Home রাজনীতি বিএনপির ঢাকা বিভাগীয় গণ-সমাবেশ আগামীকাল গোলাপবাগ মাঠে অনুষ্ঠিত হবে: খন্দকার মোশাররফ

বিএনপির ঢাকা বিভাগীয় গণ-সমাবেশ আগামীকাল গোলাপবাগ মাঠে অনুষ্ঠিত হবে: খন্দকার মোশাররফ

32

স্টাফ রিপোটার: বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেছেন, আজ দুপুরে আমাদের একটি প্রতিনিধি দল ডিএমপি কমিশনার বরাবরে গোলাপবাগ মাঠে ঢাকা বিভাগীয় গণ-সমাবেশ অনুষ্ঠানের জন্য পত্র প্রেরণ করে। কিছুক্ষণ আগে আমাদের চাহিদা মোতাবেক গোলাপবাগ মাঠে ঢাকা বিভাগীয় গণ-সমাবেশের জন্য পুলিশ সম্মতি দেয়। অতএব ঢাকা বিভাগীয় গণ-সমাবেশ আগামীকাল ১০ ডিসেম্বর শনিবার, ঢাকা মহানগরীর গোলাপবাগ মাঠে অনুষ্ঠিত হবে।

আজ শুক্রবার (৯ ডিসেম্বর) বিকেলে রাজধানীর গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা জানান তিনি।

তিনি এ সময় বলেন, আমরা শান্তিপূর্ণভাবে ৯টি বিভাগে জনসভা করেছি। সরকারের সকল বাধা উপেক্ষা করে এসব জনসভায় জনতার ঢল নেমেছে। আমাদের অনেক নেতাকর্মীকে হত্যা, নির্যাতন করা হয়েছে, মিথ্যা মামলা দিয়ে গ্রেফতার ও হয়রানী করা হয়েছে। কিন্তু আমরা ধৈর্য্য ধরে দেশে গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়াকে এগিয়ে নিতে চেয়েছি। তবে মনে হয়, সরকার অন্য কিছু চায়। আমরা চাই গণতন্ত্র।

তিনি বলেন, জনগণের দ্বারা নির্বাচিত নয় বলে তারা জনগণের দাবী অগ্রাহ্য করার চেষ্টা করছে। তাদের এই অপচেষ্টা সফল হবে না। জনগণের আন্দোলনের সামনে সব স্বৈরাচারকেই নতি শিকার করতে হয়। বর্তমান ক্ষমতাসীন সরকারকেও করতে হবে।

তিনি বলেন, আপনারা নিশ্চয়ই ইতোমধ্যে জেনেছেন যে, গত রাত্রি প্রায় সোয়া ৩টার দিকে আমাদের দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ও জাতীয় স্থায়ী কমিটির অন্যতম সদস্য মির্জা আব্বাসকে তাদের বাসা থেকে আইনশৃংখলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যগণ সাদা পোষাকে গ্রেফতার করেছে। আজ তাদেরকে ডিবি অফিসে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে বলে আমরা জেনেছি। পুলিশের পক্ষে বলা হয়েছে- নেতৃবৃন্দকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্যই আনা হয়েছে। কিন্তু জিজ্ঞাসাবাদের জন্য এত গভীর রাতে সাদা পোষাকে ধরে নিয়ে আসার মধ্যে স্বেচ্ছাচারিতা ও দম্ভের প্রকাশ আছে, যুক্তি নেই কোনো। আমরা এই ঘটনার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি। আমরা অবিলম্বে গ্রেফতারকৃত বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এবং জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাসের নিঃশর্ত মুক্তি দাবি করছি।

ড. মোশাররফ বলেন, এর আগে গত ৭ ডিসেম্বর বিনা উস্কানিতে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে সমবেত নেতাকর্মীদের উপর পুলিশ, র‌্যাব, সোয়াত বাহিনী ইত্যাদি প্রতিষ্ঠান একযোগে আক্রমণ করে অনেকে খুন ও অসংখ্য নেতাকর্মীকে আহত করে। তাদের গুলি ও টিয়ারগ্যাস ছোড়ার পরিমাণ এতই বেশি ছিল যে মনে হয়েছে যেন যুদ্ধ চলছে। নিরস্ত্র রাজনৈতিক কর্মীদের উপর এমন নির্মম আক্রমণ ও জুলুম নজির বিহীন। তারা দলের মহাসচিবকে তার অফিসে ঢুকতে দেয়নি কিন্তু নিজেরা ঢুকে অফিসের কক্ষ, আসবাবপত্র ভাংচুর করেছে, কম্পিউটার, ল্যাপটপ, হার্ডডিক্স, নগদ অর্থ ও অন্যান্য দ্রব্যাদি নিয়ে গেছে।

