।

হেলথকেয়ার ফার্মাসিটিক্যালস লিমিটেড এর পৃষ্ঠপোষকতায় অনুষ্ঠানে প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন ঢাকা সিএমএইচ এর মানসিকরোগ বিভাগের উপদেষ্টা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল ডা. মো. কামরুল হাসান। ব্রিগেডিয়ার জেনারেল ডা. মো. কামরুল হাসান তাঁর প্রেজেন্টেশনে উল্লেখ করেন এ বছর দিবসটির প্রতিপাদ্য ছিল ‘অসম বিশ্বে মানসিক স্বাস্থ্য”। মানসিক স্বাস্থ্য বিষয়ে সচেতনতা বৃদ্ধির জন্য প্রতিবছর ১০ অক্টোবর নানান আয়োজনের মধ্য দিয়ে সারা বিশ্বে এই দিবসটি পালন করা হয়। ১৯৯২ সাল থেকে পৃথিবীব্যাপী বিশ্ব মানসিক স্বাস্থ্য দিবস উদযাপন হয়ে আসছে। বিশ্বের অন্যান্য দেশের ন্যায় বাংলাদেশেও দিবসটি খুব গুরুত্বের সাথে পালিত হয়ে আসছে।

তিনি বলেন, মানসিক স্বাস্থ্যে মর্যাদাবোধ বিষয়টি শুধুমাত্র রোগ নির্ণয় থেকে শুরু করে চিকিৎসা, পুনর্বাসন ও নিরাময় প্রক্রিয়ার মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়, এর অর্থ ব্যাপক। মানসিক রোগীর ক্ষেত্রে শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন ও বিশেষ ক্ষেত্রে ব্যতীত জোরপূর্বক আটকে রাখা মর্যাদাহানি, নিম্নমানের সেবা, সঠিক সময়ে চিকিৎসা যা পাওয়া এসব বিষয় মর্যাদার সংঙ্গে জড়িত। এ বিষয়টি খেয়াল করে মানসিক রোগে আক্রান্ত ব্যক্তির দ্রুত রোগ নির্ণয় করে তাকে বিজ্ঞানসম্মত চিকিৎসা ও পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করা আমাদের নৈতিক ও সামাজিক দায়িত্ব।

তিনি আরও বলেন, সারাদেশে সরকারি ও বেসরকারি উদ্যোগে দিনটি পালন করা হয়েছে। তবুও সঠিক ব্যবস্থা নেওয়ার ঘাটতি থেকেই যাচ্ছে। মানসিক স্বাস্থ্য আজও অবহেলিত। তাই সবার উচিত নিজের মনের যত্ন নেওয়া, অন্যের মনের যত্ন নেওয়া। সমস্যা হলে চিকিৎসক কিংবা মনোবিজ্ঞানীদের সঙ্গে পরামর্শ করা। যেকোনো মানসিক সমস্যায় দ্রুত চিকিৎসা গ্রহণ করলে অনেকাংশেই সুস্থ থাকা সম্ভব। নিজে ও আশপাশের মানুষদের নিয়ে সচেতন থাকতে হবে।

প্রধান অতিথির বক্তব্যে লেফটেন্যান্ট জেনারেল আতাউল হাকিম সারওয়ার হাসান বলেন- স্বাস্থ্যসেবা প্রতিটি মানুষের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ মৌলিক অধিকার। মানসিক স্বাস্থ্যসেবার উন্নয়ন ছাড়া সামগ্রিক স্বাস্থ্য ব্যবস্থার পূর্ণাঙ্গ উন্নয়ন কল্পনা করা যায় না। তাই মানসিক স্বাস্থ্যের প্রতি যথাযথ গুরুত্ব দেয়া এখন সময়ের দাবি।

