Home জাতীয় বাউফলের নওমালা ইউনিয়নে সংঘবদ্ধ সন্ত্রাসী বাহিনী’র দৌরাত্ম্যে নির্ঘুম এলাকাবাসী

বাউফলের নওমালা ইউনিয়নে সংঘবদ্ধ সন্ত্রাসী বাহিনী’র দৌরাত্ম্যে নির্ঘুম এলাকাবাসী

376

আহমেদ জালাল : বাউফলের নওমালা ইউনিয়নে গড়ে উঠা সংঘবদ্ধ অস্ত্রধারী সন্ত্রাসী বাহিনীর বেপরোয়া চাঁদাবাজী, ঘর-বাড়ি-ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে লুটপাট, নির্মম নির্যাতনে নির্ঘুম এলাকাবাসী। আইন শৃঙ্খলা বাহিনী এদের বিষয়ে অদৃশ্য কারণে নিরব থাকায় ক্রমেই চাঁদাবাজি-লুটপাটে সন্ত্রাসের রাম রাজত্ব কায়েম করে চলছে। সাম্প্রতিক সময়ে এদের অত্যাচারের দিশেহারা শান্তিপ্রিয় মানুষ। এসব সন্ত্রাসী কর্তৃক ভয়ভীতি প্রদর্শন, হত্যার হুমকিকে কয়েক শ’ লোক ইতোমধ্যে এলাকাছাড়া হয়েছে। এবং শতাধিক বাড়ি-ঘর-ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে চাঁদার দাবিতে তাণ্ডবলীলা চালিয়ে আসছে। হামলার শিকার ভুক্তভোগী পরিবারসহ বিভিন্ন সূত্র বলছে, সংঘবদ্ধ এই বাহিনীর মাঠপর্যায়ের প্রধান সেনাপতি নিজবটকাজল গ্রামের মৃত: রুস্তম আলী মৃধার পুত্র কাবিল মৃধা। এলাকায় মাদক বাণিজ্যে, ছিনতাই, ভাড়ায় সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডসহ নানা অন্যায়-অপকর্মের হোতা কাবিল মৃধার নেতৃত্বে রোমান মৃধা, কবির মৃধা, মামুন হাওলাদার, হাসান দফাদার, ইসমাইল মৃধা, জাকির ফকির, আমির ফকির, মোয়াবিন, সজিব গাজী, ফয়েজ সহ ৩০/৪০ জনের সংঘবদ্ধ বাহিনী ওই ইউনিয়নে অস্ত্রসস্ত্রে সজ্জিত হয়ে মোটরসাইকেল মহড়ায় জনমনে তীব্র আতঙ্ক বিরাজ করছে। আরো আগ থেকেই এদের অত্যাচার-নির্যাতনে অতিষ্ঠ ইউনিয়নবাসী। সংঘবদ্ধ এই অস্ত্রধারী সন্ত্রাসীরা বাউফলের নওমালা ইউনিয়নে নবনির্বাচিত চেয়ারম্যান কামাল হোসেন বিশ্বাসের আর্শিবাদপুষ্ঠ। এলাকায় পেশিশক্তির মাধ্যমে আধিপত্য বিস্তারে কামাল বিশ্বাস এহেন অস্ত্রধারী সন্ত্রাসী বাহিনী গড়ে তুলেছে বলে অভিযোগ উঠেছে। অভিযোগ উঠে দেদারসে কালো টাকা ছড়িয়ে একদিকে অস্ত্রধারী সন্ত্রাসী কর্তৃক সাধারন মানুষকে ভয়ভীতি প্রদর্শন করে ভোটাধিকার প্রদানে বিঘ্নতা সৃষ্টি করেছে। আরেকদিকে স্থানীয় থানা পুলিশসহ সংশ্লিষ্ঠ বিভিন্ন দপ্তরে কালো টাকা ছড়িয়েছেন। ভোটের মাঠে সন্ত্রাসী কর্তৃক অস্ত্রের মহড়া দিয়ে প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীদের কর্মী-সমর্থকের ওপর চড়াউ হয়ে জনমনে ভীত সন্তস্ত্র করে তোলে। পাশাপাশি নৌকার প্রার্থী কামাল হোসেন বিশ্বাসের ভাই (জজ) নির্বাচনে ক্ষমতার অপপ্রয়োগ করেছেন বলে