Home স্বাস্থ্য বিএসএমএমইউ প্রথমবারের মতো টেস্টটিউব বেবির সফল জন্ম

বিএসএমএমইউ প্রথমবারের মতো টেস্টটিউব বেবির সফল জন্ম

39

নতুন নতুন চিকিৎসা পদ্ধতি ও সেবা ব্যাপকভাবে বৃদ্ধি করা হবে: উপাচার্য

স্টাফ রিপোটার: বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ে (বিএসএমএমইউ) বন্ধ্যাত্ব চিকিৎসায় যুগান্তকারী সাফল্যের অংশ হিসেবে প্রথম টেস্টটিউব বেবির জন্ম উপলক্ষে বিশেষ অনুষ্ঠান ও সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়েছে। বুধবার সকালে ১লা নভেম্বর ২০২৩ইং তারিখে শহীদ ডা. মিল্টন হলে রিপ্রোডাকটিভ এন্ডোক্রাইনোলজি এন্ড ইনফার্টিলিটি বিভাগের উদ্যোগে আয়োজিত অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের মাননীয় উপাচার্য অধ্যাপক ডা. মোঃ শারফুদ্দিন আহমেদ। অনুষ্ঠানে বিস্তারিত বক্তব্য রাখেন রিপ্রোডাকটিভ এন্ডোক্রাইনোলজি এন্ড ইনফার্টিলিটি বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডা. জেসমিন বানু। অনুষ্ঠানে জানানো হয়, প্রথম টেস্টটিউব বেবির নাম রাখা হয়েছে দানিয়া, যার অর্থ মহান আল্লাহর দান বা উপহার।
সংবাদ সম্মেলন ও বিশেষ অনুষ্ঠানে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের মাননীয় উপাচার্য অধ্যাপক ডা. মোঃ শারফুদ্দিন আহমেদ বলেন, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ে সফলভাবে ক্যাডাভেরিক ট্রান্সপ্ল্যান্ট, লিভার ট্রান্সপ্ল্যান্ট সম্পন্ন হয়েছে। কিডনী প্রতিস্থাপনে সক্ষমতা বহুগুণ বৃদ্ধি পেয়েছে। প্রথম টেস্টটিউব বেবির সফল জন্ম হয়েছে। বঙ্গবন্ধু শেখ মুিিজব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ে লেটেস্ট সব চিকিৎসাসেবা দেয়া হচ্ছে। এই বিশ্ববিদ্যালয়ে আরো নতুন নতুন গবেষণা করা হবে। প্রতিটি বিভাগে নতুন নতুন বিষয় সংযুক্ত করা হবে। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ^বিদ্যালয়ের নতুন নতুন চিকিৎসা পদ্ধতি ও সেবা ব্যাপকভাবে বৃদ্ধি করা হবে। যাতে দেশের রোগীদেরকে চিকিৎসাসেবার জন্য বাইরে যেতে না হয়।

রিপ্রোডাকটিভ এন্ডোক্রাইনোলজি এন্ড ইনফার্টিলিটি বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডা. জেসমিন বানু বলেন, মাতৃত্বের স্বাদ গ্রহণ প্রত্যেক নারীর জীবনের সব থেকে বড় পাওয়া। ‘মাতৃত্বের অনুভূতি হলো, পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ অনুভূতি। আর মাতৃত্বের সুখ হলো, পার্থিব সমস্ত সুখের শ্রেষ্ঠ’। তবে নানা কারণে এই সুখের অনুভূতি থেকে বঞ্চিত হন নারীরা। নিজের অজান্তেই প্রজননের সক্ষমতা হারান তারা। তবে শঙ্কার বিষয় হলো বেশিরভাগ মানুষেরই আইভিএফ পদ্ধতি সম্পর্কে সুস্পষ্ট ধারণা নেই। ফলে অজ্ঞতা ও সচেতনতার অভাবে অনেক দম্পতি নিজের অজান্তেই তাদের প্রজনন ক্ষমতা চিরদিনের মতো হারিয়ে ফেলছেন। অথচ সঠিক সময়ে চিকিৎসা গ্রহণ করলে অনেকাংশেই এসব সমস্যা থেকে মুক্তি পাওয়া সম্ভব। সাধারণত বন্ধ্যাত্বের চিকিৎসায় শতকরা ৫-১০ শতাংশ রোগীদের আইভিএফ পদ্ধতির প্রয়োজন হয়।

