Home রাজনীতি বিএনপির সাংগঠনিক কার্যক্রম বিপর্যস্ত

বিএনপির সাংগঠনিক কার্যক্রম বিপর্যস্ত

34

ডেস্ক রিপোর্ট: করোনায় বিপর্যস্ত বিএনপির সাংগঠনিক কার্যক্রম। গত বছর মার্চে এই মহামারি শুরু হওয়ার পর পর্যায়ক্রমে ছয়বার সাংগঠনিক কর্মকাণ্ড স্থগিত করেছে দল। চার মাস ধরে এখনো স্থগিত। যে কারণে একাদশ সংসদ নির্বাচনের পর দ্রুত সময়ে মেয়াদোত্তীর্ণ সব জেলা কমিটি পুনর্গঠনের সিদ্ধান্ত থাকলেও তা করা সম্ভব হয়নি। গত ১৭ মাসে মাত্র ১৪টি সাংগঠনিক জেলার কমিটি গঠন করা গেছে। বন্ধ রয়েছে রাজনৈতিক কর্মসূচিও। এখন ভার্চুয়াল আলোচনায়ই সীমাবদ্ধ দলের রাজনীতি।

কেন্দ্রীয় নেতাদের দাবি, করোনায় সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বিএনপি। বিরোধী দলের নেতাকর্মীদের চাঙ্গা রাখার কৌশলই হচ্ছে রাজনৈতিক কর্মসূচি নিয়ে মাঠে থাকা, যা এখন পুরোপুরি বন্ধ। দল পুনর্গঠনের কাজেও স্থবিরতা দেখা দিয়েছে। জেলা কমিটি ঘোষণা দিলেও করোনার কারণে দায়িত্বশীল নেতারা থানা, উপজেলা, ইউনিয়ন পর্যায়ের কমিটি করতে পারছে না। এছাড়াও দলের বহু নেতাকর্মী করোনায় আক্রান্ত। দেশে করোনা শনাক্তের পর ১৫ জুলাই পর্যন্ত সারা দেশে ৭০৯ নেতাকর্মীর মৃত্যু হয়েছে।

জানতে চাইলে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, করোনার কারণে দল সাংগঠনিকভাবে কিছুটা ক্ষতিগ্রস্ত তো হচ্ছেই। দলের পুনর্গঠনের কাজ চলছিল, সেখানে ক্ষতি হয়েছে। এর মধ্যেই যতটুকু পারা যায় সীমিত আকারে পুনর্গঠনের কাজ করা হচ্ছে। ঢাকা মহানগরের কমিটি দেওয়া হয়েছে, তারা কাজ শুরু করেছেন। অন্যান্য মেয়াদোত্তীর্ণ মহানগর কমিটি পুনর্গঠনের কাজও চলছে।

সারা দেশে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ বাড়তে থাকায় নেতাকর্মীদের সমাগম ঘটে এমন রাজনৈতিক ও সাংগঠনিক কার্যক্রম গত এপ্রিল থেকে স্থগিত রয়েছে। এই সময়ে মোবাইল ফোন, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম, অ্যাপসের মাধ্যমে নেতাকর্মীদের মধ্যে যোগাযোগ রক্ষা করার কথা তখন এক বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়। বিএনপির দপ্তরের দায়িত্বে থাকা সাংগঠনিক সম্পাদক সৈয়দ এমরান সালেহ প্রিন্স যুগান্তরকে বলেন, নেতা-কর্মী-সমর্থকদের সমাগম ঘটে বিএনপির এ ধরনের রাজনৈতিক ও সাংগঠনিক কার্যক্রম এখনো স্থগিত আছে। ভার্চুয়ালি আমরা বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করছি। গত জুনে অন্তত ৭৩টি সাংগঠনিক জেলার নেতাকর্মীদের সঙ্গে ভার্চুয়ালি সভাও হয়েছে।