অভিযোগ প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীদের। জজের ক্ষমতার অপপ্রয়োগে প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীর কর্মী-সমর্থকদের নানান কায়দায় হয়রানি করা হয়। এমনকি বিজ্ঞ জজ রাজধানী ঢাকায় কামাল বিশ্বাসের পক্ষে নির্বাচনী প্রচারণার একটি আয়োজনও করেছিলেন। এরকম একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে। অর্থাৎ নিজের ভাইকে জয়ী করতে যতসব ক্ষমতার অপপ্রয়োগ দরকার সবই তিনি করেছেন বলে প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী এবং তাদের কর্মীদের অভিযোগ। তথ্যানুসন্ধানে জানা গেছে, চাঁদার দাবিতে নওমালা ইউনিয়নের অস্ত্রধারী সন্ত্রাসীরা বেপরোয়া হয়ে মাঠ দাবড়িয়ে বেড়াচ্ছে। সাধারন মানুষের ঘর-বাড়ি-ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে অব্যাহত হামলা চালাচ্ছে। ঘর-বাড়ি জ্বালিয়ে দিচ্ছে। ইতোমধ্যে শতাধিক ঘর-বাড়ি-ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে হামলা করে ভাঙচুরের তাণ্ডবলীলা চালিয়েছে। চাঁদার দাবিতে সাধারন মানুষকে অব্যাহত হুমকি দিচ্ছে। নির্ধারিত চাঁদার টাকা দিতে অপরগতা প্রকাশ করলে তার আর নিস্তার নেই। এই সন্ত্রাসীরা সাধারন মানুষকে নির্যাতন চালিয়ে আসছে। নগরের হাটে চেয়ারম্যান প্রার্থী মো: শাহজাদা হাওলাদার, আঃ খালেক মৃধা (মধু মৃধা), বেল্লাল মল্লিক, ইউনুস বিশ্বাস (মাস্টার), রিয়াজ হাওলাদার (মাস্টার), মোঃ মজিবুর হাওলাদার ও তার ভাই জামাল হাওলাদারের বাসা-বাড়িতে হামলা চালিয়ে লণ্ডভন্ড করে দিয়েছে সন্ত্রাসীরা। আমির প্লাজার মশিউরের দোকান, জাহাঙ্গীরের ভাতের হোটেল, আকবরের চায়ের দোকান, রহিমের ভাতের হোটেলসহ ডিস্ট্রিক বোর্ডের রাস্তার দুই পাশের অর্ধশতাধিক দোকানপাট ভাঙচুর ও লুটপাট করে। ইউনিয়নের ৪ নং ওয়ার্ডের বাসিন্দা মোতালেব চৌকিদারের কাছে মোটা অংকের টাকা দাবি করে কাবিল বাহিনী। ইউনুস বিশ্বাসের ঘরে গিয়ে তাঁর স্ত্রী-পরিজনকে ভয়ভীতি দেখিয়ে এলাকা থেকে চলে বলে। নচেৎ বসতঘর আগুন দিয়ে পুড়িয়ে ফেলার হুমকি দেয়। আঃ খালেক মৃধার নগরের হাটস্থ বসতঘরের সামনে গিয়ে তাকে ঘর থেকে না বেড়ানোর হুমকি দিয়ে মোটা অংকের চাঁদা দাবি করে সন্ত্রাসীরা। এলাকার স্বনামধন্য ব্যক্তি তাহের খানের বাসার সামনে তাঁর দুটি দোকান ভাড়া আগামী মাস থেকে চাঁদাবাজরা দাবি করে। এছাড়া ইউনিয়নের বাবুরহাটের শামুর দোকান ভাঙচুর ও লুটপাটের অভিযোগ পাওয়া গেছে। ১১ নভেম্বর সন্ধ্যায় নগরের হাট ডিষ্টিক রোডের দক্ষিণ পার্শ্বে স্বতন্ত্র প্রার্থী