Home জাতীয় বাড়ছে ঢাকার চারপাশের নদনদীর পানি

বাড়ছে ঢাকার চারপাশের নদনদীর পানি

39

ডেস্ক রিপোর্ট: সারা দেশে বেড়েছে নদনদীর পানি। সিলেটসহ বিভিন্ন এলাকায় দেখা দিয়েছে ভয়াবহ বন্যা। ঢাকার চারপাশের নদনদীর পানিও ধীরে ধীরে বাড়ছে। তবে সেই পানি এখনো বিপত্সীমা অতিক্রম করেনি। বিপত্সীমা অতিক্রম করলে ঢাকার নিম্নাঞ্চলের বেশ কিছু এলাকা প্লাবিত হবে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।

পানি উন্নয়ন বোর্ডের বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্রের পর্যবেক্ষণ অনুযায়ী, ঢাকার চারপাশের নদনদীগুলোর মধ্যে তুরাগ, বালু, শীতলক্ষ্যা, ধলেশ্বরী ও বুড়িগঙ্গার পানি বাড়ছে। ঢাকা শহরের পশ্চিমাঞ্চলের বেশির ভাগ এলাকার পয়োনিষ্কাশন লাইন বুড়িগঙ্গা ও তুরাগে গিয়ে পড়েছে। আর পূর্বাংশের পয়োনিষ্কাশন লাইন পড়েছে বালু ও শীতলক্ষ্যায়। কিছু অংশের নিষ্কাশন নালা হাতিরঝিলসহ বিভিন্ন লেকের মধ্যে পড়েছে। ফলে ঢাকার চারপাশের নদনদীর পানি বিপত্সীমার কাছাকাছি চলে গেলে রাজধানীর বড় অংশের পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা বাধাগ্রস্ত হবে। পানি উন্নয়ন বোর্ডের বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্রের তথ্যমতে, বালু নদের পানির সর্বোচ্চ স্তর ৭ দশমিক ১৩ মিটার। আর ৫ দশমিক ৭৫ মিটারের ওপরে গেলে বিপত্সীমা ধরা হয়ে থাকে। গতকাল পর্যন্ত এই নদের পানির সমতল ৩ দশমিক ৩৫ মিটার ছিল। তবে ক্রমেই পানি বাড়ছে।

বুড়িগঙ্গার পানির সর্বোচ্চ স্তর ৭ দশমিক ৫৮ মিটার। বিপত্সীমা ৬ মিটার। কিন্তু বুড়িগঙ্গার বর্তমান পানির স্তর গতকাল পর্যন্ত ৩ দশমিক ৩০ মিটার রয়েছে। তবে পানি প্রতিদিনই বাড়ছে। ধলেশ্বরীর পানির সর্বোচ্চ স্তর ৭ দশমিক ৬৬ মিটার। বিপত্সীমা ৫ দশমিক ১৮ মিটার। কিন্তু ধলেশ্বরীর বর্তমান পানির স্তর গতকাল পর্যন্ত ৩ দশমিক ১৩ মিটার রয়েছে। এই নদীর পানিও বাড়ছে প্রতিদিন। তুরাগ নদের পানির সর্বোচ্চ স্তর ৮ দশমিক ৩৫ মিটার। বিপত্সীমা ৫ দশমিক ৯৪ মিটার। কিন্তু তুরাগে বর্তমান পানির স্তর গতকাল পর্যন্ত ২ দশমিক ৪৬ মিটার রয়েছে। এর পানিও বাড়ছে প্রতিদিন। শীতলক্ষ্যার পানির সর্বোচ্চ স্তর ৮ দশমিক ৬৯ মিটার। বিপত্সীমা ৫ দশমিক ৮০ মিটার। কিন্তু শীতলক্ষ্যার বর্তমান পানির স্তর গতকাল পর্যন্ত ছিল ৩ দশমিক ৭৫ মিটার। তবে পানি বাড়ছে।

এ বিষয়ে পানি উন্নয়ন বোর্ডের বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্রের নির্বাহী প্রকৌশলী আরিফুজ্জামান ভূঁইয়া বলেন, পানি বাড়লেও বিপত্সীমা অতিক্রম করার সম্ভাবনা এখন পর্যন্ত নেই। এছাড়া আগামী কয়েক দিনেও বিপত্সীমা পার হবে না বলে তিনি জানান।

অন্যদিকে স্থানীয় সরকারমন্ত্রী মো. তাজুল ইসলাম বলেছেন, অতিমাত্রায় উঁচু অঞ্চল থেকে পানি প্রবাহিত এবং অনেক বেশি বৃষ্টি হলে ঢাকার নিম্নাঞ্চলও প্লাবিত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। গতকাল রোববার সচিবালয়ে স্থানীয় সরকার বিভাগের সম্মেলনকক্ষে আন্তঃমন্ত্রণালয় বৈঠকের শুরুতে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি এ কথা জানান। তাজুল ইসলাম বলেন, ‘বন্যা কোন পর্যায়ে যেতে পারে, তার কোনো পূর্বাভাস কোনো প্রতিষ্ঠান আমাদের দেয়নি। যারা পূর্বাভাস দেয়, তারা বলেছে, একটা আগাম সতর্কতা আছে। তবে সেটা কোন পর্যায়ে যাবে, তা বলা হয়নি। তবে আমরা প্রস্তুতি নিয়ে রাখছি।’ জলাবদ্ধতা নিয়ে তিনি বলেন, নিম্নাঞ্চলটা দ্রুত প্লাবিত হয়। আমরা এখনো সব কাজ করে ফেলতে পেরেছি, তা নয়। কিছু খাল দখলমুক্ত করা হয়েছে। উদ্ধারকাজ চলমান আছে।’

এদিকে ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের নিম্নাঞ্চলের কিছু এলাকায় কয়েক দিনের বৃষ্টি ও নদীর পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় পানি সরছে না। এতে ভোগান্তিতে পড়েছে ঐ এলাকার মানুষ। দক্ষিণখান এলাকার নর্দাপাড়া, নগরবাড়ী, হলান, চেয়ারম্যানবাড়ি, পুরানপাড়া, শাহ কবীর মাজার রোডসহ বিভিন্ন এলাকায় পানি সরছে না। নিষ্কাশনব্যবস্থা সচল না থাকায় এখনো পানি রয়েছে এসব এলাকায়। এছাড়া ডেমরা এলাকার আমুলিয়া, ঠুলঠুলিয়াসহ বিভিন্ন এলাকায় পানি সরছে না। এ বিষয়ে দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের ৭০ নম্বর ওয়ার্ডের ডেমরা এলাকার কাউন্সিলর আতিকুর রহমান বলেন, এখনো বালু নদের পানি ওভাবে এলাকায় ঢোকেনি। তবে নিম্নাঞ্চল হওয়ায় কিছু এলাকায় বৃষ্টির পানি সরছে না।

ঢাকায় বন্যা হলে সিটি করপোরেশনের প্রস্তুতির বিষয়ে দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ফরিদ আহম্মদ ইত্তেফাককে বলেন, এখনো বন্যার পানি ঢোকার খবর আমাদের কাছে আসেনি। তবে নিম্নাঞ্চলে পানি জমা হলে নিষ্কাশনের বিষয়ে আমাদের প্রস্তুতি রয়েছে।-ইত্তেফাক