Home জাতীয় বাড়বে নাগরিকের আরো একটি কার্ড

বাড়বে নাগরিকের আরো একটি কার্ড

20

জাতীয় পরিচয়পত্র নিবন্ধন আইন-২০২২

ডেস্ক রিপোর্ট: জন্মের পরই জাতীয় পরিচয়পত্র (এনআইডি) দেয়ার বিধান রেখে ‘জাতীয় পরিচয়পত্র নিবন্ধন আইন-২০২২’-এর খসড়া শর্তসাপেক্ষে অনুমোদন দিয়েছে মন্ত্রিসভা। এটি চূড়ান্তভাবে পাস হলে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সুরক্ষা বিভাগে হস্তান্তর হবে এনআইডি। তখন জাতীয় পরিচয়পত্র নিবন্ধন ও নাগরিককে প্রদানের কাজটি করবে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। এর সঙ্গে ভোটার হওয়ার সময়ও নির্বাচন কমিশন থেকে ভিন্ন আরেকটি পরিচয়পত্র দেয়া হবে।

বর্তমানে স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের রেজিস্ট্রার জেনারেলের কার্যালয় জন্ম ও মৃত্যু নিবন্ধন, স্থানীয় সরকার বিভাগ নাগরিকের জন্ম নিবন্ধন ও নিবন্ধন কার্ড প্রদান করে থাকে। নতুন এ আইন পাস হলে নির্বাচন কমিশন ১৮ বছরের বেশি বয়সী নাগরিকের ভোটার আইডি দেয়ার কথা বলছে। ফলে একজন নাগরিককে তিনটি কার্ড গ্রহণ করতে হবে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এতে সরকারের ব্যয় ও জটিলতা বাড়বে। আর নাগরিকের জন্য বাড়বে আরেকটি কার্ড।

বর্তমান সরকারের আমলে হওয়া ‘জাতীয় পরিচয়পত্র নিবন্ধন আইন, ২০১০’ অনুযায়ী এনআইডি নির্বাচন কমিশনের অধীন। জন্মের পরই জাতীয় পরিচয়পত্র (এনআইডি) দেয়ার বিধান রেখে ‘জাতীয় পরিচয়পত্র নিবন্ধন আইন, ২০২২-এর খসড়া শর্ত সাপেক্ষে ১০ অক্টোবর অনুমোদন দিয়েছে মন্ত্রিসভা। একই সঙ্গে এ আইন অনুযায়ী এনআইডি সেবা নির্বাচন কমিশন থেকে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সুরক্ষা সেবা বিভাগে চলে যাবে। পাসপোর্টও একই বিভাগ থেকে নিয়ন্ত্রণ করা হয়। এ আইন পাস হলে জন্মের পরপরই এনআইডি কার্ড দেয়া হবে। ফলে একজন ব্যক্তিকে ভোটার আইডি কার্ড ও জাতীয় পরিচয়পত্র মিলিয়ে দুটি কার্ড দেয়া হবে।

এনআইডি স্বরাষ্ট্র্র মন্ত্রণালয়ে চলে গেলে সার্ভারের তথ্য দেবে না বলে জানিয়েছে বর্তমান নির্বাচন কমিশন। ইসি বলছে, বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি ব্যাংকসহ ১৬০টি প্রতিষ্ঠান টাকার বিনিময়ে এনআইডি সার্ভারের তথ্য ব্যবহার করে। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কেও একই পদ্ধতিতে টাকার বিনিময়ে সার্ভারের তথ্য নিতে হবে। ভোটার আইডি নামে একটি কার্ড ছাড়াও তারা (স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়) চাইলে নতুন আরেকটি এনআইডি কার্ড করতে পারে।

সাবেক সিইসি কাজী রকিবউদ্দীন আহমদ বলেন, ভোটার তালিকা থেকেই এনআইডি এসেছে। এনআইডি ইসির কাছে না থাকলে লোকজন ভোটার হতে চাইবে না। মানুষের ভোটার হওয়ার আগ্রহ অতটা ছিল না, জাতীয় পরিচয়পত্র হওয়ার পরে সেটি বেড়েছে। কারণ এটি মানুষের অনেক কাজে লাগে, সে জন্য তারা এখানে আগ্রহ দেখিয়েছে। এখন এটি আলাদা হলে আগ্রহ কমবে। এই অ্যাডভান্টেজটা এখান থেকে সরানো উচিত নয়। এটা এখানে থাকা উচিত। এটাতে কোনো দুর্বলতা থাকলে সেটাকে ঠিক করতে হবে।
নির্বাচন কমিশনার মো. আলমগীর বলেন, এনআইডি চলে গেলে ক্ষতি হবে না। এনআইডি এক জিনিস, ভোটার এক জিনিস। আমরা কাজ করি ভোটার তালিকা নিয়ে। আমরা ভোটার তালিকার ভিত্তিতে নির্বাচন করি। এনআইডি চলে গেলেও ভোটার সার্ভার কাউকেই দেয়ার কোনো সুযোগ নেই। এটা ইসির সম্পদ। তবে আমরা তথ্য শেয়ার করতে পারি। এনআইডি স্বরাষ্ট্রে চলে গেলে তারা তথ্য ব্যবহার করতে চাইলে দেয়া যাবে। এনআইডি চলে গেলে আমরা এটার নাম দেব ‘ভোটার আইডি’। ভোটাররা আমাদের কাছ থেকে কার্ড পাবেন। আর আমাদের সার্ভার আমাদের কাছেই থাকবে। এ সার্ভার আমরা কারো কাছে হস্তান্তর করব না। এটা নিয়ে যারা বোঝে তারাও বলে, যারা না বোঝে তারাও বলে।

সুশাসনের জন্য নাগরিকের (সুজন) সম্পাদক বদিউল আলম মজুমদার বলেন, জাতীয় পরিচয়পত্র এখন নির্বাচন কমিশন থেকে সরকারের কাছে গেলে এর সঠিকতা প্রশ্নবিদ্ধ হতে পারে। দলীয় স্বার্থে, রাজনৈতিক সরকার তাদের স্বার্থে এটিকে কোনো টার্গেট করতে পারে। জাতীয় পরিচয়পত্র ইসিতে থাকলে তো কোনো সমস্যা হচ্ছে না। এটা কেন সরকার নিয়ে যেতে চাইছে, এটার উদ্দেশ্য কী তাদের? সরকার চাইলেই যেকোনো তথ্য পেতে পারে ইসির কাছে। এমনিতেই নির্বাচন নিয়ে মানুষের অনীহা চরম, এটা হওয়ার পর সঠিকতা প্রশ্নবিদ্ধ হলে তখন মানুষ আরো আগ্রহ হারাবে।

২০০৮ সালে প্রথম ছবিযুক্ত ভোটার তালিকা প্রণয়ন করে ড. এটিএম শামসুল হুদার নেতৃত্বাধীন নির্বাচন কমিশন। এরপর বাইপ্রোডাক্ট হিসেবে সেটার নাম দেয়া হয় জাতীয় পরিচয়পত্র। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সুরক্ষা সেবা বিভাগে এই পরিচয়পত্র হস্তান্তরের বিষয়ে অসন্তোষ রয়েছে ইসি সচিবালয়ের কর্মকর্তাদেরও। সম্প্রতি নতুন নীতিগত অনুমোদন দেয়া হলে এনআইডি হস্তান্তরের গতি ত্বরান্বিত হয়।
বণিকবার্তা