মো: আফছার উদ্দিন মৃধার বড় ভাই আঃ খালেক মৃধার বাসায় হামলা চালিয়েছে। ওই বাসায় মো: আফছার উদ্দিন মৃধা থাকা অবস্থায় এহেন জঘন্য হামলা চালানো হয়। তাৎক্ষনিক বিষয়টি একটি গোয়েন্দা সংস্থাকে অবহিত করার পর পুলিশ ঘটনাস্থলে এসে আফসার মৃধাকে অবরুদ্ধ অবস্থা থেকে উদ্ধার করে। সন্ত্রাসীরা আঃ খালেক মৃধার পরিবারের কাছে চাঁদা চেয়েছে, নইলে বাড়ি-ঘর জ্বালিয়ে দেওয়ার হুমকি দিয়েছে। এসব সন্ত্রাসীদের নির্ধারিত চাঁদার টাকা দিতে অপরগতা প্রকাশ করলেই ঘর-বাড়ি-ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে হামলা চালিয়ে ভাঙচুর করে। এরপর আগুন দিয়ে জ্বালিয়ে দিচ্ছে। আবার কখনো চালানো হয় নির্যাতনের স্টীম রোলার। মূলত : নওমালা ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) নির্বাচনে কামাল হোসেন বিশ্বাস জয়ী হয়ে তারই পালিত অস্ত্রধারী সন্ত্রাসীরা পরাজিত প্রতিদ্বন্দ্বি প্রার্থীদের কর্মী-সমর্থকের বাড়ি-ঘরে হামলা, ভাঙচুর, লুটপাট ও পেট্রোল ঢেলে আগুন ধরিয়ে দিচ্ছে। শনিবার (১৩ নভেম্বর) দিবাগত রাতের আধারে ইব্রাহিম মাষ্টারের মাছের ঘেরে বিষপ্রয়োগ করেছে সন্ত্রাসীরা। পুকুরে বিষ প্রয়োগ করে বিভিন্ন প্রজাতির প্রায় তিন লাখ টাকার মাছ নিধণ করা হয়েছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। শিক্ষক মোঃ ইব্রাহিম হোসেন প্রায় তিন বছর পর্যন্ত পুকুরে বিভিন্ন প্রজাতির মাছের চাষ করে আসছেন। রোববার সকালে ইব্রহিমের স্ত্রী পুকুরে অজু করতে গিয়ে দেখেন পাঙ্গাস, রুই, কাতলা ও মৃগেলসহ বিভিন্ন প্রজাতির মৃত মাছ পুকুরে ভাসতে দেখেন। ইব্রাহিম হোসেন সাংবাদিকদের বলেন, তিনি ঘোড়া প্রতীকের সমর্থক হওয়ায় নির্বাচনে জিতে নৌকা প্রতীকের নির্বাচিত প্রার্থী এডভোকেট কামাল হোসেনের পালিত সন্ত্রাসীরা তার পুকুরে বিষ প্রয়োগ করে প্রায় তিন লক্ষাধিক টাকার মাছ বিনষ্ট করা হয়েছে। এদের বেপরোয়া চাঁদাবাজি-সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডে ইউনিয়নের শান্তিপ্রিয় মানুষ হতাশ। এইসব সন্ত্রাসীদের প্রকাশ্যে চাঁদাবাজি, লুটপাট, ঘর-বাড়ি-ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে আগুন দিয়ে জ্বালিয়ে দেওয়ার অপকর্মগুলো কী দেখার কেউ নেই? এ যেনো দেখার কেউ নেই। বিচারের বাণী নিরবে নিভৃতে কাঁদছে। সচেতনমহলের প্রশ্ন-এসব সন্ত্রাসী কারা? যাদের অস্ত্রের মহড়ায় জনমনে চরম আতঙ্ক বিরাজ করছে। যারা ভয়ার্ত পরিবেশ সৃষ্টি করে সন্ত্রাসের রাম রাজত্ব কায়েমের পথে হেঁটে চলছে। কাদের আশ্রয়প্রশ্রয়ে এরা দিনে দিনে