সূত্র বলছে, একাদশ সংসদ নির্বাচনের পর দলকে গতিশীল ও শক্তিশালী করতে পুনর্গঠনের সিদ্ধান্ত নেয় বিএনপি। শুরুতে মেয়াদোত্তীর্ণ সাংগঠনিক জেলা পুনর্গঠনের কাজে হাত দেয় দল। এ সময় বেশ কয়েকটি জেলা কমিটি ভেঙে নতুন নেতৃত্ব আনা হয়। গত বছর মার্চে দেশে করোনা প্রকোপ শুরু হলে পুনর্গঠনের কাজ অনেকটা থমকে যায়। গত ১৭ মাসে নারায়ণগঞ্জ জেলা, ঝালকাঠি, জয়পুরহাট, পটুয়াখালী, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, চট্টগ্রাম মহানগর ও উত্তর, ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ, গাজীপুর মহানগরসহ মাত্র ১৪ টি সাংগঠনিক জেলার কমিটি দেওয়া হয়েছে।

যদিও সাংগঠনিক কাজ না থাকলেও করোনাকালে দলটির নেতাকর্মীরা অসহায় ও দুস্থ মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছে। দলের দপ্তর থেকে পাওয়া তথ্যমতে, গত বছর মার্চে করোনা শুরুর পর থেকে জুন পর্যন্ত সারা দেশে বিএনপির নেতারা ৫৪ লাখ ১২ হাজার ৪১৬ পরিবারকে সহযোগিতা করেছেন। এর আওতায় ২ কোটি ১৬ লাখ ৪৯ হাজার ৬৬৪ জন মানুষ উপকৃত হয়েছেন। এছাড়া ড্যাব, জিয়াউর রহমান ফাউন্ডেশন ও দলের নেতারা কয়েক লাখ মাস্ক, হ্যান্ড স্যানিটাইজার, সাবান ও পিপিই বিতরণ করেছেন। এসব কার্যক্রম অব্যাহত রয়েছে। দলের ৬০ জেলা কার্যালয়ে করোনা হেলপ সেন্টার চালু করা হয়। কোথাও উপজেলা পর্যায়েও এটি চালু করা হয়েছে। যেখানে দলীয় নেতাকর্মী ও অসহায় মানুষকে ফ্রি চিকিৎসার পাশাপাশি ওষুধ ও অক্সিজেন সেবা দেওয়া হচ্ছে।

বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, করোনা সর্বগ্রাসী একটা ভয়াবহ মহামারি। দায়িত্বশীল রাজনৈতিক দল হিসাবে আমরা সাধ্যমতো মানুষের পাশে দাঁড়ানোর চেষ্টা করছি। গত বছর করোনা শুরুর পর থেকেই দলের নেতাকর্মীরা অসহায় ও দুস্থ মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছেন। এই কার্যক্রম অব্যাহত আছে।

দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেন, আমরা যে কাজগুলো করছি, এগুলো করার কথা ছিল সরকারের। এর পরও বৃহৎ রাজনৈতিক দল হিসাবে তো বসে থাকতে পারি না। দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের নির্দেশনা অনুযায়ী বঞ্চিত মানুষের চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। ডক্টরস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ড্যাব) এবং জিয়াউর রহমান ফাউন্ডেশন যৌথভাবে হটলাইনে রোগীদের চিকিৎসা ও পরামর্শ দিচ্ছে।

এদিকে বিএনপির কেন্দ্রীয় সহ-দপ্তর সম্পাদক তাইফুল ইসলাম টিপু জানান, চলতি বছরের ১৪ মে থেকে ১৫ জুলাই পর্যন্ত এই দুই মাসে করোনায় মারা গেছেন দলের ২৮৩ নেতাকর্মী। আর দেশে করোনা শনাক্তের পর ১৫ জুলাই পর্যন্ত সারা দেশে ৭০৯ নেতাকর্মী মারা গেছেন। এর মধ্যে ১৯ জন কেন্দ্রীয় পর্যায়ের নেতা রয়েছেন।

বিএনপির করোনা পর্যবেক্ষণ জাতীয় কমিটির আহ্বায়ক ও স্থায়ী কমিটির সদস্য ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু বলেন, করোনাভাইরাসে দলের যেসব নেতাকর্মী মারা যাচ্ছেন, তাদের পরিবারকে দলীয় তহবিল থেকে যতটুকু সম্ভব আর্থিক অনুদান দেওয়া হচ্ছে। এছাড়া পরিবারগুলোকে দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের পক্ষ থেকে ঈদ উপহারও দেওয়া হয়েছে। তবে যারা আক্রান্ত হচ্ছেন, তাদের চিকিৎসার ওপর জোর দেওয়া হচ্ছে।-যুগান্তর