বিএনপির সিনিয়র এই নেতা আরো বলেন, নিজেরা ব্যাগে করে বোমা অফিসের ভিতরে নিয়ে দেখানোর চেষ্টা করেছে যে, ঐগুলো অফিসে পাওয়া গেছে। কিন্তু সাংবাদিকদের চোখে তা ধরা পড়েছে এবং সোসাল মিডিয়ায় তা প্রচার হয়েছে। এমন ঘৃণ্য ষড়যন্ত্রের নিন্দা করার ভাষ্য আমাদের জানা নেই।

তিনি বলেন, একই দিনে অফিসের ভিতর ও বাইরে থেকে দলের অনেক সিনিয়র নেতৃবৃন্দসহ প্রায় ৫শত নেতাকর্মীকে গ্রেফতার করে তাদের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা দিয়ে জেলে পাঠানো হয়। এমনকি গ্রেফতারকৃত অনেক আহত নেতাকর্মীকে উপযুক্ত চিকিৎসার সুযোগ পর্যন্ত দেয়া হয়নি। এমন নির্মমতা শুধু অনির্বাচিত সরকারের অনুগত কোনো দলীয় বাহিনীর পক্ষেই সম্ভব। আমরা গ্রেফতারকৃত সকল নেতা-কর্মীর মুক্তি ও মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার দাবী করছি।

খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, নভেম্বরের মাঝামাঝি সময়ে দলীয় কার্যালয়ের সামনে নয়াপল্টন সড়কে ঢাকা বিভাগীয় সমাবেশের সম্মতি চেয়ে লিখিত চিঠি দেয়া সত্তেও তা নিয়ে সরকার গড়িমসি করে। আমরা না চাওয়া সত্বেও অযাচিতভাবে ও স্বপ্রণদিত হয়ে পুলিশ সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে নজিরবিহীনভাবে ২৬ শর্তে গণ-সমাবেশের যে সম্মতি দেয়া হয়েছিল- তা অনিবার্য ও যুক্তিসঙ্গ কারণে আমরা তা প্রত্যাখান করে আলোচনার মাধ্যমে তৃতীয় কোনো উপযুক্ত স্থানে সভার অনুমতি দেয়ার যে অনুরোধ জানিয়েছি, তাতে দিতে গড়িমসি করা হচ্ছে।

আমরা তীব্র ক্ষোভের সাথে লক্ষ্য করছি যে, সরকারী বাহিনী সমূহ ও সরকারী দলের সন্ত্রাসীরা গত প্রায় ১৫দিন যাবৎ প্রকাশ্যে হুমকী দিয়ে জনসভা বানচালের জন্য গোটা ঢাকা মহানগর এবং ঢাকা বিভাগসহ সকল বিভাগের সকল জেলা, উপজেলা, মহানগরে মহড়া দিচ্ছে। তাদের এসব অগণতান্ত্রিক সন্ত্রাসী কার্যক্রম পুলিশের সামনেই এবং সমর্থনে চলছে।

রাজধানী ঢাকায় সরকারী দল হঠাৎ করেই মিছিল করছে আর আমাদের বিরুদ্ধে উস্কানিমূলক শ্লোগান দিচ্ছে। এ অবস্থায় যদি কোনো অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটে তার দায়দায়িত্ব সরকারকেই নিতে হবে। কারণ, আমাদের এ গণ সমাবেশ দুই মাস আগ থেকেই নির্ধারিত ছিলো।

সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার জমির উদ্দিন সরকার, গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, সেলিমা রহমান, কেন্দ্রীয় নেতা ডাঃ এজেডএম জাহিদ হোসেন প্রমুখ।