বেপরোয়া হয়ে উঠে মানুষের জানমালের নিরাপত্তায় হুমকিস্বরূপ হয়ে দাড়িয়েছে। নাম প্রকাশ না করার শর্তে স্থানীয় একাধিক বাসিন্দা বলেন, এলাকায় গড়ে উঠা অস্ত্রধারী সন্ত্রাসীরা ক্রমেই হিংস্র হয়ে উঠেছে। এ পর্যন্ত শতাধিক ঘর-বাড়ি ভাঙচুর ও লুটপাট করেছে। প্রশাসন চাইলে সবাইকে শনাক্ত করে শাস্তি দিতে পারে। আমরা জানমালের নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছি। সচেতনমহল বলছেন, অপরাধী যতই শক্তিশালী হোক, তার ক্ষমা নেই। এদেরকে চিহৃিত করা হোক। অপরাধ যেই করুক, তার ক্ষমা নেই। তার কোনো দলীয় পরিচয় নেই; নেই কোনো রাষ্ট্রীয় পরিচয়। তার একটাই পরিচয় সে অপরাধী।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, রোববার ১৪ নভেম্বর বিকেলে নওমালা ইউনিয়নের নগরের হাটের দক্ষিণ পার্শ্বে ব্যাপারি বাড়ির বাসিন্দা আমির হোসেন এর পুত্র বেল্লাল হোসেন এর বাসায় প্রথমে এলোপাথারিভাবে কুপিয়েছে। পরে আগুন দিয়ে বাসা জ্বালিয়ে দিয়েছে। এরপর অস্ত্রধারী সন্ত্রাসীরা উল্লাস করতে করতে স্থান ত্যাগ করে। ভুক্তভোগি পরিবার বলছেন, অস্ত্রধারী সন্ত্রাসীরা ঘরে ঢুকে টিভি, ফ্রিজ, শোয়ার খাটসহ বিপুল পরিমাণ আসবাব ভাঙচুর করে। এরপর সেগুলো এক জায়গায় স্তূপ করে পেট্রোল দিয়ে আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়। পরে স্থানীয় লোকজন পানি ঢেলে আগুন নেভাতে সক্ষম হন। সদ্য অনুষ্ঠিত হয়ে যাওয়া ইউপি নির্বাচনে বেল্লাল হোসেন সাবেক চেয়ারম্যান ঘোড়া প্রতীকের স্বতন্ত্র প্রার্থী মো: শাহজাদা হাওলাদারের সমর্থক ছিলেন। মামলা সূত্রে জানা গেছে, রোববার (১৪ নভেম্বর) সন্ধ্যার দিকে মো. কামাল হোসেন বিশ্বাসের কর্মী মো. কাবিল মৃধার নেতৃত্বে ৬০-৬৫ জনের একটি দল বেল্লাল হোসেনের বাড়িতে ঢুকে টিভি, রেফ্রিজারেটর, খাটসহ অন্যান্য আসবাব ভাঙচুর করেন। এরপর সেগুলো এক জায়গায় স্তূপ করে পেট্রল দিয়ে আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়। পরে স্থানীয় লোকজন পানি ঢেলে আগুন নেভায়।
হামলার শিকার মো. বেল্লাল হোসেনের মা মোসা. সেতারা বেগম বাদী হয়ে ২৭ জনের নাম উল্লেখ এবং অজ্ঞাতনামা আরও ৩০-৩৫ জনকে আসামি করে মামলাটি দায়ের করেন। পুলিশ অভিযান চালিয়ে ওইদিন রাতে চারজনকে গ্রেপ্তার করেছে। গ্রেপ্তার ব্যক্তিরা হলেন মো. মঞ্জু (৩৫), মো. করিম (৩৬), মো. ইউনুচ (৩৫) ও মো. রবিউল (১৯)। গ্রেপ্তারকৃতরা নবনির্বাচিত চেয়ারম্যান মো. কামাল হোসেন বিশ্বাসের কর্মী–সমর্থক। কিন্তু অরাজক পরিবেশ সৃষ্টির হোতা কাবিল মৃধাসহ অন্যান্য আসামীদের গ্রেপ্তার