Home সারাদেশ বাগেরহাটে ফ্রি ফায়ার গেম খেলাকে কেন্দ্র করে বন্ধুর হাতে বন্ধু খুন

বাগেরহাটে ফ্রি ফায়ার গেম খেলাকে কেন্দ্র করে বন্ধুর হাতে বন্ধু খুন

21

ডেস্ক রিপোর্ট: ফ্রি ফায়ার গেম খেলাকে কেন্দ্র করে বন্ধুর হাতে খুন হওয়া কিশোর সাব্বির (১৫) হত্যা মামলার রহস্য উদঘাটন করেছে পিবিআই বাগেরহাট জেলা। ঘটনার সহিত জড়িত কিশোর ফেরদৌসকে আটক করা হয়েছে। গত ৩০ জানুয়ারি বিকাল সাড়ে ৩ টায় নারায়নগঞ্জ জেলার সোনারগাঁও মেঘনা ব্রীজ সংলগ্ন এলাকা থেকে অভিযান পরিচালনা করে আটক করা হয়েছে।

ভিকটিম সাব্বির শেখ (১৫) পাতলা টু তেরখাদা রাস্তায় বেশীর ভাগ সময় ভ্যান চালাত। গত ৯ জানুয়ারি ২০২৩ সকাল অনুমান ১০ টার সময় ভ্যান চালানোর উদ্দেশ্যে বাড়ী থেকে ভ্যানসহ বাহির হয়ে যায়। একই দিনে বিকাল আড়াই টার সময় ভিকটিম সাব্বিরের মাতা তাকে ফোন দিয়ে বাড়ী আসার কথা বললে সে বলে,“আমি ভাড়া নিয়ে পাতলা টু তেরখাদা যাচ্ছি, আসরের দিকে বাড়ী আসব।” সন্ধ্যা হয়ে যাওয়া সত্ত্বেও ভিকটিম বাড়ীতে না আসলে, মোবাইলে কল করলে তার নম্বর বন্ধ পাওয়া যায়। অনেক খোঁজাখুজি করে না পেয়ে ভিকটিম সাব্বিরের পিতা শেখ বোরহান ১১ জানুয়ারি তেরখাদা থানায় একটি সাধারন ডায়রি করেন।

১৭ জানুয়ারি সন্ধ্যা অনুমান ৬ টার সময় ভিকটিমের পিতা জানতে পারেন যে, বাগেরহাট জেলার মোল্লাহাট থানাধীন ছোট কাচনা গ্রামের ওমরের মোড় সংলগ্ন শেখ ওবায়দুর রহমান এর নির্মিত গোডাউনের নিচে ফাঁকা জায়গায় একটি পঁচাগলা লাশ পড়ে আছে। স্থানীয় লোকজন মোল্লাহাট থানায় সংবাদ দিলে থানা পুলিশ উক্ত স্থানে উপস্থিত হয়ে মৃত দেহ দেখতে পান। ভিকটিমের পিতা সহ তার আত্মীয় স্বজন সংবাদ পেয়ে ঘটনাস্থলে এসে মৃত দেহ দেখে লাশ সনাক্ত করেন। অজ্ঞাতনামা ব্যক্তিরা ভিকটিম সাব্বিরকে হত্যা করে তার নিকটে থাকা ব্যাটারী চালিত ভ্যান ও সাথে থাকা একটি এন্ড্রোয়েড মোবাইল ফোন নিয়ে চলে যায়। উক্ত ঘটনায় ভিকটিম সাব্বিরের পিতা শেখ বোরহান, পিতা-মৃত আঃ সাত্তার শেখ, সাং-কুশলা, থানা-তেরখাদা, জেলা-খুলনা বাদী হয়ে অজ্ঞাতনামা আসামীরদের বিরুদ্ধে মোল্লাহাট থানার মামলা নং-১২, তারিখ-২৩/০১/২০২৩ খ্রিঃ, ধারা-৩০২/২০১/৩৭৯/৩৪ পেনাল কোড আইনে হত্যা মামলা দায়ের করেন।