উল্লেখ্য, বরিশালের বাসিন্দা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাসে প্রথম টেস্টটিউব বেবির জন্ম দেয়া নিঃসন্তান দম্পতি দীর্ঘ ১৩ বছর যাবত বন্ধ্যাত্ব সমস্যায় ভুগছিলেন। পরবর্তীতে ৮ বছর আগে দম্পতির রোগটি ডায়াগোনোসিস হয়। এ দম্পতি বিভিন্ন জায়গায় বন্ধ্যাত্ব সমস্যা নিরসনে চিকিৎসা গ্রহণ করলেও কোন সফলতা বা তারা ইন ভিট্রো ফার্টিলাইজেশন (আইভিএফ) এর সুপরামর্শও পাননি। অতঃপর ২০২২ সালে এই দম্পতি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ^বিদ্যালয়ের ইনফার্টিলিটি বিভাগে চিকিৎসা শুরু করেন। পরিপূর্ণ ইভাউলিউশন শেষে এই বিভাগ তাকে আইভিএফ উইথ আইসিএসআই (ইন্ট্রা সাইটোপ্লাজমিক স্পার্ম ইনজেকশন) এর পরামর্শ প্রদান করে ও আইভিএফ পদ্ধতির চিকিৎসা শুরু হয়। আইসিএসআই হলো ডিমের সাইটোপ্লাজমে শুক্রাণু কোষকে ইনজেকশন দেওয়ার একটি কৌশল। এই কৌশলটি আইভিএফের একটি বিশেষ রূপ যা পুরুষ-ফ্যাক্টর বন্ধ্যাত্বের গুরুতর ক্ষেত্রে চিকিৎসার জন্য ব্যবহৃত হয়। পরবর্তীতে স্টেম সেল থেরাপি গ্রহণের মাধ্যমে তারা তাদের চিকিৎসা শুরু হয়। যথাযথ চিকিৎসা শেষে গত ফেব্রুয়ারী ২০২৩ এই নবজাতকের মা গর্ভধারণ করেন এবং নিয়মিত চেকআপে থাকেন। ৩৮ সপ্তাহের পর সুদীর্ঘ প্রতীক্ষা শেষে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ^বিদ্যালয়ের ইতিহাসে সফলতার নিদর্শন স্বরূপ আজকে ২৫ অক্টোবর সকাল সাড়ে ৯টায় এ টেস্টটিউব নবজাতকের জন্ম হয়।

অনুষ্ঠানে আরো জানানো হয়, ২০০৩ সালের ডিসেম্বর থেকে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ^বিদ্যালয়ে ইনফার্টিলিটি বিভাগ চালু হয়। তবে ২০১৯ সাল হতে অধ্যাপক ডা. জেসমিন বানুর তত্ত্বাবধানে টেস্টটিউব বেবির আইভিএফ পদ্ধতি চালু হয়। করোনাকালীন সময়ে এই সেবা কিছুটা স্থগিত থাকে। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের মাননীয় উপাচার্য অধ্যাপক ডা. মোঃ শারফুদ্দিন আহমেদ দায়িত্বগ্রহণের পরপর ২০২২ সালে পুনরায় আইভিএফ পদ্ধতি চালুর জন্য ব্যাপক উদ্যোগ নেন। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ^বিদ্যালয়ের রিপ্রোডাক্টিভ এন্ডোক্রাইন এন্ড ইনফার্টিলিটি বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডা. জেসমিন বানুর নেতৃত্বে বন্ধ্যাত্বের সর্বাধুনিক চিকিৎসা স্টেম সেল থেরাপি, পিআরপি থেরাপী, রিকনস্ট্রাকটিভ সার্জারি, এআরটি, আইইউআই, আইভিএফ সেবা প্রদান করে আসছে।