করতে পারেনি পুলিশ। এদের গ্রেপ্তারে পুলিশের গড়িমসির অভিযোগ রয়েছে। আবার গ্রেপ্তার হলেও আইনের ফাঁকফোকর দিয়ে বের হয়ে ফের এলাকায় নৈরাজ্য সৃষ্টিতে মত্ত থাকে। অবাক! ইতোমধ্যে এই মামলার আসামিরা জামিন পেয়েছেন। সন্ত্রাসী হামলার ঘটনায় ন্যায় বিচার দাবি করে বেল্লালের মা সেতারা বেগম বলেন, সন্ত্রাসীদের মহড়ায় তাঁর পরিবার জীবনের চরম নিরাপত্তাহীনতার মাঝে বসবাস করছেন। হামলাকারীদের গ্রেপ্তারের পর বাউফল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোঃ আল মামুন সাংবাদিকদের বলেছিলেন, ভাঙচুরের ঘটনায় মামলা হয়েছে। ঘটনার সাথে জড়িত থাকায় চারজনকে পুলিশ গ্রেপ্তার করেছে। অন্যদের গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে। সদ্য বিদায়ী চেয়ারম্যান ঘোড়া প্রতীকের স্বতন্ত্র প্রার্থী মো. শাহজাদা হাওলাদার বলেন, সন্ত্রাসীরা আমার বাসভবনে হামলা চালিয়েছে। আমার কর্মী-সমর্থকদের বাড়ি-ঘর-ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে হামলা-ভাঙচুরের তাণ্ডবলীলা চালিয়ে আসছে। বিভিন্ন ব্যক্তির কাছে চাঁদা দাবি করছে। সন্ত্রাসীদের অস্ত্রের মহড়ায় ‘আমার কয়েক’শ কর্মী-সমর্থক এলাকাছাড়া। তিনি আরো বলেন, গত নির্বাচনে আমিও তাঁকে (কামাল হোসেন বিশ্বাসকে) পরাজিত করে চেয়ারম্যান হয়েছিলাম। সেসময় কাউকে এলাকাছাড়া হতে হয়নি। হামলা-লুটপাট-চাঁদাবাজির ঘটনা ঘটেনি। এ প্রসঙ্গে নবনির্বাচিত চেয়ারম্যান কামাল হোসেন বিশ্বাস বলেন, বেল্লাল তাঁর অনেক কর্মীকে অত্যাচার–নির্যাতন করেছেন। এতে অনেকে পঙ্গু হয়েছে। এরপরও তিনি তাঁর নেতা-কর্মীদের শান্ত রেখেছিলেন। কিন্তু বেল্লাল নির্বাচনের পর ফেসবুকে উত্তেজনামূলক স্ট্যাটাস দিয়েছেন। এ কারণে তাঁর কিছু বিক্ষুব্ধ কর্মী এ ঘটনা ঘটিয়েছে। তবে কিছুক্ষণের মধ্যেই তাঁর অন্য কর্মীরাই বিক্ষুব্ধ কর্মীদের থামিয়েছে। বিশ্লেষকরা বলছেন, মানুষ সাধারন ভালোভাবেই বাঁচতে চায়। কেউই জন্মগতভাবে সন্ত্রাসী বা অপরাধী নয়। কিন্তু পরিবর্তিতে বিভিন্ন কারণে অপরাধী হয়ে ওঠে। দারিদ্যের আঘাতে কখনো কখনো কিশোর-যুবকরা অপরাধী হয়ে ওঠে। আর দারিদ্রের সুযোগে ছাত্র-যুব সমাজকে নিজেদের স্বার্থসিদ্ধির জন্য অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করছে অবৈধপন্থায় অগাধ বিত্ত বৈভবের মালিক বনে যাওয়া ভদ্রবেশি ভণ্ডরা। রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে অংশগ্রহণের মধ্য দিয়ে ক্ষমতায় যাবার লোভে অবৈধ কাজে জড়িয়ে পড়ে। অবৈধ কাজ করলে শাস্তি পেতে হয়। কিন্তু রাজনৈতিক