থানা পুলিশের পাশাপাশি পিবিআই বাগেরহাট জেলা মামলাটি ছায়া তদন্ত চলমান রাখে। মামলাটি পিবিআই এর তফসিল ভূক্ত হওয়ায় ৩০ জানুয়ারি পিবিআই বাগেরহাট জেলা মামলাটি স্ব-উদ্যোগে গ্রহণ করে। পুলিশ পরিদর্শক (নিঃ) আশরাফুল আলম, পিবিআই বাগেরহাট জেলা মামলাটির তদন্তভার গ্রহণ করে তদন্ত কার্যক্রম শুরু করে। মামলার রহস্য উদঘাটন ও আসামী গ্রেফতারের জন্য পিবিআই প্রধান অ্যাডিশনাল আইজিপি জনাব বনজ কুমার মজুমদার, বিপিএম (বার), পিপিএম মহোদয়ের দিক-নির্দেশনায় এবং পিবিআই, বাগেরহাট জেলার পুলিশ সুপার জনাব মোঃ আবদুর রহমান সার্বিক তত্ত্বাবধানে পুলিশ পরিদর্শক (নিঃ) জনাব আশরাফুল আলমকে প্রধান করে ৪(চার) সদস্যের একটি টিম গঠন করা হয়।

তদন্তের এক পর্যায়ে মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা পুলিশ পরিদর্শক (নিঃ) আশরাফুল আলম এর নেতৃত্বে পিবিআই বাগেরহাট জেলার একটি তদন্ত টিম ঘটনার সহিত জড়িত আইনের সাথে সংঘাতে জড়িত কিশোর ১) মোঃ ফেরদৌস (১৭), পিতা মোঃ মনিরুল সেখ, সাং-ডিংসাইপাড়া, কোড়ামারা, থানা-বাগেরহাট সদর, জেলা-বাগেরহাট’কে নারায়নগঞ্জ জেলার সোনারগাঁও থানাধীন মেঘনা ব্রীজ সংলগ্ন এলাকা থেকে গত ইং-৩০/০১/২০২৩ তারিখ ১৫:৩০ ঘটিকার সময় অভিযান পরিচালনার মাধ্যমে আটক করে। আসামীর দেখানো মতে হত্যাকান্ডে ব্যবহৃত গামছা, ভিকটিমের ভ্যান গাড়ী ও এন্ড্রোয়েড মোবাইল ফোনের অংশ বিশেষ উদ্ধার পূর্বক জব্দ করা হয়।

প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে ফেরদৌস জানায়, ফ্রি ফায়ার খেলায় ভিকটিম সাব্বির (১৫) ফেরদৌসের নিকট পরাজিত হয়ে তাকে অশ্লীল ভাষায় গালিগালাজ করে। ফেরদৌস উপযুক্ত প্রতিশোধ নেওয়ার প্রতিজ্ঞা করে। পূর্ব পরিকল্পনা মোতাবেক গত ০৯/০১/২০২৩ তারিখ অনুমান ১৪:৪৫ ঘটিকার সময় শিশু বায়জিদের মাধ্যমে ভিকটিম সাব্বিরকে ডেকে নিয়ে আসে। গ্যারেজের মধ্যে বসে সাব্বির গেম খেলা অবস্থায় ফেরদৌস পিছন থেকে গামছা গলায় পেঁচিয়ে শ্বাসরোধ করে হত্যা করে লাশ গ্যারেজের খাটের পাশে কম্বল দিয়ে ঢেকে রাখে। ভিকটিম সাব্বিরের ভ্যান গাড়ীটির ছোট ছোট করে ভাঙ্গারীর ক্রাতার নিকট বিক্রি করেছে এবং ০৪(চার) ব্যাটারী আলামিনের ভ্যানে করে নিয়ে গিয়ে এখলাছের ভাঙ্গারীর দোকানে বিক্রিয় করে। গত ১০/০১/২০২৩ তারিখ রাত অনুমান ০২:০০ ঘাটিকার সময় পার্শ্ববর্তী শেখ ওবায়দুর রহমান এর নির্মিত গোডাউনের নিচে লাশ ফেলে দিয়ে আর্বজনা দ্বারা ঢেকে রাখে। ইং ১০/০১/২০২৩ তারিখ সকাল থেকে নারায়নগঞ্জে চলে যায়।

এ বিষয়ে পুলিশ সুপার পিবিআই বাগেরহাট জেলা মহোদয় জানান, মামলাটি পিবিআই এর তফসিল ভূক্ত হওয়ায় আমরা মামলাটি স্ব-উদ্যোগে গ্রহণ করি। আমরা ঘটনার সহিত জড়িত কিশোর মোঃ ফেরদৌসকে আটক করি। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে সে ঘটনার সাথে জড়িত থাকার বিষয়টি স্বীকার করে। তাকে বিজ্ঞ আদালতে প্রেরণ করা হলে ফেরদৌস বিজ্ঞ আদালতে স্বেচ্ছায় ফৌঃ কাঃ বিঃ আইনের ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি প্রদান করে।