তিনি বলেন, মানসিক রোগ নিয়ে এদেশের মানুষের মধ্যে অনেক অন্ধবিশ্বাস, কুসংস্কার ও ভ্রান্ত ধারণা রয়েছে। তাই চিকিৎসার পাশাপাশি মানসিক রোগীকে পারিবারিক ও সামাজিক সমর্থন প্রদান খুবই জরুরি। একই সাথে ঝাড়ফুঁক বা অবৈজ্ঞানিক চিকিৎসা পদ্ধতি পরিহারে জনগণের মাঝে সচেতনতা সৃষ্টি করতে হবে।

তিনি আরও বলেন, মানসিক স্বাস্থ্যসেবাকে জনগণের দোরগোড়ায় পৌঁছে দিতে সরকারের পাশাপাশি সেনাবাহিনী ও সংশ্লিষ্ট সংস্থা ও প্রতিষ্ঠানকে এগিয়ে আসতে হবে।

বিশেষ অতিথি মেজর জেনারেল মো. জহিরুল ইসলাম বলেন, নানা গবেষণায় দেখা গেছে, আমাদের দেশে প্রাপ্তবয়স্ক জনগোষ্ঠীর শতকরা ১৬ ভাগ ও শিশু কিশোরদের শতকরা ১৩ ভাগ মানসিক স্বাস্থ্য সমস্যায় ভুগছে। বিপুল এই জনগোষ্ঠীর একটি বিরাট অংশ অনেক সময় প্রচলিত ভ্রান্ত ধারনা, কুসংস্কার ও চিকিৎসা প্রাপ্তির সুযোগ থেকে বঞ্চিত হয়। এতে কর্মক্ষমতা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে যা জাতীয় অগ্রগতির উন্নয়নের পথে বড় বাধা। মানসিক রোগে আক্রান্ত বেশিরভাগ ক্ষেত্রে ব্যক্তিগত, পারিবারিক ও সামাজিক অবহেলা ও বৈষম্যের শিকার। এর প্রধান কারণ মানসিক স্বাস্থ্য রোগ ও এর চিকিৎসার প্রতি জনগণের নেতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি। মানসিক রোগ ও এর চিকিৎসা সংশ্লিষ্ট বিষয়ে সমাজে মর্যাদাবোধের অভাব লক্ষ্য করা যায়। এজন্য অনেকে মানসিক রোগের চিকিৎসা নেওয়াকে সামাজিকভাবে লজ্জাকর মনে করেন, যেটি শারীরিক রোগের ক্ষেত্রে দেখা যায় না। কিছু সেবা প্রাপ্তির ক্ষেত্রেও অনেক সময় রোগী ও পারিবারের সদস্যগণ খারাপ আচরণের শিকার হন। এজন্য পারিবারিক শ্রদ্ধাবোধ বজায় রাখা জরুরি।

আলোচকবৃন্দ উল্লেখ করেন, করোনাকালে সাধারণ মানুষের পাশাপাশি সেনাবাহিনী সদস্যরাও মানসিক সমস্যায় ভুগছে।

সভাপতির বক্তব্যে সামরিক চিকিৎসা সার্ভিস মহাপরিদপ্তরের মহাপরিচালক মেজর জেনারেল ডা. মো. মাহবুবুর রহমান স্পন্সর প্রদানকারী প্রতিষ্ঠান, উপস্থিত অডিয়েন্স, গণমাধ্যম কর্মী এবং আমন্ত্রিত অতিথিদেরকে ধন্যবাদ জানিয়ে বলেন- মানসিক স্বাস্থ্য সেবার উন্নয়নে, জনসচেতনতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে মনোরোগ বিভাগ, ঢাকা সিএমএইচ সবসময় কাজ করে যাবে। তিনি আরও বলেন, মানসিক স্বাস্থ্যকে গুরুত্বের সাথে বিবেচনা করে এ বিষয়ক সমস্যা সম্পর্কে সচেতনতা বৃদ্ধির জন্য ব্যবস্থা নেয়ার উদাত্ত আহ্বান জানিয়ে অনুষ্ঠানের কার্যক্রম শেষ করেন।