আশ্রয় ও প্রশ্রয়ে অপরাধী আরও অপরাধ প্রবণ হয়ে ওঠে। এবং অন্যকে উৎসাহিত করে। ভদ্রতার আড়ালে ভণ্ডরা ক্ষমতার অপব্যবহারের কারণে প্রশাসন অনেক সময় নীরব দর্শকের ভূমিকা পালন করে। এতে অপরাধী কাজ চালিয়ে যায়, ক্রমেই অপরাধ বেড়ে চলে। প্রশাসন বিজ্ঞানে দুর্নীতির অর্থ হল দায়িত্বশীল পদে সমাসীন হয়ে ক্ষমতার অপব্যবহারের মাধ্যমে আর্থিক সুবিধা লাভের জন্য স্বজনপ্রীতি ও পক্ষপাতিত্বের আশ্রয় গ্রহন করে। এরফলে প্রশাসন ব্যবস্থায় নেমে আনে অন্ধকারের ঘনঘটা। দুর্নীতির কারণে প্রশাসন সঠিক পদক্ষেপ নিতে পারে না। ন্যায় বিচার থেকে নিরপরাধ লোখ বঞ্ছিত হয়, অযথা কাজে বিলম্ব ঘটিয়ে জটিলতা সৃষ্টি করে মিথ্যাচারের আশ্রয় নেয়। দুর্নীতি ভয়াবহভাবে অপরাধ প্রবণতার জন্ম দেয়। অভিজ্ঞমহল বলছেন, কোন ক্ষমতাধর নেতা কিংবা ব্যক্তির ছত্রছায়ায় থাকা সন্ত্রাসী বাহিনী নির্মূলে দরকার বিশেষ অভিযান। পুলিশী অভিযানে কিছু অপরাধী আটক হলেও মূল হোতাদের আইনের আওতায় আনা সম্ভব হচ্ছে না। অপরাধী চক্র গড়ে তোলার হোতাদের আইনের আওতায় আনা সম্ভব হলেই অপরাধের মূলৎপাটন করা সম্ভব।
সবমিলিয়ে অবৈধ অস্ত্র ব্যবহারের পাশাপাশি সংঘাত, হানাহানির ঘটনা নিয়মিত বাড়ছে। গ্রামে গ্রামে বহু মানুষ আজ রাজনৈতিক হিংসার জেরে ঘরছাড়া। মৃত্যু, হানাহানি নষ্ট করছে গ্রামীণ পরিবেশ। সবাই আজ জানতে চায়– এর শেষ কোথায়? আর স্থানীয় সরকার নির্বাচনে নিজেদের পছন্দমতো, এলাকায় উজ্জ্বল ভাবমূর্তি আছে এমন মানুষকে নির্বাচিত করে আনার প্রক্রিয়াটাই বন্ধ হয়ে গেছে। গ্রামে আর জনপদে নির্বাচন এক আতঙ্কের নাম। এত অস্ত্রের প্রদর্শনী, এত সহিংসতা, এত জখম। সংবেদনশীল মানুষ বুঝতে চায় রাজনীতির জন্য এই সহিংসতা নাকি সহিংসতার জন্যই রাজনীতি? নির্বাচন কেন্দ্রিক সহিংসতা কাম্য নয়। একটা দল জিতবে আর বাকিরা হারবে এটাই স্বাভাবিক। কিন্তু ভোটে জেতার জন্য প্রতিপক্ষের নেতাকর্মীদের ওপর হামলা, চাঁদাবাজি লুটতরাজ, হত্যাচেষ্টা, খুন। এই রাজনৈতিক চর্চা মানুষ চায় না। প্রসঙ্গত : গত বৃহস্পতিবার (১১ নভেম্বর) অনুষ্ঠিত নওমালা ইউপি নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মনোনীত চেয়ারম্যান প্রার্থী এ্যাড. কামাল হোসেন বিশ্বাস বিজয়ী হন। স্বতন্ত্র চেয়ারম্যান প্রার্থী (ঘোড়া) সদ্য বিদায়ী চেয়ারম্যান মো. শাহজাদা হাওলাদার পরাজিত হন। কামাল বিশ্বাস জয়ী হওয়ার পর ১১ নভেম্বর বিকেলে বিজয় উল্লাস থেকেই প্রতিপক্ষের বাড়ি-ঘরে হামলা চালিয়ে আসছে। এবং বেপরোয়াভাবে চাঁদাবাজিতে সন্ত্রাসীরা মাঠ দাবড়িয়ে বেড়াচ্ছে।